somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুমেরাং (রম্য রচনা)

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার স্কুলের এর বন্ধুর ডাক নাম ছিল “সন্দেশ”। নামটা তার মিষ্টি হলেও সে ছিল অতি বিচ্ছু। ক্লাসে সে আমাদের ফার্স্ট বয় হওয়ায় শিক্ষকেরা তাকে খুব স্নেহ করতেন।

কিন্তু মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপলে শিক্ষকদের সে মাঝে-মধ্যে হঠাৎ বিপদে ফেলে দিত, আর সেই আশঙ্কায় স্কুলের স্যারেরা তার সঙ্গে সব সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত মিষ্টি ব্যাবহার করতেন।

তার দুইটি উদাহরন দিচ্ছি। ক্লাস নাইনে জীব- বিজ্ঞানের ক্লাসে অভিযোজন পড়াবার সময় সে হঠাৎ প্রশ্ন করলো,

“"আচ্ছা স্যার, মানব সভ্যতায় মাছ ধরবার কথা কত বৎসর আগে থেকে জানা যায়?”"

“"কেন? সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ মাছ ধরে খায়, এমনকি প্রাগৈতিহাসিক যুগেও মানুষ মাছ ধরতে জানতো তার নিদর্শন আছে।”"

"তাহলে যে সব জেলেদের বসতি সমুদ্রের ধারে, তারা নিশ্চই কয়েক হাজার বছর ধরে বংশানুক্রমিক ভাবে পানিতে নেমে মাছ ধরে আসছে?”"

“"হ্যাঁ, তা তো হতেই পারে।”"

কয়েক সেকেন্ড স্যারের মুখের দিকে নীরবে তাকিয়ে থাকবার পর সন্দেশের নিরিহ প্রশ্ন,
“"স্যার তাই যদি হয়, আপনার কথা মতো তাহলে নিশ্চই এতদিনে তাদের কানের অভিযোজনের ফলে মাথার দুপাশে মাছের মতো কানকো, ফুলকা তৈরী হবার লক্ষন পাওয়া উচিৎ?”"

এই প্রশ্ন শোনবার পর স্যারের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল,তাঁকে দোতলার ওপর থেকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে আর তিনি কিছু একটা অবলম্বন আঁকড়ে ধরবার আপ্রান চেষ্টা করছেন। তিনি কোনো রকমে সেদিনের ক্লাস শেষ করে যথাসম্ভব দ্রুত পায়ে কমন রুমের দিকে হাঁটা দিলেন।

যাই হোক, আর একদিন মাঠে প্রচন্ড রৌদ্রের মধ্যে ড্রিল প্র্যাকটিস করবার সময় হঠাৎ সে গম্ভীর ভাবে পি.টি. স্যার কে প্রশ্ন করে,
"“এই যে আমরা গরমের মধ্যে ড্রিল প্রাকটিস করছি, ঘামের সাথে আমাদের দেহ থেকে নিশ্চই অনেক প্রয়োজনীয় লবন আর খনিজ পদার্থ বেরিয়ে যাচ্ছে?”"

“"তা তো বেরোবেই।”"

“"স্যার, ওই লবন গুলির কেমিক্যাল ফর্মূলা একটু লিখে দেন না।”"

আমাদের পি.টি. স্যার ছিলেন দারুন স্মার্ট লোক, উনি সন্দেশের প্রশ্ন যেন শুনতেই পান নি, এমন ভাব দেখিয়ে হুইসেলটা বাজিয়ে দিয়ে বললেন,
"“আচ্ছা ছেলেরা, আজকের মতো যথেষ্ট হয়েছে, তোমরা এবার ক্লাসে গিয়ে ফ্যানের তলায় একটু বোসো। সত্যি যা গরম পড়েছে আজ!”"


পড়াশোনা শেষ করে একদিন সন্দেশ চাকরি-জীবনে প্রবেশ করলো। একটি বিদেশি ব্যাঙ্কের উঁচু পদে চাকরি। তার বিয়েও হলো। ঘটনাচক্রে তার বৌএর ডাক নাম “মিষ্টি”।

এক বছর কাটবার পর তাদের যমজ ছেলে-মেয়ে হল, যাদের ডাক-নাম রাখা হল “জ্যাম” আর “জেলী”। চন্দ্রের কলার মতো দিনে দিনে তারা বড় হয়ে উঠলো, স্কুলে গেলো, একসময় হাইস্কুলেও ভর্তি হল।

একদিন আমাদের সন্দেশ- সাহেব সন্ধ্যার পর অফিস থেকে এক্কেবারে ডগ-টায়ার্ড বাসায় ফিরেছে; তখন বোধহয় এপ্রিল-মে মাস হবে। বেশ গরম। সন্দেশ জামা-কাপড় ছেড়ে একটু হালকা হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসবার পর তার মেয়ে “জেলী”-র আবির্ভাব।

“"কি খবর গো আম্মা? পড়াশুনা কেমন চলছে তোমার? স্কুলের সব খবর ভালো?”"

জেলী-র উল্টো প্রশ্ন,
"আচ্ছা, সবাই বলে তুমি নাকি পড়াশুনায় খুব ভাল ছিলে?”"

ক্লান্তি আর গরমের কথা ভুলে সন্দেশের মনটা হঠাৎ খুব ভালো হয়ে যায়। হেসে উঠে বলে,
"“হ্যাঁ তা একটু ছিলাম আর কি!”"

“"তাহলে বল তো, ইংরাজিতে ছাতু-কে কি বলে?”"

এবার সন্দেশ-সাহেবের চক্ষু বিস্ফারিত হবার পালা!
"“হ্যাঁ, মানে জানতাম, কি যেন একটা বলে, ঠিক মনে আসছেনা....”"

“"তুমি জান না, আমি জানি!"” জেলীর সগর্ব উত্তর।

“"কি বলে, তাহলে?”"

“"আমব্রেলু!”"

“"হোয়াআআআআট?” "

“"হ্যাঁ, ছাতা যদি আমব্রেলা হয়, ছাতু তাহলে আমব্রেলু নয় কেন?”"
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×