somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিয়ম ( গল্প )

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাত তিনটা বাজে। এসময় শোরগোলের আওয়াজ পাওয়া যায়। মিরাজের চোখে একটু ঘুম আসছিলো মাত্র। সারাদিন অনেক কাজ করতে হয়েছে। ঘুমো ঘুমো গলায় মিরাজ জানতে চায়, আপা বাইরে কি হয়েছে?
: গরু পুকুরে পড়ে গেছে।

কথাটা শুনেই মিরাজের ঘুম উধাও। বের হওয়ার জন্য শার্ট গায়ে চাপায়।
আপা মানা করেন। সারাদিন অনেক ধকল গেছে। তোর যেতে হবে না। অন্যরা সামলাতে পারবে।
মিরাজ আপার দিকে তাকায়। আপাকে অনেক সুন্দর লাগছে। বিয়ের আগে কি মেয়েরা অসম্ভব সুন্দর হয়ে যায় । মিরাজের বলতে ইচ্ছে করছে, আপা তোকে সুন্দর লাগছে। কিন্তু বড় আপাকে কথাটা বলা কতটুকু উচিত হবে তা ভেবে বলা হয় না।

পুকুরের পাশে বিরাট জটলা। পানি কম। ভাগ্য ভাল গরু জন্মগত ভাবে আংশিক সাঁতার পারে। বাবা রশি ধরে আছেন। জহির ভাই গরুকে ঠেলছেন। পৌনে এক ঘন্টা চেষ্টার পর তা ডাঙায় উঠানো যায়।
বরযাত্রীর সংখ্যার কথা বিবেচনা করে বড় গরু কিনতে হয়েছে। প্রথমে বাজেট আরো কম ধরা হয়েছিলো। পরে অন্যের কাছ থেকে ধার নিয়ে গরু কিনা হয়।
আপার শাশুড়ীর বড় ভাইটাই বিভিন্ন হিসাব নিকাশ নিয়ে বেশি এসেছে। লোকে তাকে পিনু সাব নামেই চিনে। এ লোক একটু পর পর পান খায়।

: বেয়াই সাব আমাদের পরিবারের প্রথম বিয়ে। বুঝতেই পারছেন সবার আশা বেশি।
: জ্বী তাতো ঠিক।
পানের পিক ফেলতে ফেলতে পিনু সাব বলেন, আপনারা কয়জন বরযাত্রীর ব্যবস্থা করছেন।
: তিন-চারশোর মতো।
: ছিছি এত কম। কমপক্ষে এক হাজার করতে হবে।
এ বিষয়ে অনেক কথা চালাচালি হলেও লাভ হলো না। পিনু সাহেবের কথাই মানতে হয়। এজন্য যে দামে গরু কেনার কথা ছিল তার চেয়ে দ্বিগুণ দাম দিতে হলো। মেয়ে পক্ষের কথার দাম নেই এটাই নাকি গ্রামের নিয়ম।

বাবা এম্নেতেই সরল প্রকৃতির। তারওপর মেয়েপক্ষ। এজন্য ওদের কথা সব মেনে নিতে হয়।

পিনু সাবকে খারাপ লাগে মিরাজের। ইচ্ছে হয় কথা না বলতে। কিন্তু বোনের শ্বশুড় বাড়ীর পক্ষের আত্মীয়। ইচ্ছে না থাকলেও শ্রদ্ধা করতে হয়। আসামাত্র পা ধরে সালাম করে ও।

প্রতিবার নতুন নতুন চাহিদা নিয়ে আসেন উনি।

: বেয়াই সাব, এখন মানুষে তোষকে থাকে না। ফোম ব্যবহার করে। এখনতো আর আমাদের যুগ নাই। নতুন যুগ।
: আমি তো তোষক সেলাইতে দিয়ে দিয়েছি।
: আরে কন কি? আলোচনা করবেন না আমার সাথে। অসুবিধা নাই সেটা আপনারা ব্যবহার করবেন। ফোম ছাড়া এখন চলে নাকি?

একথা শুনে বাবার মুখ কালো হয়ে যায়। আবার বাড়তি বোঝা। একটু প্রতিবাদ করতে পারেন না। মিরাজ বয়সে ছোট। কোন কথা বললে বেয়াদবি ধরে নিতে পারে এজন্য সে ও কিছু বলতে পারে না। মেয়ের পরিবারের সদস্য হলে এভাবে মাথা নিচু করে থাকতে হবে কেন তা মিরাজের মাথায় ঢুকে না।

বাবার অবস্থা দেখে বড়ই কষ্ট লাগে ওর।
: কলসি কিনছেন?
: হ্যা, একটা কিনছি।
: একটা দিয়ে হয় নাকি? দুইটা লাগবে।
বরপক্ষ যেগুলো চাহিদা করবে সেগুলো দেওয়াই নাকি নিয়ম। এরকম নিয়মে পড়ে মিরাজদের অনেক কিছু কিনতে হয়েছে। সম্পূর্ণ এক রুম ভরে গেছে তাতে। সেগুলো দেখে আপা অপরাধী মুখে বলে, আমার জন্য আব্বার অনেক ঋণ হয়ে যাচ্ছে। মেয়ে হয়ে গিয়ে কেন যে পৃথিবীতে এসেছিলাম। বাবার ঐই দু:খী মুখ আমার সহ্য হয় না।

বিভিন্ন জিনিষ যোগাতে এত কষ্ট করে টাকা যোগাড় করতে হয়েছে দেখে মিরাজ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে ও বিয়ের সময় বউয়ের বাসা থেকে সামান্য কিছুও নেবে না। কোন লোভী আত্মীয়কে বউয়ের পরিবারে পাঠাবে না।

ফার্নিচারগুলো ঘরের পিছনে রাখা। রাতে হালকা বৃষ্টি হয়।

আপাকে সাজানো হচ্ছে। আপার ঘরে উঁকি দিয়ে চলে যেতে চায় মিরাজ। আপা ডাক দেয়।

: মিরাজ, এদিকে আয়। লজ্জা কিসে।
মিরাজকে ধরে কাঁদা শুরু করে। তোদেরকে কষ্টে ফেলে যাচ্ছি।
দুপুরের দিকে বরপক্ষ আসে। স্টেজে বসে বর। পিনু সাব চারদিকে সব নিয়ম ঠিকঠাক হচ্ছে নাকি দেখেন।
হট্টগোল শুরু হয়।

পিনু সাবের উচ্চ গলা শুনা যায়, এই ফার্ণিচার গুলো হবে না। বৃষ্টিতে ভিজছে। এগুলো বেশিদিন টিকবে না। এগুলো আমরা নেব না।

সবাই বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না।

মিরাজের বাবা আর না পেরে সবার সামনে পিনু সাবের পা ধরে ফেলেন, বেয়াই আমার ভুল হয়ে গেছে। এগুলো সমস্যা হবে না।

না পিনু সাব বুঝেন না। বরকে উঠতে বলেন।

এসময় পুলিশ আসে। সবাই যখন এ পাশে ব্যস্ত তখন আপা গ্রামের সকল নিয়ম ভেঙে গিয়ে থানায় অভিযোগ করতে যান।

বিয়ে ভেঙে যায়। বর থানা হেফাজতে। সাথে ঐ পিনু সাবও।

মিরাজের মা-বাবা মুষড়ে পড়েন।
: মা, এই কি করলি তুই। জীবনটাকে এভাবে নষ্ট করলি কেন?

সবাই আপাকে দোষারোপ করলেও মিরাজের ভালো লাগে। আপা ঠিক কাজটাই করেছেন। সবাই এরকম কাজ করে না বিধায়ই মেয়েদের পরিবারের এতসব নতজানু নিয়ম মানতে হয়।

১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×