২৩ আগস্ট আমার জীবনের একটি স্মরণীয় দিন। অফিস যাচ্ছিলাম। প্রচণ্ড ভীড়। কোনো বাস পাচ্ছি না। দুই তিনটা বাস এলো তাতে উঠতেই পারলাম না। পরের বাসটাতে বাধ্য হয়েই উঠলাম। কারণ আমার অফিসের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তার বাসের গেটে ঝুলতেই হলো। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ দেখলাম আমার বাসের পাশ দিয়ে আরেকটি খুবই কাছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি অন্য বাসটির সাথে ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়লাম। রাস্তায় পরেই দেখলাম অন্যকোন বাস আসছে কিনা পেছন থেকে। আমার ভাগ্য মনে হলো খুবই ভালো পেছনে কোনো গাড়ি ছিল না। যার জন্য আমি নিশ্চিত মরনের হাত থেকে বেচে গেলাম। পেছনে কোনো গাড়ি থাকলেই আমি আর বাচতাম না। প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি একটি দাত ভেঙ্গে গেছে। হাতে, বুকে পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। কয়েকটি জায়গায় চামড়া ছিলে গেছে। তখনও আমার জ্ঞান ছিল। এবং আমি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ ফুটপাথে বসে থাকলাম। তার পরেই মনে হলো নতুন জীবন পেলাম। আনন্দ হচ্ছিল বেচে গেলাম বলে। এবং তখন আমার স্ত্রীর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কারণ মাত্র ছয় মাস হলো আমি বিয়ে করেছি। মাথায় কোনো আঘাত না পাওয়ার কারণে বাসায় ফিরে গেলাম। ঘরে ঢোকা মাত্র আমার অবস্থা দেখে স্ত্রী কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। আমি তাকে কি বলবো বুঝতে পারছি না। শুধু বললাম তোমার জন্যই এখনো বেচে আছি। কিছুক্ষণ পর বাসায় ডাক্তার ডাকা হলো। ডাক্তার দেখে বললো কোথাও ভাঙেনি। শুধু মাসল থেথলে গেছে। একটি ইনজেকশন দিল এবং কিছু অসুধ দিয়ে ৭ দিনের বিশ্রাম এ থাকলে বললো। আমি তখন অফিসে জানালাম। অফিস থেকে বললো কোনো অসুবিধা নেই আমি সুস্থ হয়েই অফিসে আসেন।
আত্মীয় স্বজন সবাই জেনে বাসায় আসতে লাগলো। ফোনে খোজ খবর নিতে লাগলো। বয়স্ক মা অস্থির হয়ে আছেন। তাকে বললাম কোনো চিন্তা করোনা। তোমার আশির্বাদ আমার সাথে আছে। আমার কিছুই হবে না। মরণে খুব কাছ থেকে ফিরে এলাম।
পরদিন আমার চিন্তায় হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক আমার স্ত্রীর জ্বর আসলো। ডাক্তার দেখলাম, টাইফয়েড। এখন আমি আমাকে দেখবো না স্ত্রীকে। এই অবস্থায় দিনগুলো কাটালাম। বর্তমানে দুজনেই মোটামুটি সুস্থ্য আছি। তবে আমার হাতের ব্যথা এখনো কমেনি। বুকের পাজরেও ব্যথা আছে। ওষুধ খাচ্ছি। আশাকরি ভালো হয়ে যাবো।
তবে এই আমাদের দুজনেই অসুস্থতা আমাদের মধ্যে ভালোবাসাটা অনেকটা বাড়িয়ে দিলো।
সত্যিই একটা নতুন জীবন পেলাম।
এতো কথা লেখার কারণটা হলো যতই সমস্যা থাকুক কেউ যেন বাসে না ঝুলেন। বা ঝুলে কোথাও যাবেন না। এখন বাসে কাউকে ঝুলতে দেখলেই ভয় লাগে। নিজের কথা মনে পরে।
সবাই ভালো থাকুন। সাবধানে যাতায়াত করবেন। কারণ সামনেই খুশির ঈদ। ঈদের সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।