সিঞ্জন তন্ময় হয়ে ওর নতুন কবিতার প্লটে যায়-প্রাচীন কৃষ্ণশিলার রং ও মসৃনতায় দেহ তার অতশী কাচ। যার কেন্দ্রীভুত প্রতিফলিত রশ্মির তীব্র উত্তাপে ভস্মীভুত আমি। আমার ভস্ম বিছনে বহমান তার অর্ধউম্মুক্ত স্তনের ফোটা ফোটা ঘামের নোনতা স্রোত। আর এই ভস্ম থেকেই অঙ্কুরিত হয় প্রাণহীন অজস্র স্বপ্নবীজ। নিজেকে ফুড়ে ফুড়ে এসব স্বপ্ন যেকোন অস্থিত্বে প্রাণ দাবি করে। আমার প্রাণে আমি অজস্র হয়ে যাই। তখন ওর নাকফুল আমায় পথ দেখায়।নাকফুলের রাতপথের কখনও ভোর হয় না।খেলা করে কবিতার খাতার উপর আবার চশমার কাচের ভেতর,কান্তিহীন নাকফুল বাসরে।বারবার বিবস্ত্র ও নগ্ন করার খেলায় খেলায় প্রসববেদনার চিৎকারে ভেঙ্গে যায় চশমার কাচ-একটি নাকফুলের জন্য প্রেম । জরীর নাকফুল।
আমি বললাম,দুর্দান্ত।তাই বলে এই ফুটপাতে বসেই কবিতা লিখতে শুরু করিস না । আগে জরীর প্রেমে ডুবাডুবি খেল,দেখ ওর নাকফুল শুধুই তোর জন্য ফোটে কিনা। কিন্তু তখন আমার কল্পনাও ভাবেনি, বোধ আয়ত্বের বাইরে অন্য এক পৃথিবীর স্রষ্ট্রা ও। পরে সিঞ্জনকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে সাইক্রেটিস্ট আমাকেও মতিভ্রমগ্রস্থ বলে প্রেসক্রাইব করেছিল।
মনস্তত্ত্ব-পৃথিবীর এ গূঢ় রহস্যময় অন্ধকার অংশে কতটাই বা আলো ফেলতে পারি আমরা। তারপরও ওকে বলেছিলাম,এটা তোর অনিয়ন্ত্রিত মনস্তাত্ত্বিক সত্ত্বা। কল্প ব্যাপ্তির সীমা পরিসীমা নেই। একবার চলতে শুরু করলে তা অসীমের গন্তব্য চায় আবার থামিয়ে দিলে সেখানে অতৃপ্তি সংসার ছড়িয়ে বসে।ও শুধুই হাসল।আমি আবার বলে চললাম, কোন মানে নেই।বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাস্ট ইয়ারে এত ব্যবধানে প্রথম হয়ে সেকেন্ড ইয়ারে তুই পরীক্ষার খাতায় নাকফুল নিয়ে কবিতা লিখে আসিস। আমি উত্তরের অপোয় থেমে যাই। অনেকণ পর সিঞ্জন স্পষ্ট করেই বলে,জরীর মুখোমুখি আমি বিভাজিত হতে শুরু করি।চক্রবৃদ্ধি বিভাজন।ওর নাকফুলের বিবর্ধণে আমি আমার ভবিষ্যত দেখতে পাই।ট্রেনের হুইসেলে উল্লসিত আত্মহত্যা। আমি ধমক দিয়ে বলি, থাম। সিঞ্জন আমি বলছি না যে এটা অসম্ভব,অস্বাভাবিক ভালবাসা । শোন, ভালবাসার দুই প্রান্তেই সর্বোচ্চ অনুভবের পর আমরা আর নিচে নামতে পারিনা। অনুভুতি তখন এগুবার পথ পায় না,আমরা বিভাজিত হতে শুরু করি। বিভাজন অবশ্যম্ভাবী নয়তো বাস্তবেই হৃদয় বিস্ফোরিত হত। তুই স্বাভাবিক শরীরী যৌনকামী নস। তোর বিভাজিত অস্তিত্বগুলো জরীর নাকফুলে তোরই অবদমিত কামনার অগ্নুৎপাত ঘটায়। সেখানে ওই নাকফুলের প্রতি চরিত্রে তোর কামিত বিপরীত লিঙ্গের অস্থিত্ব খুঁজে পাস তুই। তোর কবিতাগুলো আমি দেখেছি। নাকফুলের অসংখ্য প্রতি চরিত্র ও বিমূর্ততায় তারা জীবন্ত ,সচল ও কাঠামোগত।
কিছুই বলল না ও। দুপুর সময়ে ফ্যাকাল্টির ক্যাফেটরিয়ায় কোন আড্ডা নেই। অনেকটা নিরব। বয়রা ঝিমুঝিমু। সিঞ্জন উঠে যায়। বুথ থেকে দুকাপ কফি নিয়ে আবার সামনে বসে,মুখোমুখি। বললাম,জরীকে দেখতে চাই,মেপে দেখতে চাই কতোটা ঘোর আছে জরীর নাকফুলে। হ্যা বা না কোন উত্তরই দিল না সিঞ্জন। অসহায় এক হাসিতে ওর গন্তব্যহীন চোখের দিকে তাকিয়ে আমি আর উত্তরের প্রত্যাশা করিনি।
বন্ধুত্বের দাবি দিয়ে অনেক অনুরোধে কয়েকদিন পর ওকে আমি এক মনো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। ডাক্তার সমস্যা ধরতে পারছিলেন না। আমি সাইক্রেটিস্টকে বললাম,আপনাকে সহজ করে দিচ্ছি- সমস্যার নাম জরী-নাকফুল ও কবিতা।তারপর সিঞ্জনের ঘটনা ও আমার ব্যাখ্যা শুনে সাইক্রেটিস্ট বললেন,আপনারা দুজনেই মতিভ্রমগ্রস্থ সমস্যায় ভুগছেন। হাসপাতলে ভর্তি হতে হবে তা নাহলে দুজনেই খুব শীঘ্রই মস্তিস্কের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ হারাবেন। আমরা বেরিয়ে আসি।সিঞ্জন অনেকদিক পর এভাবে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে ও বলে,ঢুকলাম এক পাগল বেরিয়ে আসলাম দুই পাগল। বিরক্ত মনে আমারও হাসি চলে আসে তখন। কিন্তু পরেই সিঞ্জন গম্বীর হয়ে বলে,আমাকে আর কিছু বোঝাতে আসিস না যেন।তবুও আমি ওকে একটি অনুরোধ করি-সিঞ্জন তুই আর কবিতা লিখিস না।
এরপর অনেকদিন বিছিন্ন আমরা। জীবনের তাড়া খেয়ে ছুটতে ছুটতে ওকে ভুলেই বসেছিলাম। দু বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিতে গিয়ে ওকে খুঁজি আমি। পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়,সিঞ্জন পরীক্ষা দিতে আসেনি। ট্রেনে কাটা পড়া বিভৎস লাশের কল্পনায় আমি শিউরে উঠি। অনেক খোঁজাখুজির পর ওর বাড়ির সন্ধান পাই।ঘেরহীন উম্মুক্ত বিবর্ণ আধপাকা ঘর,ভঙ্গুর।সাঁঝবেলায় দুয়ারের সিড়িতে বসে আছে বয়সের ভারে গুটানো এক বৃদ্ধা। উঠোনের ঝরা পাতা সরাতে সরাতে এক মধ্যবয়সী নারী উচ্চস্বরেই বলে,এক সাইঝ বেলায় দুই বছর আগে পোলাডা হেই যে বাইর হইয়া গেলো আর ফিরল না। পোলা আইব বইলা এই বুড়ি আইজও বাইচা আছে। আমরা সিঞ্জনের খোঁজ পাইনি। অনেক পরে আমি নিশ্চিত হই-জরী ওর কবিতার নায়িকা। বাস্তবে জরী ও নাকফুলের কোন অস্থিত্ব নেই।সম্ভবত সিঞ্জন আমার অনুরোধ রাখেনি।
কি অতিপ্রাকৃত যোগাযোগ। অনুরোধ রাখেনি দোলাও। শরীর জুড়ে কোন অলংকারের বসন নেই অথচ ওর মুখায়াবয়ে ওই নাকফুলে দৃষ্টি আটকে যায়। আমি ঝাঁকিয়ে উঠে মন্দ্রতা থেকে সরে আসতে চাই,নিজেকে বোঝাই কিছুই না কিছূই না-জরী ও নাকফুলের স্রষ্টা আমি নই কারণ আমি কবিতা সৃষ্টি করতে পারি না,তোমরা কাকে ভর করে সক্রিয় হবে বল। তারপর কখনও ফিরে আসি কখনও এলোমেলো করে ফেলি সব।দোলা তখন হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে,বলে-আমিতো তোমার প্রেমিকা নই। আমার দিকে তাকালে অসংলগ্ন হয়ে যাও কেন? দোলাকে আমি কোন উত্তর দেই না। প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাই। এখন আমি ওকে নিয়েও ভয় পাই,কিছূই বলতে পারি না। অলিয়স ফ্রঁসেজ এ ছবি মেলায় দোলার চারটি পোট্রেট চিত্র দেখেছিলাম। বিমূর্ত বিষয়বস্তু থাকা সত্ত্বেও সবগুলো চরিত্রের মূল সে মুছে দিয়েছে।বুধবার লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যার ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে দোলাকে জিজ্ঞেস করলাম,চারটি পোট্রেটে তোমারই চারটি সত্ত্বা,তাই না। দোলা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে-হ্যা,আমার মৃত চারটি সত্ত্বা। তোমাকে পরের প্রশ্নটি করতে হলো না,উত্তর আগেই দিলাম-ওরা মারা গেছে বলেই ওদের মূল মুছে দিয়েছি। দোলা আর কিছু বলে না।একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে,আমার গা ঘেষে হাঁটোত।সিগারেট টা নিতে হতে পারে।
তখনও দোলার কোন বাহ্যিক অস্বাভাবিকত্ব ছিল না। সিঞ্জন সমাজকে পাশ কাটিয়ে নিজের পৃথিবী গড়ছিল দোলা তেমন নয়। নিয়মিত ছবি আঁকছে,শিশুদের সাথে রং তুলি নিয়ে খেলছে। আড্ডায় মেলামেশায় সবখানেই হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত সে। দোলার সাথে আমার সম্পর্ক প্রেম-বন্ধুত্বতের মাঝামাঝি একটা জায়গায়।বন্ধুত্বে তুইতে নেমে আসতে পারিনি আবার রোমান্সের তুমিতেই না।আমাদের তুমিতে আমরা পরস্পরকে বিশ্বস্ত ভাবতাম। তবে আমার প্রতি ও কখনও উৎসুক হয়ে উঠেনি। একদিন ওকে বললাম-দোলা,আমি তোমার সব ছবি দেখতে চাই।আমার কথা শুনে দোলার তাচ্ছিল্য,যার কবিতা বোঝার মনস্তত্ত্ব নেই তিনি বুঝবেন চিত্রকলা।এইখানে বেওয়ারিশ মনস্তত্ত্বের সাথে অসীম দৃষ্টি লাগে।আগে আমার কাছে কবিতায় হাঁটা,তারপর দৌড়,তারপর উড়া,তারপর হারানো আর তারপর বিলীন হতে শেখ। নিজেকে বিলুপ্ত করতে শিখে আমার ছবি দেখিস।আমি চুপ করে থাকি। দোলা আমার দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে আমাকে ভেঙ্গিয়ে বলে, বাবু সোনা রাগ করেছে নাকি। এবার আমি অসহায় বোধ করি। হালদার জলে এক সোনা সন্ধ্যায় নৌকার দুলুনিতেই ও সময়কে আঁকে। বলে,আপাতত সময়কে থামিয়ে দিলাম যেদিন গতিময় সময়ের হৃৎপিণ্ড ফুড়ে ফেলব সেদিন দেখবে হঠাৎ পৃথিবী উধাও হয়ে গেছে। আমি বললাম,তুমি কি নিজের মধ্যে আছো? ও আমার দিকে তাকায়,কিছুটা উষ্মা নিয়ে বলে-নিজেকে ছাড়া আর কিছু চেনো তোমরা? উত্তরাধিকারের চোখ দিয়ে শুধূ দেখতেই শিখেছো,দৃষ্টি ফেলতে শেখোনি।দেহটাও তো ফাঁপা খোলস।ভেতরে হৃৎপিণ্ড আছে ঠিকই হৃদয় নেই।
দোলার কোন ছবিতে ইম্প্রেশনিজমকে আমি স্থির দেখিনি। কিসের মোহে যেন সেখানে শুধু ছুটতে ইচ্ছা করে। তখন মস্তিস্ক জমে যায় হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়। আমি দোলাকে বলি,এটা কিভাবে সম্ভব? ও বলে,ইম্প্রেশনকে ন্যূড করে দিয়েছি। দোলা আমাকে একবার ওর ছবির প্রসবঘরে নিয়ে গিয়েছিল।বলল,এটা আমার বেডরুমও। দেয়াল জুড়ে বিশাল এক আয়নাকে পেছনে রেখে আমাকে ওর বিছানায় বসতে বলে। দেখি ওয়ো আমার সামনে আর্টশীট-পেন্সিল নিয়ে বসে পড়েছে।বলল,তুমি কি ক্রমান্বয়ে ন্যূড হতে পারবে?আমি হেসে দিয়ে বললাম, মানে? আর্টশীট স্ট্যান্ডে মেলাতে মেলাতে দোলার উত্তর,ভয় নেই। তোমার বিবসন শরীর আমার স্কেচে আসবে না। তুমি শুধু আমার দিকে তাকাবে,আমার শরীরের যেখানে তোমার তাকাতে ইচ্ছা করে।আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম।দোলা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,কি ভাবতে চাও?আর ভাবলেও কতদুর যেতে পারবে,আমার যেখানে বসবাস তোমার ভাবনা তার পথ চেনে না।শুরু হয় মূহুর্তে মূহুর্তে ক্রমাগত বদলে যাওয়ার ঘোর। আমাদের বস্ত্রহরণের ক্রম। দোলার ছুড়ে ফেলে দেয়া কমলা রঙের অন্তর্বাসেও আমার দৃষ্টি ঘুরে আসে। একবার নিজের দিকে তাকিয়েছিলাম,কেমন যেন লজ্জা পেলাম।আবার ফিরে যাই দোলার শরীরে।একটার পর একটা আর্টশীট পাল্টাতে থাকে ও। বিচিত্রসব পেন্সিল ঘুরপাক খায় ওর আঙ্গুলে।আমি ঘেমে উঠি।দোলা ধীর হতে থাকে। একসময় যেন ঘোর থেকে ফিরে আসে,স্বাভাবিক চোখ। ঠোঁট ও নাকের উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম নিয়ে এক রহস্যময় হাসিতে আমার দিকে তাকিয়ে শিস দেয় ও,যেন আমি কোন দাগী অপরাধী। হাতের তুড়ি বাঁজিয়ে আমাকে পোশাক পড়ে নিতে ইঙ্গিত করে। দোলা তখনও বিবস্ত্র,পাশ থেকে ম্যাচ হাতরে নিয়ে সিগারেট ধরায়। পায়ের উপর পা ভেঙ্গে বুকের কাছে গুছিয়ে নিয়ে মেঝেতে বসে পেছনের দেয়ালে হেলান দেয়। আমি শরীরে পোশাক তুলে নেই। দোলার দিকে তাকাই না। মেঝেতে পড়ে থাকা আর্টশীট গুলোর তাকাতেই আমি শিউরে উঠি,মুখ থেকে বেরিয়ে আসে হায় ইশ্বর।শীটগুলোতে দোলার তবিত দেহ সেখানে হিংস্র হায়েনার অস্থিত্বে আমি,টেনে হিচড়ে অন্তর্বাসটিকেও ছিন্ন ছিন্ন করেছি।কোনটায় ভয়ংকর লেলুপ দৃষ্টি,ধর্ষণে উল্লসিত। কোথাও একটি নাকফুলে ভীত আমার চোখ। আমি আবার ঘেমে উঠতে থাকি,অনুভুতি স্তব্ধ হয়ে যায়। তখন শরীরের কোথাও কেটে ফেললেও আমি টের পেতাম না। বিস্ময়, হতাশা,আতংক,ঘৃণা আর পাপীর চেহারা নিয়ে আমি দোলার দিকে তাকাই। দোলার সিগারেট শেষ হয়ে আসে। মুখতুলে আমার দিকে তাকাতেই হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। আমার তখন নিজেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে ইচ্ছে করে।আমি দোলার মাথায় হাত বুলাতে যাই ও প্তিতায় আমার হাত ছুড়ে দেয়।শুধু বলে,তুমি এখন যাও। আমি দাড়িয়ে থাকি।ওকে ওভাবে রেখে যেতে আমার ইচ্ছা করছিল না। তবুও আমি চলে আসি।
এরপর দোলা ঘর থেকে বের হতো না খুব একটা। আর্ট স্কুলের চাকরিও ছেড়ে দিয়েছিল। ফোন বন্ধ করে রাখে।বন্ধুদের কেউ বাসায় গেলে দেখা করত না। আমি বহুবার ওর বাড়ির পথে গিয়েও ফিরে আসি,কেন জানি ওর বাসার দুয়ার পর্যন্তও যেতে পারিনি। প্রায় আটমাস পরে একদিন গভীর রাতে ওর অপ্রত্যাশিত ফোন পেয়ে আমি অবাক হই। ইতস্ততা নিয়ে হ্যালো বলতেই দোলার বিলাপস্বরী হাসি।বলে, আমায় একবার সমুদ্রে নিয়ে যাবে। ফোনের এপাশেও আমি ওর দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাই। বুকের ভেতর তীব্র কষ্ট অনুভব করি। দোলাকে বললাম,সকালেই আসছি আমি।দোলার মা দরজা খুলে দেয়।সম্ভবত আমি আসব দোলা সেটা বলেছে। আমি ওর মায়ের অশ্রুসিক্ত চোখ দেখি।আমি কিছুই বলি না,চুপচাপ বসার ঘরে যাই।নাস্তার ট্রে টেবিলে রেখে হঠাৎ ওর মা মৃদুস্বরে কেঁদে ওঠে আমার দুহাত চেপে ধরেন,বাবা আমার মেয়েটাকে ফেরাও তোমরা। ডাক্তাররা ওর কোন রোগ ধরতে পারেনি। অথচ মেয়েটা দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। পেন্সিল-রং-তুলিই আমার মেয়েটাকে তিলে তিলে মেরে ফেলছে।পেন্সিলের ডগায় খসখস করে কিসব কিসব আঁকিঝুকি শেষে কয়দিন পরপর বিরবির করে বলে আরেকটা দোলার মৃত্যু হলো,আমার পালাও আসছে। আঁচলে চোখ মোছেন তিনি,বলেন-কতকিছুই করলাম এই ছয়সাত মাস ধরে। যেখানে যা শুনেছি তাই করেছি। কতবার ছবি রং-তুলিও ফেলে দিয়েছি আবার এনেও দিয়েছি।ওসব ফেলে দিলে বলে,আঙ্গুল কেটে ফেলব দেয়াল কি তুমি ফেলে দিতে পারবে। তোমরা বল আমি কি করব, কার কাছে যাব। আমার হাতের উপর টপটপ করে পড়তে থাকে এক মায়ের চোখের জল। অনেক সামলে আমি আমার টলমল চোখের জল সম্বরণ করি।
বাসায় ওকে প্রথম দেখে আমি চমকে উঠেছিলাম। আগুন ঝরা রূপবতী দোলা ভস্ম হয়ে কান্তি দু:খ আর দুভিরে চিহ্ন নিয়ে যেন ধ্বসে পড়ার অপো আছে। আমরা সমুদ্রে যাই। সমুদ্রের জলে নিজেকে অর্ধেক ডুবিয়ে দুহাত মেলে বুকভরে অনেক নিশ্বাস নেয় ও। কলরোলে কান্ত দুপুর,পড়ন্ত বিকেল ও রঙ বদলানো সন্ধ্যার পুরোটা জুড়েই দোলা অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিল বারবার। সন্ধ্যায় আমার দিকে কিছুণ তাকিয়ে আনমনেই হেসে উঠে।একটু পরে নাকফুলটি খুলে নিয়ে সমুদ্রের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে,আমায় একবার চুমু খাবে? আমি চারপাশ তাকাই,একটু বিব্রত বোধ করি। দোলা চটকরে আমার পিঠে চড় দিয়ে বলে-চুমু দিতে হবে না।ওঠো,ফিরে যাব।আমি নিশ্চিত তুমি ভাল থাকবে।আমার পৃথিবীতে তোমার কখনও জন্ম হবে না।যেতে যেতে দোলাকে অনুরোধে বলি,কি বা এমন হবে,তুমি যদি আর ছবি না আঁক। দোলার ফ্যাকাশে উত্তর-রং তুলি পেন্সিলকে আমি বিদায় দিয়েছি,গতকালই।আমার সব সত্ত্বাই এখন মৃত। চুল খুলে দেয় ও। গাড়ির জানালা দিয়ে বিপরীত বাতাসে ওর এলোমেলো উড়াউড়ি চুলের দিকে আমি তাকিয়ে থাকি। এর দুদিন পরে শেষরাতের দিকে দোলা মারা যায়। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট-মৃত্যুর কারণ মস্তিস্কের রক্তরণ! ## আল-আমীন দেওয়ান উইথ হিজ লাইফ।