৯১ এর জলোচ্ছ্বাস এর সময় আমি একেবারেই শিশু
থাকতাম চট্টগ্রাম ঈশা খা গেটের কাছে রেল গেট-পুকুরপাড়ে
১০ নাম্বার মহা বিপদ সংকেত
আম্মুর কাছে শোনা
আসে পাশের লোকজন বলত
এই এলাকায় কোন দিন পানি উঠেই না
আর জলোচ্ছ্বাস তো দুরের কথা
রাতের বেলা পানি বাড়তে শুরু করলো
সাথে যেই রকম বাতাস সেই রকম বিদ্যুৎ চমকানি
সব ডুবে যাইতেছে
আব্বু আম্মুকে জিজ্ঞেস করে
এখন কি করবো ?? বাড়িআলা ২ তালায় থাকে উনার বাসায় গিয়ে উঠবো ??
আব্বু আম্মু ২ জনই হাটু পানি ঠেলে বের হল
বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারে না আম্মু
একদিকে পানির টান
আরেকদিকে কোলে আমি
আর ১ মিনিট দেরী করলেই আমকে আর আম্মুকে জলোচ্ছ্বাস এর পানি ভাসায়ে নিয়ে যেত
নির্ঘুম এক ভয়াল রাত পার হইলো
সকাল বেলা পানি নেমে গেলে আব্বু আম্মু বের হয়ে দেখে
বাড়িআলার বিল্ডিং টা পুরান দেখেই বিল্ডিংটা টিকে আছে
আসে পাশের সব টিনসেড তো ভেসে গেছেই
বাড়িআলার কয়েক গজ সামনে বানানো নতুন একতালা পাকা বিল্ডিং টাও ভেসে গেছে
বিল্ডিং এর সামনের পুকুরে, গাছে, বিদ্যুতের খুঁটিতে লাশ আর লাশ
বাসায় থাকার মতো অবস্থা ছিল না
উঠলাম ঈশা খা কলোনির ভিতরে এক আঙ্কেল এর বাসায়
৭ দিন পর চলে গেলাম গ্রামের বাড়ি
আমার আব্বু এক জলোচ্ছ্বাস দেখেই আর থাকলো না চট্টগ্রাম
বলে কয়ে চলে আসলো ঢাকায়
বেশ কয়েকবছর পরে আব্বুকে আবার দিছিল চট্টগ্রাম
আব্বু কোনমতেই যাবে না
অফিস থেকেও না পাঠায়ে ছাড়বে না
শেষে আব্বু বলে বসলো
আমাকে পাহাড়ে দেন, রাঙ্গামাটি দেন, কিন্তু আমি চট্টগ্রাম শহরে থাকবো না
আমার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে ইতিহাস এখানেই শেষ
যেটা বলার জন্য এতো কথা বলা
১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত থেকে বের হয়ে আসছি তো
এখন আমার বা আম্মুর বা আব্বুর কারোরই এই ৬-৭-৮ নাম্বার বিপদ সংকেত গায়ে লাগে না
কি এইগুলা ?? কিছুই না
মৃত্যু যেখানে ছিল ১ মিনিট দূরে
এই সব ঝড়, সাইক্লোন তো দুধের বাচ্চা ...............