somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে,ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে করণীয়

১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বন্যা, খরা, ভূমিধস, টর্নেডো, শৈত্যপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছর ব্যাপক সম্পদ ও প্রাণহানি ঘটে থাকে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সম্পদ ও প্রাণহানির সংখ্যাই বেশি।

এ বিষয়ে জনগণকে বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আগে, ঘটনার সময় ও পরে জনগণের করণীয় বিষয়গুলো জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ও ক্ষয়ক্ষতির হ্রাসে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। এ অবস্থায় সর্বোচ্চ সতর্কতাই ক্ষতি হ্রাসে সর্বোত্তম পন্থা বলে পরামর্শ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অধিদপ্তর।

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আগে করণীয়:


* দুর্যোগের সময় কোন এলাকার লোক কোন আশ্রয়ে যাবেন, গৃহপালিত পশুপাখি কোথায় রাখবেন, তা আগে ঠিক করে রাখুন এবং জায়গা চিনে রাখুন।

* বাড়িতে, গ্রামে, রাস্তায় ও বাঁধের ওপর গাছ লাগান।

* যথাসম্ভব উঁচু স্থানে শক্ত করে ঘর তৈরি করুন। পাকা ভিত্তির ওপর লোহার বা কাঠের পিলার এবং ফ্রেম দিয়ে তার উপর ছাউনি দিন। ছাউনিতে টিন ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, ঝড়ের সময় টিন উড়ে মানুষ ও গবাদি পশুকে হতাহত করতে পারে। তবে ০.৫ মিমি পুরুত্ব বিশিষ্ট টিন ও জেহুক ব্যবহার করা যেতে পারে।

* উঁচু জায়গায় টিউবওয়েল স্থাপন করুন, যাতে করে জলোচ্ছ্বাসের লোনা ও ময়লা পানি টিউবওয়েলে ঢুকতে না পারে।

* জেলে নৌকা, লঞ্চ ও ট্রলারে রেডিও রাখুন। সকাল, দুপুর ও বিকেলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস শোনার অভ্যাস করুন।

* সম্ভব হলে বাড়িতে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম (ব্যান্ডেজ, ডেটল/স্যাভলন প্রভৃতি) রাখুন।

* জলোচ্ছ্বাসের দূষিত পানির প্রকোপ থেকে রক্ষায় নানারকম শস্যের বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিন।

* বাড়িতে এবং রাস্তায় নারকেল, কলাগাছ, বাঁশ, তাল, কড়ই ও অন্যান্য শক্ত গাছপালা লাগান। এসব গাছ ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের বেগ কমিয়ে দেয়। এর ফলে মানুষ দুর্যোগের কবল থেকে বাঁচতে পারেন।

* নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে প্রত্যেকেরই সাঁতার শেখা উচিৎ।

* ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বা অন্য আশ্রয়ে যাওয়ার সময় কী কী জরুরি জিনিস সঙ্গে নেওয়া যাবে এবং কী কী জিনিস মাটিতে পুঁতে রাখা হবে, তা ঠিক করে সে অনুসারে প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ।

* আর্থিক সামর্থ্য থাকলে ঘরের মধ্যে একটি পাকা গর্ত করুন। জলোচ্ছ্বাসের আগে এই পাকা গর্তের মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতে পারবেন।

* ডায়রিয়া মহামারীর প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। শিশুদের ডায়রিয়া হলে কীভাবে খাবার স্যালাইন তৈরি করতে হবে, সে বিষয়ে পরিবারের সবাইকে প্রশিক্ষণ দিন।

* ঘূর্ণিঝড় আশঙ্কার মাসগুলোতে বাড়িতে মুড়ি, চিড়া, বিস্কুট জাতীয় শুকনো খাবার রাখা ভালো।

* নোংরা পানি কীভাবে ফিটকারি বা ফিল্টার দিয়ে খাবার ও ব্যবহারের উপযোগী করা যায়, সে বিষয়ে নারী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিন।

* ঘূর্ণিঝড়ের পরে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করুন। বৃষ্টির পানি নিরাপদ। মাটির বড় হাড়িতে বা ড্রামে পানি রেখে তার মুখ ভালোভাবে আটকে রাখতে হবে, যাতে করে পোকা-মাকড়, ময়লা-আবর্জনা ঢুকতে না পারে।

পূর্বাভাস পাওয়ার পর দুর্যোগকালে করণীয়:

* ঘরগুলোর অবস্থা পরীক্ষা করে মজবুত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। যেমন- মাটিতে খুঁটি পুঁতে দড়ি দিয়ে ঘরের বিভিন্ন অংশ বাঁধতে পারেন।

* দুর্যোগকালীন স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।

* বিপদ সংকেত পাওয়া মাত্র বাড়ির মেয়ে, শিশু ও বয়স্কদের আগে কাছাকাছি নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে পোঁছে দিতে প্রস্তুতি রাখুন ও সময় নষ্ট না করে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান।

* বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় আগুন নিভিয়ে যাবেন।

* অতি প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যসামগ্রী যেমন- ডাল, চাল, দিয়াশলাই, শুকনো কাঠ, পানি, ফিটকিরি, চিনি, নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধ, বইপত্র, ব্যান্ডেজ, তুলা, ওরাল স্যালাইন ইত্যাদি পানি নিরোধক পলিথিন ব্যাগে ভরে গর্তে রেখে ঢাকনা দিয়ে পুঁতে রাখুন।

* গরু-ছাগল কাছের উঁচু বাঁধে অথবা কিল্লা বা উঁচুস্থানে রাখুন। কোনো অবস্থাতেই গোয়াল ঘরে বেঁধে রাখবেন না। কোনো উঁচু জায়গা না থাকলে ছেড়ে দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করতে দিন।

* শক্ত গাছের সঙ্গে কয়েক গোছা লম্বা মোটা শক্ত রশি বেঁধে রাখুন। রশি ধরে অথবা রশির সঙ্গে নিজেকে বেঁধে রাখুন যাতে প্রবল ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আপনাকে উড়িয়ে নিতে না পারে।

* আশ্রয় নেওয়ার জন্য নির্ধারিত বাড়ির আশেপাশে গাছের ডালপালা আসন্ন ঝড়ের আগেই কেটে রাখুন, যাতে ঝড়ে গাছগুলো ভেঙে বা উপড়ে না যায়।

* রেডিওতে কিছু সময় পর পর ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনতে থাকুন।

* দলিলপত্র ও টাকা-পয়সা পলিথিনে মুড়ে নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখুন অথবা সুনির্দিষ্ট স্থানে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখুন।

* টিউবওয়েলের মাথা খুলে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং টিউবওয়েলের খোলা মুখ পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে আটকে রাখতে হবে যাতে করে দূষিত বা লবণাক্ত পানি টিউবওয়েলের ভেতর প্রবেশ না করতে পারে।

দুর্যোগ পরবর্তী করণীয়:

* রাস্তা-ঘাটের ওপর উপড়েপড়া গাছপালা সরিয়ে ফেলুন, যাতে করে সহজে সাহায্যকারী দল আসতে পারে এবং দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হয়।

* আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করুন এবং নিজের ভিটায় বা গ্রামে অন্যদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিন।

* অতি দ্রুত উদ্ধার দল নিয়ে খাল, নদী, পুকুর ও সমুদ্রে ভাসা বা বনাঞ্চলে বা কাদার মধ্যে আটকেপড়া মানুষ বা গবাদিপশুকে উদ্ধার করুন।

* ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ যাতে করে শুধুমাত্র এনজিও বা সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজ উদ্যোগে অন্যকে সাহায্য করেন, সে বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।

* ত্রাণের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সচেষ্ট হন। ত্রাণের পরিবর্তে কাজ করুন। কাজের সুযোগ সৃষ্টি করুন। ত্রাণ যেন মানুষকে কর্মবিমুখ না করে কাজে উৎসাহী করে, সেভাবে ত্রাণ বিতরণ করতে হবে।

* দ্বীপের বা চরের নিকটবর্তী কাদার মধ্যে আটকেপড়া মানুষ বা গবাদিপশু উদ্ধারের জন্য দলবদ্ধ হয়ে দড়ি ও নৌকার সাহায্যে উদ্ধার কাজ আরম্ভ করুন। কাদায় আটকেপড়া লোকের কাছে দড়ি বা বাঁশ পৌঁছে দিয়ে তাকে উদ্ধার কাজে সাহায্য করা যায়।

* ঝড় একটু কমলেই ঘর থেকে বের হবেন না। পরে আরও প্রবল বেগে অন্যদিক থেকে ঝড় আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

* পুকুর বা নদীর পানি ফুটিয়ে পান করুন। বৃষ্টির পানি ধরে রাখুন।

* নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ লোকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ত্রাণ বণ্টন (আলাদা লাইনে) করুন।

* দ্রুত উৎপাদনশীল ধান ও শাকসব্জির জন্য জমি প্রস্তুত করুন, বীজ সংগ্রহ করুন এবং কৃষি কাজ শুরু করুন যাতে করে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফসল ঘরে আসে।
আমরা সবাই দোয়া করি যাতে আল্লাহ আমাদের দেশ এবং দেশের মানুষকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করেন

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:২৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×