somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘটনা ও ঘটনা থেকে উতসারিত গল্প-৪: লেখক হাসান আহমেদ সাহেব মহা ফাঁপড়ে পড়ে গেছেন।

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা:
গত ১৬ অগাস্ট রাত ৮টা ৪৩ মিনিটে জনপ্রিয় ব্লগার হাসান মাহবুবের পোস্ট করা ‘গল্প যদি শুনতে চাও, আমার কাছে এসো!’ গল্পটি পড়েছিলাম।

গল্প:
লেখক হাসান আহমেদ সাহেব মহা ফাঁপড়ে পড়ে গেছেন।একটা গল্প যে তাকে এমন একটা বিদঘুটে অবস্থায় ফেলে দিবে তা তিনি কখনো ভাবেননি।
গল্পটা এরকম- গল্প কথক যিনি তিনি একজন লেখক।তার স্ত্রীর নাম জেনি যা বাস্তব জীবনে লেখকেরও স্ত্রীর নাম বাস্তব জীবনের মতোই লেখক ও তার স্ত্রী - দুজনেই মধ্য বয়েসি।প্রধান চরিত্র লেখক উপলদ্ধি করছেন যে তার স্ত্রীর ক্রমশ স্ফীত হয়ে উঠা শরীর আর তার ভাল লাগছে না এ কথাটি তিনি তার স্ত্রীকে বলতে চাইছেন কিন্তু ভদ্রতা ও লজ্জার কারনে পারছেন না।তিনি ছাড়াছাড়ি চাচ্ছেন।পত্রিকায় প্রকাশের পর গল্পটা তার স্ত্রীর চোখে পড়ল।তখন থেকেই ঘটনার শুরু।তার স্ত্রী মনে করলেন ব্যাপারটা লেখকের নিজের মনের কথা।তাই তিনি চরম অপমানিত বোধ করলেন এবং হাসান সাহেবের সাথে ঘর করতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং তার বাপের বাড়ি চলে যেতে উদ্যত হলেন।
স্ত্রীর কথা শুনে হাসান সাহেবের তো আক্কেল গুড়ুম অবস্থা।প্রথমে ভেবেছিলেন কপট অভিমান প্রকাশ করে লেখকের সাথে তার স্ত্রী মজা করছেন।কিন্তু পরদিন ভোরবেলা যখন জেনি তার বাক্স পেট্রা বেঁধে সত্যি সত্যি বাবার বাড়ি রওনা দিলেন তখন ঘামে তার সারা শরীর ভিজে উঠল।এ যে দেখি সত্যি সত্যি চলে যাচ্ছে! হাসান সাহেব একজন জনপ্রিয় লেখক ও ব্লগার।তার ব্লগে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিজিট করে।কোন গল্প পোস্ট করলে তাতে কমেন্টের সুনামি ছোটে। রূপক কোন গল্প হলে পাঠকদের আবার সেটার ব্যাখ্যা দিতে হয়।বই প্রকাশ পেলে প্রথম হপ্তাতেই প্রথম এডিশন শেষ হয়ে যায়।পত্রিকাওয়ালারা তার কলাম পাবার জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করে থাকে।কোন সভা সমিতি অথবা মিডিয়ায় কোন পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান তার উপস্থিতি ও বক্তৃতা ছাড়া কল্পনাই করা যায় না।সমাজে তার যখন এমন একটা অবস্থান তৈরী হয়ে গেছে তখন পারিবারিক জীবনে এমন একটি ঘটনা ঘটা মাত্রই তিনি লোকজনের কাছে এন্টি হিরোতে পরিণত হয়ে যাবেন।তার কাটতি অনেকখানি কমে যাবার সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে।তাই তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা শুরু করলেন তার বউকে আটকানোর।
দেখো এটা নেহাত একটা গল্প ছাড়া তো আর কিছুই না।তুমি অতোটা রেগে যাচ্ছো কেনো?
নেহাত গল্প? নেহাত গল্প! আমার খুব ভালো করে পুরুষ মানুষদের চেনা আছে।বেশি কথা বাড়াবা না।কথা বাড়ালে খুব খারাপ হবে।
তুমি তো আমার আগের গল্পগুলাও পড়সো।অনেক গল্পেই তো তোমার নাম ব্যবহার করসি।
করসো, বাট ওগুলো ছিল আমার প্রতি তোমার প্রেম প্রকাশের গল্প।এটাতে কি লিখসো? দাও বইটা দাও।আমিই না হয় পড়ে শুনাই।
হ্যা, লিখসি।কিন্তু সবটাইতো ভুয়া কথা।নেহাত বানানো গল্প।আমার পাঠকদের রিয়েলিটি আর কল্পনার জগতে দোল খাওয়ানোর জন্যই ওমনটা করসি।বিশ্বাস করো, পাঠকের মনে যাতে সত্য আর কল্পনার জগতে ঘুরতে ঘুরতে একটা কনফিউশনের সৃষ্টি হয় সেজন্য এমনটা করসি।কসম তোমার জেনি।এই যে তোমার মাথা ছুঁয়ে বলছি।
মাথা ছুঁতে হবে না।গল্পে তুমি লিখসো, তোমার আর আমাকে পছন্দ না।
এটাতো আমার কথা না, এটাতো গল্পের চরিত্রের কথা।
হাহ! গল্পের চরিত্রের কথা! আমাকে গল্প লেখা শিখায়েন না।তোমার মনের মধ্যে কথাটা না আসলে এটা তুমি লিখতে পারতা না।বাস্তব জীবনে এটা আসছে বলেই তুমি এমনটা লিখতে পেরেছো।
না সোনা, আমার মনে এটা আসতেই পারে না তোমার মতো রূপবতী একটা মেয়ে আর কোথায় খুঁজে পাবো বলো? শুনো তোমারে বুঝায়া বলি।একজন প্রফেশনাল গল্পকার সারাক্ষণ চিন্তা করে। সে যে কেবল নিজের জীবন থেকে ঘটনা নিয়ে লিখে সেটা না; সে আশেপাশের মানুষগুলোরেও নিয়া লিখে থাকে।ব্যাপারটা তুমি আমাদের ব্লগার কয়েস সামীর রিসেন্ট সিরিজগুলা যদি পড়ো তবে একেবারে ফকফকা বুঝতে পারবা তিনি যে ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গল্প লিখেন সে ঘটনা আগে পাঠকদের জানিয়ে দেন, পরে গল্প শুরু করেন।
মি. হাসান! ঐ যে বল্লেন; গল্পকার সবসময় তার নিজের জীবন থেকে লেখে না।আপনি তো বলতে পারলেন না গল্পকার কখনোই নিজের জীবন থেকে লেখে না, এখান থেকেই বুঝা যায় এ গল্পটার ক্ষেত্রে কি হয়েছে।পড়াশুনা আমরাও করি, অনেক করসি, আমিও আপনাকে অনেক গল্প উপন্যাস পড়ে শুনাতে পারি যেখানে লেখক তার নিজ জীবনকে কেন্দ্র করেই লিখসেন।তোমরা লেখকরা যতো সব নষ্টের জাত।থুঃ
শেষ কথায় এসে হাসান সাহেবের রাগ হল।তিনি বলে উঠলেন, কা..কা..কাজটা কিন্তু ঠি..ঠি..ঠিক হচ্ছে না।একটা নিছক গল্প নিয়ে এমনটা করলে আমি কিন্তু লে..লে..লেখালেখিই ছেড়ে দেব।
হ্যা, তাই করো।সেটা করলেই কেবল আমি ফিরে আসবো।চললাম।
জেনি গটগট করে হেটে বেরিয়ে গেল হাসান সাহেবের চোখের সামনে দিয়ে।
জেনি যেয়োনা, যেয়োনা লক্ষী সোনা।লোকে কী বলবে বলো? তুমি বুঝতে পারেছো না; জানাজানি হয়ে গেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে, অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
জেনি কর্ণপাত না করেই দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।হাসান সাহেব ও বের হলেন পিছু পিছু।জেনি টেক্সিতে উঠে যাচ্ছে।হাসান সাহেবও আরেকটা টেক্সি ডাকলেন।টেক্সিটা কাছে আসতেই তার হঠাত মনে হলো আজকের এ ঘটনা নিয়েই তো ফাটাফাটি একটা গল্প লেখা যায় তার আবার একটা প্রবলেম আছে।কোন গল্প মাথায় এলে সাথে সাথে না লিখলে ওটা আর লেখা হয় না কখনো। তিনি টেক্সিটা বিদায় করে দিয়ে যতোটা দ্রুত জেনির পেছন পেছন ছুটে এসেছিলেন তার থেকেও তাড়াতাড়ি বাসার দিকে ছুটলেন।কম্পিউটারের সামনে বসলেন।কি-বোর্ডেও কিগুলা অনবরত আঙুলের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হতে থাকল।কম্পিউটার স্ক্রীনে ভেসে উঠতে থাকলো,
লেখক হাসান আহমেদ সাহেব মহা ফাঁপড়ে পড়ে গেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৪০
১৩টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×