somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুবেল ভার্সেস রুবেল...

৩০ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবুরহাট হতে সংগ্রহ করা হয়েছিল পিচ্ছিটাকে। পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বলত ’আমি রুবেল’। আসল নাম ছিল নাসির মিয়া। শয়নে স্বপনে এই একটা নামই শুধু জপ করতো, রুবেল। বাসার সবাই মিলে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিল লেখাপড়া কাম ফুট ফরমাশের খাটানোর জন্যে। সেই হতে ছায়ার মত ঘুরে বেড়াত ডানে বায়ে। বাজারে, বন্দরে, খেলার মাঠে, যেখানেই আমি সেখানেই স্বঘোষিত রুবেল। দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাত টিভির সামনে বসে। রাজ্যের গল্প ফেদে দিনভর শুধু বক বক করে যেত। এই তার কাছেই জেনেছিলাম ঢাকাইয়্যা ছবিতে রুবেল নামের এক ’মহানায়ক’ আছে, যাকে হারানোর মত ’মার পুত’ ইহজগতে জন্মা নেয়নি। নিজের ছায়াকেও সে ফ্লাইয়িং কিক মারত, এবং আমাকে বাধ্য করতো তা দেখার জন্যে। গায়ের গেঞ্জি খুললে বুকের সবকটা হাড্ডি একসাথে বেরিয়ে আসতে চাইত তার। কিন্তু এ নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত ছিলনা সে, বরং কথায় কথায় আমাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিত মোকাবেলা করার জন্যে। কতই বা বয়স ছিল তার, বড়জোড় ৬।

রুবেল শব্দটার সাথে পরিচিতি অনেকদিনের। রুশ দেশের টাকার নাম রুবেল। প্রায় একযুগ পকেটে বহন করেছি হরেক কিসিমের এই বিদেশী টাকা। মাইটি সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের পর শব্দটা এখন আর তেমন হাংগামা তৈরী করেনা যেমনটা আগে করত। কিন্তু তাতে রুবেল শব্দের তাকৎ সামান্যতম হেরফের হয়েছে এমনটা ভাবা বোধহয় উচিৎ হয়নি। তারই প্রমান পেলাম কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক ঘটনার খবরটা পড়ে।

ওরা চার বন্ধু। রনি, রোমান, রুবেল ও রুবেল। বহুমাত্রিক পেশা ওদের। পার্ট টাইম খেটে খাওয়ার মানুষ হলেও ওদের ফুল টাইম ব্যবসা পুরানো ঢাকার অলি গলিতে ছিনতাই করা। এ পথেই জোগাড় হয় দামী একটা মুঠোফোন। রুবেল-১ ফোনটা মেরে দেয় বাকিদের ঠকিয়ে। রনি, রোমান ও রুবেল-২ তা মেনে নিতে পারে না। ফোন ফেরত চাইতে গিয়ে রুবেল-১ কর্তৃক ছুরিকাহত হয় রুবেল-২। এখানেই জমে উঠে নাটকের ক্লাইমেক্স। রুবেল ভার্সেস রুবেল! তিন বন্ধু প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনা মাফিক সবাই মিলিত হয় পরিত্যক্ত একটা স্টোরে। মনোরঞ্জনের জন্যে জোগার করা হয় মদ, ফেনসিডিল ও ভ্রাম্যমান পতিতা। রাত গভীর হওয়ার সাথে ওরাও নেশায় বুঁদ হয়ে যায়। এবং মোক্ষম সময়ে রুবেল-১’এর মস্তক আলাদা করে ফেলে বাকি ৩ জন। এখানেই শেষ হতে পারতো প্রতিশোধ পর্ব। একটা মোবাইলের জন্য বন্ধু খুন, বাংলাদেশের কনটেক্সটে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্ত তা হয়নি। কর্তিত মস্তক ব্যাগে পুরে তিন বন্ধু হাজির হয় সূত্রাপুরের মিম রেস্টুরেন্টের মালিক জাহাংঙ্গীর হোসেনের দুয়ারে। মানুষের মস্তক দিয়েও যে আয়-রোজগার সম্ভব এমন ঘটনা ক্রাইম দুনিয়ায় এতদিন ছিল অশ্রুত, অখ্যাত। কিন্তু এখন আর নয়। এই বন্ধুত্রয় দাবি করতে পারে নতুন এক রেকর্ডের। রেস্টুরেন্ট মালিক জাহাংগীরকে ঘটনার সাথে ফাঁসিয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বসে এই আইনস্টাইনের দল। টাকা আনার কথা বলে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে রেস্টুরেন্ট মালিক। পুলিশ ঘটনাস্থল হতে গ্রেফতার করে খুনিদের।

এ ধরনের খুন বাংলাদেশে অহরহ ঘটতে থাকবে, এমনটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে আমাদের। কিন্তু আমার কাছে মনে হতো এগুলো হয়ত আজ হতে ৫০/১০০ বছর পরের আশংকা। জনসংখ্যার জ্যামিতিক বিস্ফোরণের সাথে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও আর্থ-সামাজিক অনিশ্চয়তা এমন একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি জন্ম দিতে পারে, যেখানে দুবেলা দু’মুঠো আহার আর মাথার উপর যেন তেন ছাদের জন্যে লড়াই শুরু হবে নিজ ঘরে, ভাইয়ে ভাইয়ে, পিতা পুত্রে। একটা মুঠো ফোনের জন্যে বন্ধুকে খুন করে মস্তক আলাদা করে ফেলা এবং সে মস্তক নিয়ে বীরের মত চাঁদাবাজী করা, এমনটা যদি ২০১০ সালেই শুরু হতে পারে, কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে ২১১০ সালে?

আমরা অতীতকে পুঁজি করে বর্তমান পাড়ি দিচ্ছি দেব-দেবীর পদতল ভরসা করে। সাথে পঙ্গপালের মত জন্ম দিচ্ছি সন্তানাদি, এবং বেমালুম ভুলে যাচ্ছি আজ হতে ৫০/১০০ বছর পর্যন্ত বেচে থাকতে হবে ওদের।।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×