কে না জানে, বুড়িগঙ্গা ছিল সবদিক থেকে একটি আদর্শ নদী- সুপেয় পানি, মৎস্যসম্পদ, নৌ-যোগাযোগ, স্থিতিশীলতা। বলা হয়ে থাকে, মোগল সুবেদার ইসলাম খান সতের শতকে সুবে বাংলার রাজধানী স্থাপনের জন্য ঢাকাকে বেছে নিয়েছিলেন মূলত বুড়িগঙ্গার কারণেই।
এমন লক্ষ্মী নদী আমরা পায়ে ঠেলেছি। গত কয়েক দশকে শিল্প-কারখানার দূষিত তরল বর্জ্য, মানুষের মলমূত্র ফেলে, ভরাট-দখল করে, প্রবাহ কমিয়ে আমরা নদীটির চিরায়ত চরিত্র ধ্বংস করে ফেলেছি। বুড়িগঙ্গায় এখন মাছ তো নেই-ই, অন্য কোনো জলজ প্রাণী বা উদ্ভিদও টিকে থাকতে পারেনি। পানি পান করা দূরে থাক, গোসলের অনুপযোগী। তরল বর্জ্য ঠেলে, দখল এড়িয়ে কোনোরকমে নৌ-চলাচল সম্ভব হয় কেবল। আদর্শ নদীটি এখন উপযুক্ত ভাগাড়।
হ্যাঁ, স্বীকার করতে হবে, বুড়িগঙ্গা 'উদ্ধারে' নানা পরিকল্পনা ও কর্মসূচিও চলছে। মাঝে মধ্যেই আমরা দখলদার উচ্ছেদে অভিযান দেখি। ফলাফল যা-ই হোক, কিছুদিন আগে তলদেশের বর্জ্য অপসারণেরও গরজ দেখা গেছে। কিন্তু একই সঙ্গে যদি দূষণ ও বর্জ্য নিক্ষেপ চলতেই থাকে, এসব কর্মসূচি নিয়ে লাভ কী? দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, প্রশাসনের একপক্ষ যখন বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে গলদঘর্ম হচ্ছে, অন্য একটি পক্ষকে তখন বেমালুমই মনে হচ্ছে।
ভেজালবিরোধী অভিযান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই; নাগরিক স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রশাসন তৎপর থাকবে_ এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ভেজাল পণ্য নদীতে কেন ফেলা হবে? মুড়িতে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর আর নদীর জন্য উপকারী_ এ উদ্ভট ধারণা কীভাবে জন্মালো? বিষাক্ত রাসায়নিক দূরে থাক, অতি উপাদেয় ফলও নদীতে ফেলা হলে যে পচে গিয়ে দূষণ ঘটায়, এই কাণ্ডজ্ঞান কি কর্তাদের নেই? মুড়ি দূষণমুক্ত করতে গিয়ে বুড়িগঙ্গা দূষিত করার নির্বুদ্ধিতা কোথা থেকে জন্মায়?