কেমন আছ? আমি কেমন আছি জানতে চেওনা। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তুমি যাই যাই করছো। বাতাসে শুনতে পাচ্ছি তোমার বিদায়ী সুর। কি করে ভাল থাকি বলো? এই চারটি মাস কিন্তু দারুণ কাটলো। তুমি এসেছিলে বলে চারিদিক নতুন রঙে সেজেছিল। আমি বাতাসে তোমার গন্ধ পেতাম – নতুন পাতার গন্ধ, বরফ গলা মিসিসিপি নদীর গন্ধ, সবুজ ঘাসের চাদরের তাজা একটি সুবাস, ফুলের গন্ধ পেতাম পার্কে গেলে। সুবাসিত প্রিয় গ্রীষ্ম, তোমাকে কি যেতেই হবে?
তুমি চলে যাবার পর কি হয় তা কি তোমার জানা আছে? হেমন্ত ধুমধাম করে চলে আসে। এসে সবকিছু নতুন তুলি দিয়ে রাঙাতে বসে পড়ে। তাকে কিছুতেই ক্যানভাসের সামনে থেকে আর উঠানো যায় না। তখন আমার আশপাশের সব গাছের পাতারা খয়েরী, লাল আর কমলা হয়ে যায়। দেখতে সুন্দর লাগে কিন্তু বেশিদিন এই রঙের মেলা থাকেনা। পাতাগুলো সব ঝড়ে পড়ে যায়, গাছগুলোকে দূর থেকে দেখলে ভয় ভয় লাগে, মনে হয় খ্যাংড়া ভূত। হাসছো নিশ্চয়ই, হেসো না তো! তুমি আমার দুঃখটা বুঝলেই না।
আকাশটাও মন খারাপ করে থাকে। তুমি আসলে যেমন সে হাস্যমুখি থাকে তেমন কিন্তু আর এতটুকুও থাকে না। সূর্যের প্রখরতাও কমে যায়। সূর্য্যিমামাকে যাবার সময় বলে দিও তো এই হেমন্তে সে যেন দয়া করে এত গম্ভীর মুখে না থাকে। তুমি বললে হয়তো সে শুনবে।
আজ আর লেখার কিছু পাচ্ছিনা। তুমি চলে যাচ্ছ বলে এমনিতেই মনটা খারাপ। বাসার সামনে যে কাঠবেড়ালীগুলো আসতো সেগুলোও আর আসবে না। গাছের উপর গিয়ে লুকিয়ে থাকবে। আর পাখিগুলো তুমি যাবার পরপরই যাই যাই করবে, তারপর উড়াল দিয়ে চলে যাবে গরম আরামদায়ক কোন জায়গায়।
আচ্ছা, আর মন খারাপ করবো না। কেন করবো বলো? আমি তো জানি তুমি সামনের বছর আবারও আসবে। আর তুমি বেশিদিন থাক না বলেই তো তোমাকে নিয়ে সবাই কত আয়োজন করে, তোমার ছোঁয়া পেতে চলে যায় দূরদূরান্তে ঘুরে বেড়াতে, স্কুল-কলেজগুলো পর্যন্ত ছুটি হয়ে যায়। প্রিয় গ্রীষ্ম, স্বীকার তো করতেই হবে তোমার আমেজটা একেবারেই আলাদা।
আজ তাহলে এখানেই ইতি টানছি। সময় হলে পত্র দিও আর সূর্য্যিমামাকে মনে করে অনুরোধটি করো।
ইতি,
তোমার একজন ভক্ত এবং শুভাকাংখী