somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালেদা

১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফজরের সালাত শেষ করে বিছানায় পাশ ফিরে শুলো খালেদা। হঠাৎ করে এলোমেলো হয়ে গেলো সবকিছু।বাবা-মা,ভাই-বোন কি সুখের সংসার!মাদ্রাসার একজন নিয়মিত ছাত্রি ছিল খালেদা। সুন্দর সুঠাম তেজস্বিনী ষোড়শী খালেদা। বান্ধবীরা ডাকে ‘তারাবাঈ’।
বাস্তবিকে তারাবাঈ’র চাইতে কোন অংশে কম নয় সে। দেখতে দেখতে মাদ্রাসাজীবনের বছর গুলো সফলতার সাথে পার করছিল খালেদা। কিন্তু তারপরই সুন্দর গোছানো জীবনেরছন্দ পতন। দুই ভাই চার বোন কে এতিম করে প্রথমে বাবা তারপরে মা পরপারে পাড়ি জমালেন। ভাবতে ভাবতে চোখ বুজে আসে।

ভাবীর ডাকে সম্বিত ফিরে পায় খালেদা। নাহ! এখন ঘুমালে চলবেনা। আজ ক্লাস নিতে হবে। রেডি হতে হবে। ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে নিয়ে যায় গোসল খানায়।ইদানিং ঢাকায় একটি পার্টটাইম শিক্ষকতা করে খালেদা। পাশাপাশি পড়াশোনাটাও চালু রেখেছে।

ক্লাস শেষে বাসায় ফিরল তাড়াতাড়ি। আজকাল শরীরটা ভাল যাচ্ছেনা। কোনরকম কিছু খেয়ে আবার শুয়ে পড়ল। হারিয়ে গেলো ভাবনার অতল গহ্বরে।

বাবার মৃত্যুর পর বড় ভাইয়ের উপর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে। সাথে চার-চারটি বোনকে বিয়ে দেয়ার চিন্তা। তাই একটু তাড়া ছিল তার। ভালভাবে খোঁজখবর না নিয়ে প্রবাসে স্থায়ী এক বাংলাদেশীর কাছে আদরের বোনটিকে বিয়ে দিলেন।কিন্তু খোদাতা’লা কেন যেন পরীক্ষার জন্য খালেদাকেই বেছে নিলেন। নিজের চাইতে পনের বছরের বড় স্বামীর সাথে খাপ খাওয়াতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছিল খালেদাকে।

বিয়ের কয়েক মাস পর স্বামী চলে গেলেন বিদেশে।এরপর গা হিম করা সব খবর বের হচ্ছিল একে একে।জঙ্গি কানেকশানের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন খালেদার স্বামী।আর প্রতারক লোকটি বিয়ের সময় গোপন করে বিদেশে থাকা স্ত্রী-সন্তানের কথা। এরপর খালেদার জীবন ছিল একাকি অভিশপ্ত জীবনের মত। যে বয়সে একটি মেয়ে পছন্দের জীবন সঙ্গীকে নিয়ে সাজানো গোছানো একটি সংসারের স্বপ্ন দেখে, সেখানে খালেদার জীবন কাটছিল মাসের পর মাস, বছরের পর বছর একাকি বালিশ ভিজাতে ভিজাতে।

পাঁচ বছর পর বিদেশে থাকা স্ত্রীটি তার স্বামীকে ছাড়িয়ে নিলেন অনেক তদবির করে। ছাড়া পেয়ে আসলেন বাংলাদেশে খালেদাকে নিয়ে যেতে।কিন্তু খালেদার কি যাওয়া উচিত! না খালেদা যায়নি। পরিবারের সবার সীমাহীন চাপ,প্রতারকটির বিভিন্ন প্রলোভন তাকে টলাতে পারেনি। খালেদা জয়ী হল। প্রতারকটিকে ডিভোর্সদিয়ে দিল সে।

এরপর খালেদার জীবনে বসন্ত হয়ে ধরা দিল রাকিব। সচ্ছল পরিবারের সুদর্শন ছেলে । যে কোন মেয়ের স্বপ্নের রাজমুকার হবার যোগ্যতা রাখে সে। তারাবাঈকে পটাতে বেশী সময় লাগেনি রাকিবের।

নাওয়া নেই খাওয়া নেই শুধু রাকিব আর রাকিব। রাতের পর রাত কেটে যেতে লাগল ফোনে কথা বলে। কত স্বপ্ন দেখত দুজনে। অবশেষে আবেগের ফানুস উড়িয়ে দুজন সাক্ষী রেখে কোন অফিসিয়াল কাগজ না করে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে তারা। সবকিছু ঠিকঠাক মত চলছিল। রাজধানিতে বাসা ভাড়া করে নিজেদের মত করে সংসারটাকে গুছিয়ে নেয় দুজন। কিন্তু খালেদার কপালে সুখ লেখা নেই। রাকিবের পরিবার জেনে গেল। ফলাফল রাকিবকে নানান কথা বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় নিয়ে গেল। খালেদার ভালবাসার পরাজয় হল। রাকিবের গালভরা ভালবাসার কথাগুলি মিথ্যায় পরিণত হল। এখন রাকিব খালেদার কোন খোঁজ নেয়না।

পাশে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠল। এই যন্ত্রটা দেখলে এখন বিরক্তি আসে। ইমরান ফোন দিয়েছে কাতার থেকে।বোনকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হচ্ছে জানাল। কিছুক্ষন কথা বলে রেখে দিল। দুঃসময়ে ছোট ভাইটি বন্ধুর মত কাছে ছিল। এক মাস হল কাতার গেছে।

খালেদার জীবন থেমে নেই। এখন সে অনেক কিছু শিখেছে।এখন সে একাকি ঢাকা থেকে কক্সবাজার বাবা মার কবর জিয়ারাত করতে চলে যায়, যে কিনা আগে একাকি এক বাসা থেকে আরেক বাসায় যেতে ভয় পেত।পড়াশোনা করছে পাশাপাশি পড়াচ্ছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সংগ্রাম। খালেদার জীবন থেমে থাকার না। খালেদা হারবেনা।

(মন্তব্যঃ এটি একটি বাস্তব ঘটনা। প্রতিটি চরিত্র বাস্তব। আমাদের বর্তমান সমাজে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে।)

আব্দুর রহমান নাঈম
http://www.facebook.com/naem.arahman.1
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ৮:৩৯
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×