জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে তাকে প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন একদল শিক্ষক।
Published : 21 Aug 2013, 02:13 PM
এই দাবিতে সাধারণ শিক্ষক ফোরামের ব্যানারে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটও শুরু করেছেন তারা।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বুধবার সকালে উপাচার্য ভবনে অবস্থান নেন। তাদের অবরোধের কারণে গভীর রাত পর্যন্ত কার্যালয়ে আটকে ছিলেন উপাচার্য।
শিক্ষক ফোরামের এই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে শিক্ষকদের অন্য সংগঠনগুলো।
অন্যদিকে এই সঙ্কট উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে চিঠি দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার।
গত বছর ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির পদত্যাগ করলে উপাচার্যের দায়িত্ব পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। পরে তিনি নির্বাচিতও হন।
অধ্যাপক আনোয়ার নির্বাচিত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার কয়েক মাস পর শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামে, যাতে শরীফ এনামুল সমর্থকদের সক্রিয় দেখা যায়।
শিক্ষকদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে হাই কোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থিতিশীলতা রক্ষার নির্দেশনা দেয়ার পর ৩০ জুলাই থেকে শিক্ষক সমিতি প্রশাসনিক ভবনের অবস্থান তুলে নেয়।
এরপর কৌশল পাল্টে শুরু হয় সাধারণ শিক্ষক ফোরামের আন্দোলন, যাতেও শরীফ এনামুল সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি সমর্থক শিক্ষকরা সক্রিয়।
বুধবার ভোরে ক্যাম্পাসের পরিবহন চত্বরে জড়ো হয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনকারী বাস আটকে কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। এরপর তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক হানিফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত উপাচার্য পদত্যাগপত্রে সই না করছেন, ততোক্ষণ আমরা অবরোধ তুলব না।”
সকালে নিবন্ধকের নেতৃত্বে কর্মকতা-কর্মচারীরা এসে প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে ব্যর্থ হন। পরে তাদের ভবনের সামনে চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা যায়।
নিবন্ধক আবু বকর সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাজের জন্যই তো এসেছিলাম, ঢুকতে পারলাম না।”
এরপর বেলা ১১টায় দুই উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরকে নিয়ে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন প্রশাসনিক ভবনে এলে অবস্থানরত শিক্ষকরা তাদের দিকে পেছন ঘুরে পিঠ দেখান।
এ সময় নিবন্ধকসহ অন্যাদের কাজে যোগ দিতে বলেন উপাচার্য।
এ সময় উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা স্লোগান দেন- ‘তুই যা, তোকে যেতেই হবে’।
এক পর্যায়ে অধ্যাপক মতিন নেমে এসে শিক্ষকদের বলেন, “আজ ২১ অগাস্ট।”
এর উত্তরে আন্দোলনরত এক শিক্ষক বলেন, “২১ অগাস্ট শেখান, হু ইজ দ্য কিলার অব বঙ্গবন্ধু?”
পরে প্রশাসনিক ভবনের ফটক খুলে দিলেও উপাচার্যের কার্যালয়ের ফটকে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তবে কয়েকজন সাংবাদিককে এক পর্যায়ে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অধ্যাপক শামসুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “এই অবস্থান অনির্দিষ্টকালের জন্য।”
সাধারণ শিক্ষক ফোরামের নির্বাহী সদস্য জামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগই আমাদের দাবি। শিক্ষক সমিতি যে সব দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেগুলোর প্রতি সহানুভূতি রয়েছে শিক্ষক ফোরামের।”
রাত ১২টায়ও শিক্ষকদের অবরোধে আটকা ছিলেন অধ্যাপক আনোয়ার। প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় উপাচার্যের কার্যালয়ের দুটি দরজায়ই প্রায় ২০ জন শিক্ষক অবস্থান নিয়ে ছিলেন, যদিও দিনে এই শিক্ষদের সংখ্যা ছিল এর কয়েকগুণ।
উপাচার্যকে অবরুদ্ধ রাখা ও আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রগতিশীল শিক্ষকদের মুখপাত্র রায়হান রাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্দোলনকারীরা সব শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করেন না, যৌক্তিকতা নেই বলেই তাদের আন্দোলনের ভাষা এত সহিংস।”
সাধারণ শিক্ষক পর্ষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক আহমেদ রেজা এক বিবৃতিতে বলেন, “শিক্ষকদের এই কর্মসূচি হাই কোর্টের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
শিক্ষকদের ‘অশিক্ষকসুলভ’ আচরণ বন্ধে তিনি রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার, দেশবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কাছে জাহাঙ্গীরনগরকে বাঁচানোর আহবান জানাই। আপনারা প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করুন।”
চিঠিতে তিনি বলেছেন, “আমি সর্বতোভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের স্বার্থকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেছি। তবুও বিভিন্ন সময়ে আমি নানা অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছি। আমার সদিচ্ছা ও বিনয়কে নানাভাবে অপব্যাখ্যা করা হয়েছে।”
শিক্ষক সমিতি যে চারটি দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল, তার প্রতিটিই বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে দাবি করেন অধ্যাপক আনোয়ার।
“তারপরও সিনেটসহ অন্যান্য অথরিটির সভা অনুষ্ঠিত হতে না দিয়ে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর গণতান্ত্রিক চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”
অধ্যাপক আনোয়ার তার বিরুদ্ধে শিক্ষক ফোরাম উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা নির্ণয়ে জরুরিভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানিয়েছেন।