somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তের বছর পরে এসেছিল সাফল্য

২১ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯২৮ এর ২৮শে সেপ্টেম্বর। সপরিবারে বেড়ানো শেষে আজই ফিরেছেন স্কটিশ ব্যাক্টেরিওলজিস্ট অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং। সেন্ট মেরী হাসপাতালে নিজের রুম ঠিকঠাক করছেন। ‘স্ট্যাফাইলকক্কাস’ নামক ব্যাক্টেরিয়ার ওপর তাঁর গবেষণা চলছে। এমনিতেও তাঁর অগোছালো স্বভাব। তাঁর ওপর যাওয়ার আগে এখানে সেখানে অনেকগুলো ‘পেট্রি ডিশ’ (যেখানে ব্যাক্টেরিয়া কৃত্রিম ভাবে জন্মানো হয়) রেখে গিয়েছিলেন। কিছু ‘পেট্রি ডিস’ আলাদা করে তাঁর কাজের টেবিলের এক পাশে রেখে গিয়েছিলেন, সহকারী স্টুয়ার্ট ক্র্যাডকের জন্য।
আজকে হঠাৎ তাঁর প্রাক্তন ল্যাব সহকারী মেরিলিন প্রাইস এসেছে।সম্প্রতি এই ল্যাব থেকে তাঁকে বদলী করা হয়েছে। প্রাইস আসায় ভালোই হল, ভাবলেন ফ্লেমিং। এই সুযোগে জমে থাকা কাজগুলোর কিছুটা যদি তাঁকে দিয়ে করিয়ে নেয়া যায়। ল্যাবের একদিকে একটা ট্রে তে লাইজল রাখা আছে। সেখানে সব বাতিল ‘পেট্রি ডিশ’ গুলো ডুবানো হয়েছে। ধুয়ে আবার ব্যবহার করতে হবে। ছোট লাইজলের ট্রেতে এতগুলো ‘পেট্রি ডিস’ সবগুলো ডুবে নি। ফলে বেশ কিছু উপচিয়ে আছে।
প্রাইসকে তাঁর কাজের অগ্রগতি দেখানোর জন্য ট্রে তে ডুবে নি এমনই একটা ‘পেট্রি ডিস’ বের করলেন। খুলে সেটা প্রাইসকে দেখাতে গেলেন। সে সময়ে চোখে পড়ল ‘ডিস’ টাতে কিছু ছত্রাক জন্মেছে। সেটাও বড় কথা না। যেখানে ছত্রাক জন্মেছে তাঁর চারপাশে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে নি।
ছত্রাকটা কোন জাতের তা জানার জন্য তিনি তখন সি জে লা টচ এর সঙ্গে আলোচনা করলেন। লা টচ এর মাইকোলজি (ছত্রাক বিষয়ক) ল্যাব ছিল তাঁর ল্যাবের নীচেই। হয়তো সেখানে থেকেই এই ছত্রাকটা এসেছে। তিনি জানালেন এই ছত্রাক ‘পেনিসিলিয়াম’ গ্রুপের। ফ্লেমিং ধারণা করলেন এই ছত্রাকে এমন কিছু আছে যার কারণে ‘পেট্রি ডিস’ এ ব্যাক্টেরিয়া জন্মাতে পারে নি। আর সেই ‘এমন কিছু’ র নাম রাখলেন পেনিসিলিন, ছত্রাকের নামের সঙ্গে মিলিয়ে।
প্রথম থেকেই তাঁর ইচ্ছে ছিল ‘আন্টিবায়োটিক’ আবিস্কারের। এবার তাই তিনি শুরু করলেন গবেষণা। কি সেই উপাদান যার কারণে ব্যাকটেরিয়া গুলো মারা পড়লো। উপাদানটি যদিও তিনি খুঁজে পেয়েছেন তারপরও উপাদানটির ব্যাপারে তিনি খুব বেশী আশাবাদী না। তারপরও প্রায় তিন বছর আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। একে তো এই ছত্রাক জন্মানো বেজায় কঠিন তাঁর ওপর এ থেকে মূল উপাদান বের করা আরও কষ্টকর।
সমস্যা আরও ছিল। উপাদানটি মুখে সেবন করানো যাচ্ছে না। পাকস্থলীতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার ইঞ্জেকশানের মাধ্যমে যে প্রবেশ করানো হবে, সেখানেও সমস্যা। উপাদানটি শরীরে বেশীক্ষণ থাকছে না। প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছে। অন্ততঃ যতক্ষণ শরীরে থাকলে ব্যক্টেরিয়া মেরে ফেলা সম্ভব ততক্ষণ উপাদানটিকে শরীরে রাখবার চেষ্টা করলেন। পারলেন না। অবশেষে ১৯৩১ এ তাই তিনি রণে ভঙ্গ দিলেন। বুঝতে পারলেন এই কাজ কোন ব্যাক্টেরিওলজিস্টের না। এই কাজ কোন কেমিস্টের।
সেই আবিস্কার অবশেষে হয়েছিল। তবে অন্য একটি ল্যাবে। অন্য একজনের হাত ধরে। ১৯৩৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হাওয়ার্ড ফ্লোরি তাঁর সহকারী আর্নেস্ট চেইনকে বললেন ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ নিয়ে যা তথ্য পাও জোগাড় কর। ১৯২৯ সালে ফ্লেমিং এর সেই গবেষণা পত্র যেখানে তিনি তাঁর ‘পেনিসিলিন’ আবিস্কার সম্পর্কে লিখেছিলেন, পছন্দ হল তাঁদের। এর ওপর ভিত্তি করেই গবেষণা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।
সমস্যা দেখা দিল তহবিল জোগাড়ে। সময়টা ১৯৩৯, যুদ্ধের সময়। ‘সম্ভাবনা’ ওপর অর্থ খরচ করতে ব্রিটিশ সরকার রাজী না। এমন সময় ভাগ্যক্রমে এগিয়ে এলো আমেরিকার রকফেলার ফাউন্ডেশান। অর্থের জোগাড় হল। এবার শুরু হল ‘পেনিসিলিন’ দিয়ে রোগ সারানোর চেষ্টা। প্রায় পাঁচ মাসের কষ্টকর প্রচেষ্টার পরে ১৯৪০ এর মে মাসে তাঁরা বেশ অনেকটা ‘পেনিসিলিন’ পাউডার একত্রিত করলেন। এবার আসল পরীক্ষা। বেশ কিছু ব্যাক্টেরিয়ায় আক্রান্ত ইঁদুরকে পেনিসিলিন ইঞ্জেকশান দেয়া হল। দেখা গেল পেনিসিলিন পাওয়া বেশ কিছু ইঁদুর বেঁচে গেল। আরও কয়েকবার একই পরীক্ষা করে তাঁরা ঔষধের ‘ডোজ’ এবং কতদিন দিতে হবে সেই সিদ্ধান্ত পৌঁছলেন।
এবার মূল সমস্যা। মানুষের ওপর প্রয়োগ। ইদুরে প্রবেশ করানো ‘ডোজ’ এর ৩০০০ গুন ‘ডোজ’ দরকার। বাণিজ্যিক সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই ছত্রাকটি উৎপাদনের জন্য অক্সফোর্ড এর ল্যাবের ফ্লাস্ক, বিস্কুটের টিন, শ’য়ে শ’য়ে বেডপ্যানের মত পাত্রে শুরু হল ছত্রাক উৎপাদন। ১৯৪১ সালে দুজন অধ্যাপক, পাঁচজন গ্র্যাজুয়েট আর দশজন শিক্ষার্থী কয়েক মাস ধরে, সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন, অক্লান্ত চেষ্টা করে ছয়জন রুগী সারাবার মত পেনিসিলিন তৈরি করলেন। মানুষের ওপর প্রয়োগ হল। সাকসেসফুল।
সেই আকস্মিক আবিস্কারের তের বছর পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই গবেষক হাওয়ার্ড ফ্লোরি এবং আর্নেস্ট চেইন প্রমাণ করলেন পেনিসিলিন দিয়ে মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যক্টেরিয়া মেরে ফেলা সম্ভব।
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×