somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পটকা ভাই : তুমি দেখতে তার মত!

১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পটকা ভাইয়ের হবে হবে প্রেমিকা বিলকিস এর বিয়ের পর তিনি বেশ মুচড়ে পড়েছিলেন। তবে খেই হারাবার মানুষ উনি নন। ঠিক বিলকিসের মত দেখতে এলাকার টিনা নামের এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলেন হঠাৎ করেই। এ যেন স্বয়ং বিলকিস টিনার ছদ্মবেশে এসেছে পটকা ভাইয়ের কাছে। প্রথম দেখাতেই তীব্র ঝাঁকুনিতে একটা ধাক্কা খেলেন।পাশে আমি দাড়িয়ে ছিলাম,আমাকে ধরেই বললেন “ভাইরে এটা ঈশ্বরের দান ছাড়া কিছুই নারে,ঈশ্বর আমাকে দেখেছেন”। আমি না বুঝেই বললাম “কি দেখেছেন ভাই? পটকা ভাই সামান্য বিরক্ত হলেন বটে তবে তার হঠাৎ আস্তিক হওয়া কমলো না “আসলেই তিনিই পারেন সব,সব পারেন সব,বিলকিস ফিরে এসেছে,বিলকিস রিটার্ন”। আমি উত্তেজিত গলায় বললাম “কসকি পটকা ভাই মানে কনকি পটকা ভাই? বিলকিস এর প্রথম পার্ট আছে নাকি? দেখি নাইতো। আপনার পিসিতে আছে? তাইলে আজ রাতে বিলকিস এবং বিলকিস রিটার্ন দুইটাই আমারে দিবেন পেনড্রাইভে,ঠিকাছে?
“একদম উষ্ঠা মারুম,আরে বিলকিস আমার খালাতো বোন” পটকা ভাইয়ের গলা উঁচু হলো। আমিও বুঝলাম “ও আচ্ছা তাই বলেন,তা আপনার খালু আবার এই বয়সে বাচ্চা নিছে নাকি? পটকা ভাই কোন উত্তর দিলেন না। পরে বুঝিয়ে বললেন সব। তার এক কথা টিনাকে আমার চাইই চাই।আমাদের মধ্যে রোকন বেশ চালাক চতুর ছেলে। সে কিভাবে যেন টিনার ফোন নম্বর টম্বর ব্যবস্থা করে একাকার।এক ফোন নম্বরেই হাজীর বিরানীর ঢেকুর বেশ ভালো ভাবেই তুললাম।পটকা ভাই দারুন মাল,ক’দিনেই টিনা নামের বিলকিসরুপধারী বালিকাকে পটিয়ে ফেললেন। তবে আমাদের সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়।ডেটিংএ যাচ্ছেন বলে,যেতেও দেখি তাই বলে প্রমান হয় না যে প্রেম শুরু হয়েছে। এরকম এক ডেটিং শেষে পটকা ভাই পাড়ার চা দোকানে উপস্থিত। পটকা ভাইকে দেখেই আমি ৫টা চা ৪টা সিগারেট অর্ডার দিয়ে দিলাম।পটকা ভাই প্রেম করেন উনি সিগারেট খাবেন না বলে ঘোষনা দিলেন। সার্টিফিকেট প্রেমিকরা সিগারেট খায় না।আমি উনার দিকে তাকিয়েই বললাম “তা ভাই ইদানীং ওসব খাচ্ছেন নাকি? পটকা ভাই চে চে করে উঠলেন “ধুর আমি ওসব গাঞ্জা মাঞ্জা খাই না”। কি বুঝলাম কি বুঝে।
-না মানে ঠোঁট দিয়ে খায়,গাঁজা না
-হুম ডেটিং এ গেলেতো আইসক্রিম খেতে হয়,তোর ভাবী আবার আইসক্রিম খুব পছন্দ করে।
পটকা ভাইয়ের মত এমন পজেটিভ মানুষ আমার জীবনে দ্বিতীয়টি দেখিনি। কনফার্ম বেহেশতে যাবেন।পরদিন আবার ডেটিং সেরে আসার পরপরই রোকন প্রশ্ন করলো “কি ভাই করেছেন নাকি কিছু? পটকা ভাই মুখটা উদাস করে বললেন “হুম করতেতো হয়,তোদের ভাবী খুব পছন্দ করে,ওর নাকি ভালো লাগে,তাই একবার দেখা হলে মিনিমাম দুবার গান করতেই হয় আমাকে”।না ভুল পটকা ভাই পৃথিবীর সবচে পজেটিভ মানুষ না,উনি পৃথিবীর সবচে বলদ মানুষ। যাকগে পরদিন ঘটলো ঝামেলা কাহিনী। হন্তদন্ত হয়ে পটকা ভাই টং দোকানে এসে বলল “ওরে সর্বনাশ হয়ে গেছেরে। আমরা সমস্বরে আওয়াজ দিলাম কি? পটকা ভাই দশমিনিট যাবত যা বললেন তার অর্থ হলো গতকাল তার ফেসবুকে এক মেয়েকে পছন্দ হয়েছে সে দেখতে হুবুহু টিনার মত,কিন্তু টিনা না। এখন উনি ওই মেয়ের প্রেমে পড়েছেন। এতো দেখে মহা ভেজাল।শুনেছি আল্লাহ নাকি একই রকম দেখতে দশজনকে পৃথিবীতে পাঠান। ওই দশটাই যদি মেয়ে হয় তাহলে পটকা ভাইতো সব শেষ করে দিবে।আমরা জিজ্ঞেস করলাম এটা কিভাবে সম্ভব? পটকা ভাই দারুন উত্তেজিত “আর বলিস না,সেই নাক,সেই চোখ,সেই ঠোঁট যা কাল বিকালে দেখেছি টিনার সাথে ডেটিংয়ে,কিন্তু রাতে শ্যামলী নামের এক মেয়েকে ফেসবুকে দেখলাম সেসব চোখ,ঠোঁট,নাক নিয়ে বসে আছে। দিলাম একটা লাইক। কি আছে জীবনে। আই লাভ শ্যামলী।
-টিনার কি হবে?
-আরে টিনাতো আছেই,থাকবে,রবে,ঘুমাবে
-আর
-আর! শ্যামলী দারুন,
“এই দ্যাখ” বলে পটকা ভাই তার মানিব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করলেন।এই যে দেখি কবিতা
তুমি দেখতে ঠিক তার মত
টিনার মত টানাটানা চোখ,
মুখ যেন বিলকিস
শ্যামলী তুমি রবে নীরবে
টিনা-বিলকিস হয়ে।
মনের উত্তেজনা রাখতে পারলাম না “ভাই শ্যামলীকেও কি ঈশ্বর পাঠিয়েছেন আপনার জন্য? পটকা ভাই ভীষন অবাক হলেন “তো কে পাঠাইছে? ফাইজলামি করস আমার সাথে? ঈশ্বরের দান নিতে হয়রে!

পটকা ভাই ঈশ্বরের দুই দান নিয়ে মোটামুটি লাপাত্তা।দিনে টিনার সাথে পার্কে,রাতে শ্যামলীর সাথে ফেসবুকে।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীতে সব মেয়েই বিলকিসের জমজ বোন।চা দোকানে আড্ডা মারছিলাম আবার পটকা ভাইয়ের আগমন চোখে উত্তেজনা।যেই লোকের চোখে উত্তেজনা বেশী,তার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা উত্তেজনা কম হয় বলেই শুনেছি। এটা এখন প্রমান করার বিষয় দুজন নিয়ে এভাবে চালানো উত্তেজনা কম না অতিরিক্ত বেশী। “কাম সারছেরে” বলে পটকা ভাই বসে পড়লেন।
-কি ভাই দুজনের লগে করতে গিয়ে ধরা খাইছেন?
-আরে ধুর! নতুন ভাড়াটিয়া আসছে,মেয়েটা দেখতে একদম শ্যামলির মত!
এই কথা শোনার পর প্রথম যে কথা মাথায় আসলো তা হলো “রুখে দিতে হবে,একই চেহারার অজুহাতে সব মেয়ের দখল দারিত্ব নিয়ে নিচ্ছে চোখের সামনে। এটা অবিচার এবং একই সাথে স্বৈরাচারও বটে।মেনে নেয়া যায় না। আবার দৈনন্দিন চা সিগারেটের বিলও একটা ব্যাপার।“ওই দুইটা চা দে একটা বিড়ি দে,জ্বি পটকা ভাই বলুন ওই মেয়ের সাথে লাগাবেন নাকি?
তিনি উত্তেজিত চোখে তাকালেন। “না মানে লাইন লাগাবেন নাকি জিজ্ঞেস করছি” বলেই বিড়িটা নিলাম হাতে।পটকা ভাই সামান্য চিন্তিত “নাহ মানে শ্যামলী বাসা ভাড়া নিলো নাতো?
-আপনি তারে জিগান
-আরে সে বলছে নেয় নাই। বাট সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
-ব্যাপার না ভাই আমাদের উপর ছেড়ে দেন। বিকালেই মিশনে নামছি।মিশন অবশ্যই সাকসেসফুল হবে। ভাই গ্রীলের অর্ডার কি দিয়ে রাখবো।
পটকা ভাইয়ের দুইটা হলুদ দাঁত দেখা যাচ্ছে “ওকে দিয়া রাখ”।

দুদিন পরেই সেই মেয়ের সাথে পটকা ভাইয়ের ডেটিং ফিক্সড হলো।মেয়ের নাম নিশি।নিশিকে নিয়েও কবিতা লিখা শেষ।আগেকার কবিরা অতি বোকা কিসিমের ছিলো। তারা প্রেমিকার চুলের উপমা দিতে পাহাড়ী ঝর্না ভাবতেন,চোখের উপমা দিতে পাখীর বাসা ভাবতেন। অথচ পটকা ভাইয়ের কবিতায় টিনার চেহারার উপমা বিলকিসের চেহারা,শ্যামলীর উপমা টিনা,নিশির উপমা টিনা।কবিতা পরিবর্তন আসছে,পরিবর্তন আসছে লাইনেও।পটকা ভাই লিখে ফেললেন
আমি বিলকিসকে ভালোবাসি,তাই তোমাকে চাই নিশি
আমি চাই সারাজীন টিনার চুলের ঘ্রান,তাই তোমাকে চাই নিশি
আমার দরকার শ্যামলীর চোখ,তাই তোমাকে চাই নিশি।
কবিতা পড়ে আমরা মুগ্ধ। পটকা ভাই আমাদের মুগ্ধতা দেখেই মুগ্ধ। বিকালেই ডেটিং।এরশাদ চাচার নাম নিয়ে রওনা দিলেন। আমরা কেবল মিটিমিটি হাসলাম।

এক ঘন্টা পর পটকা ভাই বিমর্ষ মুখে ফিরে এসে প্রথম কথা বললেন “নিশিকে নিয়ে লেখা আমার কবিতা তারে দেখাইছে কে ?
রোকন সবগুলো দাঁত বের করে বলল “জ্বি ভাই আমি”
ঠাস করে একটা চড়ের শব্দ শুনলাম। চড় দিয়েছে ভালো হয়েছে। পরের প্রশ্ন করলেই আমার আইডিয়ার কথা বের হয়ে আসতো।রোকন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল “কি করবো! আপনি এমন সুন্দর একটা কবিতা লিখলেন তাকে নিয়ে, আমি ভাবলাম তাকে দিয়ে আসি,তাহলে প্রথম দিনেই লাগাইতে পারবেন”
পটকা ভাই রীতিমত ক্ষেপে গেলেন “ওই আমি কি লাগাইতে গেছি? লাগাইতে গেছি? কিন্তু অযথাই আমারে লাগাইয়া দিলো”
একযোগে আমরা চোখ কপালে তুললাম “কি কন ভাই?
পটকা ভাই প্রায় কেঁদেই দিলেন “হুমম কবিতা পইড়া চড় লাগাইয়া দিছে,কেবল তোদের জন্য”

পটকা ভাইয়ের বাকিসব এইখানে
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:২৬
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×