somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রভার অপূর্ব জীবন

২৬ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকটা নাটকীয়ভাবেই বিয়ে করে ফেললেন অপূর্ব আর প্রভা। হঠাৎ করে কেন তাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিলেন? কী হওয়ার কথা ছিল আর কী হলো। প্রভা-অপূর্ব শোনালেন তাঁদের বিয়ে ও প্রেমের গল্প
...............
'ছি ছি, প্রভা এমন একটা কাজ করতে পারল!' পাবলিক বাসে পত্রিকা পড়তে পড়তে এমন একটি মন্তব্য করলেন এক যাত্রী। পাশের যাত্রী অনেকক্ষণ চুপচাপ। আলোচনার বিষয় পেয়ে মুখ খোলেন তিনি_'ভাই, এতে ছি ছি করার কী আছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তাঁর জীবনের যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।' প্রথমজন বললেন 'ভাই, সমাজ বলতে একটা কিছু আছে তো? কয়দিন আগে বাগদান হলো একজনের সঙ্গে, এখন বিয়ে আরেকজনের সঙ্গে।' তৃতীয় একজন বললেন 'ভাইজান, বুঝতে হবে এরই নাম মিডিয়া।'
চলতে থাকে আলোচনা। ভাইরাসের মতো সব যাত্রীর মধ্যে সংক্রমিত হয়। সবাই কমবেশি মেতে ওঠেন প্রভা-অপূর্বর বিয়ের আলোচনায়। ব্যাপক যানজট। তীব্র গরম। সব কিছুই ভুলিয়ে দেয় এ আলোচনা। শুটিং স্পট থেকে টিভি চ্যানেল_দিন কয়েক জুড়ে সর্বত্র আড্ডার প্রসঙ্গ একটাই। তারকাদের বিয়ে নিয়ে এতটা আলোচনা সাধারণত হয় না। এ বিয়েটা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল। একেবারেই নাটকীয়। তাই এত আলোচনা।
ধানমণ্ডির বেঙ্গল গ্যালারিতে পেঁৗছতে বেশ সময় লেগে গেল। লাল শাড়ি, লাল চুুড়ি, লাল টিপ পরে হাসি মুখে অপূর্বর সঙ্গে ছবি তুলছেন প্রভা। একটা বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং করতে অপূর্ব বেঙ্গল গ্যালারিতে এসেছেন। সঙ্গে নববধূকে নিয়ে এসেছেন। শুটিং স্পটের সবাই নব দম্পতিকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। বিয়ের গল্প শুনছেন।
আপনার শুটিং নেই? হঠাৎ প্রশ্নে প্রভার উত্তর, 'শুটিং ছিল কয়েকটা নাটকের। সব কয়টা শুটিং বাদ দিতে হয়েছে। কারণ আমার নাটকের কসটিউম সব বাবার বাড়িতে। সে বাড়িতে এখন যেতে পারছি না। তাই শুটিংও করতে পারছি না।' এক কাপড় পরেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন নাকি? 'এক কাপড় পরে বাবার বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি। বিয়ের পর আমার স্বামী আমাকে নতুন জামাকাপড় কিনে দিয়েছে।'
বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং হচ্ছে। সেদিকে ব্যস্ত অপূর্ব। শরতের আকাশে মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। একপশলা বৃষ্টি হওয়ায় গরমটা আরো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গত কয়েক দিনে নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীদের মধ্যেও একটা প্রশ্নই ছিল, 'আচ্ছা বলেন তো, প্রভা এমন একটা কাজ কেন করল?' কিন্তু কেউ বলেনি, 'অপূর্ব কেন এমন কাজ করল?' এ বিয়ের ঘটনায় অপূর্ব যতটা না আলোচনায় এসেছেন, তার চেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা ছিল প্রভাকে ঘিরে। সে কথা প্রভা নিজেও স্বীকার করেন। আর এর মূল কারণ প্রভার সঙ্গে রাজিব হাসানের বাগ্দান। প্রভা বলেন, 'ভাই, রাখেন তো ওসব আলোচনা। অতীত নিয়ে ভেবে লাভ আছে?'
ঠিক আছে, সব বাদ। এখন আর অন্য আলোচনা নয়, অপূর্ব-প্রভার প্রেমের গল্প শোনা যাক? কথাটা শুনেই খানিক হাসলেন প্রভা। কিছুটা সময় নিলেন। ধীরে ধীরে গল্পটা বলতে শুরু করলেন_"আমাদের সম্পর্কটা মূলত এক বছর তিন মাস আগে শুরু হয়েছিল। প্রেম আসলে করা যায় না, এটা হয়ে যায়। আমার আর অপূর্বর প্রেমটাও কিভাবে যেন হয়ে গেছে। এটা বলে বোঝানো সম্ভব না।
"ফেরদৌস হাসানের 'খুনসুটি' ধারাবাহিকের শুটিং চলাকালেই ঘটনাটা ঘটতে থাকে। নাটকে আমাদের চরিত্রটা ছিল দা-কুমড়ার সম্পর্ক। সারাক্ষণ একজন আরেকজনের পেছনে লেগে থাকি। সত্যি কথা বলতে কী, অপূর্বই আমার সবচেয়ে দূরের কো-আর্টিস্ট ছিল। সে এখন খুব কাছের একজন। ধীরে ধীরে আমরা একে অন্যকে জানতে শুরু করি। অপূর্ব অনেক বেশি কেয়ারিং। আমি কী চাই, সেটা ও ভালো বুঝতে পারে। এরই মধ্যে পরিবারের চাপে আমাকে বাগ্দান করতে হয়। বাগ্দান হয়ে যাওয়ার পর অপূর্ব অনেক বেশি হতাশ হয়ে পড়ে। আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করত, 'তোমার বিয়ে কবে, বলো না।' এদিকে আমি রাজিবকে ঘটনাটা জানাই। আমাদের সম্পর্কটা অনেক বেশি সিক্রেট ছিল। এমনিতে আমার অনেক বেশি নাটকে অভিনয় করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু অপূর্বকে প্রতিদিন দেখব, কাছে পাব_এ কারণে শুটিংও বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। একটা সময়ে এসে মনে হলো, আমি অপূর্বকে ছাড়া বাঁচব না। রাজিবের সঙ্গে আমার সংসার করা সম্ভব ছিল না। কারণ আমি রাজিবের মধ্যে অপূর্বকে খুঁজে বেড়াতাম।"
'এই যে আমি চলে এসেছি' বলেই প্রভার পাশে বসলেন অপূর্ব। প্রভা বলেন, 'বাকি গল্পটা ওর মুখেই শোনেন।' 'কী বলব আমি?' 'তোমার-আমার গল্পটা বলো।' বললেন প্রভা।
অপূর্ব একটা সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলতে শুরু করলেন_"আমি জানতাম প্রভা আমাকে একটুও পছন্দ করে না। কারণ আমি কালো। কিন্তু শুটিং স্পটে আমার প্রতি ওর কেয়ারনেস আমাকে মুগ্ধ করে। সংসারী এবং বউ বউ একটা জিনিস আছে ওর মধ্যে। খুবই সাধারণ ও সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করে। ওর বাগ্দান হওয়ার পর আমার মনে হচ্ছিল, আমি বুঝি ওকে হারিয়ে ফেলছি। এখন আসলে বুঝতে পারি, ওকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছিলাম। ১৮ আগস্ট আমাদের প্রেমের বিষয়টা প্রভার বাসায় জানাজানি হয়। আমরা কেউই বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বিয়ের আগের দিনও জানতাম না আমরা বিয়ে করছি। প্রভা ফোন করে কাঁদতে লাগল। আমি ওকে বললাম, 'তুমি আমাকে বিয়ে করবে?' ও রাজি হলো। তারপর আবারও বললাম, 'তুমি আমাকে বিয়ে করে ভুল করেছ_এ কথা কখনো বলতে পারবে না।' এ বিষয়েও ওর কোনো দ্বিমত নেই। আমি তখন ওকে বললাম, 'তুমি যখনই পারো বাড়ি থেকে পালিয়ে আসো।' ১৯ আগস্ট ভোর ৫টায় প্রভা আমার বাসার সামনে হাজির। সঙ্গে আমার এক বন্ধুকে নিয়ে ভোর ৬টায় উত্তরার এক কাজি অফিসে যাই। ওখানে গিয়ে দেখি কাজি সাহেব মশারি টানিয়ে ঘুমাচ্ছেন। তাঁকে ডেকে তোলা হয়। তিনিই আমাদের বিয়ে পড়ান। আমার বিয়ে এত স্বল্প সময়ের সিদ্ধান্তে আর নাটকীয়ভাবে হবে, কল্পনাও করিনি।"
রাজিব-প্রভার বাগ্দানের প্রসঙ্গ তুলতেই অপূর্ব বলেন, 'পত্রিকাগুলো আমার বিয়ে নিয়ে যতটা না খবর প্রকাশ করেছে, তার চেয়ে বেশি রাজিব-প্রভার বিষয়টা নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। কই, কোনো পত্রিকা তো আমার যে একজনের সঙ্গে ৯ বছরের প্রেম ছিল, সেটা লেখেনি! সত্য তো সত্যই, এটা গোপন করার কিছু নেই। আমি প্রভাকে ভালোবাসি, এটাও সত্য। যাঁরা আমাদের নিন্দা করছেন তাঁদের বলতে চাই, আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করুন, যাতে আমরা সুখী হতে পারি।'
পরিচালকের ডাকে অপূর্ব শুটিং করতে চলে যান। প্রভা বসে থাকেন স্বামীর প্রতীক্ষায়। সময় বসে নেই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। এবার যাওয়ার পালা। শুটিং স্পটের অপরিচিত একজন বলে উঠলেন, 'প্রেম জীবনের মতো/আর জীবন অনেকের'। সৈয়দ হকের কবিতার লাইনটি সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসা। প্রভা-অপূর্বর এ প্রেম, বিয়ে এবং রাজিব হাসান_সব কিছুই একসময় মানুষ ভুলে যাবে। শুধু টিকে থাকবে এ দুজনার কাজ। সেটাই তাঁরা বিশ্বাস করেন। নিজেদের অভিনয়ের মুগ্ধতা দিয়ে সব কিছু ভুলিয়ে দিতে চান তাঁরা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×