somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রযত্নে- হন্তা (গল্প)

২৫ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা লাল রঙের আকাশ মাঝেমাঝে বিকেলকে দেখতে এসে মিতালী পাতে সন্ধ্যার সাথে, একটা ১০ফুট প্রস্থের রাস্তা একেবেঁকে বেড়ে আবারো সোজা হয়, একটা নিঃসঙ্গ মাছরাঙ্গা পাখি উড়তে উড়তেই টুপ করে পানিতে ডুব দিয়ে ঠোঁটে তুলে আনে বাতাসী মাছ। কিন্তু এর কোনকিছু না হয়েও ১৪বছরের দাউদ তার কৈশোরের নরম কাধে যে সাড়ে ৭মণ ওজনের জীবনটাকে বহন করছে, সেই দৃশ্যের দায় আকাশ-সন্ধ্যা-রাস্তা, কিংবা মাছরাঙ্গা পাখির কেউই নিতে রাজী নয়; যিনি রাজী হবেন বলে অনুমান বা ধারণা করে সবাই, সেই তিনিও হয়ত দাউদের কাধে জীবনের ওজন ভারী করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন--- দায়স্বীকারের প্রসঙ্গটা চূড়ান্তরকম অপ্রাসঙ্গিক। দাউদের বিচরণের পৃথিবীটা ছোট হলেও আচরণের পৃথিবীটা যে কোন বয়স্ক পুরুষের চেয়ে কমকিছু হবেনা; মা তার জন্য এই আচরণগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছে: সকালে উঠেই বালতিতে দুধ ভরে বাড়ি বাড়ি পৌছে দিতে হবে, বাড়তি চাহিদা মেটাতে দুধে আধা অনুপাতে পুষ্কনির পানি মেশাতে হবে, দোয়ালাগিরি শেষে ক্ষেতের মুলা-পালংশাক-আলু-পটলসহ পালানের কচু, ঢেকিশাক যা-ই জুটে, সেগুলো নিয়ে যেতে হবে শহরের বাজারে--- যতক্ষণই লাগুক সবকিছু বিক্রি করে তবেই বাড়ি ফিরতে হবে। ২বছর হল বাবা মারা গেছে, বাবার কাফনের সঙ্গে তার ডানপিটে কৈশোরও যে জড়িয়ে দেয়া হয়েছে তা তার টের পেতে হয়নি, চলতে থাকা জীবনগাড়িই তাকে পেছনের সিটে এককোণে চুপচাপ বসিয়ে দিয়েছে। বাবা বেঁচে থাকতেও তারা গ্রামীণ সমাজকাঠামোর মধ্যস্তরে অবস্থান করত এমন নয়, তবে বাবার মৃত্যু বেশকিছু পরগাছাধর্মী পরঝামেলা নিয়ে এসেছিল : বসতবাড়ি-আবাদী জমি নিয়ে চাচাদের সঙ্গে মায়ের বিরোধ কোর্টে গিয়ে ঠেকে ঠেকে দশা, পশ্চিমপাড়ার নসু দোকানদারের সঙ্গে বোনটির পাটক্ষেতে ধরা পড়া পরবর্তী গ্রাম্যসালিশ, নসু দোকানদারের বড়ভাইয়ের তর্জন-গর্জন, এবং শবে বরাতের রাতে আজমল শিকদারের বাড়ি থেকে মুরগী চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় হজম করা, সেই প্রেক্ষিতে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে গ্রামের ঝিলটাতে গুণে গুণে ২৩টি ডুব দেয়া--- ঘটনাগুলো পরপর বসে তাদেরকে সমাজকাঠামোর তলানীতে নামিয়ে দিয়েছিল; আরেকটু নামলেই সীতার মত পাতালে হারাতে হবে এই বোধ থেকে বালেগপ্রাপ্তির বহু আগেই সে আৎকা বয়স্ক পুরুষ হয়ে উঠেছে--- উপরের তিনি এই দায় মানুক ছাই না মানুক, বোঝার ওজন কিন্তু কমছেনা।

ধামড়াই শহর থেকে ১০ফুট প্রস্থের একটা পাকা রাস্তা একেবেঁকে গিয়ে অন্য একটি শহরের প্রান্তসীমায় এসে শেষ হয়েছে--- বেশ দীর্ঘ দূরত্ব। এই বক্রালু রাস্তার দুপাশে ক্ষেত-খামারি, তার ওপাশে রঙছড়ি গ্রাম। শহর থেকে কয়েক মাইলের পথ, অথচ শহরের কোন চিহ্ন রঙছড়িতে নেই; একই ব্রহ্মাণ্ডে অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র থাকার পরও কিছু নক্ষত্র যেমন পরস্পরের অচেনাই রয়ে যায়, তেমনি শহরের এতটা নাতিদীর্ঘ নৈকট্যে থেকেও রঙছড়ির এভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা বা শহরের প্রাধান্যকে স্পষ্ট প্রত্যাখ্যানের কোন কারণ থাকলেও হয়ত থাকতে পারে, কিন্তু তা নিয়ে ভেবে দু-একটা নিশাচর-নিষ্কর্মা হুতোম পেঁচা ব্যতীত অন্যকেউ রাত্রি পাড়ি দেয়না বোধহয়।

গ্রামে দাউদের সমবয়সী ছেলেগুলোর প্রায় সবাই-ই শহরের স্কুলের তালিকাভুক্ত ছাত্র, যাদের অধিকাংশই স্কুলে যায় বিদ্যাচর্চার বদলে বিনোদনচর্চার পরিমাপটা ঠিকঠাক করতে--- তাদের সাইকেল স্কুলের বারান্দায় থামে ঠিকই, কিন্তু পা’গুলো ক্লাশ না খুঁজে ভিডিও গেমের দোকান, শাকিব খান-অপু বিশ্বাসের পোস্টারে ঠাসা সিনেমাহলে মোড় নেয়, আর যদিওবা ক্লাশ খুঁজে পায়, মনটা মন বাড়িয়ে রাখে গাঁয়ের মাঠে পার্শ্ববর্তী গাঁয়ের বিপক্ষে ৫লিটার আরসিকোলা বাজিতে ক্রিকেট খেলবার দিকে। স্কুলগামী এই দলটার মাঝে একটা সময় পযর্ন্ত দাউদও ছিল, আরও নির্দিষ্ট করে বললে সেটা বাবা বেঁচে থাকতে। কিন্তু স্কুলে আসা-যাওয়ার ফ্যাশনটা তার কাছে বরাবরই অসহনীয় লাগত, বাবার মৃত্যুতে সে সুনিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসে স্কুলের বই-খাতা কিনে অর্থনাশ করে বছর শেষে ৩বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়াই তার সর্বোচ্চ সাফল্য হতে পারে, সুতরাং জীবনের দৃষ্টিটা স্কুলের বারান্দাকে বিদেয় দিয়ে সেখান থেকে শহরের বাজারে নামালে জীবনেশিয়া রোগাক্রান্ত তার পরিবারটা অন্তত জীবনধারণ করতে পারবে। তবে জীবনের দৃষ্টিটা সংক্রামক, তাই তার মত করে তারই বয়েসী লকিবও সেই দৃষ্টিটা অন্যকোথাও নামিয়ে এনেছে। লকিব দৃষ্টিবিভ্রমে ভোগা এক অদৃষ্টবাদী কিশোর, যার দৃষ্টিবিলাসের বিষয়ে দাউদরা অবগত এবং গ্রামের কতিপয় মুরব্বিরাও মাঝে মাঝে আসর ওয়াক্তের নামায শেষে দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বাড়ি ফিরবার কালে আচানক আলোচনায় যাকে নিয়ে আসে এভাবে ‘পুলাপান সব ঝুনা নারকেল হইত্যাছে রে ভাই। এইগুলারে জিগার ডাল দিয়া বাইড়াইলে যদি হুশ হয়’। হরমোনের প্রভাবে লকিবের ১৪বছরের দেহখাঁচাটিকে দেখতে ১৯-২০বছরের মনে হলে সে দায় নির্দ্বিধায় উপরের তার, এবং তিনি এই দায় স্বীকারে বোধকরি কুণ্ঠিত হবেননা। কিন্তু সমস্যা হল, শরীরের মত মানসিক পক্কতাও বাড়তির দিকে হলে সেই দায়ভার নেবার জন্য স্বয়ং লকিব ছাড়া কাউকেই পাওয়া যাবেনা, যায়ও নি।

ভুলে গেলে চলবেনা, গ্রামে যতগুলো কিশোর আছে প্রায় সমসংখ্যক কিশোরীও থাকতে হবে, নইলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকেনা; শতকটা একবিংশ বলে এইসব কিশোরীদের সিংহভাগই স্কুলে আসা-যাওয়া প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত ধরে নিতে হবে। বেগুনী রঙের স্কুলড্রেস, লাল-খয়েরি-সবুজ ফিতায় বাধা চুলের বেণি দুলানো এই কিশোরীদের বইগুলো ধরা থাকে ঠিক বুকের উপর যা তাদের সমাগত যৌবনের পূর্বাভাসটাকে ঢেকে রাখে, হাত আর বইয়ের যুগলবন্দিত্বই দ্বিতীয়প্রস্থ ওড়না হয়ে উঠে। কিন্তু এই বই-ওড়না আর বেগুনী স্কুলড্রেসের মধ্য থেকে কোন বায়বীয় আহ্বান যদি লকিবের মত কিছুটা বেশি মানসিক পক্ক কিশোরের বুকের ডানে-বামে এসে ঘুমিয়ে পড়তে চায়, সে কী করতে পারে! বাতাসে বেণীগুলো বীণা বাজায়, বেগুণী কামিজের প্রান্ত উড়ে অনেকটা বাঁশে বাঁধা স্বল্পসুতার ঘুড়ির মত করে--- তা দেখে লকিব স্ট্যাচু অফ লিবার্টি হতেই পারে। ১০ফুট প্রস্থের রাস্তা দিয়ে দিনমান টেম্পু চলে, স্কুলগামী কিশোরীরা তাতে আরোহী হয়--- স্বল্পদীর্ঘ ছাত্রজীবনে লকিব সাইকেলে করে সেই টেম্পুর পিছু নিত স্কুলে যেতে যেতে। সমষ্টির প্রতি তার ঝোঁক ছিলনা-- সেটা সম্ভও নয়; সমষ্টির ব্যাষ্টিকরণে যে ব্যক্তির সূচনা হয় সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে কোহিনূর—যার কাজল দেয়া চোখের তীর্যক চাহনি, তিব্বত টেলকম পাউডার মাখা পানপাতা মুখ লকিবের চোখে এক দীর্ঘ ছায়াপথের সৃষ্টি করেছিল। স্কুল থেকে ফিরতি পথে রোদের বাড়াবাড়িতে জমা ঘামের পানিবিন্দু পাউডারকে হয়ত এলেমেলো করে দিত, কিন্তু লকিব তাতে না দমে কোহিনূরকে অনুসরণ করত, বিকেলে খেলা ভুলে কোহিনূরদের বাড়ির সামনের সরিষা ক্ষেতে বসে উচ্চস্বরে ‘তুহি মেরা শাব হ্যায়, সুবাহ হ্যায়; তুহি মেরি দুনিয়া’ গান গাইত; ইচ্ছা হত স্কুল ছেড়ে টেম্পুড্রাইভার হয়ে যেতে--- চালাতে চালাতে সামনের লুকিং গ্লাসে কোহিনূরকে দেখবে, বৃহস্পতিবার যাত্রী হিসেবে শুধু একা কোহিনূর থাকবে, টেম্পু ধামড়াই পেরিয়ে সোজা থামবে নবীনগর স্মৃতিসৌধে। গান শুনে হয়তবা কোহিনূর ২-১মিনিটের জন্য তাদের টিউবয়েলের পাড়ে দাঁড়াত, তাতেই লকিবের সাড়ে পাঁচশোটা পৃথিবীজয়ের আনন্দ হত।

তার সাহসের উচ্চতা বেড়ে তালগাছ ছুঁয়েছিল, তাই স্কুলে যাওয়ার পথে একদিন কোহিনূরের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল একটা চিরকুট, তাতে লেখা ‘বাঁশঝাড়ে বাঁশ আছে, রসে ভরা গুড়; আমার মনে আছ তুমি প্রিয় কোহিনূর’। চিরকুটটা দিয়েই সে সাইকেলের প্যাডেলে পা দিয়ে লিওনেল মেসি হয়ে উঠেছিল। চিরকুটটা কোহিনূরের নিচের ঠোঁটে ঈষৎ কাঁপন ধরিয়েছিল, সবাইকে লুকিয়ে জবাবও দিয়েছিল; কিন্তু জবাবটা চৌহদ্দি পেরুনোর আগেই মায়ের হাতে পড়ে নির্বাক হয়ে যায়, কোহিনূরও মনের অভ্যন্তরে উঠা শিহরণের প্রবঞ্চনটাকে পিষে ফেলে মায়ের বাধ্য মেয়ে হয়, সমস্তটাই লকিবের দোষ বলে জবানী দেয়। খবরটা যত দ্রুত কোহিনূরের বাবা জানে, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয় তারও দ্রুততায় যখন সরিষাক্ষেতে বসে গান গাইতে থাকা লকিবকে আস্ত বাঁশ তুলে সে ধাওয়া করেছিল। লকিবও ধরা পড়বার ভয়ে দৌড়ে গেছে পিছু না ফিরে। এ নিয়ে দুই পরিবারে মধ্যম রেষারেষি চলে, লকিবের গুড় ব্যবসায়ী বাবা বাঁশঝাড় থেকে তিনটি বলিষ্ঠ কঞ্চি কেটে এনে সেগুলোকে লকিবের পিঠের ক্যানভাসে রক্তিম শিল্পকর্ম আঁকবার তুলি হিসেবে ব্যবহার করে; আঁকা শেষে বলেছিল, ‘পুলা, মুখ দিয়া দুধের গন্ধ যায়নাই; পিরিত মারাস!’ কথাটাকে সিরিয়াসলি ধরে লকিব মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে কোহিনূরের জন্য তার পিঠে এভাবে কঞ্চি ভাঙ্গা হল সেই মেয়েকে দিয়ে বাড়ির ভাত রাধাতে না পারলে সে একবাপের জন্মা না। তাকে অনেক পয়সা কামাতে হবে, কোহিনূরের বাপের মুখের উপর তিনটা পাঁচশো টাকার নোট ছুড়ে মারবে--- উত্তেজনায় রাতটি নির্ঘুম কাটে, সেরাতেই স্কুলকে শেষের কবিতার সেই বিখ্যাত –‘হে বন্ধু বিদায়’ কথাটা শোনানোর সকল প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে। এবং পরদিনই সাইকেল নিয়ে শহরের টেম্পুস্ট্যান্ডে ভীড়েছিল। কথাটা বেশি বলতে পারায়, সাহস আর জিদটা একটু বেশি হওয়ায় টেম্পুহেলপারের কাজ বাগাতে ২দিনের বেশি ঘুরতে হয়নি। কিন্তু কিছুদিন বাদেই বাসের হেলপারদের চটাং চটাং কথা তার অহমে আঘাত করতে থাকে, বুঝে নেয় দুনিয়াতে টেম্পুহেলপারের কোনই কদর নেই, বাসহেলপাররাই যত খাতির-আত্তি পায়। হেলপারটাই একদিন স্টিয়ারিং ধরে ড্রাইভার হয়, এই বোধটা তাকে আরও উত্তেজিত করে-- ‘খালি ড্রাইভারডা হইয়া নেই, বিয়াতে রাজী না হইলে কোহিনূরের কুত্তা বাপটারে নগদে বাসচাপা দিমু’।

লকিব লক্ষ্যের কক্ষপথেই আছে; নিয়মিত গুলিস্তান-ধামরাই রুটের বাসের হেলপারি করছে। সকালে বাড়ি থেকে স্কুলের কথা বলে বের হয়, এরপর সাইকেলটা স্ট্যান্ডে রেখে হেলপারিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঢাকা শহর দেখে তার অক্ষিগোলকের ব্যাসার্ধ কয়েক সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলশ্রুতিতে স্কুলগামী ছেলেগুলোকে উপহাসও করে অবলীলায়, ‘যাউ যাউ ইস্কুলে যাইয়া মতি স্যারের ব্যাতের বাড়ি খাইয়া পাছার ছাল লাল কইরা আসোগা। দুনিয়ার ভাবতো কিচ্ছু বুঝলানা’। ইদানীং বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যাচ্ছে; নানান অজুহাতে মা-বাবাকে কাটালেও সে জানে প্রকৃত সত্যটা খুব বেশিদিন আড়ালে রবেনা, তার টেটন বাপটা সবই জেনে যাবে, কিন্তু ভয়-ডর যেন শ্মশানের ভূতকে উইল করে দিয়েছে সে, এমন চিন্তাও তার মাথায় আসে যে ‘বাপ হারামিটা বেশি ফচফচ করলে মুখের উপ্রে কমু তুমার মতন ৩পয়সার গুড়য়ালারে এই লকিব চৌধুরী পুছেনা’। বাসের হেলপারিতে নয়-ছয় করে কিছু বাড়তি পয়সা হাতে চলা আসায় পেশাটি তাকে আর কিছু না দিক নামের শেষে চৌধুরী পদবি যুক্ত করার সাহসটা অন্তত দিয়েছে, তার ভেতরে জন্ম নিয়েছে উদ্ধত এক জাহাঙ্গীর বাদশাহ। সকালে সাইকেলে শহরে যাবার পথে প্রায়দিনই দাউদের সঙ্গে দেখা হয় তার, অধিকাংশ দিনই কথা হয়না; আসলে প্রতিদিন কথা হবার পর্যায়ের ঘনিষ্ঠতা দুজনের কোনদিনই ছিলনা, যদিও দুজনই জীবনটাকে ঘর থেকে পথে টেনে এনেই পথে পথে জীবনের বকুলফুল ফেরি করছে। দাউদকে তার ভাল-মন্দ কোনটাই লাগেনা, দাউদ তো দাউদই!

১০ফুট প্রস্থের রাস্তাটি মাড়িয়ে বাড়ি ফিরবার সময় প্রায়শই দাউদ থেমে পড়ে, রাস্তার কালভার্টটার দিকে তাকিয়ে থাকে, ভাবে কালভার্টে উঠার মুখে একটা মুদি দোকান দিতে পারলে মন্দ হতনা; এখানে যে চায়ের দোকানটা আছে তাতে রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত মনুষ্যচারণা চলে। কিন্তু চাইলেই এখানে দোকান খুলতে কে দেবে তাকে! অন্যদিকে একমাথা রোদ নিয়ে নদীভাঙ্গা বিপণ্ন মানুষের চেহারায় শাকসবজি বিক্রি করতে অনির্দিষ্টকালব্যাপী বসে থাকতেও আর ইচ্ছে হয়না। কালভার্টের নিচের বালুর মাঠটাতে সোবহানদের ক্রিকেট খেলতে দেখে তার মাথায় চামচিকা ডেকে উঠল।‘পোলাপানগুলির কোন কাম-কাজ নাই? সারাদিন খালি খ্যালে’!সমবয়সী ছেলেগুলোকে এমন শিশু মনে হওয়ায় সে অবশ্য তেমন অবাক হলনা--- ১৪এর জায়গায় সেই কবেই তো নিজের বয়স ৩৪ভাবে সে। রাস্তার ধারের খেজুর গাছের নিচে বয়স্কদের তাস খেলা চলছে, কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে সেই খেলা দেখতে গিয়ে সে অনুভব করল হাতে ধরা চালের ব্যাগ থেকে কিছুসংখ্যক অবাধ্য চাল গড়িয়ে রাস্তায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছে; কিন্তু সেও মাইক্রোস্কোপ চোখের তীক্ষ্ন ব্যবহারে সবকটি চালকে আবার রাজবন্দীর মর্যাদায় ব্যাগে ফিরিয়ে আনল। এরপর অপেক্ষা না করে হাটতে শুরু করল। রাস্তার একটা অংশে এসে তাকে মাটির ঢালুপথে নেমে বাড়ির পথ ধরতে হয়; এই ঢালুপথের বামে যে বদ্ধ ডোবাটা আছে, আজ অন্যমনস্কভাবে সেদিকে তাকিয়ে অবাক হতে হল। মৃত লাশের মত স্থির হয়ে তাতে ভেসে আছে সুবিলাশ ডোম, যদিও দাউদ জানে সুবিলাশ ডোম জীবিতই আছে, কেননা এর আগেও কয়েকবার তাকে এভাবে ভেসে থাকতে দেখা গেছে, কিন্তু সুবিলাশ ডোমকে ঘাটাতে যায়নি কখনই। লাশ কেটে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে দিনের বেশিরভাগ সময়, তাকে দেখলেই দাউদের শরীরের উপরে তেলাপোকা হেটে যাওয়ার অস্বস্তি ভর করে।


রঙছড়ি গ্রামে সাকুল্যে ৪ঘর ডোম আছে, যারা পরস্পরের আত্মীয়ও। নিজেদের সমাজ মেনে চলে, গ্রামের সবার সঙ্গে স্বেচ্ছায়ই একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলে পেশাগত কারণে।
সুবিলাশ যে নোংরা ডোবাটায় ভেসে রয়েছে, তাতে মানুষজন গোসল করেনা, তবুও তার ভেসে থাকবার জন্য এটাকেই বেছে নেবার ব্যাপারটা একটু অদ্ভুতই। ডোম হলেও তার মধ্যে একজন মানুষ বাস করে প্রকাশ্যে : সপ্তাহের কমপক্ষে ৩-৪দিন অপঘাতে মরা লাশ কেটে সেই মানুষটি নেকড়ে হতে চায়--- ইচ্ছে করে কাটার সময় মৃত মানুষের কলিজাটা মুঠোয় ভরে এক লহমায় মুখে পুরে দিক; মুরগীর কলিজা অনেক খাওয়া হয়েছে কিন্তু মানুষের কলিজার স্বাদটা পরখ করা হয়নি কখনো। ছুরি দিয়ে কখনো চোখ খুঁড়ে ফেলতে মন চায়, পুরুষের শিশ্ন, মহিলাদের স্তন কেটে ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় রেখে দিতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু এগুলো সবই স্বাভাবিক সময়ের ভাবনা। কাটার সময় শিশ্ন-স্তন কিংবা হাত সবই একইরকম লাগে, শরীরগুলোকে মনে হয় তরমুজ--- সেগুলোর মাঝ বরাবর চিড়ে সে বের করে আনে ভেতরের লাল।

সুবিলাশ জানেনা জীবনে কতলাশ কেটেছে; তার কাজ তরমুজের মত করে মানুষ কাটা--- জানার রাজ্যে এটাই শেষকথা। কালরাতে কেটেছে এক বুড়োর লাশ—সম্ভবত গলাটিপে মারা হয়েছিল। বুড়োটার ভ্রুজোড়াকে মনে হচ্ছিল লক্ষণের ধনুক। বুক বরাবর ফাড়ি দেবে এমন সময় লাশটা একটু নেড়েচেড়ে উঠেছিল যেন; মদ্যপ সুবিলাশের মেজাজ সপ্তমীতে উঠেছিল তাতে-‘ হারামির ছাউ, এত্ত পল্টি কইরা কাটবার আসলাম, আর তুই লড়োস। এই দ্যাখ, বাঁচা কারে কয়’।
সাধারণত নেশার ঘোর কেটে গেলে লাশ কাটার কালের স্মৃতিগুলোও হারিয়ে যায়, কিন্তু গতরাতের বুড়োকে কাটার দুঃখটা তাকে পেখমে পেখমে নাচাচ্ছে। নেশার ঘোরে লাগা বুড়োর নড়াচড়াটাকে এখনো বাস্তব মনে হচ্ছে, আর কেবলই ভাবছে বুড়োটার বাঁচতে চাওয়ার আকুতিকে সে নৃশংসভাবে খুন করল। এধরনের অভিজ্ঞতা তার মাঝেমধ্যেই হয়, তখনই এই ডোবাটায় এসে ভেসে থাকে, যেখানে মানুষ গরু ঝাঁপাতেও নামেনা। নিজের মনের ময়লাগুলো ডোবাকে দেয়, আর ডোবার নোংরাটা নিজে শুষে নেয়, নোংরা ঠান্ডা পানি শরীরের তাপামাত্রা সামান্য কমায়, সবশেষে বাড়িতে ফিরে টিউবয়েলের পানিতে অনেক্ষণ ধরে গোসল করে। আজ ভেসে থাকবার সময়টাতে সুবিলাশ দারুণ বাস্তববাদী, তার মধ্যে সক্রিয় হয়েছে পিতৃসত্তা। তার দুইছেলে কৈলাশ, পৈলাশ—দুজনই দশ পেরিয়েছে। স্কুলে আসা-যাওয়ার একটা লোকদেখানো প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে ঠিকই, কিন্তু সে জানে ডোমের ছেলে কোনদিনই ইস্কুলের হেডমাস্টার বা সোনালি ব্যাংকের হেডক্যাশিয়ার হতে পারবেনা, ঘুরেফিরে বাবার পেশাতেই আসবে-- দিন যতই বদল হোক। আবার,কৈলাশ-পৈলাশ পোচপোচ করে মানুষের নাড়িভুড়ি কাটছে এটা মানতেও তার পিতৃসত্তা সায় দিচ্ছেনা। সে ভাবছে ছেলে দুটোকে ঢাকা শহরে পাঠিয়ে দেবে--- ডাস্টবিনের ময়লা খুঁটে খাক, তবুও মানুষ না কাটুক। ‘মাইনষের গুস্টি কিলাই, আমার পুতগো আমি মাইনষের শরিল ছুঁইবার দিমুনা’।

সুবিলাশ ডোবা থেকে উঠে এসেছে ঘণ্টাখানিক হল।
তার স্ত্রী নিলিনা গেছে তার বড়ভাই সুনির্মলের বাড়িতে, শূকরের মাংস আনতে। বেশ দঙ্গল একটা শূকর জবাই হয়েছে, চার-পরিবার মিলমিশে খাবে আয়েশ করে। সুবিলাশ বাড়ির সীমানায় ঢুকে দেখে কৈলাশ-পৈলাশ উঠোনে সাতচারা খেলছে; দেখে খুব ভাল লাগে তার, সেও ছেলেদের সঙ্গে খেলতে আগ্রহ প্রকাশ করে। ওদের বয়সে সাতচারা খেলার চেয়ে উঁচু জলপাই গাছের মগডালে চড়ে পানিতে ঝাঁপ দেয়া খেলাটাই তাকে টানত বেশি, তখন তারা ডোম অধ্যুষিত পাড়াতেই বসবাস করত, কিন্তু বাবা বেমক্কা খুন হওয়ায় মায়ের পিছুপিছু ৫টি ভাই-বোন রঙছড়িতে এসে উঠেছিল, তাও ৩০বছর আগের গল্প। বৈবাহিকসূত্রে বোনটি পূর্বেকার ডোমপাড়ায় ফিরে গেলেও তারা চারভাই পাশাপাশি ঘর তুলে রঙছড়িতেই রয়ে গেছে। মায়ের বয়স হয়ে গেছে, ৪ছেলের বাড়িতেই মিলে-ঝিলে থাকে। ৪ভাইয়ের ৭ছেলে, বাকি ভাইয়েরা স্বপ্ন দ্যাখে ছেলেরা বড় হয়ে একদিন সংসার করবে, তখন হয়ত ডোম-পরিবারের পরিসর বাড়বে--- রঙছড়ি গ্রামেই একটা ডোমপাড়ার পত্তন হবে নতুনচেহারায়। কিন্তু সুবিলাশ ওসব চায়না বলেই তো এতক্ষণ বদ্ধডোবায় ভেসে এল; সে ধপাস করে বসে পড়ল। ছেলে দুটোকে কাছে ডাকল, পারলে দুজনকে বুকের ভেতর লুকিয়ে ফেলবে এমনভাবে তাদেরকে বুকের সাথে চেপে ধরল। বাবার এই আকস্মিক আচরণ ছেলেদের বোধগম্য হবার কোন কারণ থাকতে পারেনা, উল্টো খেলার মাঝখানে আচমকা মজা নষ্ট করায় পৈলাশ সামান্য অনুযোগই করল।‘বাবু, এমুন শক্ত কইরা ধইরা রাখচো ক্যান? খেলবানা?’


রাত্রির স্বাস্থ্যপান চরমে উঠে যখন বারোটা বাজল, তার একটু আগে ধামরাই সদর হাসপাতালের গেটে সুবিলাশকে দেখা গেল মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে। একটা লাশ কাটার ডাক পড়েছিল কিছুক্ষণ আগে, নতুন বউ বিষ খেয়েছে। কিন্তু সে বউটির দিকে একবারের বেশি তাকাতে পারেনি---সত্যি সত্যিই হোক আর নেশার দোষ-গুণেই হোক মুখের আদলটা হুবুহু নিলিনার মত লাগছিল। পেটের ধারণক্ষমতারও বেশি মদ গিলেও সে লাশটাকে আর চেয়ে দেখতে পারেনি, জীবনে এই প্রথম। গেটে তার বসার জায়গা থেকে হাত মেলানো দূরত্বে একটা প্রহরী কুকুরও ঝিমুচ্ছিল; সুবিলাশ নেশা নেশা চোখে কুকুরটিকে একবার দ্যাখে, ২য়বার চোখ বোজার আগে কুকুরটার দিকে হাত নাড়ায়, সামনে পড়ে থাকা বাংলা মদের বোতলের তলানীটুকু চেটে খাবার অনুরোধ করে। নাইট ডিউটিরত ডাক্তার সালেহীন দু-একবার তাকে দেখলোও, কিন্তু কোন গ্রাহ্য করার তাগিদ পেলনা; ভেবে নিল মাল বেশি টেনে বেতাল হয়ে গেছে।

ডাক্তার সালেহীন চিন্তা-চেতনায় নিজেকে নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে, অথচ ঝঞ্ঝাটই যে তার ভবিতব্য বা কর্তব্য তা কেন যেন করোটির ভেতরে থাকা মগজে ঢুকেও টিকতে পারেনা। ওষুধ কোম্পানীগুলোর রিপ্রেজেন্টেটিভ আর গজিয়ে উঠা ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে ভেতরে ভেতরে সে অস্থির। আবার এদেরকে এড়িয়ে চলবার মত সাধুপুরুষও সে নয়। ওষুধ কোম্পানীর কমিশন, ক্লিনিকের মাসোহারা যেমন অধিকারবোধে হাত পেতে নেয়, অতটা অধিকার নিয়ে একজন পুরুষ কেবল আপনস্ত্রীরই হাত ধরে। অবশ্য অধিকারোবোধটা অসততা আর স্ত্রীকে একই লাইনে দাঁড় করায় বলে দিনশেষে সে মর্মান্তিক আত্মগ্লানিতেও ভুগে। সেজন্যই প্রতিমাসের শেষ দশদিন হাসপাতালে টানা নাইট ডিউটি করে, নিজের চেম্বারে চেয়ার-টেবিল রিএরেঞ্জ করে সেখানেই রাত্রিযাপন করে, হোটেল থেকে খাবার আনিয়ে খায় এবং একমিনিটের জন্যও বাড়ি ফেরেনা। টানা মসজিদে অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগীর নাম এতেকাফ। ডাক্তারিই যেহেতু সালেহীনের ইবাদত, তাই দশদিন একনাগাড়ে হাসপাতালে থেকে সে মনে মনে এতেকাফ করে--- যদি কিছুটা হলেও পাপমোচন হয়!

ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে ঝঞ্ঝাটই সালেহীনের ভবিতব্য। তাই বয়স ৩৯ছুঁয়ে চালশের গন্তব্য ধরলেও পরিবার প্রথায় ধাতস্থ হওয়া হচ্ছেনা: বারবার সংসার ভেঙ্গে যায়। ১৪২৪৪ বা তার কিছু বেশিদিনের যাপিত প্রমাণদৈর্ঘ্যের জীবনে ৩বার বর সাজা হয়ে গেছে। প্রথমপক্ষের স্ত্রী ছিল দূরসম্পর্কের ফুপাতো বোন, বিয়েটা টিকেও ছিল ৬বছর--- বাচ্চাকাচ্চা অসহ্য লাগত বলে পিতৃত্বের পদকটা আর অর্জন করা হয়নি। দ্বিতীয় বিয়েটা হয়েছিল অনেকটা হুট করে। মেজোবোনের শ্বশুরবাড়ির এলাকার মেয়ে, হোম ইকোনমিক্সে অনার্স পড়ছিল; বয়সের ব্যবধান ১৪-১৫ হওয়া সত্ত্বেও পরিবারের পীড়াপিড়ি, সর্বোপরি মেয়েটার আবেদনময় লাবণ্য তাকে এবং তার বয়সকে শিমুলতুলার মত করে বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছিল। এযাত্রায় টিকেছিল ২বছর, এবং এখানেও প্রজননহার শূন্য। সমস্ত ব্যাপারটাতে মা-বাবা-ভাই-বোনেরা কমবেশি বিব্রত, কারণ এই যুগে একজন পুরুষের তিনটি বিয়ে করা রুচিগত উৎকর্ষ আর সভ্যতার মুখে থুথু দেয়ার শামিল। তাই ভাই-বোনেরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলে এখন; খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে ডাক্তার ভাইটিকে স্মরণ করবার আদিখ্যেতা-বিলাসিতা দেখায়না। তবে মা-বাবা এতকিছু সত্ত্বেও বিমুখ হতে পারেননা বলে পুবাইলে নিজেদের বাড়ি ফেলে তারা তার কর্মস্থল ধামড়াইয়ে এসে থাকেন, ছেলের যত্ন-আত্তির দেখভাল করেন। সালেহীনের আচরণে অধিকাংশ সময়ই মনে অসন্তোষ দানা বাধলেও তার মুখে মা-বাবা ডাকটা শুনলেই অসন্তোষ তালমিছরি হয়ে যায়।
সালেহীনের ৩নম্বর বউয়েরও এটা ২য় বিয়ে—প্রথম স্বামী ২বছর আগে মারা গেছে। তাই সবারই ধারণা এই বিয়েটা অন্তত টিকবে।

সুবিলাশকে একঝলক দেখে এলেও চেম্বারে ফিরে সালেহীনের মনে হল সুবিলাশ ডোম নয়, ঝড়ে মূলোৎপাটিত কোন শিলকড়ই গাছের গুড়িকে বসে থাকতে দেখে এসেছে। ‘একজন মানুষ চিন্তায় মারা যায়, শূন্যতায় মারা যায়, স্বপ্ন,দর্শনে মারা যায়, একজন মানুষ তাড়িত-বিতাড়িত হয়েও মারা যায়--- মানুষ আসলে প্রতিমুহূর্তেই নিজের কাছে নিজে মরে যায়, অথচ মানুষটি বেঁচে থাকে, বংশবৃদ্ধিও করে। বেঁচে থাকা বংশবৃদ্ধির সমার্থক হলে তো মানুষ না হয়ে ঘাসফুল হওয়াও ঢের ভাল’।----বিছানা পাতার আয়োজন করতে গিয়ে সালেহীনের মধ্যে এমন দার্শনিকতা-রোমান্টিকতা ভর করায় সে অবাক হলনা, স্বাভাবিকও রইলনা; এই অবস্থার নাম দেয়া যায় আংশিকস্পৃহ দশা। বিছানাটাকে একাপাশে সরিয়ে সে বেরিয়ে এল বাইরে। সন্ধ্যায় একটা সুইসাইড প্যাশেন্ট ফেস করতে হয়েছে—নতুন বউ; বোধহয় স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিলনা, কিংবা অন্যকোথাও সম্পর্ক ছিল, এমনকি এমনও হতে পারে, শ্বশুরবাড়ির লোকজন খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়েছিল। কথাগুলো এখন মনে হচ্ছে, কিন্তু কয়েকঘণ্টা আগে তার মুখ লিটমাস কাগজের মত করে লাল থেকে নীল রঙ ধারণ করেছিল। আত্মহত্যার রোগী মানেই লাশ মর্গে নিয়ে কাটতে হবে, কোর্টে গিয়ে স্বাক্ষ্য দিতে হবে, যাকে বলে বেগার খাটুনি। এতক্ষণে লাশ কাটা সম্পণ্ন হওয়ার কথা, বউটার বাড়ির লোকজন এসেছিল--- হাসপাতালের ফ্লোরেই গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছে মা-বোন; পক্ষান্তরে হরহামেশা এসব দৃশ্য দেখে চোখ সওয়া হয়ে গেছে বলেই হয়ত ভাবলেশহীন সালেহীন তখন নির্বিকারচিত্তে তৃতীয় স্ত্রীর কথা ভাবতে পারছিল।

এতক্ষণ পর সুবিলাশের ওভাবে বসে থাকার রহস্যটা উদঘাটিত হল, তবে এর চেয়ে অনেক বিভৎস লাশ তো সে নিয়মিতই কাটে, সেক্ষেত্রে এই লাশটা কাটতে না চাওয়ার পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে। অবশ্য মাতালে যুক্তিবোধ আদৌ কোন সরলরেখা মেনে চলে নাকি। এখন আর কেউ কান্নাকাটি করছেনা, কয়েকজন নার্স ছাড়া হাসপাতালে কেউ নেইও, সালেহীনের ইচ্ছে হচ্ছে সুবিলাশের সঙ্গে গিয়ে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করবে। কিন্তু ভয়ও হচ্ছে- ডোমগুলির ভরসা নেই, একদিন ভালমত কথা বললেই পরদিন মদ-টদ নিয়ে চেম্বারের চেয়ারে বসে পা নাচাতে চাইবে। এই ভাবনা থেকে সে চেম্বারে ফেরাই মনস্থ করল, যদিও ফিরবার আগে আরও একবার সুবিলাশকে দেখতে গেটের কাছে গেল কাজের উছিলায়: সার্বক্ষণিক সঙ্গী গামছাটাকে চাদর বানিয়ে অনেকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে সুবিলাশ। রুমে না ফিরে করিডোরেই পায়চারি করতে লাগল সালেহীন; সুবিলাশের অমন গামছা বিছিয়ে ঘুমটা তাকে আকৃষ্ট করেছে। জাতে ডোম হওয়ার সুবিধাটা ও পুরোমাত্রায় উঁসুল করে নিচ্ছে--- যখন যেখানে ইচ্ছা ঘুমিয়ে পড়তে পারে, গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা শ্রেণীকৌলিন্যর পিঁচুটি তাতে বাগড়া দেয়না।

ভোর থেকে বিলাপ শুরু হয়েছে সুবিলাশের। বিড়বিড় করে বলছে- ‘আমারে কাটলে মদ ছাড়া তো ভিত্রে কিছু পাবিনা, কাটিসনা, কাটিসনা’। দুপুর গড়িয়েও বাড়ি ফিরছেনা, তাই উৎকণ্ঠিত নিলিনা দেবর অভিলাষকে পাঠিয়েছিল খোঁজে নিতে। সে-ই সুবিলাশকে টেম্পুতে চড়িয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছে।
বাড়িতে এসেও বিড়বিড় করছে দেখে নিলিনা প্রথমে মাথায় পিঁযাজ বাটা ধরে রাখে কিছুক্ষণ, বেলের শরবতও খাওয়ায়। কাজ হয়েছে অনেকটাই, বিড়বিড় থেমে গেছে। তবে সুবিলাশসহ স্ত্রী-পরিজন সবাই জানে এ পরিস্থিতিতে মূল করণীয়টা কী। সুবিলাশ বসে থাকা টুলের উপর থেকে উঠে দাঁড়াল, কৈলাশ-পৈলাসকে সাথে নিয়ে বেশ স্বাভাবিকভাবে হেটে বাড়ির সীমা পার হল, এখন তার একটাই গন্তব্য- বদ্ধ ডোবা।নিজেদের মধ্যে দেখা না হলেও ঐ সময়ে দাউদও পথেই ছিল, পৌছতে চাইছিল অভীষ্ট গন্তব্যে।

আজ বাসস্ট্যান্ডে হঠাৎ লকিবের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় দাউদের। কথা খুব বেশি হয়নি। মাত্রই গুলিস্তানের ট্রিপ দিয়ে ফিরেছে লকিব, বাজারে এসেছিল চা-সিঙ্গারা খেতে। হাতের আঙ্গুলে রকেটের মত করে বেনসন সিগারেট ধরে মুখটাকে বানিয়েছিল ফার্নেস—সেখান থেকে ধোঁয়া ছাড়ছিল দুর্বিনীত চেহারায়। লুকিয়ে-সুকিয়ে দাউদও কিছুদিন হল সিগারেটের সঙ্গে ঠোঁট ছোঁওয়াছুঁয়ি খেলছে, কিন্তু মানুষের সামনে এসে সিগারেটের কটিদেশ ধরবে এমনটা ভাবলেও শরীরের উষ্ণতা ২ডিগ্রি হ্রাস পায়। লকিব তার কাধে বন্ধুসুলভ একটা চাপড় মেরে বলেছে, কোন সমস্যা হলে শুভযাত্রা কাউন্টারে চলে আসতে, ওর নাকি মোকসেদ ভাই-হারেজ ভাইয়ের সঙ্গে ভাল উঠা-বসা আছে--- এরাই বাসস্ট্যান্ডের আব্বা-শ্বশুর আব্বা। দাউদ বুঝে পাচ্ছিলনা তার মত পুচকে একটা সবজিওয়ালার শহরে এসে এমন কি কঠিন ঝামেলা হতে পারে যা মেটাতে কথিত হারেজ-মোকসেদদের চলে আসতে হবে। আর হারেজ-মোকসেদ যে-ই হোক, লকিবের কথাতেই তারা ছুটে আসবে; লকিব দেশের প্রধানমন্ত্রী নাকি!

তবে উপরে উপরে যতই ফানুশ উড়াক, হেলপারের কাজটা লকিবের আর পোষাচ্ছেনা : অতি তুচ্ছ কারণেও ড্রাইভার তার মায়ের যৌনাঙ্গের দখল নিতে চায় গালাগাল দিয়ে, চড়-থাপ্পড় মারে, ভাড়া আদায়ে যাত্রীদের সঙ্গে নিত্যি কাইজা বাধানোর প্রেক্ষিতে দু-একজনের কিল-ঘুষি হজম করা--- আর ভাল লাগছেনা। গুলিস্তানের ফিরতি ট্রিপ ছাড়ার বেকার বসে থাকার সময়টা সে বায়তুল মোকাররম-কাকরাইল-শান্তিনগরের আশপাশে ঘুরাঘুরি করে পার করে, এভাবে কাছাকাছি বয়সের কিছু ছেলে-ছোকরার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে, যারা পেশাগত জীবনে টোকাই, নয়তো উঠতি ছিনতাইকারী। তারা তাকে দলে ভীড়তেও প্ররোরিত করে, কিন্তু সে ‘হ্যা’ বলতে পারেনা মন থেকে- ‘ধুরো, পুলিশ আর পাবলিকের মাইর খাইয়াই শ্যাষ হইতে হইবো। তার চে বাসড্রাইভারের ইজ্জতই আলাদা—কলেজের প্রিন্সিপাল পর্যন্ত স্টিয়ারিংয়ের পিছে বইসা থাকে, আর জীবনভিক্ষা চায়’। ঠিক এই পয়েন্টটাতে এসে সে আর হেলপারি থেকে সরতে পারছেনা, তাছাড়া কোহিনূরের বিষয়টা তো আছেই। ড্রাইভার হলেই সে ভরাবাড়ি থেকে কোহিনূরকে বের করে আনবে, কোহিনূরের কুত্তাবাপ বাধা দিলে এক কোপে কল্লা ফেলে দেবে। এখন তার পকেটে সবসময় একটা সানগ্লাস থাকে—গেল বৃহস্পতিবার বলাকা হলের সামনে থেকে কিনেছে; কিন্তু বাসে পড়লে ড্রাইভারের গালি শুনতে হয়। এজন্য ডিউটি শেষে টেম্পুযোগে বাড়ি ফেরার পথে সে সানগ্লাসটা পড়ে থাকে, সানগ্লাস চোখে হাটার জন্য সে প্রতিদিন কালভার্টের সামনে নেমে যায়, বাকি পথটুকু পায়ে হাটে। পরিচিত অনেকের সঙ্গেই দেখা হয় এসময়, কেউ কেউ তাকে দেখে হাসে, কিন্তু চৌদ্দ উত্তীর্ণ বেপরোয়া লকিব মানুষকে গোণায় ধরেছে কবে! অবশ্য এও সে বিশ্বাস করে, মানুষেরও তাকে গোণায় ধরবার সময় নেই, সবাই যার যার মত।

সালেহীনও চাইছে লকিবের ছাঁচে নিজেকে গড়েপিটে নিতে। তিন বিয়ে করেও নিঃসন্তান থাকায় মানুষজন আড়ালে তার পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে, ধাতুদৌর্বল্য, মেহ-প্রমেহ প্রভৃতি রোগ আছে ধরে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে; কিন্তু হাওয়ায় সেইসব খবর তার কাছে ঠিকই পৌছায়। সঙ্গে ক্লিনিক আর ওষুধ কোম্পানীর হিসসা পাওয়ার ব্যাপারটা তো রয়েছেই। তার খুব ইচ্ছা হয় মানুষকে চটাস-চটাস জবাব দেবে, কিন্তু পারেনা--- আসলে ভেতরে ভেতরে সে একজন দুর্বল মনের মানুষ। তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখান থেকে অনেক দূরবর্তী কোন জেলায় বদলি হবে, যেখানে পরিচিত মানুষ বলতে শুধু তার স্ত্রী থাকবে, এমনকি ইচ্ছা হলেই এখন মা-বাবা যেমন পুবাইল থেকে চলে আসেন, তারাও যেতে পারবেননা; দরকার হলে সে নিজে মাসে মাসে দেখা করে যাবে। আর ভাই-বোনেরা নিজেদের ভব্যতা-রুচি-মূল্যবোধ ভাতের সাথে মিশিয়ে খাক, এ জীবনে তাদের সংস্পর্শে আর না গেলেও তার ডাক্তারি এপ্রনটাকে মলিন দেখাবে না। বয়স হচ্ছে, বয়স। জীবন এখন যৌবন নয়, ভুবন চায়; তাই এই বউটাকে টেকাতেই হবে। বউটাও স্থায়িত্ব চাইছে, সেজন্যই প্রতিরাতে শারীরীক শিক্ষার শিক্ষার্থী হওয়ার কালে সে একটা বাচ্চা চায়। কিন্তু একটা বেসরকারি কলেজ পড়ায়, বউয়ের এই স্বাবলম্বীতাই সালেহীন মেনে নিতে পারছেনা। বদলি হলে বউও চাকরি ছাড়বে,অর্থাৎ তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে; তখন একটা কেন, তিনটা বাচ্চা নিতেও তার আপত্তি থাকবেনা। দুজন মানুষ পরস্পরকে আটকাতে চাইছে, এবং দুজনের পন্থাও অভিন্ন, তবুও এত দূরত্ব, এত দোটানার ভূমিকাটা কী, তা উপরের তিনি ব্যতীত দ্বিতীয় কারোও কাছে খোলাসা হলে সালেহীন, তার ৩নম্বর বউ বা উভয়ই হয়ত কিছুটট হলেও শান্তি পেত। যে শান্তিটা অনেক দেরিতে হলেও সুবিলাশ তালাশ করে পেয়েছে।

সুবিলাশ কয়েকদিন ধরে তার ছেলেদের বয়সে নেমে এসেছে, তবে আশাপ্রদ ব্যাপার হল কাজে কোন গাফিলতি সে করছেনা—এখনো তরমুজের শরীরেই মানুষ কাটে। তফাত বলতে, ডোবায় ভাসা তত্ত্ব ডোবায় ডুবিয়ে সে এখন ঘুড়িতে মজেছে। তিনরঙা তিনটি পতেঙ্গা ঘুড়ি বানিয়েছে বাপ-বেটার জন্য, লাশ কেটে বিভৎস অনুভূতি জাগলে ছেলেদের সঙ্গে ক্ষেতের আইলে বসে ঘুড়ি ওড়ায়, বিভৎসতা ধীরে ধীরে বিমুগ্ধতায় রূপ নেয়। কিন্তু ঘুড়িগুলো কি বলতে পারবে দাউদও কখনো বিমুগ্ধ হয় কিনা?

হ্যা আজ হল একটা দৃশ্য দেখে : সুবিলাশ ডোম ঘুড়ির নাটাই ধরে দৌড়াচ্ছে-- বাতাসে সুতা আলগা হতে হতে ঘুড়িটা উপরে উঠছে; সুবিলাশ ডোমের পিছু পিছু একইভাবে দৌড়াচ্ছে তার দুই ছেলে, তাদের ঘুড়িও উপরে উঠছে : তিন উচ্চতায় তিন ঘুড়ি--- একটার রঙ লাল, একটা খয়েরি, অন্যটা কড়া হলুদ—সরষে ফুলের রঙ। দাউদ ঘুড়ি দেখে; আলাদাভাবে সরষে ফুল রঙের ঘুড়িটাকে, আর দ্যাখে সুবিলাশ ডোমের ছেলে দুটোকে—তার থেকে বড়জোর ২-৩বছরের ছোট হবে। ঐ বয়সে সে কি ঘুড়ি উড়াত? না মার্বেল আর ক্রিকেট খেলা হত প্রচুর—মালিঙ্গার বোলিংটা খুব ভাল লাগত। এখন কিছুই করেনা; সকালে রুজিনাদারদের বাড়িতে দোয়ালা সাজে, দুপুর-বিকাল শহরের বাজারে সাজে সবজিওয়ালা, যার কোনটিই তার কাঙ্ক্ষিত পরিচয় নয়। সেদিক থেকে লকিবের জীবনটাকে অনেক বর্ণময় মনে হয় তার : প্রতিদিন ঢাকা যাচ্ছে, কত্তকিছু দেখছে। সে ভাবল, কাল একবার কাউন্টারে গিয়ে লকিবের সঙ্গে দেখা করবে--- যদি কমভাড়ায় ঢাকা যাবার একটা বন্দোবস্ত করে দেয়। এতটা বয়সেও ঢাকা শহর না দেখাটা কোন ভাল কথা নয়, পারলে ঢাকা স্টেডিয়ামটাও ঘুরে আসবে: আবার কবে যাওয়া হয় কে জানে! ভাবনাচিন্তায় সময়ব্যয়ের বাড়াবাড়িতা দেখে দাউদ হাটা ধরে, আর চলার অনুভূমিকে তাকিয়ে সুবিলাশ ডোমের ঘুড়িকে উপরে উঠতে দেখে; একটা উচ্চতায় ঘুড়িগুলোকে বোতলের মত লাগে, যে বোতলে বন্দী ছিল আরব্যরজনীর দৈত্য। দাউদ লক্ষ্য করল আজকের আকাশের রঙ সিদর
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ২:০৭
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×