somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইফতারি

২৫ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দেখতে দেখতে রোজা প্রায় অর্ধেক পার হয়ে গেলো। সবাই নিশ্চয়ই ইফতারির দাওয়াত আর ঈদের শপিং নিয়ে বিজি। আমার এই দুটির ঝামেলা নেই। ইফতারির দাওয়াত আমি রাখিনা, আর কাওকে দাওয়াত দিয়ে সাড়ম্বড়ে ইফতারও আমি করাই না। প্রতিদিন ৩/৪ জনের বাড়তি ইফতারি প্লেট সাজাই। ফকির, গরিব মিসকিনকে দেই। ২০ রোজার পর পাড়ার মসজিদে দেই। কারন তখন এতেকাফের কারনে মসজিদে অনেক মুসল্লি অবস্থান করেন।
সিলেটে একটা চল আছে, “মেয়ের বাড়িতে ইফতার, আম-কাঠাল” পাঠানোর। এটা এমন ভাবে এ সমাজে আকড়ে আছে যে এটা যেন অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাড়িয়েছে। না দিলেই নয়। বিয়ের প্রথম বছরে পয়লা রোজায় একবার, রোজার মাঝামাঝি একবার, আর শেষের দিকে একবার, কম করে হলেও তিনবার তো ইফতারি দিতেই হবে। আর সে ইফতারি কি যেমন সেমন? একেবারে বিশাল জজ্ঞ। বিরাট বিরাট দুই/তিন ডেকচি আখনী পোলাও( এটা ছাড়া সিলেটের ইফতারি অসম্পুর্ন), এক ডেকচি চানা-ভুনা, পিঁয়াজু, বেগুনী, জিলাপি, মিষ্টি, দই, নিমকি সহ সব ধরনের ফলমুল, হালিম, আর হলো “বাখরখানী”। এটা ছাড়া ইফতারী হবেনা। এ বাখরখানী ঢাকার বাখরখানী নয়, এটা একধরনের মিষ্টি লাচ্ছা পরোটার মত।

পয়লা রোজাতে যখন ইফতার দেয়া হয় তখনই বলে দেয়া হয় এটা বড় ইফতারি কিনা, বড় ইফতারি হলে আয়োজনও অনেক বড় হয়। বৌ এর ইফতারি আসবে এ উপলক্ষে বরের বন্ধু-বান্ধব, আত্মিয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত দেয়া হয়। পাড়া-প্রতিবেশী আত্মিয়-স্বজনের বাড়িতে ইফতার বিলি করা হয়। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী মেয়ের বাড়িতে ইফতার পাঠানো হয়ে থাকে। বৌ্দের ইফতারি আসার ফাঁকে দেখা যায় বৃদ্ধ শাশুড়ীরও ইফতার আসছে। রোজার মাসে এই ইফতারির যন্ত্রনায় আমি অস্থির থাকি। আশে-পাশের বাসা থেকে প্রায় প্রতিদিনই ইফতার আসছে। আমি একদিন তাদের সবার বাসায় ইফতার পাঠাই। তবে সেটা আমার বাবার বাড়ির নয় বা আমার পুত্রসম দেবরের শ্বশুর-বাড়ির নয়। আমার দেবর বিয়ে করেছে প্রায় বছর তিনেক হলো। বিয়ের পর-পরই রোজা ছিলো। বিয়েতে কোন কিছু না নেয়াতে তারা কিছুটা হলেও ধারনা করতে পেরেছিলো আমাদের সম্পর্কে। তবুও রোজার আগের দিন তার শ্বাশুড়ী ফোন করে আমায় অনেক অনুরোধ করেছিলেন, প্রথম রোজায় সামান্য ইফতারি যেনো আমরা গ্রহন করি, না হলে উনারা আত্মিয়-মহলে মুখ দেখাতে পারবেন না। বিয়ের পর প্রথম মেয়ের বাড়ীতে ইফতার না দিলে আত্মিয়-মহলে কি জবাব দিবেন? উনাদের অনুরোধ না রাখতে পেরে দুঃখিত হওয়া ছাড়া আমার কোন উপায় ছিলোনা। আমি উনাকে বলেছি, আপনি মেয়ে-জামাইকে ইফতারির দাওয়াত দিয়ে খাইয়ে দিন। কিন্তু এভাবে ইফতারি আমি নিতে পারবোনা। আমার বাড়িতে আপনার মেয়ে তো এই ইফতারি নিয়ে কোন খোটা শুনবেনা। আপনি জোর করে পাঠালে বরং তার স্বামীর সাথে মনমালিন্য হতে পারে। আমরা যেহেতু এ প্রথার বিরুদ্ধে অবস্থান করি, আমার বাচ্চারা ছোট থেকেই এসব প্রথার বিরুদ্ধে অবস্থান দেখে আসছে, সুতরাং তাদের মন-মানসিকতা তো বিরুদ্ধেই হবে।

আমরা যৌতুকএর বিরুদ্ধে কথা বলি, বিভিন্ন সভা সমিতিতে বক্তৃতা দেই, কিন্তু নিজের ছেলে-মেয়ে আত্মিয়-স্বজনের বিয়েতে যৌতুক দেয়া-নেয়া করি। এই ধরনের ভন্ডামির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান সব-সময় শক্ত। আমার একমাত্র মেয়েকে আমি সিলেটেই বিয়ে দিয়েছি। না, আমি সর্নালংকার ছাড়া তাকে আর কোন উপঢৌকন দেই নি। ইফতারি, আম-কাঠালি এসব থেকেও বিরত থেকেছি। আর অবশ্যই এ বিষয়ে আমি আগেই তাদের সাথে কথা বলে নিয়েছিলাম। মেয়ের শ্বশুর-কুলের কেউ যে কোন কথা না বলে ছিলো তা তো নয়। তবে সেসব কথাকে আমার মেয়ে আমল দেয়নি।
আগেকার দিনে মেয়ের বাড়িতে ইফতার পাঠানো হতো, আম-কাঠাল পাঠানো হতো। তার পিছনে যুক্তি ছিলো, আছে। তখন যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত ছিলোনা। কথায় কথায় বাপের বাড়ি আসা যেতো না। শুধু মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত দেয়াটাও তখনকার দিনে অসভ্যতা ছিলো, তাই হয়তো আয়োজন করে ইফতার পাঠানো হতো। আজ সেই যুগ নেই। সায়েস্তা খার আমলের হিসেব করে কি এখন চলা যাবে? মানুষের সাধ আর সাধ্য এদুটোর সমন্ময় করা আজকাল খুব কষ্টকর। তাই এসব প্রথাকে বিদায় দেয়া উচিত। কিন্তু বিদায় কি দিয়েছি? বরং সে প্রথার গায়ে আরো রঙ্গিন ঝালর, জরি, চুমকি লাগিয়ে ঝলমলে করে এটাকে অবশ্য অবশ্য কর্তব্য বানানো হয়েছে। কতো অসহায় বাপ-ভাই ধার-কর্জ করে মেয়ে-বোনের বাড়ি ইফতার নিয়ে যাচ্ছে, আমরা কি তা দেখি? ইফতারি না আসায় কত মেয়েকে কত ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে সে চাপা কান্না কি আমাদের কানে আসে? আমি দেখেছি বৃদ্ধ বাবা মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার করছে মেয়ের শ্বশুরবাড়ী ইফতার দিবে বলে। গতবছর আমার বাসার কাজের মহিলা রোজাতে অগ্রিম বেতন চাইলে কারন জিজ্ঞাসা করে জানলাম, মেয়ের বাড়িতে ইফতারি পাঠাবে হাজার খানেক তো লাগবেই। মেয়ে তার আশেপাশে বস্তিতেই থাকে। বুয়া কে বললাম, এ কাজের জন্য টাকা পাবেনা, কাল টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে এসো, এখান থেকে চানা-পিঁয়াজু, আখনী নিয়ে যেও। আজ যদি তার মেয়ের আশে-পাশে ধনী বাড়ীগুলোতে এই ইফতারি উৎসব না হতো, তবে হয়তো তার মেয়েটা বেঁচে যেতো। তাদের মা-বাবাকে মানুষের কাছে হাত পাততে হতোনা। সন্তানকে কিছু দিতে বাবা মায়ের কতটুকু আনন্দ হয় তা নিশ্চয়ই বাবা-মা মাত্রই বুঝতে পারবেন। কিন্তু আমার দেয়াটা যেন কোনক্রমেই অন্যের উপর, সমাজের উপর কোনরকম প্রভাব ফেলতে না পারে, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি রাখা দরকার। আমার আনন্দ কখনই যেন অন্যের দুঃখের কারন হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখা খুবই প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৪:৩৮
৭৮টি মন্তব্য ৭৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×