somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দরের পূর্ব-পশ্চিম

২৪ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেউ কি কখনো ভেবেছেন, বলিউডের সাবেক সুপারস্টার মাধুরী দীক্ষিত হলিউড কিংবদন্তী মেরিলিন মনরোর মত সুন্দরী সাজার জন্য মেকআপ নিতেন? অথবা ক্লদিয়া শেফারকে অনুসরণের জন্যই সুপার মডেল নাওমি ক্যামবেল মুখে ব্রাশ বুলাতেন? উত্তরাটা সবারই জানা এবং তা হচ্ছে, একটা বিশাল 'না'। কারণ সৌন্দর্য সম্ভবত সেই শেষ শব্দ যার বস্তুগত সংজ্ঞা নিরূপিত হয়নি। 'সৌন্দর্য' এবং তার 'স্তুতি' সবসময়ই মনোগত।

সৌন্দর্যের মানদণ্ডে হলিউড ক্রেজ মেরিলন মনরো যে মেকআপ নিয়ে ভুবন কাঁপিয়েছেন, একই মেকআপ মাধুরী দীক্ষিতের জন্য সর্বাংশে উপযোগী হবে, তা ভাবার কোন কারণ নেই। মাধুরীর যে হাসি উপমহাদেশ কাঁপায়, মনরোর মাঝে সে ক্যারিশমা কোথায়? বিপরীত দিক থেকে বলা যায়, মনরো যেভাবে সেক্স-সিম্বলের প্রতিশব্দ হয়ে আছেন, মাধুরী সেভাবে পারেননি।

বিশ্ব জুড়ে মেকআপ আর্টিস্টরা খদ্দেরদের জন্য হয়ত একই ব্রাশ, একই কসমেটিকস ও একই ব্রান্ড ব্যবহার করেন। তবে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মাঝে যোজন যোজন ফারাক। এ ভিন্নতার ভিত্তি প্রধানত দুটি প্রাথমিক স্তেরে নিহিত থাকে। প্রথমত, শরীরগত মিল আর উপলব্ধিগত বেমিলের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করেই সামনে এগোয়। জাঁকালো ফেস-কাট, বড় ও গভীর কালো চোখ দেখেই প্রাচ্যের একজন সুন্দরী তরুণীকে শনাক্ত করা যায়। কিন্তু পশ্চিমা সৌন্দর্যকে প্রধানত শরীরের ফিটনেস, ত্বকের বুনন এবং হেয়ার-স্টাইলের ভিত্তিতে মাপা হয়।

উপমহাদেশের নারী পোশাকের পরিপাট্য অথবা ন্যাচারাল অথবা সিনথেটিক কসমেটিক দিয়ে শরীরের প্রকৃত রঙ লুকাতে যতটুকু সময় ঢালে, সোনালি চুলের একজন পাশ্চাত্য তরুণী সে সময়টুকু লাইফ এনজয়ে ব্যয় করে।

ঘর থেকে বাইরে পা ফেলতে গেলেই পাশ্চাত্য নন্দিনী সানব্লক ক্রিম মাখবেই। কারণ সে সানবাথ কামনা করে এবং প্রাচ্যের তরুণীদের মত সূর্যকিরণে এত তাড়াতাড়ি বিবর্ণ হয় না। কিন্তু রোদে পুড়ে চামড়াটা তামাটে বানানোর কথা প্রাচ্যের নন্দিনী ভাবতেই পারে না। তাই সানবাথের সঙ্গে তার ভাব জমে না।

পাশ্চাত্যের সোনালি চুলের একজন টিনএনজার নিজেকে মোহনীয় করার জাগতিক প্রয়োজনটুকু সহজেই আয়ত্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের দৃশ্যপট ভিন্ন। এখানকার উঠতি বয়সের একজন মেয়ে গাঢ় রঙের লিপ পেনসিলের মাধ্যমে সৌন্দর্যচর্চার হাতেখড়ি নেয়। বাদামি, লাল অথবা গোলাপি নিদেনপে একই রঙের লিপস্টিকও ঠোঁটে মাখে। মুখমণ্ডলে কসমেটিকস মাখার প্রক্রিয়াতেই উভয় গোলার্ধের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। পশ্চিমা নন্দিনী এক বা দু’ স্ট্রোকের বেশি মাসকারা নেয় না। অন্যদিকে উপমহাদেশের নারী মাসকারার স্টিক হাতে পেলে যেন থামতেই চায় না। গাঢ় রঙের আইশ্যাডোই তাদের প্রিয়। তবে অনুষ্ঠানভেদে মাসকারা ও আইশ্যাডোর পুরত্ব বাড়ে।

সোনালি চুল, ফর্সা চামড়া আর ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে পশ্চিমা মেয়েদের মুখমণ্ডলে এমনিতেই প্রাকৃতিক একটা রক্তিমাভা থাকে। এ কারণে কসমেটিক আইটেম কম হলেও তাদের চলে। ত্বকের স্বাভাবিক রক্তিমাভার কারণে লিপস্টিকের হালকা আঁচড়েই ওদের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। আর উপমহাদেশের মেয়েরা কসমেটিকের সম্ভাব্য সব কালার ব্যবহার করার মাঝেই সার্থকতা খুঁজে পায়।

এটা ঠিক, চুলের রঙ, চুলের গঠন, ফ্যাশন ও দৈহিক উচ্চতার ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা সম্ভব, মেকআপের পর একজন নারীকে কেমন দেখাবে। যেমন কাঁধ অথবা কোমর পর্যন্ত কালো চুলের বিপুল সমাবেশে থাকলে প্রাচ্যের একজন নারী ডার্ক পেস্টেল শেড যেমন ক্রিম লিপস্টিক, আইশ্যাডো, আইলাইনার, মাসকারা ইতাদি প্রয়োগ করে নতুন ধরনের একটা ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারে। কারণ এ মেকআপের কারণে তার স্বাভাবিক চেহারা বোঝার কোন উপায় নেই।

সৌন্দর্য সম্পর্কে একজন মেকআপ আর্টিসস্ট বা পেশাদার বিউটিশিয়ানের যে ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য উপলব্ধি সৃষ্টি হয়, তার ভিত্তি সম্ভবত খদ্দেরদের ব্যক্তিগত রুচি ও সাধারণ পর্যবেক্ষণ। তারপরও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, তার সৌন্দর্যের চেতনাটি সামাজিক ধ্যান-ধারণা, প্রথা ও ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত। রণশীলতা ও উদারনৈতিকতা সম্ভবত মেকআপের মূল চালিকা শক্তি নয়। সৌন্দর্যের ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য ধারণা অপ্রত্যক্ষভাবে হলেও সামাজিক মাপকাঠি ও প্রথার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে।

সৌন্দর্যের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সৃষ্ট বির্তকটি হয়ত শেষহীন। তাই এটা বলাই সবচেয়ে নিরাপদ যে, সৌন্দর্যের মনোগত চেতনাটি সংশ্লিষ্ট মেকআপধারীর চোখেই নিহিত থাকে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×