somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মননের মুকুরে হিজাব

২৩ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
যতো ধর্ম আর মতবাদ রয়েছে,সকল মতবাদেরই বা ধর্মেরই একটা নির্দিষ্ট চিন্তাধারা আছে। ইসলাম একটা ঐশী ধর্ম,তাই ইসলামের চিন্তাধারাগুলো সবই নির্ভুল এবং মানুষের কল্যাণকামী। নৈতিক ও চারিত্র্যিক সুষমা এবং সামাজিক সুস্থতা সুরক্ষার স্বার্থে ইসলাম মুসলমান নর ও নারীর ওপর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবে এই হিজাবের বিধান দিয়েছে। আধুনিক এই বিশ্বের বহু মনীষীও ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সম্পর্ক বা যোগাযোগের ক্ষেত্রে সচ্চরিত্র ও আবরণ তথা হিজাবের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা সমাজে নারী-পুরুষের উপস্থিতির উপায় নিয়ে বিভিন্ন রকম দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন,কখনো কখনো তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় কাছাকাছি পরিলক্ষিত হয়েছে। আমরা এ রকম মনীষী ও মনোবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি এ আসরে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

বিশ্ববাসীর সামনে আজ এ প্রশ্নটি উঠে এসেছে,তা হলো হিজাবের দর্শনটা আসলে কী এবং কেন মেয়েদের সমাজে উপস্থিত হবার জন্যে এই সীমাবদ্ধতাটি মেনে চলতে হয়? একজন মহিলা হিজাব নির্বাচন করে নিজেকে কি ঘরে বন্দী করে ফেলে? নাকি হিজাব নারীদের বিরুদ্ধে একধরনের অন্যায়-বৈষম্য? এইসব প্রশ্নের জবাবের জন্যে প্রয়োজন হিজাবের প্রতি আজকের নারীদের আকৃষ্ট হবার নেপথ্য কারণগুলোর দিকে নজর দেওয়া।

মনোবিজ্ঞানীদের নতুন নতুন গবেষণায় দেখো গেছে, পর্দার প্রতি নারীদের ঝোঁকের প্রকৃতিগত কারণ তো রয়েছেই,মানসিক কারণও রয়েছে।তাদের মানসিক এবং আত্মিক বিকাশের জন্যে এই ঝোঁক-প্রবণতা খুবই জরুরি। বিশিষ্ট লেখক ও মনোবিজ্ঞানী ডক্টর শাহরিয়ার রুহানী বলেছেন‌ 'নারী-পুরুষের পোশাকের পার্থক্য থেকে অনেকেই নারীদের ওপর পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব খোঁজার চেষ্টা করেন,অনেকে আবার নারী-পুরুষের অধিকারে বৈষম্য খোজেঁন কেউবা আবার মনে করেন এটা নারীদের বন্দিত্ব এবং তুচ্ছতার শামিল। তারা এই সত্যটির ব্যাপারে উদাসীন যে,ছেলে এবং মেয়ের বেড়ে ওঠা এবং তাদের মানসিক পরিপক্কতার পথটি সম্পূর্ণ পৃথক। আর নারীদের জন্যে উপযুক্ত হিজাব তাদের মানসিক বিকাশের সময়ের সাথেই সংশ্লিষ্ট এবং মানুষের মনস্তত্ত্বের গভীরে তার শেঁকড় প্রোথিত।'

রুহুল কাওয়ানিন নামক গ্রন্থে লেখক মুন্তেসকিউ বলেছেন, প্রকৃতির নিয়মই আদেশ করে যে নারীর আত্মযত্নশীল হওয়া উচিত,কেননা পুরুষকে দুঃসাহস দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে।কিন্তু নারীকে নিজের যত্ন নিজেকে নেওয়ার শক্তি দেওয়া হয়েছে। সেজন্যে হিজাবের সাহায্যে নারী এবং পুরুষের মাঝে এক ধরনের ভারসাম্য সৃষ্টি করা যায়। এই নীতির ভিত্তিতে বিশ্বের সকল জাতি বিশ্বাস করে যে,নারীর উচিত লজ্জাশীলা ও হিজাবধারী হওয়া।

ইসলামে হিজাবের যে বিধান তা নারী-পুরুষের আত্মিক ও মানসিক দিক বিবেচনা করেই দেওয়া হয়েছে। নারীরা হলো সৌন্দর্য এবং কমনীয়তার প্রতীক। তাদের এই সৌন্দর্যের কারণে তাদের অনেকেই নিজেকে প্রদর্শনী করতে চায়। আত্মপ্রদর্শনের এই প্রবণতা তাদের অনেকের মাঝেই রয়েছে। ইসলাম নারীদের মেধা ও শক্তিকে নষ্ট হবার হাত থেকে রক্ষা করার স্বার্থে এবং নিজেকে কেবল আত্মসজ্জার মধ্যে কেন্দ্রীভূত না রাখার লক্ষ্যে মানব মর্যাদার এক উচ্চাসনের দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ইসলামের দৃষ্টিতে যথাযথ পোশাক পরিধান নারীর এই মর্যাদাটি রক্ষা করার উপযুক্ত পন্থা। এ বিষয়টি মনোবিজ্ঞানীরাও সমর্থন করেন।

অধিকাংশ মনোবিজ্ঞানীর মতে মানুষের বিকাশ বহু পর্বে বিভক্ত। ব্যক্তির প্রতিটি বিকাশ পর্বেই তার কিছু প্রয়োজনীয়তার বিষয় উপলব্ধি করে। এই প্রয়োজনীয়তা যদি যথাযথভাবে না মেটে তাহলে ব্যক্তি দুর্ঘটনার সম্মুখিন হয় এবং তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ স্তব্ধ হয়ে পড়ে। অর্থাৎ তার ব্যক্তিত্ব বিকাশের একটা পর্যায়ে গিয়ে থেমে যায় এবং সেখানেই পড়ে থাকে। যদিও তার বয়স বাড়ে,শারীরিক বিকাশও ঘটে,কিন্তু মানসিকতার ঐ পর্যায় সে আর অতিক্রম করতে পারে না,সেখানেই সে ঘুরপাক খেতে থাকে।

এটা স্পষ্ট যে, ছেলেদের এবং মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের এই পর্বে তাদের ব্যবহারে,আচার-আচরণে পরস্পরের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ছেলেরা এ সময় নিজেদেরকে অন্যদের ওপর প্রভাবশালী ভাবতে থাকে এবং সে অনুযায়ী তারা উগ্র এবং অশালীন আচরণও করে। কিন্তু মেয়েরা ছেলেদের ঠিক বিপরীতে আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তাদের প্রতি অন্যদের আকর্ষণও বৃদ্ধি পাবার মতো রূপ ধারণ করে। সুন্দর সুন্দর জামাকাপড় পরা,সাজগোজ করা ইত্যাদি প্রবণতা মেয়েদের এ বয়সের বৈশিষ্ট্য। মনোবিজ্ঞানীদের মতে এই সময় যেসব মেয়ের বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যায় তারা আসলে এক ধরনের ব্যাধিতে ভোগে যা তাদের উন্নতির পথ রোধ করে দাঁড়ায়।



যার ফলে তারা তাদের প্রতি অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে তাদের সকল মেধা কেবল নিজেদেরকে সাজানো গোজানোর কাজেই ব্যয় করে। বহু ক্ষেত্রে এই ঘটনা মেয়েদের হতাশা ও বিষন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মেয়েদের বিকাশের এ পর্যায়ে যদি স্তব্ধতা আসে তাহলে তারা মায়ের ভূমিকায় কিংবা স্বামী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। অবশ্য অনেক মেয়েই এবং নারীরা এই পর্যায়টি অতিক্রম করে পরবর্তী পর্যায়ে অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্কে পৌঁছে মানবীয় পরিচয় লাভ করে। এ সময় তারা নিজেদের সাজানোর কাজে শক্তি সামর্থ ব্যয় করার পরিবর্তে তাদের শারীরিক এবং মানসিক শক্তি-সামর্থকে কেবলমাত্র ব্যক্তি-সমাজ এবং পরিবারের উন্নতির কাজে লাগায়।

বলা হয়ে থাকে যে,কোনো কোনো নারী যারা কোনো কারণে তাদের প্রেমে স্বামীদের আকৃষ্ট করতে পারে নি,তারা নিজেদেরকে সাজিয়ে গুজিয়ে সমাজের গণমানুষের সামনে উপস্থাপন করে যাতে স্বামীদের কাছ থেকে তাদের সৌন্দর্যের যে স্বীকৃতি পায় নি,তা সমাজের কাছ থেকে আদায় করতে পারে। এই চক্রটি তাদের ব্যক্তিত্বের অধপতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মনোবিজ্ঞাণী ডক্টর শাহরিয়ার রুহানী বলেছেন কোনো কোনো পুরুষের নারীর প্রতি নিজেদের অধিকার বা আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা এবং কোনো কোনো নারীর আত্মসজ্জার প্রতি ব্যাপক ঝোঁক তাদের মানসিক বিকাশের পথ রুদ্ধ হবারই প্রমাণ।

তবে হ্যাঁ! স্বামীর জন্যে নারীর সাজগোজের ব্যাপারটি ইতিবাচক এবং পছন্দনীয়। কেননা এর মাধ্যমে পরিবারে তার প্রতি আকর্ষণের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। ইরানের সবোর্চ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ সম্পর্কে বলেছেন,নারীর সাজসজ্জা যদি কেবল স্বামীর জন্যে হয় এবং সে নিজেকে যদি কেবল স্বামীর জণন্যেই সাজায় তাহলে তাতে একদিকে যেমন সাজগোজের নিজস্ব স্বাভাবিক ইচ্ছাও মেটে অপরদিকে স্বামীকেও অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট হবার প্রবণতা থেকে রক্ষা করলো...

বর্তমানে বিভিন্ন দেশে নগ্নতা এবং আত্মপ্রদর্শনীর সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিমা অনেক দেশে নারীর প্রতি তাদের দৃষ্টি হলো ইনস্ট্রুমেন্টাল বা যান্ত্রিক। এরকম দৃষ্টির একটা মন্দ দিক হলো রাস্তাঘাটে মেয়ে এবং নারীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। মেয়েদের লেখাতেই দেখা যায়,তাদের প্রতি রূঢ় আচরণ করার মধ্য দিয়ে তাদেরকে অসম্মান করা হয়। তাদের প্রতি এই ব্যবহার বিভিন্নভাবে করা হয়। কখনো কথাবার্তার মাধ্যমে,কখনো মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে আবার কখনো শারীরিকভাবেও তাদের প্রতি রূঢ় আচরণ করা হয়। তাদের প্রতি যৌন নির্যাতনের মাত্রাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলছে। মেয়েরা সেখানে একাকী রাস্তায় চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করে না।

এই পরিস্থিতিতে বহু চিন্তাবিদ মনে করেন নারীদের জণ্যে হিজাবের বিধানটি তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা তথা সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করার অণ্যতম একটি হাতিয়ার।


২.
ধর্মীয় চিন্তাবিদগণ হিজাবকে নারীদের গর্ব-অহঙ্কার এবং ব্যক্তিত্বের সনদ বলে মনে করেন। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী হলো ফুলের মতো,আর হিজাব তার সুগন্ধিময় অস্তিত্বের মহামূল্যবান পবিত্রতাকে অসুস্থ মনের অধিকারী দুষ্ট প্রকৃতির লোকদের অত্যাচার থেকে তাদের সেই সৌন্দর্য ও মূল্যবোধকে রক্ষা করে। অধ্যাপক শহীদ মোর্তজা মুতাহহারী বলেছেন-একজন নারী যখন হিজাব পরে নিজের ব্যক্তিত্ব,গাম্ভীর্য ও পবিত্রতা বজায় রেখে বাসা থেকে বের হয়,তখন কোনো অসৎ লোক অর্থাৎ যারা সাধারণত নারীদের উত্যক্ত করে সেইসব বাজে লোকজনের বিবেকও তাকে বিরক্ত করার সায় দেয় না। তাছাড়া হিজাবটা নিজের জন্যেও নিরাপদ।হিজাবধারী নারীরা নিজস্ব দৈহিক সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখার কারণে সামাজিক বহু ক্ষয়ক্ষতি বা বিপদ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। ইমাম আলী (আ) বলেছেন-মহিলাদের পূর্ণ হিজাব তাদের নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেয়।

ব্যক্তিগত এবং সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষায় হিজাবের গঠনমূলক আরো বহু দিক রয়েছে। এসব কারণেই মূলত বলা হয়েছে নারীরা যাতে বেগানা লোকের সামনে নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। অধ্যাপক মোতাহহারী বলেছেন-ইসলামে নারীদের হিজাব পরার মানে হলো পুরুষদের সাথে ওঠাবসার ক্ষেত্রে নারীরা যাতে তাদের দৈহিক সৌন্দর্য ঢেকে রাখে এবং আত্মপ্রদর্শনী না করে। ইসলাম সাধারণত কোনো অন্যায়কে নির্মূল করার ক্ষেত্রে সেই সমস্যার উৎসমূলের দিকে দৃষ্টি দিয়ে থাকে। সূরা নূরে মুমিন ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে,তারা যেন অন্যায়-অবৈধ কামনা বাসনা থেকে নিজেদের দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রেখে নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করে।
অন্যদিকে কোরআন পবিত্র নারীদের উদ্দেশ্যেও বলেছে-তারাও যেন তাদের দৃষ্টিকে বেগানা কোনো কিছু থেকে ফিরিয়ে রাখে এবং নিজেদের পবিত্রতা রক্ষার্থে তাদের দেহের যেটুকু দেখা যায় তার বেশি যেন না দেখায়। এটা সর্বজনবিদিত সত্য,যে সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা আছে সে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে হিজাবের বিষয়টি নারীর নিজস্ব মূল্যবোধ বা অনুভূতির সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট। যেসব আত্মবিশ্বাসী নারী নিজেদের মর্যাদা রক্ষায় দৃঢ়প্রত্যয়ী,তারা কখনো হীনমন্যতায় ভোগে না এবং তারা কখনো বেগানা কোরো দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে না।

মার্কিন মনোবিজ্ঞানী আব্রাহাম মাসলৌ বলেছেন,ইসলামের দৃষ্টিতে নারী যতো বেশি আত্মমর্যাদাশীল হবেন তাঁর সম্মান ততো বেশি বৃদ্ধি পাবে। জাপান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর সাচিকুর মুরাতা হিজাবের ওপর গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে,নারীর দৃঢ়তা ও নম্রতার বিষয়টি তার হিজাবের সাথে সম্পর্কিত। হিজাব হচ্ছে নারীর পবিত্র সীমারেখা এবং তার শান্তির দূর্গ। এই হিজাব সমাজে নারীর গুরুত্ব ও তার অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।


অন্যদিকে বলা যায় হিজাব মুসলিম নারীদের জন্যে অবশ্য পালনীয় একটি ধর্মীয় দায়িত্ব। বিশেষজ্ঞদের মতে হিজাবের বিধানটি দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে নারীরাও সমাজে গঠনমূলক ও কর্মতৎপর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তাঁদের দৃষ্টিতে সমাজে তৎপর ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে নারীদের সামনে কোনো বাধা নেই। যুক্তিটা এ রকম যদি নারীরা ঘরে থাকতেই বাধ্য থাকতো কিংবা তার মাহরাম অর্থাৎ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নিষিদ্ধ এমন লোকজন ছাড়া কারো সাথে যোগাযোগ রাখা নিষিদ্ধ থাকতো তাহলে তো হিজাবের বিধান দেওয়ার প্রয়োজনই ছিল না। সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে নারীও যেন অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে সেজন্যেই হিজাবের বিধান দেওয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর রাহিমপুর আযগাদির অভিমত।

একটু গভীরভাবে তাকালে দেখা যাবে যে, ইসলাম অযৌক্তিক বা অপ্রয়োজনীয় কোনো বিধান দেয় নি যার মাধ্যমে মানুষের স্বাভাবিক মেধা বিনষ্ট হয়। ইসলামের সকল বিধানই সুগভীর প্রজ্ঞা ও যুক্তির নিরিখে নির্ধারিত হয়েছে। ইসলামের বিধানগুলো দেওয়া হয়েছে মানব জীবনের মূল লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্যে নিজেদের ভেতরকার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে। নারীরা তো একটি সমাজের অর্ধেক জনশক্তি। তারাও পারে স্ত্রী ও মাতৃত্বের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে। ইরানের সবোর্চ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ সম্পর্কে বলেছেন, হিজাবের মানে নারীদেরকে কোনঠাসা করা নয়। এটা একটা ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। হিজাবের অর্থ হলো সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার ফলে সমাজ যেমন কলুষিত হয় তেমনি নারী-পুরুষ নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়,তবে নারীর ক্ষতিটাই বেশি। সবোর্চ্চ নেতার মতে নারী যথাযোগ্য হিজাব পরে জ্ঞান-গবেষণার কাজে আত্মনিয়োজিত হয়ে উচ্চতর মর্যাদায় ও পেশায় অভিষিক্ত হতে পারে।

পশ্চিমা দেশগুলোতে হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও কোনো কোনো পশ্চিমা দেশে মহিলাদের একটি দল পুনরায় হিজাবের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে। মার্কিন লেখক ওয়েন্ডি শালিত বলেছেন হিজাবের পবিত্রতার দিকে প্রত্যাবর্তনের ঘটনা কেবল মুসলিম দেশেই নয় বরং আমেরিকাসহ বহু পশ্চিমা দেশেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। ১৯৮৯ সালের দিকে হিজাবের সংস্কৃতিতে প্রত্যাবর্তনের নতুন এক প্রবাহের সৃষ্টি হয়। টাইম ম্যাগাজিন এই সত্যতা স্বীকার করে লিখেছে-প্রতি বছর হিজাব পরার প্রতি নারীদের আগ্রহের ক্রমবৃদ্ধি নতুন যুগের ইঙ্গিত বহন করছে।

হিজাব নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গিও রয়েছে। এটা মূলত রাজনৈতিক কারণে ঘটে থাকে। যেমন সুইডিশ মহিলা লেখক আনা সোফি রুয়াল্ড লিখেছেন-খ্রিষ্টান একজন নান যখন হিজাব পরে তখন পশ্চিমারা তাকে মনে করে ধর্মীয় একনিষ্ঠতা ও পবিত্রতা রয়েছে তার মধ্যে। কিন্তু একজন মুসলিম নারী যখন হিজাব পরে তখন তারা তাকে নারী নির্যাতন এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে। তাই রাজনীতিবিদদের উচিত তাদের দ্বৈত নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার করা।

হিজাব যে নারীদের সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা বা তাদের মেধা বিকাশের পথে কোনো অন্তরায়ই নয় তার প্রমাণ হলো ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। ইরানে মেয়েরা পরিপূর্ণ হিজাব পরে অফিস-আদালতে,স্কুল-কলেজসহ সকল প্রতিষ্ঠানেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এমনকি ক্রীড়া জগতেও তাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। তাই আধুনিক বিশ্বের চিন্তাবিদদের উচিত নারীদের ব্যাপারে তাদের সেকেলে দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা। তাদের উচিত নারীদেরকে মানবীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত করে বলা-হিজাব নারী উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধক নয়। #

লিংন্ক দেখুনঃ
Click This Link
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×