somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী অধিকারের পোস্টমর্টেম--৪

১৬ ই মে, ২০১৩ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভারতীয় উপমহদেশের কথা তো ভাষায় বর্ণনা করার মত নয়। এখানে ধর্মের নামে নারী নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পুরহিতরা মন্দিরকে পতিতালয় বানিয়ে ছেড়েছিল। দেবতাকে খুশি করার নাম করে নিজেদের ঈন্দ্রীয়কে খুশি করেছিল। আজও এমন খবর শোনা যায়। দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য নারীকে দেবতাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হতো, বলী(ভারী ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক কোপে মাথা শরীর থেকে আলাদা করা) দিয়ে। বলী দানের খবর এখনও মাঝে মাঝে শোনা যায়। ভারতীয় সমাজ নারীকে এতটাই অধিকার বঞ্চিত করেছিল যে,তার ধকল এখনও তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাদের এখনকার সমাজে নারী অধিকার বলতে বোঝায় সর্ববস্থায় স্বামীর সন্তষ্টি অর্জন এবং তা খুব কঠোরভাবে।

স্বামী যেমন চরীত্রেরই হোক না কেন, তাকে মেনে নিতে হবে। পূর্বে ব্যাপারটি আরও কঠোর ছিল, এর কারণ-নারীদের দ্বিতীয় বিয়ে ধর্মে নেই । পূর্ববর্তী অনেক পুরুষেরই শতাধীক স্ত্রী ছিল। স্বামীর অসন্তষ্টি মানেই নির্ঘাত নরক প্রাপ্তি তাই যে কোন ভাবেই হোক স্বামী বা পুরুষের মনোরঞ্জন করতে হবে। শুধু কি তাই- স্বামী মৃত্যু বরণ করলে স্ত্রীর যেহেতু আর কোন গতি নেই তাই তার জলন্ত চিতায় স্ত্রীকেও জীবন্ত দগ্ধ হতে হতো, রাজী না হলে বাধ্য করা হতো। এ প্রথা হাজার হাজার বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে চলে মাত্র ১৫০ বছর আগে রহিত হয়। এ প্রথাটি তাদের আভিজাত্যের সাথে যুক্ত ছিল। তবে এখনও এটি মাঝে মাঝে ঘটতে দেখা যায়। বিধবা বিবাহ শুরু হলেও সেটা তাদের শিক্ষিত শ্রেণীর কিছু অংশ পালন করে(যারা বলিউডের তৈরী অথবা ভারতের যে কোনো সিনেমা দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই জানবেন যে-কোনো সিনেমার মধ্যেই বিধবাকে বিয়ে দেওয়া হয় না। এমনকি ‘বিধবার বিবাহ করা প্রয়োজন’ এ লক্ষ্যেও বক্তব্য থাকে না। বোঝা যাচ্ছে বিধবা সংক্রান্ত বিষয়টি পূর্বে যা ছিল এখনও তাই’ই আছে) মানুষিক ভারসাম্যহীনতায় ভোগা নারীকে ডাইনি আখ্যায়িত করে পূর্বে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এখনও এটি মাঝে মাঝে ঘটে এবং এসব ঘটনা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী ঘটে। এভাবে তাদের সমাজে বহু রকমের প্রথা রয়েছে, যা কেন জানি ঘুরে ফিরে শুধু নারীর বিপক্ষে। (আমাদের পূর্ব পুরুষরা হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়ার কারনে ও দীর্ঘ দিন থেকে তাদের সংস্পর্শে থাকার কারনে তাদের বহু প্রথা আমাদের মধ্যে স্থায়ী আসন গেড়েছে এবং সেগুলো দেখে শিক্ষিত শ্রেণীর কিছু অংশ ইসলামকে দায়ী করেছে বা করে। মূলতঃ সে সমস্ত বিষয় ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত নয়।)

রসূল (সাঃ) এর নবুয়্যতের পূর্ব পর্যন্ত আরবের নারীদের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়া দুরে থাক, এ সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের কিছু বক্তব্য থাকতে পারে এটাই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত ছিলনা। কথায় কথায় তাদেরকে নির্যাতন করা হতো। যে যেভাবে পারতো তাদেরকে ভোগ করত। শাহাজাদারা এবং প্রভাবশালীরা ঘোড়ার সাথে বেঁধে দিত তাদের দাসীদের এবং প্রচন্ড বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে দিত এক সময় দাসীটির মৃত্যু হলে তারা আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়তো। এটা ছিল একটি মজাদার খেলা। পুরুষরা বিয়ে করলে ইচ্ছামত তাকে যখন তখন তালাক দিয়ে দিত। নারীকে জনসম্মুখে বিবস্ত্র করে ক্রীড়া কৌতুকে মেতে উঠতো। পুরুষ এবং নারীর মধ্যে সুন্দর প্রেমের সম্পর্ক ছিলনা তা নয়, তবে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীকে মর্যাদাকর অবস্থানে রাখা হয়নি বরং আইনগতভাবে তাদের উপর জুলুম করা হয়েছে। এই জুলুমের হাত থেকে রক্ষা পেতে ওই সময় নারীদেরকে দল বেধে আত্মহত্যা করতে দেখা গেছে নারীরা জানতো না যে আসলেই তাদের কোন অধিকার থাকতে পারে। কারণ তাকে শুধু সন্তান উৎপাদনের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। নারীকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো অপমানকর মনে করে। এটি ছিল সামাজিকতা।

বিশেষ দেবতাদের উদ্দেশ্যে নারীকে হত্যা করা হতো ইবাদতের অংশ মনে করে। রসূল (সাঃ) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রাষ্ট্র এবং পরবর্তীতে ইসলামিক রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত সকল অঞ্চল বাদ দিয়ে, পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চলে নারীর প্রতি যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছিল তা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়।

ইউরোপের সামাজিক জীবন ক্রমেই পোপ তন্ত্রের কারনে বিষিয়ে উঠছিল। কিছু মানুষের গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল এ অত্যাচার। সম্রাটরা পোপকে খুশি রেখে বিধান তৈরী করতো, কারণ মানুষ তাদের অনুগত ছিল। সম্রাটের থেকে জনগণ পোপের কথা বেশী মান্য করতো, কারণ পোপরা মৃত্যুর পর তাদের প্রতি অনুগত সকলকে স্বর্গে নিয়ে যাবে, এ বিশ্বাস জনতার মনে প্রথিত ছিল। এমতাবস্থায় কিছু চিন্তাশীল, দার্শনিকদের চিন্তার আলোকে সমাজের মানূষ সচেতন হতে শুরু করে এবং সমাজ প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে থাকে সম্রাট পন্থিরা অন্যদিকে থাকে পোপ ও তাদের অনুগতরা। ক্রমেই এ দু শ্রেণীর মধ্যে দ্বন্দ অনিবার্য হয়ে ওঠে। পোপ আর সম্রাটের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে সম্রাট পন্থিরা বিজয়ী হয় তবে ততদিনে সহস্র, সহস্র বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। আর সম্রাট পন্থিদের বিজয়ের পর পোপের ক্ষমতা সীমিত করে তাকে গীর্জার মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হয়। কিন্তু নারী তার নিষ্পেষণ থেকে মুক্তি পায়নি বরং পেয়েছে নিষ্পেষনের নতুন পদ্ধতি। এই সম্রাট পন্থিরা রেঁনেসা আন্দোলনের পরে মানবতার মুক্তির কথা বলে যে আচরণ করে নারীদের উপর এবং সাধারণ মানুষের উপর, তা ওই পোপের শোষণের থেকে কোন অংশে কোম নয়। কারণ- প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতার যুগে নারীকে তারা বুঝিয়েছে এক, করেছে আর এক ।

পূর্বে ইউরোপ, আমেরিকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে নারীর কি অবস্থা ছিল তা বর্ণনা করছিলাম। তৎকালীন বিশ্বের দার্শনিকরা নারীদের নিয়ে যে জাতীয় গবেষণা করেছেন তা হলোঃ

পন্ডীতরা ও দার্শনিকরা ভাবতেন, ‘নারীর মধ্যে প্রাণ বলতে কিছু আছে কি ? যদি থাকে তাহলে সেটা কি মানুষের না অন্য প্রাণীর ? মানুষের প্রাণ হলে পুরুষের বিপক্ষে তার(নারীর) সামাজিক মর্যাদা কি ? তারা(নারীরা) কি জন্মগতভাবে পুরুষের গোলাম নাকি গোলামের চেয়ে কিছুটা উন্নত মর্যাদার অধিকারী ?’

দার্শনিক ,বুদ্ধিজীবি বা শাসক শ্রেণীর চিন্তা চেতনার অবস্থা দেখে কিছুটা আইডিয়া করার চেষ্টা করুন যে- এই মানুষিকতা থেকে নারী কি অধিকার পেতে পারে ? প্রাচীন গ্রীস ও রোমে নারীদের প্রতি কিছুটা মর্যাদা দেখানো হতো তবে তা মানুষ হিসেবে নয়, ভোগ বিলাসের উপকরণ হিসেবে তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হতো মাত্র। অবশ্য শাসক শ্রেণীর ঘরে জন্ম নেওয়া নারীরা পর্যাপ্ত সম্মান পেত।

ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে সামাজিক ,রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও নারীদের জন্য তা মুক্তি, স্বস্তি কোনটাই বয়ে আনেনি বরং তাকে পুরুষের কর্মস্থলে ভারী কল কারখানায় হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়েছে। পুরুষরা তাদের দ্বায়ীত্ব নিতে ততটা উৎসাহী হয়নি। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি। স্বামীর সংসারে থেকে যারা ভরণ- পোষণ পাবার আশা করতো তাদেরকে কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়েছিল বা সামাজিক ব্যবস্থা সে ভাবেই গড়ে উঠেছিল। আর কর্মস্থলে নারীর অবস্থান পুরুষের সমান ছিলনা। তারা পুরুষের মত দৈহিকভাবে শক্তিশালী না হওয়াতে তাদেরকে পুরুষের মন জয় করে চলতে হতো। মূলতঃ শিল্প বিপ্লবের পরও তারা পুরুষের মনোরঞ্জনের বস্তুই ছিল। শিল্প বিপ্লবের পর ব্যপকভাবে শহরায়ন শুরু হয় আর নারী হয় অসহায়। পুরুষ তাদেরকে বিয়ে করতে উৎসাহী ছিলনা কারণ- তাহলে তার এবং তার সন্তানের ভরণ-পোষনের প্রশ্ন চলে আসে। তাই নারীকে তারা ফাও ভোগ করতে বেশী উৎসাহী হয়ে ওঠে। কোন রকমে বেঁচে থাকার জন্য নারীদের কাজ প্রয়োজন ছিল আর এ সুযোগে নারীকে তাদের সম্মান বিসর্জন দিতে বাধ্য করে, যথাযথ কর্তৃপক্ষ। এ সময়ে সম্মানজনক কাজ না পাওয়ায় নারীরা বাধ্য হয় তাদের দেহ ব্যবসায়। আর নারীর দায়ীত্ব থেকে অব্যাহতি পেতে চাওয়া ভোগবাদী পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এই হৃদয় বিদারক পেশাকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেয় এবং রাষ্ট্রীয় ভাবে বৈর্ধতা দেয়,ঘোষণা করে ‘এটিও একটি কাজ’। এর পেছনের হীন উদ্দেশ্যেটা তারা গোপন রাখে । নারী যখন তার যৌবন হারায় তখন তার দিকে আর সমাজ ফিরেও তাকায় না, কারণ পুরুষতান্ত্রিক ওই সমাজের মনোরঞ্জনে সে এখন ব্যর্থ। একদিকে তাকে দেহ ব্যবসার বাধ্য করা হলো এবং তার এই পেশার স্বীকৃতি দিয়ে তাকে ধন্য(?) করা হলো। আবার যৌবন হারানোর পর তাকে এক অবমাননাকর পরিণতির দিকে ঠেলে দিল রাষ্ট্রীয় বৈধতায়। এটাই তাদের, নারীকে দেওয়া অধিকার ।(যা এখনও চলছে)

চলছে.....
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×