somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাহমুদুর রহমান আমাদের গর্ব আমাদের অহঙ্কার

২১ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাহমুদুর রহমান আমাদের গর্ব, আমাদের অহঙ্কার। তিনি আমাদের আদর্শ। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা, দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রকামীদের চোখের মণি। তার সাহস, চাহনি, বক্তৃতা, লেখনী মানুষকে প্রেরণা জোগায়। তিনি একজন বীর, একজন মর্দে মুজাহিদ। পবিত্র হাদিসে ‘অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলতে পারাকে’ বড় জিহাদ হিসেবে বলা হয়েছে। মাহমুদুর রহমান হাদিসের ভাষায় সেই বড় জেহাদটিই করে দেখিয়েছেন। বর্তমান সময়ে অনেক বিখ্যাত জ্ঞানী-গুণী, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক সমাজ, পীর-মাশায়েখ ও আলেম-ওলামা যে কাজটি করতে পারেননি সেটি মাহমুদুর রহমান করেছেন অবলীলায়, জীবনকে বাজি রেখে। তার দেশপ্রেম বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত দেশপ্রেমিকের দেশপ্রেমকে হার মানিয়েছে। দেশের জন্য তার যে অগাধ ভালবাসা, মমত্ববোধ তা আসলেই বিস্ময়কর। আল্লাহর ওপর অবিচল আস্তা রেখে বাতিল, সাম্রাজ্যবাদ ও তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে ঘুমন্ত মুসলিম উম্মাহকে জাগিয়ে তোলার যে অনন্ত প্রয়াস মাহমুদুর রহমান চালিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। ১/১১-এর পর যে অপশক্তি বাংলাদেশের ওপর ভর করেছিল সেই শক্তিকে দুর্বল করে যারা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও দেশ রক্ষার জন্য কলম ধরেছিলেন, সভা-সেমিনার করেছিলেন, মাহমুদুর রহমান ছিলেন তাদের মধ্যে পথম ব্যক্তিত্ব। গত জরুরি সরকারের আমলে অনেক বুদ্ধিজীবী, কলাম লেখক, সম্পাদক মইন উ’দের কুমতলব না ধরতে পারলেও মাহমুদুর রহমান ঠিকই তা ধরতে পেরেছিলেন। কোমরে গামছা বেঁধে, জেলে যাওয়ার প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়ে নিজবাড়িতে স্যুটকেস রেডি রেখে মাহমুদুর রহমান যে কলমযুদ্ধ করেছেন, তার উদাহরণ ইতিহাসে বিরল। মইন উ’দের চোখ রাঙানিতে বহু রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদের যখন ত্রাহি অবস্থা, সুশীল সমাজের চেঁচামেচি যখন চুপসে ফুটা বেলুনের মতো, ঠিক তখন স্রোতের উল্টোপিঠে সওয়ার হলেন মাহমুদুর রহমান; গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিলেন, দু-নেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করলেন। অনেক চড়াই উত্রাইয়ের পর যখন ডিজিটাল কায়দার নির্বাচনে মহাজোট ক্ষমতায় এলো, অনেকেই তখন তাদের নির্বাচনী ইশতেহার আর নবপ্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ‘কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না’ প্রবাদটিকে সত্য প্রমাণ করে মহাজোট সরকার যখন একের পর এক গণতন্ত্রবিরোধী কাজ করতে শুরু করল তাদের পুরনো চরিত্রানুযায়ী, তখন মাহমুদুর রহমান আর ‘আমার দেশ’ হয়ে উঠল পথের কাঁটা। নির্বিঘ্নে জুলুম অত্যাচার করতে সেই পথের কাঁটা তো দূর করতেই হবে। কেননা মাহমুদুর রহমান মইন-ফখরুদ্দীনদের দেশবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে যেরূপ অবস্থান নিয়েছিলেন, সেরূপই বিরোধিতায় নেমে পড়েছিলেন আওয়ামী মিথ্যাচার, অপশাসন, দুর্নীতি ও গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের। নির্বাচনপূর্ব সময়ে জয় সাহেবের লেখায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় যত না হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি হয়েছিল আমার দেশের ‘জয়ের লেখায় তোলপাড়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মাহমুদুর রহমানের নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের থিসিস ওয়ার্কের পরিণতি যে মহাজোটের মহাবিজয় তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও যৌক্তিক লেখাগুলো আওয়ামী লীগের ভালো লাগার কথা নয়। তারেক-খালেদা শুধু বিদ্যুত্ খাত থেকেই ২০ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে বলে যে মইন বচন বাজারে চালু হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রীও যখন তাতে কোরাস গাইতেন, তখন মাহমুদুর রহমানের লেখায় বেরিয়ে এলো বাংলাদেশের বিদ্যুত্ খাতে বিগত জোট সরকারের আমলে পাঁচ বছরে মোট সাড়ে তের হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যার বিরাট অংশ বিদ্যুত্ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা হিসেবে পকেটে গেল, তাহলে কীভাবে বিশ হাজার কোটি টাকা চুরি সম্ভব? তিনি যখন এ প্রশ্ন রেখেছিলেন, তখন থেকে আর কেউ এ মিথ্যাচার করেনি। এ ঘটনায়ও মাহমুদুর রহমান বিরাগভাজন হয়েছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুতের চরম অভাবের সময় যখন সরকারের ত্রাহি অবস্থা তখন নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দশ টাকায় চাল, ঘরে ঘরে চাকরি, পাঁচ টাকায় কাঁচামরিচ, বিনা পয়সায় সার বিলানোর ওয়াদা বারবার মনে করিয়ে দিয়ে মাহমুদুর রহমান আওয়ামী লীগের গায়ে ‘কাটা ঘায়ে লবণ ছিটানোর’ কাজ করেছেন। পিলখানায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকস সেরা কর্মকর্তাদের নারকীয়ভাবে যে খুন করা হয়েছিল, তার মূল দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবিতে আমার দেশে সিরিজ লেখা সরকারকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারুক হত্যার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উড়াল দিয়ে রাজশাহী গিয়ে সারাদেশে শিবিরকর্মীদের বিরুদ্ধে যে প্রতিশোধের কথা বলেছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে চিরুনি অভিযানে হাজার হাজার শিবিরকর্মী যখন জেলে পুড়েছেন, ঠিক তখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরীহ ছাত্র আবু বকর খুন হওয়ার পর পায়ে হেঁটে দেখতে যাওয়ার রাস্তা হলেও সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী না গিয়ে বরং হালকা মন্তব্য করে নিহত আবু বকরের পরিবারের বেদনা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তখন মাহমুদুর রহমান নিহত আবু বকরের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ‘ওরা মানুষ নয় শিবির’ শিরোনামে যে মন্তব্য প্রতিবেদন মাহমুদুর রহমান লিখেছেন তা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবের বিরুদ্ধে রাজশাহীতে প্রোগ্রাম করা, টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন, রিমান্ডে নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ধর্মহীন শিক্ষানীতি চালু, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, নারী নির্যাতন, বন্ধু ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের সীমান্তব্যাপী খুন উত্সব ইত্যাদির বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমানের অবস্থান দেশব্যাপী প্রশংসিত হলেও আওয়ামী লীগের কাছে তা ভারো ঠেকেনি। তাই তো আইন-আদালতের তোয়াক্কা না করে ‘আমার দেশ’ বন্ধ করে মাহমুদুর রহমানকে জেলে পুড়ে অন্ধকার কুঠরিতে রেখে অত্যাচার করে তার সত্যকথন বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। অধিকাংশ পত্রিকা সাংবাদিকতার নীতি পাল্টে যখন নতজানু নীতি গ্রহণ করে ক্ষমতাসীনদের হালুয়া-রুটি খাওয়ায় ব্যস্ত, তখন মাহমুদুর রহমান ও তার আমার দেশ চুপ থাকেনি। তারা দেশের মায়ায় নিজেদের জীবন বাজি রেখে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে সব অপকর্মকে জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। জোট সরকারের আমলে বন-জঙ্গলে ব্যাঙ মরলেও যেসব মানবাধিকার সংস্থা আর বিদেশি মোড়লরা হাউমাউ করে ডেকে উঠত, মাহমুদুর রহমান লিখেছেন তাদের রহস্যজনক নিশ্চুপতার বিরুদ্ধেও। মোটকথা মাহমুদুর রহমান দেশ, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও সত্যের জন্য দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে যেভাবে চষে বেড়িয়েছেন। সভা-সেমিনার ও লেখালেখি করেছেন, তাতে তিনি এদেশের অকুতোভয় দেশপ্রেমিক ভবিষ্যত্ রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার উপযুক্ততা প্রমাণ করেছেন। অবশ্য এরকম অমূল্য রতনকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা চিনতে পেরে সঠিকভাবে যে কাজে লাগাতে পারবে না তার প্রমাণ এরই মধ্যে বর্তমান সরকার তার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রায় অর্ধশত মামলা দিয়ে, টানা ১২ দিন রিমান্ডে নিয়ে আর অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ঠিক তাজমহলের নির্মাণশিল্পীদের হাত কেঁটে প্রতিদান দেয়ার মতো। তারপরও মাহমুদ দমে যাননি। আদালতে আনা-নেয়ার মাঝে তার যে চাহনি, নিজেই বিচারকদের সামনে মুখ করার মধ্যে যে দৃপ্ত প্রত্যয় তা দেখে আমরা আশান্বিত হই। সালাম মাহমুদুর রহমান। সালাম তোমার মাকে যিনি তোমাকে জন্ম দিয়ে ধন্য করেছেন এদেশের মাটিকে। তোমার জন্য আমাদের গর্ব হয়।

লেখক : অধ্যাপক মুহাম্মদ আমিনুল হক
সহকারী অধ্যাপক আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×