রাজধানীর মিন্টো রোডের একটি বাড়ি বরাদ্দ চেয়ে হাই কোর্টের এক বিচারপতি পূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠালেও সে বাড়িটি এক সচিবকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
Published : 16 May 2013, 10:11 AM
এই পদক্ষেপকে ‘পক্ষপাতমূলক’ বলে মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার একেএম শামসুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বিচারকদের প্রিভিলেজ অর্ডার অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পান।
“হাই কোর্টের ওই বিচারক যখন বাড়িটির জন্য চিঠি দেন, তখন সেটিতে নতুন বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে বাড়িটি তিনি পেতে পারতেন। কিন্তু তা করা হয়নি।”
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মর্যাদাক্রমে হাই কোর্টের বিচারকরা নবম ক্যাটাগরিতে রয়েছেন, যেখানে সচিবরা আছেন মর্যাদাক্রমের ১৬তম ক্যাটাগরিতে।
বর্তমানে হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চের ওই জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হাই কোর্টে অতিরিক্ত বিচারক হিসাবে নিয়োগ পান। দুই বছর পর তিনি স্থায়ী বিচারক হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। বর্তমানে এই বেঞ্চ রিট মামলা শুনানির দায়িত্বে রয়েছে।
নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ওই বিচারকের জন্য একটি সরকারি বাসভবন বরাদ্দে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শেখ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব বরাবর পাঠানো হয়।
সুপ্রিম কোর্টের ওই বিচারক একটি ভাড়া বাসায় বাস করছেন উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, “বাসার মালিক বাসাটি খালি করতে অনুরোধ করেছেন। এ কারণে তিনি সুপ্রিম কোর্টের নিকটবর্তী একটি সরকারি বাসভবন পেতে ইচ্ছাপোষণ করেছেন। কাজেই মহোদয়ের নামে একটি সরকারি বাসভবন বরাদ্দ একান্ত প্রয়োজন।”
পরে ২০১২ সালের ৮ জুলাই গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব বরাবর দ্বিতীয় চিঠি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরী।
এই চিঠিতে বলা হয়, “এ বিষয়ে ইতোপূর্বে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এই চিঠির কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।”
“এ অবস্থায় তার নামে একটি সরকারি বাসভবন জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দের জন্য পুনরায় আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হল।”
এরপর ২০ নভেম্বর শিল্প সচিব মোহাম্মদ মইনুদ্দিন আবদুল্লাহর নামে ওই বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়। তিনি বর্তমানেও একটি সরকারি বাড়িতে রয়েছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (উপসচিব, প্রশাসন-১) মো. হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি বাড়ি বরাদ্দের নীতিমালা আছে। সেই নীতিমালা মেনেই ১২ নম্বর মিন্টো রোডের বাড়িটিও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।”
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে এগিয়ে থাকা হাই কোর্টের এক বিচারক ওই বাড়িটি চাওয়ার পরও অন্যকে বরাদ্দ দেয়া ঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই বাড়ি নিয়ে কিছু ঝামেলা ছিলো সেটা আমি শুনেছি। তবে এ বিষয়টা আমি বলতে পারবো না। আসলে এই বরাদ্দ আমার আমলে হয় নাই। আর আমি তো কাজ চালিয়ে নিচ্ছি।”
ওই পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও তথ্য প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন আহামেদ বলেন, ইকবাল মাহমুদ নামে এক কর্মকর্তার নামে বাড়িটি বরাদ্দ ছিল। ঢাকার বাইরে বদলি হওয়ার কারণে ওই বাড়িতে নতুন বরাদ্দ দেয়া হয়। সম্ভবত তিনি গতকাল বাড়িটি ছেড়ে দিয়েছেন। শিল্প সচিব শিগগিরই ওই বাড়িতে উঠবেন।