ছোটবেলায় নানুবাড়ি যাওয়াটা ছিল একধরনের ঈদ এর চাদ হাতে পাওয়ার মত...আমরা সবাই একসাথে নানুবাড়ি যেতাম...নানুবাড়িতে তখন মাটির ঘর ছিল...সবাই হৈ হৈ করে দিন কাটিয়ে রাত ও কাটিয়ে দিতাম...নানাভাইয়ের তখন গুনে গুনে ৯টা নাতি-নাতনি ছিল.....আমি আর আমার ভাইয়া (আমার বড় খালার ছেলে) ছিলাম বাকি পিচ্চিগুলার লিডার ....একবার ভাইয়া বলল যে আজকে আমাদের প্লান হলো পিকনিক করা...আমরা তো ব্যাপক খুশি..আমরা সবাই কি কি রান্না হবে এটা নিয়ে হৈ চৈ শুরু করে দিলাম আর ঠিক তখনই ভাইয়া বলল আজকের রেসিপি হলো ব্যাং এর ফ্রাই.....আমরা তো প্রথমে রাজি হলাম না কিন্তু পরে ভাইয়া এমন ভাবে বোঝালো যে আমাদের সবার মনে হলো ,আহারে জীবনে ব্যাং না খেয়ে মনে হয় খুব বড় ভুল করে ফেলসি.... আমরা তো সবাই রেডি ব্যাং খাওয়ার জন্য...এখন ব্যাং ধরার পালা ...নানুবাড়িতে একটা বিশাল বড় বিল ছিল...আমরা সেইরকম প্রস্তুতি নিয়ে গেলাম ব্যাং ধরতে...তারপর সবকিছু রেডিও হলো...এখন কথা হলো হাড়ি-পাতিল কোথায় পাব..? নানু যদি শোনে যে আমরা ব্যাং রান্না করব তাহলে কোনদিন ও হাড়ি-পাতিল দিবেনা...তাই আমরা ঠিক করলাম যে নানু কে গিয়ে বলব আমরা কবুতর রান্না করতেসি....যথারীতি মিথ্যা কথা বলে হাড়ি-পাতিল,মশলা ,চাল আর বাকিসব নিয়ে আসলাম আর ভাইয়া রান্না করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ...আমরা তো রীতিমত থাল নিয়ে হা করে আছি যে কখন খাব সে ব্যাং এর ফ্রাই..কিন্তু আর হলো না....কোনো এক গোপন সূত্রে নানু খবর পেয়ে গেল যে আমরা ব্যাং রান্না করছি...এবং যথারীতি নানু ও হাজির আমাদের এখানে....তারপর ই ঘটল আসল ঘটনা ..ভাইয়া যেইনা ব্যাং এর গোস্ত টা দিবে পাতিলে ঠিক সেই সময় ই নানু এমন এক লাঠি দিল যে ইটের চুলা সহ আমাদের ব্যাং সব মাটিতে....হা হা হা...সবার সেই করুণ মুখগুলো এখনও চোখের সামনে ভাসে.....আমরা তো কাদি নাই কিন্তু আমাদের পরের পিচ্চিগুলা তো সেই কান্না....তারা রীতিমত অনশনের ডাক দিয়েছিল... পরে অবশ্য নানু কবুতর রান্না করে দিয়েছিল এবং আমরা সেই কবুতর নিয়ে আবার পিকনিক শুরু করেছিলাম...সবশেষে আমরা ভাত,ডিম ,আলুভাজি আর নানুর রান্না করা কবুতর দিয়ে পিকনিকটা কমপ্লিট করেছিলাম...আজকে হঠাত বৃষ্টি দেখে সেই ব্যাং এর ফ্রাই এর কথা মনে পরে গেল...এখন সবাই অনেক বড় হয়ে গেছি ..ভাইয়ার একটা ১.৫ বছরের ছোট্ট রাজপুত্র হয়েছে...আমি দেশ এর বাইরে...আমার পরের জনের বিয়ে হয়ে গেছে আর তার সমবয়সীটা মেডিকেল এ পড়ছে...আর যে পিচ্চিগুলা কান্নাকাটি করেছিল ব্যাং খাওয়ার জন্য তারাও এখন স্কুল জীবন শেষ করার অপেক্ষায়...এখন আর আগের মত নানুবাড়িতে যাওয়া হয় না...আমি দেশ এ গেলে নানাভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীটা পাই...ওই একদিন ই সবাই আসে কিন্তু আগের মত আর হইচই ,,ছোটাছুটি করা হয় না.....জীবনটা আসলেই খুব যান্ত্রিক হয়ে গেছে এখন...কেও এখন আর পিছনে ফিরে তাকাতে চায় না....কিন্তু আমি ঐদিনগুলো মিস করি ভীষণ...মাঝে মাঝে চোখের কোণে পানির অস্তিত্ব ও অনুভব করি....আর একটা বারের জন্য হলেও আমি ঐদিন গুলো ফিরে পেতে চাই.... কতদিন হলো আমরা কাসিনরা সবাই মিলে একসাথে আড্ডা দেই না...আমরা সব কাসিন গুলো একবারে আপন ভাইবোনের মত ,,সবার সাথেই ফোন ,স্কাইপ এ কথা হয়,,খুনসুটি হয় কিন্তু আগের সেই কথাশেষ করার আগেই হেসে গড়িয়ে পরা,,কারো চুল ধরে শুধু টান দেয়া অথবা কাওকে ভয় দেখানোর জন্য তর মাথায় সাপ/বিচ্ছু বলে চিত্কার করার মজা টা পাইনা......হায়রে জীবন,,,কিসের পিছনে ছুটছে সবাই....?????
আলোচিত ব্লগ
রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!
রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।
আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!
এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঁচতে হয় নিজের কাছে!
চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু। লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা
২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিউ ইয়র্কের পথে.... ২
Almost at half distance, on flight CX830.
পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১
হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামুতে আপনার হিট কত?
প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন