somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাকওয়া অর্জনের মাস রমজানুল মোবাকর.................

১৬ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৫:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রহমত, মাগফিরাত এবং মুক্তির পয়গাম নিয়ে আমাদের মুসলিম উম্মাহর সামনে হাজির হয় পবিত্র মাস মাহে রমজান। রমজানুল মোবারক মানুষের পশুত্বকে খতম করে জাগ্রত করে মনুষ্যত্বকে। মনুষ্যত্বের উপর যখন পাশবিকতা বা পশুত্ব প্রাধান্য পায় তখন মানুষ আর মানুষ থাকে না, তখন সে হয় পশু বা পশুর চেয়েও অধম। পবিত্র আল-কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-"তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলদ্ধি করে না, তাদের চোখ আছে তা দিয়ে দেখে না, তাদের কান আছে কিন্তু সে কানে তারা শোনতে পায় না। এরা পশুর মতো বরং তার চেয়েও বেশি ভ্রান্ত।" (সূরা-আরাফ, আয়াত-১৭৯)

সুতরাং যেহেতু সে ভ্রান্ত বা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট, তাই সে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মানব হত্যা, ঘুষ গ্রহণ, গীবত বা পরচর্চা, চোগরখোরি, মিথ্যাচার, মুনাফেকী, অহংকারি, লোভী, ক্রোধান্বিত, অত্যাচারিসহ এমন কোনো অন্যায় নেই যা সে করে না।

পক্ষান্তরে, যার মানবিকতা পাশবিকতার উপর বেশি প্রাধান্য পাবে বা দিবে সে হবে আশরাফুল মাখলুকাত। তার মর্যাদা হবে ফেরেশতার চেয়েও বেশি।

আর মহান আল্লাহ পাক মানুষকে প্রকৃত মানুষ ও তার পশুত্বকে খতম করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে মহা নিয়ামত হিসেবে দান করেছেন রমজানুল মোবারক। আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন-"হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।" (সূরা-বাকারা, আয়াত-১৮৩)

রোজার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঠিক হওয়া চাই। রোজার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
১. মানুষের মধ্যে আর্দশ ও মানবিক গুণাবলী পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত করা।
২. মানুষের ইহ-পরলৌকিক সর্বোপরি সফলতা অর্জন।
৩. রমজান হলো গোনাহ থেকে মুক্তি, অফুরন্ত রহমত ও বরকতের মাস। কেউ রমজান মাস পেলো আর মুক্তির ফয়সালা করাতে পারলো না, পারলো না সে আল্লাহ পাকের সীমাহীন রহমত ও বরকতের দ্বার খুলতে, তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ নেই।
৪. মানুষে মানুষে প্রেম-ভালবাসা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, প্রীতির সুমধুর নিবিড় সর্ম্পক গড়ে তোলা।
৫. আল্লাহ পাকের বিধান সঠিক নিয়মে মেনে চলার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ সম্পূর্ণ করা।

সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"বহু রোজাদার এমন আছে, রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ছাড়া সে আর কিছুই লাভ করতে পারে না। আবার অনেক রাত জাগরণকারী আছে, যারা নিশি জাগরনের কষ্ট ছাড়া কিছুই পায় না।" (ইবনে মাজাহ শরিফ)

তাই আমাদের রোজা অবস্থায় রোজার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে রোজার সময়টুকু অতিবাহিত করা উচিত। যা বর্জনীয় তা বর্জন করা আর যা পালনীয় তা পালন করা জরুরী।

১) প্রতিবেশীর হকঃ
রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম করে বলছি, কেউ পরিপূর্ণ মুসলমান হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ তার অন্তর, কথাবার্তা ও হাত থেকে নিরাপদ না হবে। আর কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ না হয়।" (মুসনাদে আহমদ)
তাই রোজা অবস্থায় প্রতিবেশির অনিষ্ট করা থেকে বিরত না থাকলে মুমিনই হওয়া যাবে না।

২) মদ্যপানঃ
রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"যদি কেউ ১ বার মদ্ পান করে, তবে ৪০ দিন পর্যন্ত তার নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদত কবুল হবে না। দ্বিতীয় বার পান করলে ৮০ দিন পর্যন্ত তার নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদত কবুল হবে না। তৃতীয় বার পান করলে ১২০ দিন পর্যন্ত তার নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদত কবুল হবে না। আর চতুর্থ বার পান করলে তাকে হত্যা কর। কারণ, সে কাফির। তাকে 'তীনাতুল খাবাল' পান করানো আল্লাহর অপরিহার্য হয়ে যায়। সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, তানীতুল খাবাল কী? রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তা জাহান্নামীদের পূঁজ। (মুসনাদে আহমদ)
তাই মদ পান পরিত্যাগ করা চাই। নতুবা কোন ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।

৩) মুনাফিকির আচরণঃ
মুনাফিকের ৩ টি বৈশিষ্ট্যের একটি হচ্ছে, যখনই সে কথা বলবে মিথ্যা বলবে। তাই মিথ্যাচার না পরিত্যাগ করতে পারলে মুনাফিকির জন্য জাহান্নামের নিম্নস্তরে আবাসস্থল হবে।

৪) গীবতঃ
আল্লাহ পাক বলেছেন-"হে মুমনিগণ, তোমরা অনেক অনুমান থেকে বেচেঁ থাক। নিশ্চয় কতক অনুমান গুনাহ। আর গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। তোমাদের কেউ কী তার মৃত ভাইযের গোশত খেতে পসন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণাই করবে।" (সূরা-হুজুরাত, আয়াত-১২)
তাই রোজা অবস্থায় অন্যের গীবত বা পরচর্চা থেকে বিরত থাকাই উত্তম।

৫) চোগলখোরিঃ
রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"যে ব্যক্তি দুই জনের কাছে দুই ধরনের কথা বলে ঝগড়া-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে, সেই সবচেয়ে অধম।"
রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন-"চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না" (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবূ দাউদ, মুসনাদে আহমদ)
তাই সর্ব অবস্থায়ই চোগলখোরি পরিত্যাজ্য।

৬) হিংসা-বিদ্বেষঃ

রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"নিশ্চয়ই হিংসা-বিদ্বেষ নেকীসমূহকে নিঃশেষ করে দেয়, যেমনিভাবে আগুন শুকনো কাঠকে পুড়ে শেষ করে দেয়।" (আবূ দাউদ)
হিংসা-বিদ্বেষই রোজা নেকীসমূহ নিঃশেষ করার জন্যই যথেষ্ট।

৭) অহংকারী আচরণঃ
আল্লাহ পাক বলেছেন-"তোমরা জাহান্নামের দরজাসমূহ দিযে প্রবেশ কর। তোমরা সেথায় অনন্তকাল থাকবে। অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা-মু'মিন, আয়াত-৭৬)

৮) হারাম ভক্ষণঃ
ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল রিজিক। হালাল রিজিক দিয়ে যাবতীয় আহার গ্রহণ ও বস্ত্র পরিধান করা অত্যাবশ্যক। হাদিস শরিফে রয়েছে,-"যারা হারাম খায় ও হারাম বস্ত্র পরিধান করে তাদের ইবাদত কবুল হয় না।" (মুসলিম ও তিরমিযী)
তাই ঘুষ ও সুদ খাওয়া বর্জন করা চাই।

৯) অপচয়ঃ

আল্লাহ পাক বলেছেন-"হে আদমের বংশধর! প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করবে, পানাহার করবে, কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপব্যয়ীদের পছন্দ করেন না।" (সূরা-আল-আরাফ, আয়াত-৩১)
অনেকে পার্থিব প্রাচুর্যে ইফতার ও সেহরির সময় অনাবশ্যক অয়োজনে অপচয় করেন, যা গর্হিত কাজ। বরং পরিমিত আহার গ্রহণ করে অবশিষ্ট খাবার গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করা সওয়াবের কাজ।

১০) যবানের হিফাযতঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-"সে যাই উচ্চারণ করে, তাই লিপিবদ্ধ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।" (সূরা-ক্বাফ, আয়াত-১৮)
তাই মুখে রোজা অবস্থায় অশ্লীল কথাবার্তা, গালাগালি পরিহার করা চাই।

১১) ক্রোধঃ
রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"নিশ্চয়ই ক্রোধ জাহান্নামের জ্বলন্ত কয়লা।"
ক্রোধান্বিত অবস্থায় মানুষের পশুত্ব জাগ্রত হয় যা রোজার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বিপরীত।

সর্বশেষে বলা যায় যে, রোজা অবস্থায় উপরোক্ত বিষয়গুলো না মেনে চললে আমাদের রোজা উপবাসই হবে তা প্রকৃত রোজার মর্যাদা পাবে না। রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"যে ব্যক্তি মিথ্যা ও অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করতে পারলো না, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।" (বুখারি শরিফ)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×