somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

***রমাদান মাস (এমন একটি মাস) যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে***

১৫ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসূলিল্লাহ।

রমাদান মাস আমাদের মাঝে উপস্থিত। আমাদের দেশে বেশ উৎসাহ-উদ্দিপনার মাঝে রমাদান মাসটিকে পালন করা হয়। যতই দিন যাচ্ছে ততই এই উৎসাহ আর উদ্দিপনা রমাদান মাসের সাথে সামঞ্জস্য বিহীন হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন উপোস কিংবা না খেয়ে থাকাটাই রমাদান হিসেবে ধরে নিয়েছে অধিকাংশ মানুষ। অধিকাংশ মানুষকেই দেখা যাচ্ছে নিজের মতো করে ইসলামকে সাজিয়ে নিতে ব্যস্ত। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় Deen of Allah নয় সবাই Deen of ownself মানতে ব্যস্ত।

রমাদান মাস আসলেই রমানদান বিষয়ক কোন লেখা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা ইফতার মাহফিলে আলোচনার শুরুতেই নিম্নোক্ত আয়াতটি ঘন ঘন শুনতে পাওয়া যায়।

“শাহরু রমাদানাল্লাযি ওনজিলা ফি হিল কুরআনু হুদাল্লিন্নাসি ওয়া বায়্যিনাতীম্মিনাল হুদা ওয়াল ফুরকান”। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫)

অর্থঃ “রমাদান মাস (এমন একটি মাস) যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, আর এই কুরআন (হচ্ছে) মানব জাতির জন্যে পথের দিশা, সৎপথের সুষ্পষ্ট নিদর্শন, (মানুষদের জন্যে হক বাতিলের) পার্থক্যকারী”

“হাতে সময় পেলে” ইসলাম সম্পর্কে জানার চেষ্টায়রত এই জাতী তাই উপরোক্ত আয়াতটি যখন পড়া হয় কিংবা যখন কর্ণকুহরে প্রবেশ করে তখন মনের মাঝে কোন রেখাপাত করে না। আচ্ছা একটু ভাবুনতো, রমাদান মাঝে কুরআন নাযিল হয়েছে কিন্তু তারপর কি হয়েছিল? কুরআন নাযিল হওয়ার পর তৎকালীন মানুষদের মাঝে কি পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল নাকি তারাও আমাদের মতো ঘুমালু চোখে আয়াতটির অর্থ শুনে যার যার কাজে ব্যস্ত থেকেছিল? এই কুরআন তাদের জীবনে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিল। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল।

যারা কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুতে ফেলত, নারী জাতিকে কোন মূল্যই দিত না তাদের নিকটই কন্যা সন্তান স্নেহের পাত্র হয়ে উঠেছিল, নিজের মাতাকে পিতার চাইতে তিনগুণ বেশী হক দেওয়ার দাবীদার হিসেবে মেনে নিয়েছিল। যাদের নিকট সুদ খাওয়াটা, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ কেড়ে নেওয়াটা একটা গুণ মনে করা হতো সেই তারাই সুদ খাওয়া তো ছেড়েই দিল আর অন্যের সম্পদ যদি একটু বালুকণাও হয় তাও ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিল। যারা হাতে ছড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াত, দাস-দাসীদের উপর চরম নির্যাতন করতো, ঠিকমতো খেতে দিতো না সেই তারাই দাসকে নিজের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে মেনে নিয়েছিল, একসাথে বসে খাবার খেতো, নিজেরা যা পরিধান করতো তাদেরকেও তাই পরিধান করতে দিয়েছিল। নানা অলংকারে সজ্জিত হয়ে যে নারীজাতি ধাপিয়ে বেড়াতো সেই তারাই পরবর্তীতে এতই পর্দা করতো যে সরাসরি পুরুষ মানুষদের সাথে পর্দা ব্যতীত কথাই বলতো না। যাদের নিকট জিনা করাটা ছিল একটা স্বাভাবিক ঘটনা, জিনা করাটাকে কোন দোষই মনে করতেন না সেই তারাই জিনা তো ছেড়েই দিয়েছিল বরং জিনার ধারের কাছেও যেতো না। যারা ছিল প্রাণের শত্রু সেই তারাই পরস্পর ভাই ভাই হয়েগিয়েছিল, ভাইয়ের বিপদকে নিজের বিপদ মনে করতো, ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসতো। যারা মামুলি ঘটনার জন্যে যুদ্ধ করতে কসুর করতো না সেই তারাই ইসলামের জন্যে নিজের সর্বোচ্চটুকু বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট দোয়া করতো, অন্যের নিকট সিজদা করতো, বিভিন্ন ওছিলা ধরতো, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে প্রাণী জবাই করতো সেই তারাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এক আল্লাহর আনুগত্য করতে নিজের জীবনটুকু বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়েছিল। যাদের নিকট লাত-উজ্জা নামক বিভিন্ন মূর্তি ছিল পূজনীয় বস্তু সেই তারাই পরবর্তীতে এক ওয়াক্ত নামাজ ত্যাগ করার কথা স্বপ্নেও ভাবতো না। অন্যের আমানত খিয়ানত করা, মিথ্যা কথা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা যাদের নিকট ছিল একটা আর্ট সেই তারাই এই কাজগুলোকে চরম ঘৃণা করতো। যাদের নিকট পূর্বে মুহাম্মদ ﷺ ছিলেন চরম শত্রু সেই তাদের নিকটই পরবর্তীতে তিনি হয়ে গেলেন দুনিয়ার অন্য সবকিছুর চেয়ে সবচেয়ে প্রিয়।

এই পরিবর্তনগুলো কি জন্যে সংঘঠিত হয়েছিল? এই পরিবর্তনগুলো কি এই জন্যে সংঘঠিত হয়েছিল যে রাসূল ﷺ নতুন প্রযুক্তির ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল, নতুন প্রযুক্তির গাড়ি-বাড়ি, উন্নত নানা ধরণের টেকনলজি, কাড়ি কাড়ি সম্পদ নিয়ে এসেছিলেন? একটু ভাবনার বিষয় নয়কি? আচ্ছা এবার আয়াতটির অর্থ পুনারায় পড়ে দেখুনঃ
অর্থঃ “রমাদান মাস (এমন একটি মাস) যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, আর এই কুরআন (হচ্ছে) মানব জাতির জন্যে পথের দিশা, সৎপথের সুষ্পষ্ট নিদর্শন, (মানুষদের জন্যে হক বাতিলের) পার্থক্যকারী”

এই পরিবর্তনগুলো সাধিত হয়েছিল কুরআনের কারণে। কুরআনকে তারা রাসূল ﷺ এর মাধ্যমে বুঝে নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করেছিল। আমাদের মতো ঘুমালু চোখে আয়াত শুনে বসে থাকেন নি, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করতে নিজের সর্বোচ্চটুকু বিলিয়ে দিয়েছিলেন আর যার কারণেই তাদের জীবনে বিপ্লব সংঘঠিত হয়েছিল। তাই আমরাও যদি কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা নিজের জীবন গড়ে তুলি তাহলে এই রমাদান মাস আমাদের নিকট একটা অর্থবহ মাস হয়ে উঠবে। আমাদের জীবনে আসবে পরিবর্তন। এভাবে আর কতকাল আমরা কুরআন-হাদীস থেকে দূরে সরে থাকব! নিরক্ষর বেদুইন এসে রাসূল ﷺ এর কথা বুঝে খাটি মুসলমান হয়েছিল আর আমরা কি সেই নিরক্ষর বেদুইনদের চেয়েও অক্ষম যে আমরা রাসূল ﷺ এর কথা বুঝিনা? আর কতকাল আমরা বলে যাব, আরে কুরআন-হাদীসকি আমরা বুঝবো? এগুলো আলেমদের জন্যে! অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় কুরআন কোন কোডবুক আর এই কোডগুলোকে কাউকে উদ্ধার করতে হবে! আসলে কুরআন-হাদীসের মাঝে যে জিনিসটা আমাদের বাধা দিচ্ছে সেটা হচ্ছে শয়তান। তাই আসুন কুরআন নাযিলের মাসে শয়তানের দেখানো পথে না চলে কুরআন-হাদীস সরাসরি অধ্যায়ন করি, চিন্তা করি, নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের হিফাজত করুন, হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য বুঝার তৌফিক দান করুন। সত্য দিনের আলোর মতো চোখের সামনে উদ্ভাসিত হওয়ার পরও যেন আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে না যাই, আমরা যেন আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যকারী হতে পারি। আমীন।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×