somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কপাল ফাটা রবিন। (প্রেম কাহিনী হইলেও হতে পারে)

১১ ই আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেমকাহিনী লেখা আমার জন্য খুব কঠিন একটা ব্যাপার। কারন পৃথিবীর কোন প্রেম কাহিনীতেই আমি তেমন একটা ভেরাইটি পাই না। বাস্তব অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। তাও একটা চেস্টা করলাম।

সন্ধ্যার পর ঠিক করলাম টাইমটা গুরুজির সাথে কাটাইলে খারাপ হয় না। ব্লগ এর গুরুজি। আসল নাম রবিন। জাফর ইকবাল এর এক উপন্যাস এ ছিল “হাত কাটা রবিন”। আমার এই পোস্ট এর গুরুজি হইল “কপাল ফাটা রবিন”। সব কিছুতেই নাকি তার কপালটা ফাটা। কপাল ফাটা মানে ব্যাডলাক কিন্তু এমন কি সত্যিই নাকি ছোটবেলায় তার একবার কপাল ফাটসিল। হা ছোটবেলায় সে যখন তাদের বাসার টিভিতে বসে "ব্যাটম্যান এন্ড রবিন" দেখতেসিল তখন তার রুম এর জানলার পাশে দিয়ে এক মেয়ে যাচ্ছিল সেই মেয়েকে দেখতে গিয়ে সে খাট থেকে পরে গিয়ে কপাল ফাটায় ফেলে।


গুরুজি আর আমি একসাথে হাটতেসি আর ভাবতেসি ডিনারটা রাতে কই করা যায়। এটা আসলে আমি ভাবতেসি। গুরুজি আপন মনে কি জানি চিন্তা করতেসে। আমাকে জিজ্ঞেস করল, আজকের ডেট (তারিখ) কত? আমি বললাম ১০ অগাস্ট। গুরুজি ওরফে “কপাল ফাটা রবিন” চমকায় উঠল। গুরুজির জীবনের সেই মেয়ের কথা গুরুজি বলা শুরু করল। ছোট বেলার সেই মেয়ে যাকে দেখতে গিয়ে আজ সে কপাল ফাটা রবিন তার সাথে নাকি কপাল ফাটার অনেক বছর পরেই দেখা হইসিল। গুরুজির বক্তব্যেই কাহিনী শোনা যাক.........

গুরুজী তখন কলেজ এ । কলেজ এ পরলে কোচিং করা লাগে গুরুজি কোচিং এ গিয়ে দেখে ছোটবেলার সেই মেয়ে যার কারনে কপাল ফাটসিল। এক দিন যায় দুই দিন যায় তিন দিন যায় গুরুজি কথা বলার মওকা পায় না। অবশেষে সুযোগ পাওয়া গেল। কোচিং এ ঐদিন পরীক্ষা ছিল গুরুজি সাহস করে কপাল ফাটানো কন্যার কাছে ইরেজার চাইল। কন্যা দিল। গুরুজি কাজ শেষে ইরেজার ফেরত দিল। মাঝখানে একবার ইরেজার হাত দিয়ে পড়ে যাওয়ায় ঐটা তুলতে গিয়ে টেবিলের খোঁচায় কপালে ব্যাথা পাইল। পরেরদিন একি ঘটনা, গুরুজি ওই কন্যাকে বলে, “রাবার দিবেন”? মেয়েটা মুচকি হাসল। (রাবার মানে খারাপ জিনিশ। ইরেজার বলাই ভাল।) তারপর এইবার আর গুরুজি রাবার ফেরত ই দিল না। পরের দিন গুরুজি মেয়ের জন্য নতুন ইরেজার কিনে এনে দেখে মেয়ে আসেনায়। মেয়ে আর ঐ কোচিং এ কোনোদিন ই আসেনায়।

তার ১ বছর পর আবার ওই কপাল ফাটানো কন্যার সাথে দেখা। গুরুজি ক্রিকেট খেলতেসিল। বাউন্সার এ হুক করতে যাবে ওমনি দেখে মেয়েটা মাঠের পাশ দিয়ে হাটতে হাটতে যাইতেসে। গুরুজি হুক শট খেলতে গিয়ে আটকায় গেল। বল আবার গুরুজির কপাল এ লাগল। আবার তার কপাল ফাটল।

কপাল ফাটা গুরুর কপাল শেষমেশ খুলল তারো ১ বছর পরে। নিত্যউপহার থেকে যখন গুরু কপাল এ বাধার বাংলাদেশ পতাকার ব্যান্ড কিনতে গেল তখন আবার মেয়ের সাথে দেখা। গুরু মেয়েকে দেখেই কি বলবে না বলবে চিন্তা করতে লাগল কিন্তু কি আচানক ব্যাপার। মেয়ে নিজেই এসে বলে, আপনি কি আমাকে চিনেন? গুরু তোতলাইতে তোতলাইতে বলল, জ্ জ জ্বি, আমি ব্যাটম্যান। থুক্কু আমি রবিন। মেয়ে বলল আপনি তো অমুকের ভাই তাই না। আপনাকে তো দেখেছি আমি, ব্লা ব্লা ব্লা বলে অনেক কথা হইল যেটা আসলে পরিচয় এর সুচনা। তার কয়েক মাসের মধ্যেই মেয়েটার সাথে গুরুর প্রেম এর সম্পর্ক হয়ে গেল। কিভাবে হল সেটা অবশ্য লেখক ভাল বুঝতে পারেনি।

তারপর প্রেম এর পরিনতির জন্য তারা যখন নিজ নিজ পরিবারের সম্মুখিন হইল তখন ঝামেলা লাগবে বুঝতে পারল। মেয়ের বাসায় কোনভাবেই শুনতে রাজি না যে মেয়ে একজন কে ভালবাসে। ভালবাসা মানে আবার কি? বিয়ে ভালবাসার জিনিস না। অদ্যপর গুরু আর সেই মেয়ে মিলে ঠিক করল তারা বাসা ছেড়ে পালাবে। অদ্যপর বাসা ছেড়ে পালানোর দিন আসল। দিনটি ছিল ১০ অগাস্ট। গুরুও আর সেই মেয়ে যখন কোর্ট এ গিয়ে বিয়ে করতে যাবে হটাৎ তাদের মাথায় চিন্তা এল তারা কি এটা ঠিক করছে। এটার পরিনতি না আরো ভয়াবহ হয়। কারন প্রেম করা এক জিনিস আর ঘর সংসার করা অন্য জিনিস। অতঃপর "ভালবাসলেই ঘর বাধা যায় না" সেরকম একটা অবস্থা। গুরু আর ওই মেয়ে কেউই যায় না তাদের বাবা মা মনে কষ্ট পাক। গুরুর ফাটা কপালে আর জুটলনা কিছু।

এরপর আর সেই মেয়ের সাথে গুরুর দেখা হয় নায়। কোন যোগাযোগ ও নেই। কিন্তু ১০ অগাস্ট আসলেই গুরুর মন খারাপ হয়ে যায়। ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম এখন কেন গুরুর মন খারাপ। রাতের খাবার খাইতে কই যাওয়া যায় ভাবতেসিলাম তখনই একটা কমুনিটি সেন্টার এর সামনে এসে হাজির হইলাম। গুরুকে বললাম চল ঢুইকা যাই। আমির খান বলসে খাওয়া খাইতে ইউনিফর্ম লাগে। তাই একটা খাম ও কিনলাম। মন খারাপ করা গুরুকে নিয়ে ঢূকলাম। কোনায় এক টেবিল এ গিয়ে বসলাম। আহা কাচ্চি বিরানির গন্ধ। দুই একজনের সামনে চাপাবাজিও করলাম। মেয়ে পক্ষের একজন কে বললাম আমি ছেলের বন্ধু, ছেলে পক্ষের একজন কে বললাম আমি মেয়ের মামা। সেইখান থেকে জবাব আসল, “ ও আল্লাহ আপনি “নিতার” মামা? তাই তো বলি চেহারায় এত মিল ক্যান?” খাইসে তো আমারে, চেহারায় মিল। গল্প করে আরো জানলাম ছেলে মেয়ের বিয়া নাকি হয়নায় এখনো। মানে এখন তো আর অনস্পট বিয়া হয় না! আগেই হয়ে যায়। কিন্তু এইটা অনস্পট হবে। মেয়ের সাথে আমার চেহারায় মিল। যাই হোক গুরু দেখি মন খারাপ কইরা চুপচাপ বইসা আসে। গুরুকে কইলাম গুরু তুমি বইসা থাকো আমি একটু মেয়ে দেইখা আসি। মেয়ে দেখলাম। মেয়ের আজকে বিয়ে মেয়ের মন খারাপ করে বইসা আসে বড়ই আজব। চরম মায়াকাড়া চেহারা। মেয়ে দেখে টেবিলে এসে দেখি গুরুর কপালে ফুলে গেসে। গুরুকে বললাম কি হইসে গুরু তোমার? গুরু বলল হাত ধুইতে গিয়ে নাকি পাপসে আছাড় খাইসে তাই কপালে ব্যাথা পাইসে। হুম! আফসোস। আরো কিছুক্ষন ঝুম মেরে বসে থাকলাম। ছেলে আসতে নাকি এখনো সময় বাকি। গুরু অনেকক্ষন পর কথা বলল, জিকো ভাই, নিতার সাথে যখনই দেখা হইত, আমি কপালে ব্যাথা পাইতাম। আমি গম্ভীর মুখে বললাম, হুম। হটাৎ চমকায় উঠলাম। কি নাম বললা?? নিতা কে? গুরু বলল, সব সময় ফাজলামি ভাল লাগেনা। নিতা কে আপনি জানেন।। কি বলব বা করব বুঝতেসিনা। গুরু কে বললাম, তুমি কি মনে কর হিন্দি সিনেমা বাস্তবে সম্ভব? গুরু বলল, না সম্ভব না। আমি বললাম চল আজকে একট ঘটনা ঘটায় ফালাই। থ্রী ঈডিয়টস তো একটু নিসি। এখন দিল চাহতা হে দিয়া শেষ করি। আমরা যেই বিয়া খাইতি আসছি এটা নিতার বিয়া। আজকে ১০ অগাস্ট। তোমার কপালটাও ফাটসে। এখন চল। গুরু চমকায় উঠল। এটা কি সম্ভব? গুরু তোমাকে ১০ মিনিট সময় দিলাম। কি করবা ভেবে বল। হয় ওইদিক যাবা নাইলে এখান থেকে বাইর হইয়া যাবা। ১০ মিনিট লাগল না। ৭ মিনিটের মাথায় গুরু উঠল। মেয়ের দিকে যাইতে লাগল। পেছন পেছন আমিও হাটতে লাগলাম। আর হা ছেলে পক্ষ নিয়ে কোন সমস্যা নাই। ছেলে পক্ষ আসতে অনেক দেরি। কারন আমি নিজেই যে ছিলাম, নিতা তার কথা তো সব বলসেই আমাকে। নিতার সাথে আমার কথা আগেই হয়ে আসে। তবে দেখি গুরু কি করে। হাটতে হাটতে গুরু কপালে আবার ব্যাথা পাইল। নাহ “কপাল ফাটা রবিন” এর কপালটা এবার জোড়া লাগাইতেই হবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১১ রাত ১০:২৫
৫৫টি মন্তব্য ৫১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×