somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: মালের সাপ্লাই লাগবো

১০ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভিতর থেকে ডেকে উঠলো জমিরন, "ঐ হারামজাদা, অত হুইত্যা থাকস ক্যা? একটু বাইরে ঘুরলেও তো অয়। দিন নাই রাইত নাই লেংড়া কুত্তার লাহান পৈড়া থাকস ঘরে"

জয়নাল ঘরের বাইরে আসে। সারা রাত সে টলেছে। এখন তার "শইল" মানছেনা। মাল শেষ। বস্তির পিছনের শর্টকাট রাস্তায় গাবতলীর সিনেমা হলের পিছনে যায়। তারা ডাকে, "ঐ জয়নাইল্যা, ঐ -পান্যাদুধ লাগবো নি?"। জয়নাল মাথা নাড়ে। ছিড়া প্যান্টের পকেট থেকে বের করে "পঞ্চাশ টেকা"। একটা ১০/১১ বছরের ছেলে পিছনে পিছনে যায়। ময়লার স্তুপের পাশে আসে। ঐ দিকে "ঠোলা"রা কম আসে। আসলেও অসুবিধা নাই। কিন্তু "বখরা" খায়। জয়নাল "পান্যাদুধের"র দুইটা বোতল মুখে ঢক ঢক করে ঢেলে দেয়। চোখ আরামে বন্ধ হয় জয়নালের। সিগেরেটটা চায়। লাইটার সহ সিগেরেট ধরায় - উ (শান্তি)... সে আরেকটা চায়। পয়সা নাই। পিচ্চিটা বাকিতে আর দেয় না।


জয়নালের গাট খালি। এখন "পাত্তি লাগবো"। সে হাটতে থাকে মিরপুর শাহআলী মার্কেটের পিছনে ... কেরামের আখড়ায় কুরবান আর মতিনরে পায়। "চোখ টিপা" দেয়। মতিন সামনে আগায়ে এসে বলে, সন্ধায় আইস। ১১ তে।

জয়নাল আবার ঘুমায় বাড়িতে -গররররর গররর। মা বকবক করে। ঘুমের মধ্যে খাওনের জন্য ৩টায় জাগায় জমিরন। কোনমতে মোটা চালে ইচামাছের সালুনটা গিলে খায়।আবার ঘুমায়। চাপা বসে গেছে। চোখ ফুলে গেছে।


সন্ধায় ছিড়া জামা পরে সেই "শইল" নিয়া মিরপুর ১১ নম্বর বাস স্টপেজের কাছে আসে। প্যান্টগুটায়। তার ভিতর থেকে ক্ষুরটা বের করে। সন্তর্পনে পকেটে রাখে। পিস্তল আনার কথা মতিনের। মতিন আসে দেরীতে - ৯টায়। জয়নাল ক্ষেপে, "ঐ চো*নার বাচ্চা, কত্তন দইরা খাড়ায়া আছি। লেইট করছস ক্যা?"

মতিন বলে তার বাড়ির পাশে পুলিশের গাড়ি সে ইচ্ছা করে পিস্তল আনে নাই।


অগত্যা তারা বড় প্ল্যান বাদ দেয়। মেইন রোডে না গিয়া গলিতে যাবে। ১১ নম্বরের চুনামসজিদের গলিতে দাড়ায়। রিক্সা আসতে থাকে। তারা সামনে দাড়ায়। আলো অন্ধকার। মুখ বোঝা যায় না।

"মাইয়া টাইয়া" নাই তো আবার? মনে ভাবে। "মাইয়া" হ'লে ভেজাল। না, এক পেট মোটা লোক। মতিন কাশে জোরে। দৌড়ায়ে রিক্সা থামায়। জয়নাল গলার সামনে ক্ষুর ধরে। যা আছে দে।

লোকটা ভয় পায়না। মতিন লোকটার পকেটে হাত দিতেই - লোকটা ধমক দেয়, বিলাইর বাচ্চা বিলাই! তোগোর মতন বিলাইরে আমি জেবের ভিত্তে রাখি। ভাগ। মতিন এর মধ্যে লোকটার পকেটের ভিতর কয়েকটা কচকচা নোট পেয়ে যায়। ঠিক এমন সময় লোকটা মতিনের হাত চেপে ধরে - ঐ ঐ ঐ বলে চিল্লায়। মতিন আটকে যায়। লোকজন দৌড়ে আসতে পারে ..কনফেকশনারী দোকান আছে কাছে।

জয়নাল অনভিজ্ঞ হাতে ক্ষুরটা ডাবিয়ে দিয়ে টান দেয়। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে আসে। আর্ত চিৎকারে ছটফট করে লোকটা। মতিন জান দিয়ে দৌড়ায়। জয়নাল দৌড়ায় দুর্বল "শইলে"। মানুষ এসে পড়ার আগে। পিছনে কী বাঁশীর শব্দ?


দুজন দেওয়াল টপকে এক বাড়ির পিছনে ।বুক ওঠা নামা করতে থাকে কামারের হাপড়ের মতো। হাতে রক্ত, পিরনে রক্ত। তারা দুই বাড়ি পরে চুনামসজিদের কলে গিয়া, জামা ভিজায়ে রক্ত মুছে অজু করে নেয়।

জয়নালের হাতে এখন অনেক টাকা। কচকচা পাঁচশ টাকা দিয়া সে আজকে "হিরুইন" টানবে। মতিন সিরিঞ্জ আর প্যাথেডিন কিনা আনছে। আহ, মালের আর কয়টা বোতল দরকার! হা হা।

তারা গাবতলীর দোকানে যায়। শিশিবোতলের আড়তের ভিতর যেতেই পিচ্চিটা দৌড়ায়ে আসে, "আইজ সাপ্লাই নাই। খবর হুনেন নাই? কবীর ভাইরে কাইল রাইত চুনামসজিদের গলিতে হাইজাকাররা মাইরা ফালাইছে। ইন্নালিল্লাহ...হে আইজ আহনের কথা আছিল নতুন মালের সাপ্লাই লৈয়া"।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ২:২৩
১৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×