somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোকের মাসে ‘কাঁদো বাঙালি কাঁদো’ কালচার এবং প্রসঙ্গত প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলাচিঠি

০৯ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি একজন বাঙালি এবং বাঙলাদেশের একজন নাগরিক। এবং একজন ভোটার। কিন্তু আমি কখনোই ভোট দিই নি, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ডান-বাম কাউকেই দেইনি। কারণ আমার কখনোই কাউকে সৎ এবং যোগ্য মনে হয় নি। ভোট দেয়া যেমন নাগরিক অধিকার, না দেয়াও একটি নাগরিক অধিকার। এটা একজন সাধারণ নাগরিকের নীরব প্রতিবাদ, অনিয়মের বিরুদ্ধে।

রাজনীতি বলতে যা পড়েছি তা পড়ে আমার মনে হয়েছে রাজনীতি হচ্ছে নৈর্ব্যক্তিক ভালোবাসার আধার এবং রাজনীতিই নৈর্ব্যক্তিক অধিকারকে সংরক্ষণ করে। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলি (বুর্জোয়া, অবুর্জোয়া মানে নামত বাম, মৌলবাদী) আমার সেই সুকুমার ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। এখন রাজনীতি নষ্টবীজ বপণ করে আর বিস্তারিত হয় আসমুদ্র নষ্টক্ষেত।
তারপর সিংহভাগ অশিক্ষিত আর নিরক্ষরের দেশে গণতন্ত্র যে আসলে কতোটা অর্থহীন সেটা অন্যদিন লিখবো। আপাতত মূল কথায় আসি। ভূমিকা আজকের মতো শেষ।

আমরা আমাদের ছোটোবেলায় দেখেছি গ্রামে প্রতিবছর একটা সময়ে কাঙালিভোজের আয়োজন হতো। যদিও অতোটা কাঙাল ছিলাম না, তথাপি দারিদ্রতো ছিলোই। ফলত পেটপুরে সুগন্ধি গরমভাত এবং মাংস খাওয়ার লোভে আমরা দল বেঁধে যেতাম। এবং পেটপুরেই খেয়ে আসতাম।

যখন একটু বড় হলাম ইশ্কুলে টিশ্কুলে কয়েকক্লাস পড়ে ফেলেছি-- আর আস্তে আস্তে জানতে ও বুঝতে শিখেছি কিছু কিছু বিষয়-- তখন জেনেছি আমাদের সেই মহার্ঘ্য কাঙালিভোজ শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুদিনে তাকে স্মরণ করে করা হয়। গরীর দুখী কাঙাল ভিকারিদের খাওয়ানো হয় যাতে খেয়ে তারা প্রাণভরে দোয়া করে, তাঁর বিদেহি রুহের মাগফেরাত কামনা করে।

আরো কয়েককাস পরে জেনেছি শেখ মুজিবর রহমান কে, তিনি কিভাবে বঙ্গবন্ধু হলেন, এবং কিভাবে বাঙলাদেশী জাতির পিতা হলেন। এবং কিভাবে সেই বাঙলাদেশী সন্তানদের হাতে সপরিবারে নিহত হলেন।

আরো অনেকবছর গিয়েছি কাঙালিভোজে। কারণ সময় গত হলেও দারিদ্র ছাড়ে নি। কিন্তু ক্রমশ সুগন্ধিভাতের জায়গায় এসেছে মোটা চাল, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং মাংসের ঘাটতি। আহা সেই দিন! আর টানে নি। ফলত আর যাই নি।

এই কাঙালিভোজকে কেন্দ্র করে আগেও যে চাঁদাবাজি হয় নাই তা না। তখনও হয়েছে। রয়েসয়ে নিয়েছে আমজনতা। কিন্তু ইদানীং সেটা এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে আগস্ট এলে মানুষ আতঙ্কে থাকে। এখন চাঁদা না দিলে ক্যাশবাকশো ভেঙে চাঁদা নিয়ে যায়, ছুরি ধরে আদায় করে, মারধর করে। আগস্টমাসে ছাত্রলীগযুবলীগের ছেলেরা বাপচাচাদের সাথেও প্রকাশ্যে বেয়াদবি করে।
এইসব চাইলে আপনি অনায়াসেই বন্ধ করতে পারেন। কিন্তু করেন না। কেনো করেন না সেটা কি আমাদের ভেবে নিতে হবে?

আগস্টমাসে সারা বাঙলাদেশ ছেয়ে যায় কাঁদো বাঙালি কাঁদো শ্লোগানে। ওরা ভুল বানানে কালো ব্যানারে শাদা অরে কাদ/ কাদো, / কাদু বাঙালী/বাংগালী/ বাঙ্গালী কাদো এইভাবে লিখে সারাটা শহর উপশহর শহরতলি, গ্রাম ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ছেয়ে ফেলে। নীচে লেখা থাকে প্রচারে/ সৌজন্যে: অমুক, সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক/ দপ্তর/ ধর্ম/ খেলাধুলা প্রমুখ, তমুক ওয়ার্ড/ ইউনিয়ন/ থানা শাখা ইত্যাদি।

এখন শোক একটা লোক দেখানো বিষয়ে পরিণত হয়েছে সেটা কি আপনি স্বীকার করেন। এরা আপনার কিংবা উর্ধ্বতন কোনো নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে এই কাজগুলি করে, এবং চাঁদাবাজির জন্যে তো অবশ্যই।

আগস্টের চাঁদাবাজির অত্যাচারে আমজনতা ত্যক্তবিরক্ত, ভীত হয়ে এখন আর বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফেরাত কামনা করে না। তাকে মনে মনে তিরস্কার করে অনেকেই। তারউপর সারাদিন সারারাত সমস্ত পাড়ায় মহল্লায়, হাসপাতাল এলাকায় স্কুল এলাকায় মাইক বাজানো হয়, এই শব্দসন্ত্রাসে জনজীবন অসুস্থ, অতিষ্ঠ হয়ে উঠে, রোগী মুমূর্ষু হয়ে পড়ে।
অথচ এইজন্যে বঙ্গবন্ধুকে আমি এখন দায়ী করতে পারছি না। কেননা, আমার সাধারণ বুদ্ধি বলছে এটার দায়িত্ব আপনার।
এটা বাস্তব এটা আপনি চাইলেই অস্বীকার করতে পারেন না।

তারপরও এইসব কেনো দমন করেন না তা কি আমরা ভেবে নেবো?
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ১১:৪৫
২৫টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×