somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসংগ পরকীয়া (২য়)::: I respect you কিন্তু তোমার সাথে থাকতে আমার ভাল্লাগেনা

০৭ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ট্রিপার্ট ল্যাবসে কাজ করার সময় আমাকে ধানমন্ডি থেকে উত্তরা যেতে হত সপ্তাহে পাঁচ দিন। বাসেই যাওয়া-আসা করতাম। অফিসে যাওয়ার সময় এক ঘন্টা আর ফেরার সময় দুই ঘন্টার কিছু বেশি বাসে বসে থাকা লাগত। বাসে প্রথমদিকে সময়ের অপচয় কমানোর জন্য আমি বই পড়তাম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি একটু সিরিয়াস ধরনের বই বেশি পড়ি কিন্তু বাসে সিরিয়াস বই পড়া কষ্টকর। তাই Dan Brown এর কিছু বই এবং আরো কিছু হাল্কা ধরনের বই পড়া শুরু করলাম। বাসে যাওয়ার সময় এক ঘন্টায় বিশ পৃষ্ঠার মত পড়তে পারি। ফেরার সময় রাত হয়ে যায় তাই বই পড়া যায় না। তাই ঐসময় আমি ঘুমাতাম। বাসে উঠার পর অপেক্ষা করতাম কখন টিকেট চেক করতে আসবে এবং টিকেট ছেঁড়া শেষ হলেই ঘুম। বনানীর কাছাকাছি আসলে আমার ঘুম ভাঙ্গত। তারপর ঘন্টাখানেক জেগে থাকা লাগত। কিছুদিনের মধ্যেই আমার হাতের কাছের বইগুলা পড়া শেষ। কিন্তু তাতে কোন সমস্যা হল না। বাসে প্রতিদিনই এক বা একাধিক সুন্দরী মেয়ে থাকে এবং আমি মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকি আর মনে মনে বলি - সুবহানাল্লাহ্!


কিন্তু ফেরার পথে তো সমস্যা। ঘুমিয়ে তো অর্ধেক পথ পার করা যায়। বাকী পথ কি করব? হঠাৎ খেয়াল করলাম, চারিদিকে মানুষজন নানা বিষয় নিয়ে মোবাইল ফোনে অনবরত কথা বলে বাসের মধ্যে। এখন সেগুলা শোনা ছাড়া আমার আর কিছু করার নাই। কথায় আছে না - 'আলাপে জ্ঞান বৃদ্ধি'? এভাবে দিন যেতে লাগল আর অন্যদের আলাপ শুনে আমি জ্ঞানী(?) হয়ে উঠতে লাগলাম। প্রায়ই নানা ধরনের ইন্টারেস্টিং কাহিনী জানা যেত। একদিন এক লোক ফোনে কমপক্ষে আধা ঘন্টা তার এক বন্ধুর সাথে কথা বলেছে। বিষয়বস্তু অতি জটিল। সারমর্ম হচ্ছে যে তাদের এক বন্ধু এক মেয়েকে ভালবাসত, কিন্তু ঐ ছেলে চাকরী করলেও যথেষ্ট পরিমান ধনী না হওয়ায় তার প্রেমিকা অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করে। কিন্তু এখন প্রায় বছরখানেক পরে মেয়েটা আবার তার পুরোনো প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে এবং তার কাছে ফিরতে চায়। আর সেই দুর্বল হৃদয় প্রেমিকও প্রায় রাজি। তবে সেই মোবাইলে কথা বলা বন্ধু আবার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে সে তার বন্ধুর (প্রেমিক) এত বড় সর্বনাশ হতে দিবে না, ইত্যাদি, ইত্যাদি … । বেশ সিনেমাটিক কাহিনী। আমি তো ভাবছি এটা নিয়ে একটা দারুন সিনেমা তৈরী করা যায় তবে মনে মনে কিছুক্ষন দৃশ্যগুলা কল্পনা করার পরে বুঝতে পারলাম, বাংলাদেশে এ সিনেমা সেন্সরবোর্ডের ছাড়পত্র পাবে না, সুতরাং হিন্দী বা ইংরেজী সিনেমার জন্যই কাহিনীটা বেশি ফিট!


আরেকদিনের কথা। আমার সামনের সীটে এক ছেলে একটু পরপর ফোনে কথা বলছে। না, মেয়েদের সাথে না, একবার এমন একজনের সাথে যে তার কাছে টাকা পায়, আরেকবার এমন একজনের সাথে যার কাছে সে টাকা পায়। বেশ উপভোগ করছিলাম। পিছনে আরেক লোক মোবাইলে ব্যবসায়িক আলাপ করছে। তেমন ইন্টারেস্টিং কিছু না। হঠাৎ দেখলাম পাশে দাঁড়ানো ছেলেটাও কাকে যেন ফোন করে কথা শুরু করে দিয়েছে। খুব করুন কন্ঠে মিষ্টি মিষ্টি কথা। কিছুক্ষন কথা শুনেই বুঝে ফেল্লাম মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু তাতে কি? মোবাইল ফোন তো আছে - প্রেম আসবেই! একটু পরে শুনি ছেলেটা বলছে, 'আমারে তুমি ভুইলা যাইও'। কিছুক্ষন পরে আবারো একই ডায়লগ। আমি মনে মনে বলি, 'ওরে হারামজাদা, তুই নিজে ওই মাইয়ারে ফোন করছস আর কস আমারে তুমি ভুইলা যাইও।'


লোকে বলে, 'সেটের রাজা নোকিয়া আর প্রেমের রাজা পরকীয়া!' আমরা আগে যেই বাসাটায় ভাড়া থাকতাম, আমার আম্মু একদিন বল্ল যে তার পাশের বিল্ডিংয়ে এক মহিলা থাকেন – বেশ সহজ-সরল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেন? আম্মু হেসে বল্ল, ওই ভদ্রমহিলা (আসলেই ভদ্র) আম্মুর কাছে বলেছে যে তার ছেলে বিদেশে থাকে, কয়েকমাস আগে দেশে এসে বিয়ে করে আবার বিদেশে চলে গেছে। বউকে কিছুদিন পরে নিয়ে যাবে। এখন বউ তার শ্বাশুড়ীর সাথেই থাকে। সমস্যা হচ্ছে বিয়ের আগে এক ছেলের সাথে ঐ মেয়ের সম্পর্ক ছিল এবং এখনো ঐ মেয়ে দিব্যি সেই ছেলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং শ্বাশুড়ীর কাছে বলেও দিয়েছে। 'বিয়ের আগে বলনি কেন?' শ্বাশুড়ীর এই প্রশ্নের উত্তর মেয়েটি দেয় নি। ভদ্রমহিলা এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়।


আবার মেডিকেলে পড়ার সময় দুইজনের মধ্যে তুমুল প্রেম, যদিও সেটা ওই দুজন ছাড়া বাকী সবাই জানত। ওই দুজন যেহেতু ভিন্ন ধর্মালম্বী (!) সুতরাং তাদের মনে প্রেম-বিয়ে এইসব নিয়ে কোন চিন্তাই নাই। মেয়েটি খুশিমনেই তার বাবা-মায়ের পছন্দের এক ছেলেকে বিয়ে করে। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর সুখের সংসার। কিছুদিন পরেই স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, কারন স্ত্রী কেবল তার পূর্বের সেই সহপাঠী বন্ধুর সাথে পালিয়েই যায় নি, পালিয়ে গিয়ে স্বামীর বিরূদ্ধে একটা মামলাও করে যায় নারী নির্যাতন আইনে। বেশ কয়েকমাস পরে স্বামী বেচারা মুক্তি পায়।


তবে সব ঘটনাই এমন করুণ না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অন্য এক ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ছেলের প্রেমে পড়ে যায় এক মেয়ে। কিন্তু মেয়েটি পাস করার পরে তার বাবা-মা সেই ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজি না। প্রচন্ড জেদী, একরোখা, স্বাবলম্বী সেই মেয়ে তার বাবা-মায়ের চাপে(!) অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করে। তারপর বছর দেড়েক সুখের সংসার করে স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স নিয়ে চলে আসে তার প্রেমিকের কাছে। এখন তাদের সুখের সংসার, ফুটফুটে একটা বাচ্চা। আবার আরেক লোককে চিনি। উনার বিয়ের পরে স্ত্রীর উল্টা-পাল্টা আচরনে ব্যথিত হয়ে সরাসরি কারন জানতে চায়। স্ত্রী জানায় যে সে আরেক ছেলেকে ভালবাসে। লোকটা বুদ্ধিমান। স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে খুব দ্রুত ডিভোর্স নিয়ে নেয়। (কাহিনী কিছুটা 'হাম দিল দে চুকে সানাম' সিনেমার মত!) মেয়েটা চলে যায় তার প্রেমিকের কাছে। প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে, একটা বাচ্চা হবে, দুইটা বাচ্চা হবে, অনেকগুলা বাচ্চা হবে।


আসলে প্রেম করলেই যে বিয়ে করতে হবে এমন কোন কথা নাই। তাই মেয়ে প্রেম করে জানার পরও বাবা-মা জোর করে (!) তাকে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। কারন তাদের ধারনা একবার বিয়ে দিলেই হয়ে গেল। আবার অনেক বাবা-মা তাদের মাদকাসক্ত ছেলেকেও ধরে বেঁধে একটা বিয়ে করিয়ে দেয়, বিয়ের পর নাকি ঠিক হয়ে যাবে! ঠিক না হলেও উপায় আছে, একটা বাচ্চা হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে! সমস্যা হচ্ছে আজকাল ছেলে-মেয়েরাও এমন চিন্তা করে। মেয়েটা দীর্ঘদিন কোন একটা ছেলের সাথে প্রেম করার পর হঠাৎ তাকে 'বন্ধু' বলে দাবী করে বসে এবং অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রেমটা হয় কাছাকাছি বয়সের ছেলে-মেয়ের মধ্যে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করার পরে ছেলেটা যখন হন্যে হয়ে চাকরীর জন্য ঘুরছে, মেয়ের বাবা-মা ততক্ষনে মেয়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু করে দিয়েছে। আর ছেলেটাও জানে যে তার চাকরী পেয়ে একটু স্ট্যাবল হতে যেই সময় লাগবে ততদিন মেয়েটা তার জন্যে অপেক্ষা করবে না। তাই সেও স্রেফ 'বন্ধুত্ব'কেই মেনে নেয়। আবার মেয়ে চাকরী করলেও হবে না, ছেলের আয়েই সংসার চলতে হবে - যেন বিষয়টা এমন যে সূর্য যেমন পশ্চিম দিকে উঠা চলবে না, তাকে পূর্ব দিকেই উঠতে হবে। তাই যদি মেয়েটা তার আগে আয় করা শুরু করে (কিংবা তার থেকে বেশি আয় করে) তাহলেও কোন লাভ নেই। তাই তারা বন্ধু। তবে মোবাইল-ইন্টারনেটের এই যুগে যোগাযোগ কোন সমস্যাই না। আর যেহেতু তারা এখন কেবল 'বন্ধু' তাই অনেক ক্ষেত্রেই যোগাযোগটা ঠিকই বজায় থাকে। আর একসময় সেই বন্ধুর হাত ধরেই মেয়েটা ঘর ছাড়ে। স্বামীর জন্য মেসেজ লিখে যায় - “I respect you কিন্তু তোমার সাথে থাকতে আমার ভাল্লাগেনা।"


তো কথা হচ্ছে এসব ঘটনা আজকাল হরহামেশাই ঘটছে এবং অনেকেই জানে ব্যাপারগুলা। কিন্তু আমার এত জ্বালা কেন? কারন পাঁচ বছরের শিশু সামিউল কিংবা তিন বছরের শিশু তানহা যখন তাদের মা ও মায়ের প্রেমিকের যোগসাজশে খুন হয়, সে খবর পত্রিকায় দেখতে আমার ভাল লাগে না। পৃথিবীতে নাকি সবচেয়ে তীব্র ও শ্রেষ্ঠ ভালবাসা হচ্ছে সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসা। কথাটা কি মিথ্যা?

----------------------------------------------------------
গতকাল পরকীয়া নিয়ে নিজের একটি পোস্ট দেওয়ার কারণে পরকীয়া প্রেমী ৪ জন ব্লগার বন্ধু খুব দুঃখ পেয়েছিলো মনে ( Click This Link ), আমি সেইসব নাম না জানা বন্ধুর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী B-)B-)
----------------------------------------------------------

ইহা একটি কপি-পেস্ট পোস্ট, পডে খুব ভালো লেগেছিলো বিধায় শেয়ার না করে পারলাম না ;)...
মূল লেখকঃ Tamim Shahriar Subeen
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:০৪
২২টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×