somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের অর্থমন্ত্রীর ঝটিকা সফর কোন ফল বয়ে আনবে?

০৭ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঝটিকা না কুজ্বটিকা

ভারতের অর্থমন্ত্রী ঝটিকা সফরে আজ ( ৭ আগস্ট ) বিকেলে ঢাকায় আসছেন। তিনি যদি শুধুমাত্র আট মাস আগে সাক্ষর করা ১০০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা চুক্তি সই করতে আসেন, তা হলে বলা যায় যে এ ধরনের চুক্তি সইয়ের জন্য ঐ দেশের ব্যস্ত অর্থমন্ত্রীর আসার প্রয়োজন ছিল না। তবে কূটনৈতিক সূত্রে যেসব খবর পাওয়া গেছে, তাতে মনে হয়, তাঁর এ সফর নিছক চুক্তি সইয়ের আনুষ্ঠানিকতা নয়।

আজতক ভারতের তরফ থেকে যারাই এসেছেন, তারা সকলেই তাদের গোপন এজেন্ডা নিয়েই এসেছেন। আর আমাদের নেত্রী-নেতারা সে সব এজেন্ডায় সম্মতি দিয়ে ধন্য হয়েছেন। এবারও যে তা হবে না, তা আগে ভাগে বলা যাচ্ছে না।

আট মাস ভাগে সাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সদিচ্ছার ঘাটতি না থাকলেও 'আকৃতজ্ঞ' প্রতিবেশী দেশটি প্রতিশ্রুতি পালনে বরাবর ঔদাসীন্য দেখিয়ে এসেছে। ভারতের উৎকণ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তার অবসানে যা যা করার সবই করেছে বাংলাদেশ।

বলা চলে ভারত যা চায় নি, আমাদের সরকার তার থেকেও অনেক বেশী করে দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হয় এমন কোন উদ্যোগ এই হাল আমলেও ভারত নেয়নি। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের জন্য তা উদ্বেগের বিষয়। এমনিতেই ক্ষমতাসীনদের কপালে ভারতপন্থী তকমা লেগে আছে। আট মাস আগে বিরোধীদের প্রচন্ড বিরোধীতার মুখে ভারত সফর করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এখন যদি তেমন কোন ফল তারা না দেখাতে পারে, তা হলে আভন্তরীন রাজনীতির ক্ষেত্রে তারা অনেকখানি বেকায়দায় পড়ে যাবে, তা চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়।

আর সংসদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রাপ্ত দলের সেই হাতি কাদায় পড়লে সংখ্যা লঘিষ্ঠ চামচিকা সদৃশ বিরোধীদল যে দুই একটা লাথি মারবে না, তা কি হলফ করে বলা যায় নাকি?

বাংলাদেশের প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়া, পর্বতপ্রমাণ বাণিজ্য ঘাটতি এবং সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিরীহ মানুষ মারা যাওয়া। আর ভারতের উদ্বেগ হলো ‘কথিত’ জঙ্গি হানা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা। দিল্লি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। সেটি যে শুধু কথার কথা ছিল না, তা সাউথ ব্লকের চৌকস অধিকর্তারাও স্বীকার করবেন। আর সম্প্রতি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর বদৌলতে জানা গেল যে বাংলাদেশ নয়, ভারতে জংগীবাদের রফতানীকারক দেশ হল পাকিস্তান। সুতরাং ভারতের দিক থেকে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের মদদ দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।


এই যে ভারত বাংলাদেশের অবকাঠামোর উন্নয়নে যে ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে, তার প্রায় পুরোটাই ব্যয় হবে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সে দেশের বাদবাকি অংশের যোগাযোগ বাড়ানোতে এবং নিয় দেশের পণ্য পরিবহনের কাজে। তাতে দুই দেশের একটিই খালি লাভবান হবে।

এর উপরে মনে রাখতে হবে যে, ভারত শর্ত দিয়েছে যে শতভাগ ক্রয় তাদের থেকে করতে হবে। এটা নাকি ঋণ চুক্তির বাধ্যবাধকতা।

পাশাপাশি এটা আশংকা করা যায় যে বাংলাদেশের এই বাণিজ্য করিডরটি পেয়ে গেলে ভারত তার নিজস্ব পণ্য পরিবহনের সুবিধা পারে, এবং এতে করে উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি কমে যাবে। ফলে দুই দেশের ভেতরে বাণিজ্য-ঘাটতি আরও বাড়বে।

ভারত সরকারের ছেলে ভোলান কথা হল, এ পথটি চালু হলে উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হবে। প্রশ্ন চলে আসে, কীভাবে?

সে ক্ষেত্রে ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে, দূর করতে হবে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো। প্রশ্ন হলো, ভারত সরকার সেই ‘সহজ কাজ’টি করতে রাজি আছে কি না। এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।


একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ড. মনমোহন সিংয়ের প্রথম মেয়াদে ভারত যে বাংলাদেশ থেকে ৮৫ লাখ পিস তৈরি পোশাক আমদানির ওয়াদা করেছিল, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। এটি কি শুধুই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, নাকি সদিচ্ছার অভাব?

ভারতে পাঠানোর মতো খুব বেশি পণ্য আমাদের নেই। কিন্তু যেসব বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা সেখানকার বাজারে আছে, তাও পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে।

বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক 'বাচাল' খান গত বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে ব্যবসা করার কাজটি বেশ কঠিন।’ কেন কঠিন?

কেন্দ্রীয় সরকার রাজি তো, রাজ্য সরকার আপত্তি জানায়। আবার রাজ্য সরকার চাইলেও পারে না, দিল্লির অনুমোদনের অপেক্ষায় তাদের থাকতে হয়। পণ্যের মান পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৪০ থেকে ৫০ দিন। এসবের অর্থ হলো ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের প্রবেশ বন্ধ করা।

প্রণব মুখার্জি একসময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে ছিলেন। তিনিও সমস্যাগুলো জানেন। বাধাটি আইনি হলে দূর করা অসম্ভব নয়, কিন্তু মনের বাধা কখনো দূর করা যায় না।


রাজনীতির যতটুকু সংবাদ জানি, তাতে ভারতের বর্তমান সরকারের ক্ষমতাধরদের ভেতরে সোনিয়া গান্ধী ও ড. মনমোহন সিংয়ের পরেই সিরিরিয়ালে আছেন প্রণব বাবু। তিনি কি পারবেন বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা মিটিয়ে, যৌক্তিক উদ্বেগগুলো আমলে নিয়ে দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কে নব-অধ্যায় সৃষ্টি করতে?

না কি তার ঝটিকা সফরও সময়ের ব্যবধানে আশ্বাসের কুজ্ঝটিকায় পরিণত হবে?

নাকি নতুন কোন ভারতীয় এজেন্ডার বাস্তবায়নের গোপন মিত্রতা স্থাপন করতেই তার এই ঝটিকাময় বাংলা-আগমন?
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×