somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বহুমুখী দূষণে বিপন্ন পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জনজীবন প্রসঙ্গে

০৭ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনের পর দিন অবস্থা কেবল খারাপের দিকেই যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণের অন্যতম কয়েকটি কারণ হচ্ছে_ বৃক্ষ নিধনে পাহাড় পর্বত বৃক্ষশূন্য ন্যাড়া হওয়া, নদ-নদীর পানি দূষণ ও ভরাট হওয়া, বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণ। যার বিষয়ে নিম্নরূপ আলোচনা ও প্রস্তাব বিবেচনার জন্য তুলে ধরছি :
১. বৃক্ষ নিধনে পাহাড় পর্বত বনাঞ্চল বৃক্ষহীন ন্যাড়া হওয়া প্রসঙ্গে বলতে হয়, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পত্রপত্রিকা, রেডিও এবং টেলিভিশনে এ কথাটি কেবল আলোচিতই হচ্ছে। বাস্তবে কাজের কাজ যে এ পর্যন্ত কিছুই হয়নি তা পাহাড় অঞ্চল ন্যাড়া থেকে ন্যাড়াতির হওয়া থেকে প্রমাণিত। যেমন_ আমাদের এলাকা রামগড়-সীতাকু- পাহাড় ন্যাড়া হয়েছে দুই যুগ আগে।
৫০০ বর্গমাইলের অফুরন্ত সম্ভাবনার পাহাড় ঠাঁই পতিত পড়ে রয়েছে, যা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ভ্রমণকালে দৃশ্যমান হবে। এ বনাঞ্চলে বনায়নের নামে প্রতিটি বরাদ্দকৃত অর্থের হরিলুটের আসর বসে মাত্র। তদুপরি শীত মৌসুমে বনায়নের নামে হরিলুট ধামাচাপা দিতে নাশকতামূলক আগুন দেয়া চলছে ফি বছর, যা বনজ সম্পদ ধ্বংস ও বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তিতে জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক দুঃসংবাদ বটে।
বনখেকো ওসমান গনির অনুসারীরা ও তথাকথিত বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী রক্ষা কর্তারা এ বনাঞ্চলকে নগ্ন পাহাড় নাম দিয়ে শব্দ চয়নের মুন্সিয়ানা দেখানো ছাড়া আর কিছুই করে না। নগ্ন শব্দটির অর্থ হচ্ছে, উলঙ্গ বা দিগম্বর হওয়া। পাহাড় কিভাবে নগ্ন বা দিগম্বর হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে পাহাড়ে বৃক্ষ না থাকাকে তারা পাহাড়ের দিগম্বর হওয়ার সঙ্গে তুলনা করে জাতির সঙ্গে নিদারুণ রসিকতা করেছে। তথাকথিত নগ্ন ও দিগম্বর অবস্থা দেশের সব এলাকার বনাঞ্চলেই রয়েছে। এ কারণে দেশে সময় উপযোগী মৌসুমী বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গিয়ে দেশ খরায় আক্রান্ত হয়েছে ও হচ্ছে। নদ-নদী পানি শূন্যতাসহ নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের উপক্রম তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
আমাদের মতে, বনায়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ না করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলসহ দেশের সব ন্যাড়া বনাঞ্চলের পাহাড় থেকে গাছ কাটা ও যাবতীয় বনজ সম্পদ আহরণ ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করলে পাহাড়ের মাটিতে থাকা শিকড়-বাকড় থেকে প্রাকৃতিক নিয়মে বৃক্ষরাজি গজিয়ে পাহাড় সুশোভিত হয়ে যায়।
বছরে বনজদ্রব্য খাতে ১০০-২০০ কোটি টাকা রাজস্ব প্রাপ্তির বিপরীতে ফি বছর হাজার কোটি টাকা বনায়নের জন্য খরচ করার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। এজন্য ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রণীত ১৯২৭ সালের বন আইন রহিতক্রমে নতুনভাবে বন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
দেশে এত আইন প্রণয়ন হলেও বন আইনটি যুগোপযোগী না করায় বিষয়টি রহস্যজনক। দেশ ও জাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে বর্তমান মহাজোট সরকার আশা করি তা বিবেচনা করবেন।
২. নদ-নদীর পানি দূষণ ও ভরাট হওয়া পরিবেশ দূষণের আরেকটি অন্যতম কারণ। নদ-নদীর পানি সেচ কার্য থেকে শুরু করে অনেক কাজে লাগে। নদীর মাছে বহু মানুষের জীবন-জীবিকাসহ দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। বর্তমানে মিল-কারখানায় ক্ষতিকর বর্জ্যসহ নানারূপ বর্জ্য ইচ্ছেকৃতভাবে নদীতে নিক্ষেপ হেতু নদ-নদীর পানি দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পানি দূষণের দুর্গন্ধে রাজধানী ঢাকা শহরের আশপাশের নদীগুলোর ধারে বেড়ানো ও বসবাস দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। মাছ তো সেখানে থাকতেই পারে না। দূষণের কারণে পদ্মা-মেঘনার মোহনায় এখন আর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি দেশের ছোট ছোট নদীতে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের কারণে বঙ্গোসাগর উপকূলের মৎস্য বিচরণ স্থলও নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে আগের মতো সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। নদী ভরাট ও নাব্যতা হারিয়ে দেশ মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাওয়াসহ বর্ষাকালে তা প্রবল বন্যার কারণ ঘটাচ্ছে। নদীতে ক্ষতিকর বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধে আইন প্রণয়নসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। যথাযথ স্থানে ড্রেজিং করে নদীকে গতিশীল করে দিলে নাব্যতা ও সেচ সুবিধা বৃদ্ধিসহ বন্যার প্রকোপও কমবে। দুর্ভাগ্য যে, এ নিয়ে অনেক আলোচনা লেখালেখি হলেও কার্যকারণে যথাপূর্ব তথা পরং দশা ও মুখে মারতং জগৎই সার।
৩. বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণের আরেকটি প্রধান কারণ। দেশের শত শত ইট-ভাটায় বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, গাড়ির কালো ধোঁয়া ও মিল-কারখানার ধোঁয়ায় বায়ু দূষণ চরম আকার ধারণ করেছে, যা আমাদের হরপ্পা মহেঞ্জেদারের মতো প্রাচীন নগরী ধ্বংসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বায়ু দূষণে মানুষ ও পশুপাখির রোগবালাই বৃদ্ধিসহ ফলবান বৃক্ষের ও ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকর কার্বন, কুয়াশা ও মেঘবৃষ্টির মাধ্যমে গাছ-গাছড়ায় ও মাটিতে বাড়ছে। যাতে মাটির উর্বরতাও কমে যাচ্ছে। ইটভাটার চিমনি ১২০ ফুট উচ্চতায় হলেও সে ধোঁয়া যে আবার নিচে আসে না_ এটা এক ধরনের ধাপ্পাবাজি মাত্র।
একইভাবে বিদেশি জাতের বৃক্ষ ইউক্যালিপটাস, একাশিয়া, আকাশমনি, মিঞ্জাম, শিশু প্রভৃতি বৃক্ষ বায়ু ও পরিবেশ দূষণের কারণ ঘটাচ্ছে। এসব গাছের বাতাস অত্যন্ত গরম, এসব বৃক্ষ অধিক পানি শোষণে পরিবেশকে মরুময় করে তুলছে। তাদের বাতাস যেখান দিয়ে যায় দেশি ফলদ বৃক্ষের ফল ধরা বন্ধ হয়ে যায়। এসব বৃক্ষে পাখীরা বসে না, বাসা বাঁধে না। এ থেকে প্রমাণিত এসব বৃক্ষ কতটা ক্ষতিকর।
রাক্ষুষে পিরানহা মাছ চাষ নিষিদ্ধের মতো এসব বৃক্ষ বহু আগে নিষিদ্ধ করা ছিল। অথচ খোদ বন বিভাগ এসব বৃক্ষ লাগানোর সুপারিশ করছে। পরিবেশবাদীরাও এ বিষয়ে উদাসীন।
পরিশেষে বলতে হয়, শব্দ দূষণ আরেকটা ভয়ানক পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। উন্নত দেশে হাইড্রোলিক হর্ন গাড়িতে ব্যবহার ও বাজানো বহু আগে নিষিদ্ধ করা হলেও আমাদের দেশে তা এখনো লাগানো এবং বাজানো হচ্ছে। তারপর আছে, মাইক নামক চোঙ্গা ফুকানির শব্দ দূষণ। লটারির টিকিট বিক্রি, ফুপিতে ওষুধ-মলম বিক্রি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের গলাবাজি, ধর্মীয় নেতাদের বয়ান, মসজিদে মাইক, পূজা-পার্বর্ণে মাইক, আরও কত কাজে মাইক ব্যবহার শহর-বন্দরের পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জের নির্জন পরিবেশকেও বিষিয়ে তুলেছে। সম্ভবত সে কলা আর বাদুরে খাইবে না। পরিবেশ রক্ষায় নিজেদের বাঁচার তাগিদে নিজেদেরই সব করতে হবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×