প্রণবের সফরে বাংলাদেশ সম্পর্কে দিল্লির
ধারণা আরো স্বচ্ছ হবে
ইমতিয়াজ আহমেদ [ কালেরকন্ঠ ** ৭ আগস্ট ২০১০ ]
ভারত আর বাংলাদেশের সম্পর্ক, সেটা অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কিংবা ভারতের সঙ্গে অন্য দেশের সম্পর্কের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে চলবে না। যেমন বলা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কিংবা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের মৌলিক তফাত আছে। তফাতটা হলো, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের মধ্যে একটা ইতিহাস আছে। আমাদের মধ্যে মন-মানসিকতায় মিল আছে এবং দু-দুটি জেনোসাইডের ঘটনা আছে। একটি হলো ১৯৪৭, অন্যটি ১৯৭১। এ ধরনের ইতিহাস সামনে রেখেই কিন্তু দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়টি অনুধাবন করা দরকার। ফলে এ ক্ষেত্রে গতি এবং আত্দবিশ্বাস ছাড়াও বিশ্বাসের ভিত্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ের আদান-প্রদানের বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। মূলকথা হলো, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কটা একেবারেই অন্যদের থেকে আলাদা।
এ বছর জানুয়ারি মাসে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতে গেলেন। তারপর সাতটি মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। আজ ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি আসছেন। তিনি আসার ফলে যেটা হবে বলে আমি মনে করি, তা হলো, যে গতিটা ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে জানুয়ারি মাসে পেয়েছিলাম, সেই ধারাবাহিকতায় এ পদক্ষেপ। সেই সময় কিছু চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। এখন তাঁরা আসছেন ঋণ নিয়ে। এর ফলে বিশেষত রেলপথ, নদীপথ ও বন্দরের উন্নয়ন হবে। এগুলো সম্পন্ন হলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। ফলে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নয়াদিলি্লর ধারণাটি আরো স্বচ্ছ হবে। আর উত্তর-পূর্ব ভারতের অংশটি উন্নতি করতে হলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। তবে তিন-চার ঘণ্টার সফরে আরো কোনো প্রসঙ্গে আলোচনা হবে কি না, তা অবশ্য এখনই বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু আগামী মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের কথা রয়েছে, যেটা হয়তো পাকাপোক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন নয়াদিলি্ল সফরে গিয়েছিলেন, তখন পুরো ভারতে বাংলাদেশের ব্যাপারে ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আজ ভারতের গণমাধ্যমগুলো ভারত সরকারের সমালোচনা করছে_বাংলাদেশ যেসব বিষয়ে ভারতের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, সেসব বিষয়ে ভারত সরকার এখনো কিছু করতে পারেনি। ফলে মনমোহন সিং যখন বাংলাদেশে আসবেন, ঠিক একইভাবে যতগুলো বিষয় নিয়ে আসবেন, তা বাংলাদেশকে প্রভাবিত করবে_যার মাধ্যমে তিনি তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার পরিপক্বতাকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। সেই সময় তিনি যেসব বিষয়ে মনোযোগী হবেন বলে আমি মনে করি, প্রথমত তিস্তা ব্যারাজ, দ্বিতীয়ত টিপাইমুখ বাঁধ, তৃতীয়ত '৭৪-এর ভূমি বণ্টনব্যবস্থা এবং সমুদ্রসীমা প্রসঙ্গ। এ চারটি বিষয়ে যদি তখন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন প্যারাডাইম তৈরি হবে।
লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রণবের সফরে বাংলাদেশ সম্পর্কে দিল্লির ধারণা আরো স্বচ্ছ হবে // ইমতিয়াজ আহমেদ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
অপরূপের সাথে হলো দেখা
আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমরা কেন এমন হলাম না!
জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অভিমানের দেয়াল
অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১
তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন