somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘটনা ও ঘটনা থেকে উত্সারিত গল্প – ৫: লেখক ও ইশ্বর

২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখক হিসেবে আমার কাছে আছে ঐশ্বরিক ক্ষমতা! দাঁড়ান, তবে ব্যাপারটা বুঝিয়েই বলা যাক।

একবার উপন্যাসের জন্য একটা চরিত্র তৈরি করলাম। চরিত্রটা পুরুষ। নাম ইমন। বয়েস ৩২ কি ৩৩ হবার পর তার প্রেমিকার সাথে বিনা বাঁধায় বিয়ে দিলাম। কালক্রমে তাদের একটি মেয়ে হল। গল্পের প্রয়োজনেই বাচ্চা প্রসবের সময় আজরাইল পাঠিয়ে তার বউয়ের জান নিয়ে নিলাম। তারপর তো দেখি মহা সমস্যা! ইমনের কাহিনী এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিকভাবেই। কিন্তু, সদ্য পৃথিবীর মুখ দেখা তার ভাগ্যহীন মেয়েটাকে তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে। গল্পের জন্য মেয়েটি যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। অগত্যা প্রথমে চেষ্টা করলাম ইমনকে আরেকটি বিয়ে দেয়ার। কিন্তু তাকে ইতোমধ্যেই এমন একটা চরিত্রে রূপান্তর করা হয়ে গেছে যে তাকে বিয়ে করালে সেই চরিত্রের অপমান হবে। পরিবার আর তার আশেপাশের মানুষগুলো নানাভাবে তাকে বিয়ে করার পরামর্শ দিল। কিন্তু ইমনের এক কথা। সে তার মৃত বউকে কিছুতেই খাটো করতে পারবে না । কি আর করা! অগত্যা আজিজ নামে এক চরিত্রের সৃষ্টি করলাম যিনি একজন ব্যাংকার। তিনি নিঃসন্তানও বটে। সন্তানের জন্য তার আর তার স্ত্রীর হাহাকার চমত্কার চমত্কার সব দৃশ্য দিয়ে পাঠকদের কাছে তুলে ধরলাম। টেস্ট টিউব বেবি উত্পাদনের চেষ্টা থেকে শুরু করে তাবিজ-কবজ, পানি পড়া কিছুই বাকি রাখলেন না তারা। একসময় আজিজ সাহেবকে ট্রান্সফার করিয়ে নিয়ে আসলাম সেই ব্রাঞ্চে যে ব্রাঞ্চের পিয়ন হিসেবে কাজ করছিল আমার প্রধান চরিত্র ইমন। কয়েকদিন পর ইমন আজিজ সাহেবের কাছে কথা প্রসঙ্গে তার জীবন কাহিনী বলে সম্প্রতি নেয়া একটা কঠোর সিদ্ধান্তের কথা জানালো। সে তার তিন মাসের মা-মরা মেয়েটাকে কোন নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দান করে দিতে চায়। আজিজ সাহেব সৃষ্টিকর্তার খেলা দেখে অবাক হলেন। ইমন না জেনেই এমন একজন মানুষের কাছে বিষয়টা তুলে ধরল যিনি নিজেও সন্তানের জন্য হাহাকার করছেন। যার স্ত্রী সন্তানের অপেক্ষায় প্রায় মানসিক রোগীতে পরিণত। আজিজ সাহেব ইমনকে পরের শুক্রবার তার বাসায় যেতে বললেন। এবং এভাবেই সেদিন আমি ইমনের সদ্য ভূমিষ্ট হওযা বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম!
কিন্তু হায়! আজ বাস্তব জীবনে আমারই অফিসের পিয়ন এসে যখন বলল, স্যার আর পারছি না। আপনার পরিচিত এমন কেউ কি আছে যিনি আমার মেয়েটিকে দত্তক নেবে? একেবারে পিতৃত্বের সব দাবী ছেড়ে মেয়েটিকে দিয়ে দেব স্যার! মেয়েটাকে আমার বাঁচান। তাকে পরামর্শ বিয়ে করে ফেলার। সে আমার উপর রাগ করে দূরে সরে গেল। মনটা খারাপ হয়ে গেল তখন। কী দরকার ছিল মুখ ফসকে এমন একটা কথা বলার! হঠাৎ করে মনে পড়ল আমার এক নিঃসন্তান বন্ধুর কথা যে কিনা টেস্ট টিউব বেবি নেয়ার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছে। তাকে সাথে সাথে কল করে বল্লাম, দোস্ত তিন মাস বয়েসের একটা বাচ্চা আছে! নিবি নাকি দত্তক? কোথায় ভেবেছিলাম বন্ধু আমার এমন একটা প্রস্তাব শুনে খুশিতে আটখানা হয়ে আমাকে ধন্যবাদ দেবে। তা না, সে কি না আমাকে খুব খারাপ একটা গালি দিয়ে কলটা কেটে দিল।
তখন ভাবি, হায় ইশ্বর! লেখক হিসেবে তুমি আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছো, বাস্তব জীবনে কেন দাওনি!
ঘটনা: সেদিন আমার অফিসের এক পিয়ন এসে আমাকে বলল, স্যার, সিদ্ধান্ত নিয়েছি মা মরা মেয়েটাকে দত্তক দিয়ে দেব।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫০
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×