উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় উৎকণ্ঠিত শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
Published : 22 Aug 2013, 10:00 PM
বৃহস্পতিবার কোনো ক্লাস না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া হাসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষকদের মুখোমুখি অবস্থানে আমাদের শিক্ষাজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, একটা সমাধান জরুরি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল বামপন্থী দুই ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সঙ্কট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাকিলা শারমিন সঙ্কটের দ্রুত সমাধান চেয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষকদের আচরণে আমরা লজ্জিত, আশু সমাধান চাইছি।”
শিক্ষক ফোরাম ব্যানারে একদল শিক্ষকের আন্দোলনে গত দুই দিন ধরে অচল সাভারে অবস্থিত দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর।
বিভিন্ন অভিযোগ তুলে উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে শিক্ষক ফোরাম। তবে তাদের কর্মসূচির সঙ্গে শিক্ষকদের অন্য কয়েকটি সংগঠনের ভিন্নমত রয়েছে।
ধর্মঘটী এই শিক্ষকরা বলেছেন, উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে; যদিও অধ্যাপক আনোয়ারের দাবি, শিক্ষকদের দাবি ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
গত বছর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির বিদায় নিলে সেই দায়িত্ব পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই নেতা পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন। কয়েক মাস আগে তার বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতি আন্দোলন শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়।
এক পর্যায়ে হাই কোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রমে বাধা না দেয়ার নির্দেশ দিলে পিছু হটে শিক্ষক সমিতি। এরপর ‘সাধারণ শিক্ষক ফোরাম’ ব্যানারে নতুন কৌশলে আন্দোলন শুরু হয়, যাতে সাবেক উপাচার্য শরিফ এবং বিএনপি সমর্থক শিক্ষকদের সক্রিয়তা দেখা গেছে।
এই অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে আচার্যকে হস্তক্ষেপ করতে আহ্বান জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট।
ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয়, “শিক্ষকদের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে, আমরা আচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না হলে শনিবার থেকে কর্মসুচি দেয়ার হুমকি দিয়েছে ছাত্রফ্রন্ট।
সাধারণ শিক্ষার্থীরাও চান, অতি দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক।
আইন ও বিচার বিভাগের দ্বিতীয় বিভাগের শিক্ষার্থী আফজাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অস্থিতিশীলতার কারণে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলছে, সঙ্কট নিরসনে একটা উদ্যোগ অনিবার্য।”
রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি লিখেছেন উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারও। সেইসঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, শিক্ষার্থীরা সঙ্কট নিরসনে ভূমিকা রাখবে।
অধ্যাপক আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুর্যোগ মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা তাদের নৈতিক অবস্থান থেকে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করছি।”
সমস্যার সমাধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রগতিশীল শিক্ষকদের মোর্চা শিক্ষক মঞ্চ, সাধারণ শিক্ষক পর্ষদ। বিবৃতি দিয়ে আন্দোলনকারীদের অশিক্ষকসুলভ আচরণ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের নিন্দা করেছে শিক্ষকদের ‘নীল দল’ও।
অন্যদিকে নতুন কর্মসুচি দিয়ে ধর্মঘটের সময়সীমা ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষক ফোরাম। সেই সঙ্গে উপাচার্যের কার্যালয়ে অবস্থান অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছে তারা।
ধর্মঘটের সময়সীমা ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ালেও এবার পূর্বঘোষিত পরীক্ষা, পরিবহন ও অন্যান্য জরুরি সেবা আওতামুক্ত রেখেছে তারা।