somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছবিগুলো দেখে আমি হতাশ...

০৩ রা আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

.
.
.


.
.
.
গত বছরের শুরু থেকে কিছু বাংলা 'মুভি' তৈরির জোয়ার শুরু হয়েছিল। আমরা অনেকেই আশাবাদী ছিলাম যে, যে মুভিগুলো তৈরি হচ্ছে সেগুলো আসলেই 'মুভি'।এগুলো বাস্তবেই বাণিজ্যিক বাংলা বা শাকিব খানের ছবির মান
ডেভলপ করতে নির্মাতা, প্রযোজকদের বাধ্য করবে।

আমাদের সাধারণ হলগুলোতে কিন্তু আর্ট ফিল্ম চলে না।নিম্নবিত্ত দর্শক 'নাটক' দেখতে চায় না। তাদের প্রয়োজন 'হার্ট' ফিল্ম।
এ শ্রেণীর দর্শকের চাহিদা অনেকটা আমাদের এফডিসির নির্মাতারা গড়ে দিয়েছেন।
বড়লোক-গরীবের মনস্তাত্বিক দ্বন্দ, সেখানে নায়ক নায়িকার প্রেম, পাঁচটা গান, ছয়টা মারামারি, শেষ দৃশ্যে পুলিশ এসে গুন্ডাদেরকে অ্যারেস্ট করবে এবং নায়ক নায়িকার পরিবারের হাস্যোজ্জ্বল গ্রুপ ছবি দিয়ে 'সমাপ্ত'।
শ্রমজীবি মানুষ সবসময় পরিশ্রম করে, তাদের চাওয়া কিছুটা বিনোদন।ছবির নাম করে নাটক দেখতে তারা পয়সা খসাবে না। সেই কারণে চন্দ্রগ্রহণ, মাটির ময়না বা অন্তর্যাত্রা ছবিগুলো তারা গ্রহণ করে না।
বিকল্প ধারার নির্মাতারাও বিষয়টি জেনেই ছবি বানান।তারা তিন-চারশ হলে এই ফিল্মগুলো চলবে এমন দূরাশা করেন না।স্টার সিনেপ্লেক্স, বলাকা আর মধুমিতায় মাসদুয়েক চালানোর কিছুদিন পর সিডি ছেড়ে দেন।
সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, এ ছবিগুলো শিল্পমানে উত্তীর্ণ হলেও প্রচলিত ধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ।


এজন্য প্রয়োজন ছিলো এমন কিছু ছবির যেগুলো সবধরনের হলে চলবে, প্রচুর জনপ্রিয়তা পাবে এবং ব্যবসা করবে।শুধু নান্দনিক ছবি দিয়ে এসব হবে না।

তো গত বছর এবং এই বছরে তেমন কিছু ছবি- মনপুরা, থার্ড পারসন সিংগুলার নাম্বার, জাগো, খোঁজ-দ্য সার্চ ইত্যাদি হওয়াতে আমি বেশ আশাবাদী ছিলাম যে, না, এইবার একটা কিছু হবেই।
কিন্তু আমার সেই আশা আশা ই রয়ে গেছে।বাস্তবে আসতে পারেনি।
অনেকটা হতাশ হয়েছি ছবিগুলোর অবস্থা দেখে।


থার্ড পারসন দিয়ে শুরু করি। এই ছবিটার ব্রান্ডিং এর জন্য ফারুকী যথেষ্ট।ছবিটার সিনেমাটাগ্রাফী,স্ক্রিনপ্লে বাংলা ছবি হিসেবে দুর্দান্ত। সে যে ম্যাসেজটা দিতে চেয়েছে সেটাও চমত্‍কার। কিন্তু ছবিটা বিতর্কিত হয়েছে তার টার্গেটের কারণে।আমাদের সামাজিক ব্যবস্থাটা এখনো য়ুরোপ অ্যামেরিকার মত এতটা অ্যাডভান্স হয়নি। যদিও বা হয় তাও আরো অনেক দেরি আছে। কেননা একটা রক্ষণশীল মুসলিমপ্রধান দেশে ওপেন সেক্স বা লিভ টুগেদার বিষয়টা সামাজিকভাবে মেনে নেয়াটা সম্ভব না। এই জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা গার্ল/বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে হয়ত এই ছবি দেখতে পারে কিন্ত পরিবারের সাথে সেটা পারবে না।

বাণিজ্যিক দিক দিয়ে দেখলে বলা যাবে মিশ্র সফল হয়েছে।ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এটাকে আর্ট ফিল্ম নয়, হার্ট ফিল্ম বলে মার খাওয়া থেকে বাঁচাতে চেয়েছে। অনেকগুলো মফস্বল শহরের সিনেমা হলে চলেছে কিন্তু খুব বেশী প্রভাব ফেলতে পারেনি।


মনপুরা।
যে উদ্দেশ্যে ছবিটা বানানো হয়েছিল সেটি অনেকটাই সফল বলা যায়।গল্পে অভিনবত্ব নেই কিন্তু সেটা আমাদের গ্রামীণ বাস্তবতার সাথে মিলে যাওয়ায় সাধারণ দর্শকও গ্রহন করেছে। চমত্‍কার স্ক্রীনপ্লে , পরিচালকের মুন্সিয়ানা এবং অ্যাক্টর দের ভালো অভিনয় দিয়ে ছবিটা অন্যান্য দুর্বলতা পুষিয়ে নিয়ছে।

ব্যবসার দিক দিয়ে এ ছবিটা বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি। এমনকি ওপার বাংলায় এই ছবির অনুসরণে আরেকটা ছবি বানিয়েছে।
তবে এই ছবিটা সফল হওয়ার পেছনে ছবির গানগুলোর অবদান অনেক বেশি। অর্ণব বিশাল একটা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।



জাগো।
ফুটবল নিয়ে ছবি এই প্রথম এবং অনেকটা অনুমিতভাবে এটা ব্যবসাসফল হয়নি।ইন্টারস্পিড প্রোডাকশন এটা নিয়ে বেশ প্রচার প্রচারণা চালালেও খুব বেশি দর্শক যায়নি।
বিচ্ছিন্ন ভাবে কয়েকটা শট সুন্দর হয়েছে।ডিরেকশন আরো ভালো হতে পারত।সামগ্রিক বিবেচনায় ব্যর্থ ছবি ই বলা যায়।



খোঁজ-দ্যা সার্চ।
এই ছবিটা নিয়ে আমার আশাবাদ ছিলো অনেক বেশি এবং এটা দেখেই সবচে বেশি হতাশ হয়েছি।
ব্লগে অনেকেই লেখালেখি করেছেন, এটা আমাদের ছবির ধারা পাল্টে দেবে।
টাকার চিন্তা করেনি প্রোডিউসার, বিদেশী অ্যাক্টর আর হলিউডি প্রযুক্তি মিলে ছবিটা আমাদের সামনে প্রত্যাশার পাহাড় গড়ে তুলেছিল।
তবে ছবির গল্প যে অসাধারণ হবে সেটা ভাবিনি। তাই বলে এত খারাপ হবে!
পরিচালকের নাম দেখে ভালো কিছু আশা করেছিলাম।কিন্তু অভিজ্ঞতা যে অন্য বিষয় সেটা বুঝিয়ে দিয়ে গেল এই ছবি।

ছবিটায় হলিউডি ফ্লেভার আনার প্রাণপণ চেষ্টা করা হয়েছে।কিন্তু কাহিনী বেখাপ্পা হওয়ায় তা কেবল চেষ্টাই রয়ে গেছে।একই ধরনের শট অনেকবার দেখা গেছে।ছবিতে নবাগত শিল্পীদের ওভার অ্যাক্টিং চোখে লেগেছে।
পরিচালকের অ্যাকশন দৃশ্যের প্রতি ঝোঁক লক্ষ্য করার মতো।
'গজনী' ছবির গানের স্টাইল নকল করার প্রচেষ্টা ছবিটার মান অনেকখানি কমিয়ে দিয়েছে।
আর ডাঃ এজাজ কে ভিলেন হিসেবে আনায় ভিলেনের উদ্দেশ্য ই মাঠে মারা গেছে।তার সৌজন্যে মাঝে মাঝে ছবিটা কমেডি ছবি মনে হয়েছে।

আসলে অনন্ত নায়ক হওয়ার জন্যই পুরো ছবিটা মাঠে নামিয়েছে।কিন্তু তার বয়সের ছাপটা বেশ স্পষ্ট এবং জীবনে যে অভিনয়ের 'অ আ' শেখেনি তা এক দেখাতেই বোঝা যায়। তবে এই সমস্যাটা অনেকখানি কাটিয়ে উঠতো যদি ডাবিংয়ে অনন্তর ভয়েস ব্যবহার করা না হতো।
তবে কিছু অ্যাকশন দৃশ্যের প্রশংসা করতেই হবে।

এই ছবির পোস্টারগুলো সবচে বেশি প্রশংসার যোগ্য।এটাই অধিকাংশ দর্শক টেনেছে।

মিশ্র সাফল্য পেয়েছে ছবিটি।সবশেষে এটি বাণিজ্যিক ধারার বাংলা ছবি ই হয়েছে যা কিনা শাকিব খানের তুলনায় বেশ গ্ল্যামারাস আর কিছু হলিউডি স্টাইলের নকল মারামারির জগাখিচুড়ি সংকলন।




আমি অনেকটাই হতাশ।

:-(
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×