somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিয়াত্তরের চিলি, পঁচাত্তরের বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা

০৩ রা আগস্ট, ২০১০ সকাল ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিয়াত্তরের চিলি, পঁচাত্তরের বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা
আবদুল গাফফার চৌধুরী

১৯৭৩ সালে চিলির গণতান্ত্রিক আলেন্দে সরকারকে উৎখাতের জন্য যে গোপন ও প্রকাশ্য ধ্বংসাত্দক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, ২০১০ সালের বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক হাসিনা সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের জন্য সেই একই ধরনের ষড়যন্ত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা চলছে বলে অনেকের মতো আমারও সন্দেহ হচ্ছে। চিলিতে আলেন্দের গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্যে জোট পাকিয়েছিল জেনারেল পিনোচেটের নেতৃত্বে মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির একাংশ, সিভিল ব্যুরোক্রেসি ও ক্যাথলিক চার্চ। সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ী ও ভাড়াটিয়া মিডিয়া। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে শক্তি ও সমর্থন জুগিয়েছে মার্কিন সিআইএ।
আলেন্দেকে উৎখাতের জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা প্রথমেই দেশটির অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। এ উদ্দেশ্যে তাদের অনুচররা ট্রেড ইউনিয়নগুলোতে এবং শ্রমিক আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে। শ্রমিকদের বেতন, ভাতা, মাগগি ভাতা ইত্যাদি ব্যাপারে আলেন্দে সরকারের নীতির বিরুদ্ধে শ্রমিক অসন্তোষ উসকে দেওয়ার তৎপরতায় লিপ্ত হয়। এমনকি ষড়যন্ত্রকারীদের এজেন্ট ও অনুচররা ভুয়া শ্রমিক নেতা সেজে শ্রমিক সংগঠনগুলোতে অনুপ্রবেশ করতে থাকে।
প্রেসিডেন্ট আলেন্দে তখন তাঁর পূর্ববর্তী শাসকদের অনুসৃত নীতির ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ধাক্কা থেকে চিলিকে উদ্ধার করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। তিনি আগের তুলনায় শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং অন্যান্য দাবিদাওয়া মেটানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেও কল-কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দূর করতে পারেননি। ভুয়া শ্রমিক নেতারা শ্রমিকদের বোঝাচ্ছিল, আলেন্দে সরকার শ্রমিকদের স্বার্থ দেখছে না। তিনি যা দিতে চাচ্ছেন, শ্রমিকদের তার চেয়ে বহুগুণ বেশি পাওয়া উচিত।
চিলির তখনকার অর্থনৈতিক অবস্থায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শ্রম ও চাকরি_কোনো ক্ষেত্রেই বিরাটভাবে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি ক্ষমতা ছিল না। আলেন্দে সরকার পর্যায়ক্রমে সমস্যাগুলোর জট খোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগোচ্ছিল। এ পরিকল্পনাগুলোর কোনোটা ছিল স্বল্পমেয়াদি এবং কোনোটা ছিল দীর্ঘমেয়াদি। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে বিরাট আর্থিক ব্যবধান হ্রাস পেত। শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষের অবস্থার উন্নতি হতো, সমাজে চার্চের দ্বারা প্রবর্তিত অন্ধ কুসংস্কার ও কুশিক্ষা অনেকটাই দূর হতো, রাজনীতিতে নব্য ধনী ও সেনাপ্রধানদের প্রভাব কমত। এক কথায় চিলির একটি ইউরোপীয় ধাঁচের ওয়েলফেয়ার স্টেট হওয়ার সম্ভাবনা সূচিত হতো। অবশ্যই এ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে সময়ের প্রয়োজন ছিল।
এ সম্ভাবনাটিকেই ধ্বংস করার জন্য চার্চ ও মিলিটারি (পাকিস্তান ও বাংলাদেশে মস্ক এবং মিলিটারির মতো), সিভিল ব্যুরোক্রেসি, অসৎ ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এবং মার্কিন মদদপুষ্ট তথাকথিত গণতান্ত্রিক কয়েকটি বিরাধী দল জোট পাকিয়েছিল। নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় নয়, রক্তাক্ত সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আলেন্দে সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের লক্ষ্য ছিল তাদের। এই লক্ষ্য হাসিলের জন্য তারা শ্রমিক ও ছাত্র সংগঠনগুলোতে পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুপ্রবেশ করে এবং স্কুল, কলেজ ও কল-কারখানাগুলোতে বিপুল অর্থ ব্যয়ে সরকারবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে ব্যাপক অশান্তি ও গোলযোগ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়।
১৯৭৩ সালের দিকে চিলিতে এই অশান্তি ও গোলযোগের কথা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অজানা ছিল না। ১৯৭৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আলজিরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে যান ৭৩ জাতি জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে। তাঁর সফরসঙ্গী দলে আমিও ছিলাম। কথা ছিল এই সম্মেলনে চিলির প্রেসিডেন্ট আলেন্দেও যোগ দেবেন। কিন্তু তাঁর দেশে প্রচণ্ড শ্রমিক অসন্তোষের জন্য তিনি আলজিয়ার্সে আসতে পারেননি। কিন্তু আলজেরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুয়ারি বুমেদিনকে লেখা এক দীর্ঘ চিঠিতে তাঁর না আসতে পারার কারণ দর্শিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।
হুয়ারি বুমেদিন বঙ্গবন্ধুকে জানান, আলেন্দে লিখেছেন, তাঁর এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগ্রহের পেছনে একটা কারণ ছিল বাংলাদেশ নামক নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের স্থপতি শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং দুই দেশের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা। কিন্তু তাঁর দেশে সাম্রাজ্যবাদীদের অনুচররা এমন ব্যাপক গোলযোগ সৃষ্টি করেছে যে তিনি তা মোকাবিলায় ব্যস্ত এবং এই সংকটমুহূর্তে দেশ ছেড়ে আসতে পারছেন না। তবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের তিনি সাফল্য কামনা এবং জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচির সঙ্গে একাত্দতা প্রকাশ করেছেন।
বঙ্গবন্ধুও আলজিয়ার্স সম্মেলনে ক্যাস্ত্রো, টিটো প্রিন্স সিহানুক, বিশপ ম্যাকারিওস, জুলিয়াস নায়ারে, আনোয়ার সাদাত প্রমুখ জোটনিরপেক্ষ রাষ্ট্রনেতাসহ আলেন্দের সঙ্গেও পরিচিত ও মিলিত হওয়ার জন্য আগ্রহী ছিলেন। এসব নেতার সবাই আগ্রহের সঙ্গে এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু আলেন্দের সঙ্গে তাঁর আকাঙ্ক্ষিত সাক্ষাৎকারটি ঘটেনি। কারণ, আলেন্দে আলজিয়ার্সে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েও তাঁর দেশের অশান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য তা বাতিল করতে বাধ্য হন।
আলজিয়ার্স সম্মেলন শেষে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন। এর কিছুদিন পরই আলেন্দেকে নির্মমভাবে হত্যা করে সিআইএর নীলনকশা অনুযায়ী ঘাতক জেনারেল পিনোচেট ক্ষমতা দখল করেন এবং চিলিতে শুরু হয় নিপীড়ন, নির্যাতন, সন্ত্রাস, গুম, খুন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের বর্বরতার এক দীর্ঘ অন্ধকার যুগের। ঢাকায় গণভবনে বসেই বঙ্গবন্ধু আলেন্দে হত্যার খবরটি পেয়েছিলেন। ওই দিনই প্রয়াত এম আর আখতার মুকুলের সঙ্গে আমি গণভবনে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু তাঁর বেডরুমে বিশ্রাম গ্রহণ করছিলেন। অত্যন্ত বিষণ্ন চেহারা ছিল তাঁর। মুকুলকে দেখে বললেন, 'মুকুল, বলতে পার, পরবর্তী বুলেটের টার্গেট কে? আমার বুকে হাত দিয়ে দেখো তো, বুলেটটা কোন জায়গা দিয়ে ঢুকবে?'
বঙ্গবন্ধু হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদীদের নীলনকশা অনুযায়ী পরবর্তী বুলেটের টার্গেট তিনিই হবেন। কিন্তু আলেন্দেকে উৎখাতের জন্য যে পন্থা ষড়যন্ত্রকারীরা গ্রহণ করেছিল, প্রায় অভিন্ন পন্থা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধেও গ্রহণ করা হবে_এটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কি না আমার জানা নেই। বাকশাল পদ্ধতি প্রবর্তনের বহু আগে ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আওয়ামী লীগের আবার বিজয় লাভের পর থেকেই শুরু বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে অর্গানাইজড কনস্পিরেসি। অর্থাৎ প্রতিবিপ্লবী ষড়যন্ত্রে পীঠস্থান চিলি থেকে প্রায় একই সময় বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়।
লক্ষ করার বিষয়, ঠিক আলেন্দের চিলির মতো বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশেও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে জোট বাধে চার্চের স্থানে জামায়াতের মতো ধর্মান্ধ এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী, কয়েকটি ডানপন্থী রাজনৈতিক দল, সদ্য প্রোমোশনপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের একাংশ, নব্য ধনী ও অসাধু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং সিভিল ব্যুরোক্রেসির একটি বড় অংশ। প্রথমেই আওয়ামী লীগের ছাত্র ফ্রন্টে ভাঙন সৃষ্টি এবং বিভক্ত ফ্রন্টের দুই অংশের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত লাগিয়ে দেওয়া হয়। শ্রমিক ফ্রন্টে অনুরূপ ভাঙন এবং শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করা হয়। মসজিদে মসজিদে চলে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার অপব্যাখ্যা দ্বারা বানোয়াট ও মিথ্যা প্রচার ও ক্যান্টনমেন্টে সরকারবিরোধী গোপন লিফলেট বিলি শুরু হয়। বলা হয় সরকার রক্ষী বাহিনী গঠন করেছে সেনাবাহিনী বিলোপের জন্য।
সরকার খাদ্যসংকট দূর করার জন্য বিদেশ থেকে যে খাদ্যশস্য ও রিলিফ আনে, তা নদীতে ভাসতে
দেখা যায়। সৃষ্টি করা হয় ম্যান ছেরুমিয়া। বাসন্তী নামে মেয়েকে ছেঁড়া জাল পরিয়ে তাঁর ছবি তুলে সরকার দেশের নারীদের লজ্জা নিবারণেও ব্যর্থ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়।
এটি ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লবী চক্রের অলআউট ওয়ার। এই ওয়ারের পেছনে মদদ জুগিয়েছে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারী কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্রও। ঠিক তিয়াত্তরের চিলিতে ভয়াবহ ধ্বংসাত্দক পরিকল্পনা দ্বারা আলেন্দে সরকারকে উৎখাতের যে পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল, ১৯৭৫ সালে সেই একই পরিবেশ একই উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছিল বাংলাদেশে। আলেন্দের মতো বঙ্গবন্ধুও সেই বর্বর হত্যা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন।
আমি যে পুরনো দিনের পুরনো কথার এত কাসুন্দি ঘাঁটছি, তার মূল কারণ, দেশের অনেক সচেতন মানুষের মতো আমারও সন্দেহ হচ্ছে, বর্তমান বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ছাত্র ফ্রন্টে সংঘাত ও সন্ত্রাস, দ্রব্যমূল্য নিয়ে বিএনপি আমলে হাওয়া ভবনের সহায়তায় সৃষ্ট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের একটি অংশের কারসাজি, যুদ্ধাপরাধীদের সম্ভাব্য বিচার নিয়ে ধর্মভিত্তিক একশ্রেণীর রাজনৈতিক দলের মসজিদ-মাদ্রাসাভিত্তিক প্রচারণা, শ্রমিক ফ্রন্টে অসন্তোষ, বিশেষ করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনের নামে ঢাকায় বেপরোয়া সন্ত্রাস ও তাণ্ডব চালানো তিয়াত্তরের চিলি ও পঁচাত্তরের বাংলাদেশের পরিস্থিতি আবার বর্তমান বাংলাদেশে সৃষ্টি করার জোরালো চক্রান্তের প্রমাণ।
অতীতের রাজনৈতিক ট্র্যাজেডিগুলোর কথা যাঁদের স্মরণ আছে, তাঁরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, দেশে শ্রমিকদের বিক্ষোভের নামে যা ঘটছে, তা স্বাভাবিক সরকারবিরোধী আন্দোলন নয়। এগুলো অর্গানাইজড কনস্পিরেসির বহিঃপ্রকাশ। বিডিআরদের পিলখানার ঘটনা দ্বারা চক্রান্তকারীরা যে উদ্দেশ্য সাধন করতে পারেনি, বর্তমানে তা ছাত্র-শ্রমিকসহ বিভিন্ন ফ্রন্টে ছড়িয়ে দিয়ে একই উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রশাসনে চক্রান্তকারীদের সহযোগীরা তো ঘাপটি মেরে আছেই, ছাত্র-শ্রমিক ফ্রন্টসহ সব ফ্রন্টের এবং শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়ায় তিয়াত্তরের চিলির মতো চক্রান্তকারীদের হেভি ইনস্ট্রিট্রেসন (ব্যাপক অনুপ্রবেশ) ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্পর্কে আদৌ সজাগ আছেন কি?
গত ৩০ জুলাই শুক্রবার পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের নামে ঢাকার কয়েকটি এলাকায় যে ব্যাপক ভাঙচুর, অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, আমি তার বিবরণ এখানে পুনরুল্লেখ করতে চাই না। সে বিবরণ প্রতিটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। আমি কেবল দৈনিক ইত্তেফাকের ৩১ জুলাই শনিবারের সংখ্যায় প্রকাশিত এ তাণ্ডবের খবরের একটি অংশের উদ্ধৃতি দেব।
দৈনিক ইত্তেফাকের খবরে বলা হয়, 'মজুরি কাঠামো বাতিল ও নূ্যনতম পাঁচ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশান ও মহাখালী এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিকরা ব্যাপক ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করেন।... যারা ভাঙচুর চালিয়েছে, তারা আদৌ শ্রমিক কি না এ ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকা থেকে শ্রমিক নামধারীরা ভাড়ায় গুলশান এলাকায় এসে ভাঙচুর চালায়।'
দৈনিক জনকণ্ঠের খবরে বলা হয়েছে, 'ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহিদুল হক ডিএমপি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দিয়ে পোশাক শ্রমিকদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পে পরিকল্পিতভাবে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের তালিকা রয়েছে। তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।'
গোটা ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ করলে বুঝতে বাকি থাকে না, এটি স্বাভাবিক শ্রমিক বিক্ষোভ বা আন্দোলন নয়। এটি দেশে অর্থনৈতিক অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা। ষড়যন্ত্রকারীরা ভুয়া শ্রমিক ও শ্রমিক নেতা সেজে মাঠে নেমেছিল এবং শ্রমিকদের এক বিরাট অংশকে বিভ্রান্ত করে তাদের ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের কাজে সহযোগী করতে সক্ষম হয়েছে। নইলে পোশাক শ্রমিকদের বেতন যেখানে ছিল মাত্র এক হাজার ৬০০ টাকা, বর্তমান সরকার তা তিন হাজার করার পর অবশ্যই তা পাঁচ হাজার টাকা করার জন্য দরকষাকষি ও আন্দোলন করা অন্যায় নয়। কিন্তু আন্দোলনের নামে অন্যের দোকানপাট লুট করা, ব্যাংক, চশমার দোকান ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ থেকে বোঝা যায়, এটি আন্দোলন নয়, পরিকল্পিত অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা এবং এ চেষ্টার পেছনে আলেন্দের চিলির মতো অদৃশ্য কালো হাত আছে।
পুলিশ কমিশনার যখন বলছেন, এই চক্রান্তকারীদের নামের তালিকা তাদের কাছে আছে, তখন সময় থাকতে কঠোরহস্তে তাদের দমন করার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু বিভ্রান্ত পোশাককর্মীদের যেন শাস্তি দেওয়া না হয়; বরং চক্রান্তকারীদের সম্পর্কে তাদের সজাগ ক রে তুলে এই চক্রান্তের ফাঁদ থেকে তাদের মুক্ত করার জন্য তাদের ন্যায্য দাবিদাওয়াগুলো সরকার পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে পূরণ করার পদক্ষেপ নিক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সজাগ আছেন কি না জানি না, বাংলাদেশে তিয়াত্তরের চিলি ও পঁচাত্তরের বাংলাদেশের ট্র্যাজিক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটানোর যে একটা মহাচক্রান্ত চলছে, তাতে সন্দেহ নেই। হাসিনা সরকার সতর্ক হোন। শুধু সতর্ক হওয়া নয়, সময় থাকতে কঠোর হাতে এ চক্রান্তকারী গোষ্ঠী এবং তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
লন্ডন, ২ আগস্ট সোমবার, ২০১০


সমকাল /৩ আগস্ট ২০১০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×