somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুই যেখানে থাক, ভাল থাক

০২ রা আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনির হোসেন, আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমরা একসাথে তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত পড়েছি। তারপর ওর বাবা বদলি হয়ে পাবনা চলে যায়। পাবনা চলে যাবার পর মাঝে মাঝে মনিরকে আমি চিঠি দিতাম তবে নাম লিখতাম না। ওকে চিঠিতে বলতাম যদি চিনিস তবে আমার চিঠির উত্তর দিস। মনির উত্তর দিত। কিন্তু আমার ঠিকানায় না অন্য ঠিকানায় । মনির যাকে ভাবত যে সে তার বন্ধু, তাকেই দিত। আমি কিন্তু কিছু মনেকরি নি।
মনির মাঝে মাঝে রংপুর আসত। সবার সাথে ঘুরত, সবাইকে খাওয়াত। আমি খবর পেলে ওর সাথে দেখা করতে যেতাম। তবে কখনই আমি খবরটা আগে পেতাম না। মনির খুব আড্ডাবাজ ছিল। তাই কোনদিনও ওর বন্ধুর অভাব হয়নি। তার উপর দুই ভাই সিঙ্গাপুরে থাকে টাকাও ছিল ভালই। টাকার চেয়ে সবচেয়ে বেশি ছিল তা হল ওর বন্ধুদের প্রতি টান আর একটা সুন্দর মন।
একদিনের একগল্প বলি মনির পাবনা থেকে রংপুর এসেছে। তখন আমরা কলেজে পড়ি। সারাদিন ঘুরে ফিরে বাসায় ফিরছি তখন অনেক রাত। মনিরের মামার বাসা আমি যেখানে থাকি তার অনেক কাছে তাই অন্য বন্ধুদের বিদায় দিয়ে আমরা দুইজন একই রিক্সায় উঠলাম। বাসার সামনে নেমে যখন রিক্সা ভাড়া দিব তখন মনির দেখল ওর কাছে খুচরা নাই। আমি রিক্সা ভাড়া দিয়েদিলাম। কিন্তু মনির আমাকে কিছুতেই ভাড়া দিতে দিবে না। তখন আমার কঠিন সময় যাচ্ছিল ও তা জানত। পরে পকেট থেকে ১০০ টাকার নোট বের করে দিয়ে আমাকে বলল রেখেদে কাজে লাগবে। মনির তোর কি মনে পড়ে? আমি সেই দিন টাকাটা নিই নি। তোকে বলেছিলাম যদি কখনও এমন হয় যে টাকার জন্য আমি পরীক্ষার ফি দিতে পারছি না, বা রেজিস্ট্রেশন করতে পারছি না তখন তোর কাছ থেকে টাকা নেব। তুই বলেছিলি সেইদিন অবশ্যই যেন চাই।
এখন আমি রুয়েটে পড়ি। তোর কি মনে আছে? রুয়েটের ভর্তির দিন। রাজশাহীতে আমার কোন আত্মীয় নেই বলে আমি তোদের বাসা পাবনায় উঠেছিলাম। শুধু তুই ছিলি। আমার ভর্তির দিন ০৯.০১.২০০৭ আওয়ামী লীগ ডাকা অবরোধে সারা দেশ বন্ধ। আমি তো ভেবেছিলাম রাজশাহী আসব না। ভর্তি কি আর অবরোধের দিন হয়। কিন্তু তুই কোন রিস্ক নিতে চাইলি না। আমরা পাবনা থেকে ঈশ্বরদী-লালপুর-চারঘাট-বাঘা হয়ে ‘’নসিমনে’’করে রাজশাহী পৌছাই। সময় লাগল সাড়ে পাঁচ ঘন্টা। কেউ কি কখনও বন্ধুর জন্য এতটা করে? সেই দিন আমি ঠিকই ভর্তি হয়েছিলাম। তুই না নিয়ে এলে আমার প্রকৌশলী হবার ইচ্ছাটা সারা জীবন অধরাই থাকত মনে হয়।
সারা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। হঠাৎ ঘোষনা তত্বাবোধায়ক সরকারের সময়। তোর কি মনে পড়ে সেই দিনও আমি তোদের বাড়িতেই ছিলাম। যদিও তুই তখন রংপুরে কিন্তু আমার থাকার কোনই সমস্যা হয় নি।
তুই অনেক করেছিস আমার জন্য। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারলাম না। গত বছর তুই যখন বিয়ে করলি। খবরটা কিন্তু আমি অনেক পরে পয়েছি। আমার সব বন্ধুরা ছিল তোর বিয়েতে। কিন্তু আমি থাকতে পারি নাই। বউ নিয়ে যখন বাড়িতে উঠতে পারছিস না, তখন সবাই তোর পাশে ছিল কিন্তু আমি ছিলাম না। গত ঈদে যখন নতুন বউকে একটা শাড়ি দিতে পারছিলি না তখন আমাদের সব বন্ধুরাই চাঁদা তুলে টাকা দিয়েছিল শুধু আমিই পারি নি। আমি পারিনি তোকে একদিন কফি হাইজে খাওয়াতে, যদিও তুই অনেক খাইয়েছিস।

তুই যখন একটু আগে ফোন করে বললি তুই চলে যাচ্ছিস আজ রাতে, তখন কথা গুলো আমার বারবার মনে পড়ছিল। তুই বললি আমি তো কিছুদিন পর ইন্জিনিয়ার হচ্ছি। ঠিকই তো আর মাত্র কয়েকটা মাস। তার পর আমি ইন্জিনিয়ার কিন্তু তুই তো আর থাকবি না। অনেক বাকি পড়ে গেলরে। শু্ধুই বাকি। তোকে আর হয়তো খাওয়ানো হল না কখনই। তোর বউকেও দেয়া হল না কিছু।
তোর ফোন পাবার পর থেকেই কেন যেন মনে হচ্ছে হয়তো তোর সাথে আর দেখা হবে না। হলেও আর সেই ভাবে আড্ডা দেয়া হবে না। হবে না কোন সুন্দরীর দিকে চেয়ে থাকা। তুই সিঙ্গাপুরে থাকবি হয়ত পাঁচ বছর পর আসবি। তখন আমি থাকব না। অফিসের কাজে বাইরে থাকব তোর সাথে দেখা হবে না।
আমাকে এত পর ফোন করলি কেন? তুই কি পারতি না আগে ফোন করতে। সব সময় কি এমন করবি??

যেখানেই থাক, ভাল থাক, সুখে থাক।

পুনশ্চঃ আমার এই বন্ধুটি আজ রাতে সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছে একটু আগে ফোন করেছিল বরাবরের মতই সম্ভবত সবার পর আমি খবরটি পেলাম।




৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×