বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য আসছে বড় এক সুখবর—দুই দিন ধরে মিলছিল এই আভাস। ব্রুনাই ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেটিকে সত্যি করে দিলেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান।
সিদ্দিক এর আগে ভারতের পেশাদার সার্কিটে চারটি শিরোপা জিতেছেন। ভারতীয় সার্কিটে ভারতের বাইরের গলফার থাকেন অল্প কয়েকজন। কিন্তু এশিয়ান পেশাদার সার্কিটের ব্যাপ্তি অনেক বড়। বছরে প্রায় ২০টি টুর্নামেন্ট হয়। এশিয়ান হলেও এই সার্কিটে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ইউরোপের অনেক বড় বড় খেলোয়াড়ই খেলেন। তাঁদের মধ্যে সিদ্দিক সেরা! যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, মেক্সিকোসহ অন্য দেশ থেকে আসা প্রায় দেড় শ গলফারের টুর্নামেন্টে সিদ্দিক হারিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ইবে ক্রুগারকে। বাংলাদেশের গলফ তো বটেই, গোটা ক্রীড়াঙ্গনের জন্যই এটি বড় সাফল্য। এই অঞ্চলের ভারতের খেলোয়াড়েরাই শুধু একাধিক এশিয়া ট্যুর জিতেছেন।
স্কুলের খরচ জোগানোর জন্য কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে বল-বয়ের কাজ নেওয়া, তারপর খেলায় হাতেখড়ি, ভারতীয় সার্কিট পেরিয়ে এশিয়ার সার্কিটে চ্যাম্পিয়ন হওয়া—বাংলাদেশের দরিদ্র এক পরিবারের যুবক কেবল বিস্ময়ই উপহার দিয়ে চলেছেন। গত জুনে থাইল্যান্ডে একটা এশিয়ান ট্যুরে প্রথমবার এশিয়ার সেরা দশে (ষষ্ঠ) ঢুকেছেন।
টুর্নামেন্টটা চার দিনের, প্রতিদিন ১৮ হোলের রাউন্ড হয়। ব্রুনাইয়ের কোর্সটি ছিল ৭১ স্ট্রোকের। যত কম স্ট্রোক খেলা যায়, ততই ভালো। এর মধ্যে প্রথম দিন সিদ্দিক ৭ স্ট্রোক কম খেলেছেন (৬৪ স্ট্রোক)। পরদিন খেলেছেন ৪ স্ট্রোক কম (৬৭), তৃতীয় দিনে ১ স্ট্রোক কম (৭০)। কাল শেষ দিনে ৪ স্ট্রোক কম (৬৭)।
২৮৪ স্ট্রোকের মধ্যে ২৬৮ স্ট্রোক খেলেছেন সিদ্দিক, মোট ১৬ স্কোর কম। সমান স্কোর নিয়ে তাঁর সঙ্গে শীর্ষে ছিলেন ইবে ক্রুগার। টাইব্রেকারে খেলা হয়েছে একটা হোলে। সিদ্দিক প্রথমবারেই ৪ স্ট্রোকে বল ফেলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী ফেলেছেন ৫ স্ট্রোকে। এতেই চ্যাম্পিয়ন সিদ্দিক।
ভারতীয় সার্কিটে অর্থ পুরস্কার যেখানে সর্বোচ্চ দেড় কোটি রুপি, সেখানে এই ব্রুনাই ওপেনে অর্থ পুরস্কার ৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় ২ কোটি ১০ লাখ। চ্যাম্পিয়ন সিদ্দিক পাবেন ৪৮ হাজার ৬০০ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৫ লাখ টাকা!
সিদ্দিকের এই সাফল্যের খবর ফলাও করে প্রচার করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো। এএফপিকে সিদ্দিকুর বলেছেন, ‘আমি দারুণ খুশি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আমি এশিয়ান ট্যুরে খেলছি এবং দুই বছরের মধ্যে অবশেষে এশিয়ান একটা টুর্নামেন্ট জিতলাম।’
সিদ্দিকুরের পক্ষে আরও সামনে যাওয়া সম্ভব মনে করছেন বাংলাদেশের গলফের নামী কোচ বাবু আহমেদ, ‘সিদ্দিক তো আমারই ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই ওকে দেখছি, অসাধারণ প্রতিভা। আমাকে বলেছিল একটা এশিয়ান ট্যুর অবশ্যই জিততে চায়। তারপর চায় ইউরোপে খেলতে। এখন সেটা খুবই সম্ভব মনে হচ্ছে।’
সিদ্দিক এখন ব্যস্ত। গত রাতেই ব্রুনাই থেকে তাঁর মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা। সেখানে আরেকটি এশিয়ান সার্কিট শুরু হচ্ছে আগামীকাল।
সিদ্দিকের এই জয়ে দেশে গলফের প্রসার আরও বাড়াবে নিঃসন্দেহে। সবচেয়ে বড় প্রত্যাশাটা কী? বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের সদস্য গলফ অপারেশনস, মেজর (অব.) আনিস-উল ইসলাম বলছেন, ‘আগামী ডিসেম্বরে আমরা প্রথমবারের মতো একটা এশিয়ার ট্যুর আয়োজনের অনুমতি পেয়েছি। সিদ্দিকের এই জয়ে আশা করি আমরা পৃষ্ঠপোষণা পাব।’
৭ আগস্ট সিদ্দিক দেশে ফিরলে তাঁকে দেওয়া হবে সংবর্ধনা। তার আগে আজই বিকেলে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে একটা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হচ্ছে। ১২৩তম শ্রীলঙ্কান অ্যামেচার ওপেনে দলগত চ্যাম্পিয়ন দুলাল হোসেন ও জাকিরুজ্জামানের সংবর্ধনা।
বাংলাদেশের গলফের এখন দারুণ সময়।
সূত্র: প্রথম আলো