somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফগান যুদ্ধের দিন শেষ !!!!!!!!

০১ লা আগস্ট, ২০১০ সকাল ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আফগানিস্তানে ন্যাটো সেনাদের ব্যর্থতা ও ভুলের ঘটনা ফাঁস করেছে উইকিলিকস নামের এক প্রতিষ্ঠান। সেখানে ব্রিটিশ সেনাদের কাণ্ডকীর্তির কথাও ছিল। আর ছিল হিন্দুকুশ পর্বতের তালেবানদের পাকিস্তানের সহযোগিতার কথা। এ নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মন্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাঁর এই পরিকল্পিত ‘রাগ-ক্ষোভের’ লক্ষ্য ছিল ভারতকে খুশি করে কিছু ব্যবসায়িক ফায়দা হাসিল করা। তিনি তখন ভারত সফর করছিলেন। সবই ছিল আসলে মন জোগানো কথা।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াও ছিল সমান কপট। ইসলামাবাদের পক্ষে যেহেতু বাঁদর নাচনেওয়ালাকে কিছু বলা অসম্ভব, তাই তারা চড়াও হয়েছে বাঁদরের ওপর। নয় বছর আগে আফগানিস্তান দখল হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিভিন্ন তালেবানগোষ্ঠীর সঙ্গে কী করে আসছে, ইতিমধ্যে তা সবারই জানা হয়ে গেছে। তিন বছর আগে তালেবানদের সঙ্গে এ রকম একটি আলোচনার সময় এক পাকিস্তানি সেনা এক মার্কিন গোয়েন্দাকে গুলি করে হত্যা করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি গত বছর ইসলামাবাদে থাকার সময় আমাকে বলেছেন, আইএসআইয়ের সঙ্গে বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে মার্কিন গোয়েন্দারাও উপস্থিত ছিল। কারও এ নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণটাও খুবই পরিষ্কার, আমেরিকা জেনে গেছে এই যুদ্ধে তারা জিতবে না। তারা এখন ব্যস্ত আপসের আলোচনায়।
নয়-এগারোর পরও পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবানদের ঘনিষ্ঠতা ছিল, এটা খুব একটা গোপন নেই আর। কীভাবেই বা থাকবে? ইসলামাবাদই তো তালেবানদের কাবুল ছাড়ার ব্যবস্থা করেছিল, যাতে আমেরিকা ও তার মিত্ররা বিনা যুদ্ধে দেশটি দখল করে নিতে পারে। পাকিস্তানি জেনারেলরাই তালেবানদের বুঝিয়েছিল সুযোগের জন্য অপেক্ষা করার জন্য।
আর যুদ্ধের হাল যতই খারাপ হতে থাকল, ততই প্রতিরোধও দানা বাঁধতে থাকল। একদিকে সমাজে বাড়তে থাকল নৈরাজ্য, অন্যদিকে হামিদ কারজাইয়ের দলবলের দুর্নীতি বিদেশি দখলদারিকে আরও অসহনীয় করে তুলল। এই পরিস্থিতি পশতুনদের নতুন আরেক প্রজন্মকে যুদ্ধের ময়দানে টেনে আনল। এই তরুণদের বেশির ভাগই ক্ষমতাচ্যুত তালেবানদের অংশ ছিল না। এই নয়া তালেবানরাই দক্ষতার সঙ্গে প্রতিরোধের বিস্তার ঘটাল এবং একে কার্যকর করে তুলল। উইকিলিকসেও দেখা গেছে, বাস্তবত দেশের প্রতিটি অংশেই তাদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে।
ম্যাথিউ হল নামের সাবেক এক মেরিন সেনা আফগানিস্তানে রাজনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে তিনি পদত্যাগ করেন। তাঁর ব্যাখ্যাটি ছিল পরিষ্কার: ‘পশতুনদের প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে অজস্র স্থানীয় গোষ্ঠীর সমন্বয়ে। তারা মনে করে, তাদের ভূমি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ধর্মের ওপর ভেতরের ও বাইরের শত্রুরা শত শত বছর ধরে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এই ধারণা তাদের ভেতর প্রতিরোধস্পৃহাকে আরও চাঙা করেছে...আমার মনে হয়েছে প্রতিরোধযোদ্ধাদের বড় অংশই তালেবানদের সাদা পতাকার জন্য যুদ্ধ করছে না, বরং বিদেশি সেনাদের উপস্থিতি ও জনবিচ্ছিন্ন কাবুল সরকারের আরোপ করা করের বিরুদ্ধে তারা লড়ছে।’
২০০৭ সালে আমেরিকা একদল বিদ্রোহীকে সরকারি পদের লোভ দেখিয়ে তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের সঙ্গ ছাড়ানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু নয়া তালেবানরা সাফ জানিয়ে দেয়, দেশে যত দিন বিদেশি সেনারা থাকবে তত দিন তারা সরকারের অংশ হতে রাজি নয়। তা হলেও এই যোগাযোগ ঘটিয়ে দেওয়ার কাজে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই বাহিনী বহুদিন বহু ঘটনায় আমেরিকার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে। কিন্তু এখন তার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাতে তারা সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে জেহাদের সময়কার ইসলামপন্থী আলখাল্লা খুলে ফেলে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের অনেকেই এতে আরও খেপে যান এবং জেনারেল মোশাররফের প্রাণনাশের একাধিক চেষ্টাও হয়।
পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক কায়ানি ইতিমধ্যে আইএসআইয়ের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছেন। আপাদমস্তকে গোয়েন্দা সংস্থাটিকে তিনি নতুনভাবে সাজিয়েছেন। ২০০৮ সালে কাবুলের ভারতীয় দূতাবাসে হামলার বিষয়টি যারা অনুমোদন দিয়েছিল তাদের অপসারণ করা হয়। এখন, পাশ্চাত্যের অনেকেই পারভেজ কায়ানিকে সরাসরি আক্রমণ করতে না পেরে আইএসআইকে একহাত দেখে নিতে চাইছে। কায়ানিকে না জানিয়ে আইএসআই অথবা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কারও পক্ষে তালেবানদের সহযোগিতা করার পথ এখন আর খোলা নেই। আবার কায়ানি এও ভালো করে জানেন, ন্যাটোর বিরুদ্ধে লড়াইরত তালেবানদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার স্বার্থে তাদের কিছু লাভের মুলা দিতেই হবে।
মাস কয়েক আগে কারজাই প্রাণপণে চেষ্টা করেছেন তালেবানদের সঙ্গে আঁতাত করার জন্য। এর জন্য তিনি কাবুলের ধুরন্ধর মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেনারেল এইকেনবেরিকে অনুরোধ করেন যাতে মোল্লা ওমরসহ তালেবানদের সব নেতার ওপর থেকে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা সরিয়ে নেওয়া হয়। এইকেনবেরি তাঁকে ফিরিয়ে দেননি, কিন্তু পরামর্শ দিয়েছেন যাতে প্রত্যেকের বিষয় আলাদা আলাদা করে বিবেচনা করা হয়। এসবই হলো যুদ্ধে হেরে যাওয়ার লক্ষণ।
উইকিলিকসের তথ্য ফাঁসের ঘটনা হয়তো কারজাইকে সাময়িকভাবে সুফল দেবে। তালেবানদের পক্ষে পাকিস্তানি সমর্থন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান একা এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবে কি না সেটা পরের প্রশ্ন। কিন্তু আমাদের মিত্রদের সেই সামর্থ্য রয়েছে। তাই প্রশ্ন হলো, তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?’
কিন্তু তারাও তো বসে নেই। বারাক ওবামা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই সীমান্তের ওপারে ড্রোন হামলা করে তালেবানদের সমর্থক ভিত্তি ধ্বংস করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উল্টো এটা পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। গত বছর, আফগান সীমান্তের ওরাকজাই এলাকা থেকে পাকিস্তানি বাহিনী আড়াই লাখ মানুষ জোর করে উচ্ছেদ করে উদ্বাস্তু শিবিরে ঢোকায়। অনেকেই এর প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ নেয়। অনেকেই এর পর থেকে আইএসআই ও পাকিস্তানি সেনাস্থাপনাকে আক্রমণের নিশানায় নেয়। এ বছরের ৮ জুন জঙ্গিরা রাওয়ালপিন্ডিতে ন্যাটোর এক সামরিক গাড়িবহরে গ্রেনেড হামলা চালায়। ন্যাটোর পঞ্চাশটি গাড়ি পুড়ে যায় এবং সংবাদ মোতাবেক, এক ডজনেরও বেশি সেনা নিহত হয়।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ওবামার সময় এসেছে যুদ্ধ ও আগ্রাসনকে জায়েজ করার সব বুলিবাগীশতা বাদ দিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার। আরও যুদ্ধ কেবল আরও মৃত্যু ডেকে আনবে, সমাধান নয়। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কৌশলই এখনকার জ্বলন্ত প্রয়োজন।
ব্রিটেনের দি গার্ডিয়ান পত্রিকা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত।
তারিক আলী: পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×