somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড্রাগ কুরিয়ার -৪

২৮ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাহ বাজে সব চিন্তা বাদ দিয়ে টয়েলেটের দিকে হাটা দেয় ডেভিড ।
মাঝ পথে যেয়ে তার খেয়াল হয় যাহ ব্রিফকেসটা ফেলে রেখে এসেছে সেই লোকটার সামনেই।
ফেরত যাওয়া কি ঠিক হবে?
যদি লোকটা সত্যিই ফেডারেল এজেন্ট হয় কিংবা এজিও এজেন্ট এবং সে যদি এই সুযোগে ব্রিফকেসটা খুলে দেখে বা পুরাই গায়েব করে দেয়।
অস্ট্রেলিয়া হলে প্রাইভেসির কারনে ফেডারেল এজেন্টও ব্রিফকেস এ হাত দেয়ার আগে অনুমতি চাইতো কিন্তু এখানে এই এশিয়াতে নিয়ম ভিন্ন।
থাই পুলিশকে ডাক দিলেই মনের আনন্দে খুলে দেবে , এখানে প্রাইভেসীর মায়রে বাপ।
এসব ভাবতে ভাবতেই টয়লেটের দরজাটা এসে গেলো।
একবারও পেছন দিকে না তাকিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে সোজা ছোট কাজ করতে দাড়ীয়ে গেলো ডেভিড।
লোকটাকে যে কেনো সন্দেহ হচ্ছে হিসাবটা ঠিক মেলাতে পারছে না।
লোকটা একবারও তার দিকে চোখ তুলে তাকায় নি।
তাকে একটা সৌজন্যতা সূচক হাই হ্যালো ও বলে নি।
লোকটার চেহারায় কেমন একটা ভাবলেশহীন ভাব কোনো উত্তেজনা নেই , কোনো উতকন্ঠা নেই , কোনো কিছুর প্রতি কোনো আগ্রহ নেই যা সাধারন কোনো যাত্রীর চেহারায় থাকে না।
নাহ ব্যাপারটা মোটেও সুবিধার ঠেকছে না ডেভিডের কাছে।
কাজ শেষ করে হাত ধোয়ার সময় যে ভাবনাটা এলো তাতে করে শরীরের রক্ত হীম যেতে থাকলো ডেভিডের।
লোকটা এখন ব্রিফকেস খুলে পুলিশ নিয়ে বসে আছে নাতো আবার।
দরজা খুলে ডেভিড যেদিক থেকে এসেছিলো সেদিকে তাকিয়ে দেখে আটকে থাকা দমটা ছাড়লো।
নাহ কোনো পুলিশ নেই অন্তত দেখা যাচ্ছে না।
হুর খামোখাই টেনশনে রিতিমত আত্মারাম খাচা ছাড়া করার যোগাড়।
লোকটি এখনও সেই আগের যায়গাতেই বসে আছে পত্রিকা নিয়ে।
নাহ খামোখাই বেচারাকে সন্দেহ করেছে এতক্ষন ভেবে মনে মনে কিছুটা অপরাধবোধ করলো।
কিছুটা স্বস্তি নিয়ে প্রফুল্ল মেজাজে বসতে গিয়ে ঘার ঘুরিয়ে পেছন দিকে তাকিয়ে আবার রক্ত ঠান্ডা হবার যোগাড়।
থাই পুলিশ সাথে কুকুর নিয়ে এগিয়ে আসছে।
ব্রিফকেসটা স্ক্যান করিয়ে দিয়েছে মার্ক ধরতে পারবে না কিছুই দেখা যায় না বাইরে থেকে কিন্তু কুকুর গন্ধ শুকে ধরতে পারবে কিনা সেটা চেক করা হয় নি।
নাহ এই ব্যাপারটা মার্ককে জানাতে হবে পরের বার।
পরের বারের কথা ভেবে নিজের মনেই তার হাসি পেলো
আবার! পরের বার।
থাই পুলিশটি তার কুকুর নিয়ে একশ গজের মধ্যে এসে গেছে।
তার চেহারা দেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না যে সে কি নরমাল টহল দিচ্ছে নাকি তার উদ্দেশ্যেই এসেছে।
আরেকটু কাছাকাছি আসতেই ডেভিড অবাক হয়ে দেখলো থাই ডগ হ্যান্ডলার পত্রিকা ওয়ালার দিকে কেমন একটা পরিচিত ভংগিতে তাকাচ্ছে।
নাহ ব্যাটা আসলেই এজেন্ট হবে।
থাই ডগ হ্যান্ডলার ডেভিডের সামনের সারি দিয়ে ঘুরে যায় কিন্তু তার ব্রিফকেস ধরতে আসে না কেউ।
ডগ হ্যান্ডলার চলে যেতেই ব্রিফকেস নিয়ে উঠে দাঁড়ায় ডেভিড।
উঠে সে দোকানে দোকানে হাটতে থাকে আর ভাবে
কি করা যায়?
কি করা যায়?
তার খুব একা একা লাগে এমন সময়
একটা দোকান থেকে ফোন কার্ড কিনে ফোন বুথ থেকে সিডনীতে পিটার প্যানের নাম্বার ফোন করে বসে ডেভিড।
পিটারকে সংক্ষেপে খুলে বলতেই পিট জানায় এক্ষনই ফ্লাইট ক্যান্সেল করে সে যেনো তিন দিন পরের ফ্লাইট ধরে এবং ঠিক চল্লিশ মিনিট পরে সে যেনো ব্রিফকেস নিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে যেয়ে দাঁড়ায় সেখানে মিঃকিম নামের তার আরেক বন্ধু তাকে সেখান থেকে রিসিভ করবে সেই তাকে ব্যাংককে হোটেলের ব্যাবস্থা করে দেবে সেই সাথে তিনদিন পর তাকে প্লেনে তুলে দেবে।
ফোনে কথা শেষ করার আগে পিট তাকে একটা সাবধান বানী শোনায়
রিমেমবার ডোন্ট ফাক এরাউন্ড এন্ড ড্রিংক টু মাচ , ইটস এ জাংগল ফুল অব ক্রক ফর ইয়ু দেয়ার।
কথাটা কানে বাজতে থাকে ডেভিডের।
দ্রুত সব কাজ শেষ করে আধা ঘন্টার মধ্যে বাইরে এসে দাঁড়ায় ডেভিড।
নাহ লোকটা অনেকক্ষন তার পাশে নেই।
বাইরে বেরিয়ে ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটার মধ্যে থেকেও ভেতরে ভেতরে ঘামতে থাকে ডেভিড।
ক্যাচ করে গাড়ীর বেক কষার শব্দে তাকিয়ে দেখে কালো টুপি আর সানগ্লাস পড়া মিস্টার কিম তার দিকে তাকিয়ে ডাকছে মিস্তার দেবিদ মিস্তার দেবিদ।
এগিয়ে যেতেই হাসি মুখে নিজের নাম বলে প্যাসেঞ্জার সিটের দরজা খুলে দেয় কিম।
গাড়ীতে যেতে যেতে খেয়াল করলো মিস্তার কিম অন্য এশিয়ানদের চাইতে তুলামুলক ভালো ইংলিশ বলে এবং আরো অবাক হলো কিছুক্ষন পর পর তার নো ওয়ারিছ বলা দেখে।
হাসি মুখেই জানতে চায় ডেভিড তুমি মনে হয় অনেক অস্ট্রেলিয়ান প্যাসেঞ্জার ক্যারি করো কিম সে জন্য তোমার একসেন্ট ও অজি হয়ে গেছে।
তার উত্তরে হাসতে হাসতে কিম জানায় সে সিডনীতে ট্যাক্সী চালিয়েছিলো পাচ বছর আর তুমি মনে হয় এখানে কিছু কিনতে এসেছো।
নাহ কিছু কিনতে আসিনি নিছক ঘুরতে এসেছি ব্যাংককে , অবাক ভাব চেপে রেখে জানায় ডেভিড।
কিম মুখে মুখে হিসেব কষে দেখায় এখানে খাটি ঘাস পাওয়া যায় মাত্র দুই ডলারে সিডনীতে নিতে পারলে চোখ বন্ধ করে এক এক আটি একশ ডলার।
পাউডার ও অনেক সস্তা যা নিতে পারবে লাভ।
মুখে নো থ্যাংকস বললেও মনে মনে হিসাব কষে দেখলো ডেভিড ব্যাংককে আসলেও জিনিসের দাম কম।
সেই সাথে ঝুকিও বেশ কম।
কোনো মতে শুধু ব্যাংকক এয়ারপোর্ট পেরুতে পারলেই কাজ শেষ।
মনে মনে পরের বার নিজে নিজে ট্রীপ দেবার জন্য কিম এর ফোন নাম্বার আর ব্যাংককের ঠিকানা নেয়ার কথা ভেবে রাখে ডেভিড।
হোটেলে নামিয়ে দেয়ার আগে তার জানা মতে ভালো মেয়ে মানুষ আছে লাগবে নাকি জানতে চায় কিম।
পিটারের উপদেশ বানী মনে করে আর সারাদিনের সেই লোকটার চেহারা মনে করে আবার নতুন কোন ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চাইলো না ডেভিড।
হোটেলের বিছানায় যেয়ে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে গেলো ডেভিড।
রুম সার্ভীসের ডাকে উঠে রাতের খাবার খেয়ে সামান্য ওয়াইন খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো ডেভিড।
উঠলো পরদিন দুপুরে আবার সেই রুম সার্ভীস এর ডাকে।
খাবার খেয়ে কিছুক্ষন টিভির চ্যানেল ঘুড়িয়ে দেখার মত কিছু না পেয়ে বিকেলের দিকে নিচে রিসেপশনে নেমে আসে ডেভিড।
সেখান থেকে তাকে জানায় কিম ফোন করেছিলো কয়েকবার সে ঘুম থেকে উঠছে কিনা জানতে।
কথা শেষ করার আগেই পেছনে তাকিয়ে মিস্টার কিমের গলা শুনতে পায় ডেভিড তার মানে রিশেপশন তার অনুমতি না নিয়েই কিমকে ফোন করে রেখেছে।
মনে মনে যারপরনাইরকমের বিরক্ত হয় ডেভিড কিন্তু মুখে কিছু বলে না।
আজকে বেশ মাঞ্জা মেরে এসেছে কিম।
হোটেল থেকে বাইরে বেরিয়ে হাটতে হাটতে দুজনে একটা ক্লাবের দিকে অগ্রসর হয়।




(চলবে)

আগের পর্ব দেখতে
Click This Link










সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১০ ভোর ৪:০০
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গল্প-একাকীত্বের অন্ধকার

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:০১





ব্রাজিলের পান্তানাল রেইন ফরেস্টে এর নির্জন জায়গায় পাশাপাশি বসে আছে ম্যারিনা ও মুহিব। পৃথিবীর অন্যতম এই বন রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের কাছে অসম্ভব শিহরন জাগানিয়া। অনেক অনেক মানুষের ভীরে ম্যারিনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে বসবাস করছি

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:৩৩

মুক্তিযুদ্ধের কোটা নিয়ে অভিযোগ তোলা উচিত নয়।
তাদের পরিবারকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই।

৬০% নারী কোটা শতকরা ১০০ জনের ভিতরে ৬০ জনের বেশি নারী পাওয়া যাবে। দেশের পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। গত... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাদৃশ্য- বড়ই অদ্ভুত এক বৈশিষ্ট্য!

লিখেছেন আহলান, ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৪৯




সাদৃশ্য- বড়ই অদ্ভুত একটি বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর রাসুল ( সাঃ) বলেন কাল কেয়ামতে কোন ব্যাক্তির হাসর নাসর তাদের সাথেই হবে, যাদের সাথে তার সাদৃশ্য থাকবে। অর্থাৎ দুনিয়াতে যারা যাকে যেভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি কল্পকথা

লিখেছেন কালো যাদুকর, ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬

আমি খুঁজে পাবো তোমায়
পুরোনো সব রাস্তায়
এ মন বাধাঁ - যেখানে, যেথায়।

সারাদিন ধরে ঘুরে-
ঐ খেলাঘরে,
ঐ মেলায়,
ঐ পলাশ শিমুল বনে,
ঐ নির্জন গলির কোণে,
ঐ ছোট্ট ড্রইং রুমে,
ঐ জীবন্ত ছবির ফ্রেমে,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

EU বাংলাদেশ, আফ্রিকা ও আরবদের সাহায্য করার চেষ্টা করে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১০ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৩



EU বাংলাদেশকে বিবিধভাবে সাহায্য করে আসছে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে; বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে সচল করার জন্য সহযোগীতা করতে চায়। আমাদের দেশে ও আফ্রিকায় ভালো যা ঘটছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×