somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায় ( শেষ পর্ব)

২৮ শে জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link

৫. আঠার পর্যন্ত রাশেদুল বারী’র জীবনটা যেন গ্রীষ্মকালীন ছুটির মত ছিল। তারপর বারী, পিতার হাত ধরে, বাইরের জগতে ঢুকে গেল। তাদের বিশাল স্পিনিং মিলের দায়িত্বটা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য পাগল হয়ে গেলেন তার পিতা। তার পিতার বন্ধু মি: আজাদ। যা কিছু স্থিরকৃত বিশ্বাস সেখানেই তিনি বুনে যাচ্ছেন অবিশ্বাসের বীজ। ঈশ্বরের অস্তিত্বে সন্দিহান। পাপ বলে যা কিছু প্রচলিত তাতেই তার স্পষ্ট বিরোধিতা। মি: আজাদ যুক্তিবাদী। প্রেম-ভালবাসা তার কাছে হাস্যকর। তিনি বুঝান যে জগতের সকল মানবীয় প্রবনতার মূলে যৌনতা। ক্রমে ক্রমে মি: আজাদের যুক্তির কাছে হেরে যায় বারী। মদ খাওয়াকে সে পাপ মনে করে না এবং প্রায়ই নেশাগ্রস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে লাগল। তার মা তাকে বারণ করলে বলে- মদ কোন খারাপ জিনিস না মা। জগতের বড় বড় বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিক সকলেই মদ খেয়েছেন, খাচ্ছেন।
একদিন পার্টিতে ভরপুর মদ খেয়ে বাড়ি ফিরল বারী গভীর রাতে। সকালে সীমা উপস্থিত।
‘তোমার বাবা-মা কখন বাসা থেকে বেড়িয়ে গেছেন, আর তুমি এখনও ঘুমে ?’ সীমা বলে।
‘আমাকে বিছানা থেকে উঠতে সাহায্য কর’ বারী বলে, সে খেলার সব নিয়ম-কানুন জেনে গেছে, প্রতারণার সমস্ত কৌশল।
সীমা ভালবাসার গন্ধ পাচ্ছিল। হারিয়ে গেল। সব কিছুই দিতে প্রস্তুত ছিল সীমা। কিন্তু একটি পরিচ্ছন্নতা উপহার হিসাবে রাখতে চাইছিল বাসর রাতের জন্য। বারী অস্থির ছিল, সে আরো চেয়েছিল, গভীর আকুতি নিয়ে।
বারী’র কাছে পাপবোধের যুক্তি হারিয়ে গিয়েছিল আর সীমা ভালবাসায় অন্ধ। কিছুদিন পর বারী বিমুখ হয়ে গেল।
- ‘তুমি কি আমাকে আর চাচ্ছোনা ?
- না
চোখের জলে সীমার ঠোট ভিজে গেল। চোখ ব্যথাক্রান্ত হয়ে উঠল। হৃদয় বিবর্ণ।
বারী দুরন্ত হয়ে উঠল। সে অন্য এক মেয়েকে যোগাড় করে নিল। আর প্রায়শই রুচির পরিবর্তন করতে লাগল।

৬. সীমা গুরুতর অসুস্থ। বারী খবর পায়।
যতক্ষণে বারী ফিরে এলো, ততক্ষণে সব শেষ।
কালো রক্ত তার ঠোটের কোণায় লেগে আছে। মুখ নিঃসৃত লালাগুলো জমে রয়েছে দু-ঠোটের মাঝখানে।
- আমার সীমা! কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বারী। দেরী হয়ে গেছে, খুব বেশি। মা চিৎকার করে উঠলেন-
- তুই খুনি, তুই আমার মেয়েটাকে, আমার বোনের মেয়েটাকে খুন করেছিস। আমি খুন করেছি, আমি। আমি-তোদের ছাড়ব না। তোর বাবা, তুই পুরুষ মানুষ। ঘৃণা করি তোদের...............
বলতে বলতে মা ঢলে পড়লেন মেঝেতে।
দু’টি লাশ পাশাপাশি দাফন করা হলো।
সময় চলে গেল। সীমা আঠার, কোনদিন উনিশে এলোনা। মা মধ্যবয়সী কখনও বৃদ্ধা হলেন না।
বারী নিজের ভিতর ফিরে আসতে চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। বহু কষ্টে ফিরে এলেন। মনে পড়ে তার আজ তার ছিয়াত্তরতম জন্মদিন। কেউ তাকে শুভেচ্ছা জানায় নি। না ছেলে, না মেয়ে। কে খবর রাখে এই দিনের?

৭. চোখ বুজতেই ভয় পাচ্ছিলেন বারী। মেঘমুক্ত জ্যৈষ্ঠের আকাশ। চমৎকার চাঁদ উঠেছে। বারী জানালা বন্ধ করে দিল। ঘরের ভিতর ক্রমে গরমে ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বারী বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। স্পষ্ট দু’টি ছায়া বাইরে অপেক্ষারত। একটা ধমকা হাওয়া। দরজাটা খুলে গেল। বারী হাসছে, প্রাণবন্ত যৌবনের সেই হাসি...........
- তুমি কি আসতে চাও, রাশেদুল বারী, তুমি কি আমাকে খেলবে ? আমাকে ?
- হ্যা এখন আমি তা পারি। আমি তোমাকে ভালবাসি, শেষ পর্যন্ত তোমার বুকেই আমার আশ্রয়।
- আমি খুবই খুশি, রাশেদুল বারী। আমি দীর্ঘদিন তোমার প্রতীক্ষায় ছিলাম।
বারী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। প্রাণবন্ত যুবক।
ছিয়াত্তুর বছরের একটি দেহ পড়ে রইল মেঝেতে। নিরব। নিস্তব্ধ। একা।

সমাপ্ত....
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×