somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

কৃষ্ণ

১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একবার কৃষ্ণ রাধার অজ্ঞাতে বিরজা নামক এক গোপীর সাথে মিলিত হন। দূতীদের মুখে রাধা এই সংবাদ পেয়ে অনুসন্ধানের জন্য অগ্রসর হলে- সুদামা কৃষ্ণকে উক্ত সংবাদ দেন। কৃষ্ণ এই সংবাদ পেয়ে বিরজাকে ত্যাগ করে অন্তর্হিত হন। বিরজা এই দুখে প্রাণত্যাগ করে নদীরূপে প্রবাহিত হন। রাধা পরে কৃষ্ণের দেখা পেয়ে তাঁকে তীব্রভাবে ভৎর্‍সনা করলে- সুদামা তা সহ্য করতে না পেরে-রাধাকে তিরস্কার করেন। রাধা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুদামাকে অসুর হয়ে জন্মনোর অভিশাপ দেন। সুদামাও ক্ষুব্ধ হয়ে রাধাকে গোপী হয়ে পৃথিবীতে জন্মানোর অভিশাপ দিয়ে বলেন যে- সহস্র বত্সর কৃষ্ণবিরহ যন্ত্রণা ভোগ করার পর তিনি পৃথিবীতে কৃষ্ণের সাথে মিলিত হবেন।

শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক নিষ্টুরভাবে শরীর ক্ষত-বিক্ষত হওয়ায় এবং সারা রাতভর যৌন নিপীড়নের কারণে প্রভাতকালে দেখা গেল রাধিকার পরিহিত বস্ত্র এত বেশী রক্ত রঞ্জিত হয়ে পড়েছে যে, লোক লজ্জায় রাধিকা ঘরের বাইরে আসতে পারছেন না। তখন শ্রীকৃষ্ণ দোল পুজার ঘোষনা দিয়ে হোলি খেলার আদেশ দেন। সবাই সবাইকে রঙ দ্বারা রঞ্জিত করতে শুরু করে। তাতে রাধিকার বস্ত্রে রক্তের দাগ রঙের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। সেই থেকে হোলি খেলার প্রচলন শুরু হয়।

কৃষ্ণ একজন হিন্দু আরাধ্য অবতার। (হিন্দুধর্মে অবতার বলতে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে স্বেচ্ছায় মর্ত্যে অবতীর্ণ পরম সত্ত্বাকে বোঝায়।)এই ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কৃষ্ণের পূজা করে থাকে।কৃষ্ণধর্মের অন্যান্য সম্প্রদায়গুলিতে তাঁকে স্বয়ং ভগবান বা সর্বোচ্চ ঈশ্বরের মর্যাদা দেওয়া হয়।কৃষ্ণ-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি মূলত লিখিত আছে মহাভারত, হরিবংশ, ভাগবত পুরাণ ও বিষ্ণু পুরাণ গ্রন্থে। খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতেই দক্ষিণ ভারতে কৃষ্ণভক্তি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।হিন্দুদের আদি ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদে কৃষ্ণের কোনো উল্লেখ নেই। ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, কোনো প্রকার যৌনসংগম ব্যতিরেকেই কেবলমাত্র "মানসিক যোগের" ফলে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, সেযুগে এই ধরনের যোগ সম্ভব ছিল।

কৃষ্ণের মূর্তিগুলিতে তাঁর গায়ের রং সাধারণত কালো এবং ছবিগুলিতে নীল দেখানো হয়ে থাকে।বিষ্ণু সহস্রনামের ৫৭তম নামটি হল কৃষ্ণ ।কৃষ্ণের প্রচলিত মূর্তিগুলিতে সাধারণত তাঁকে বংশীবাদনরত এক বালক বা যুবকের বেশে দেখা যায়।একাধিক পুরাণে কৃষ্ণের জীবনকাহিনি বর্ণিত হয়েছে বা তার উপর আলোকপাত করা হয়েছে। ভাগবত পুরাণ ও বিষ্ণু পুরাণ গ্রন্থদ্বয়ে কৃষ্ণের জীবনের সর্বাপেক্ষা বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়।কৃষ্ণের জন্মদিনটি কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী বা জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, প্রথাগত বৈদিক ধর্ম ও তার দেবদেবীর বিরুদ্ধে কৃষ্ণের এই অবস্থান, আধ্যাত্মিক ভক্তি আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে ওঠে।

কৃষ্ণ ছিলেন প্রখর কূটবুদ্ধিসম্পন্ন পুরুষ এবং মহাভারতের যুদ্ধ ও তার পরিণতিতে তাঁর প্রগাঢ় প্রভাব ছিল।কৃষ্ণের মোট ১৬১০৮ জন স্ত্রী ছিলেন যাদের মধ্যে আটজন ছিলেন তাঁর প্রধান মহিষী এবং বাকি ১৬১০০ জন ছিলেন নরকাসুরের অন্তঃপুর থেকে উদ্ধার হওয়া রমণীকুল।কৃষ্ণের পূজা হল বৈষ্ণব ধর্মের একটি অঙ্গ। বৈষ্ণব ধর্ম অনুসারে দেবতা বিষ্ণুকে পরমেশ্বর জ্ঞান করা হয়ে থাকে এবং তাঁর অন্যান্য অবতারসমূহ, তাঁদের পত্নী এবং তৎসম্বন্ধীয় গুরু ও সাধকদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। কৃষ্ণের প্রতীক হলো কালো চুল। তাঁর সহযোগী হবে বলরাম, এর প্রতীক সাদা চুল।

কৃষ্ণ অসংখ্য নামে খ্যাত হয়েছিলেন। এই নামগুলির মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু নাম এখানে তুলে ধরা হলো- অঘনাশন, অচ্যুত, অনঙ্গমোহন, অনন্ত, অরিমর্দন, অরিষ্টমথন, অরিষ্টসূদন, অহিমার, অহিরিপু, কংসহা, কংসারি, কানাই, কানু, কালা, কালাচাঁদ, কালিয়া, কালীয়দমন, কালোশশী, কৃষ্ণ, কেশব, কেশিমথন, কেশিসূদন, কেষ্ট, গদাধর, গিরিধর, গিরিধারী, গোকুলনাথ, গোকুলপতি, গোকুলেশ্বর, গোপবল্লভ, গোপাল, গোপিকামোহন, গোপিকারমণ, গোপিনীবল্লভ, গোপীজনবল্লভ, গোপীনাথ, গোপীমোহন, গোপ্রে, গোবর্ধনধারী, গোবিন্দ, গোষ্ঠপতি, গোষ্ঠবিহারী, ঘনশ্যাম, জনার্দন, ত্রিভঙ্গ, ত্রিভঙ্গমুরারি, দর্পহারী, দামোদর, দেবকীনন্দন, দ্বারিকাপতি, নগধর, নটবর, ননীচোরা, নন্দদুলাল, নরনারায়ণ, নারায়ণ, নরোত্তম, নীলমণি, নীলমাধব, পদ্মঁখি, পাণ্ডবসখ, পাণ্ডবসখা, পার্থসারথী, পুণ্ডরীকাক্ষ, পীতবাস, পীতাম্বর, প্যারীমোহন, বংশীধর, বংশীধারী, বংশীবদন, বংশীবাদন, বনবিহারী, বনমালী, বনোয়ারি, বনোয়ারী, বহুবল্লভ, বালগোপাল, বাসুদেব, বিপিনবিহারী, বিশ্বম্ভর, বৃন্দাবনেশ্বর, বৃষ্ণি, ব্রজকিশোর, ব্রজদুলাল, ব্রজনারায়ণ, ব্রজবল্লভ, ব্রজমোহন, ব্রজরাজ, ব্রজসুন্দর, ব্রজেশ, ব্রজ্রে, বলানুজ, মথুরাপতি, মথুরেশ, মদনগোপাল, মদনমোহন, মধুসূদন, মাধব, মুকুন্দ, মুরলীধর, মুরলীমোহন, মুরারি, যজ্ঞেশ, যদুকুলনাথ, যশোদাদুলাল, যশোদানন্দন, যদুকুলপতি, যাদব, রসরাজ, রাখালরাজ, রাধাকান্ত, রাধানাথ, রাধাবল্লভ, রাধামাধব, রাধারঞ্জন, রাধারমণ, রাধিকামোহন, রাধিকারঞ্জন, রাধিকারমণ, রাসবিহারী, রাসেশ্বর, শকটারি, শৌরি, শ্যাম, শ্যামচন্দ্র, শ্যামচাঁদ, শ্যামরায়, শ্যামসুন্দর, শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীগোবিন্দ,হরি, হৃষীকেশ।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে বর্ণিত আছে। একদা যুধিষ্ঠির মহারাজ-ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করলেন। হে কৃষ্ণ! এই ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষীয়া একাদশীর নাম কি? এই ব্রত পালনের ফল কি? শ্রীকৃষ্ণ বললেন, এই ব্রত পূণ্য ফল প্রদায়িনী, স্বর্গ ও মোক্ষদায়িনী- এর মাহাত্ম্য শ্রবণে সকল পাপ বিনষ্ট হয়। এই একাদশীকে পার্শ্বেকাদশী বলা হয়। আবার এই একাদশীকে জয়ন্তী একাদশী বলা হয়। যিনি এই তিথিতে ভক্তিভরে শ্রীবামন ভগবানের পূজা করেন তিনি ত্রিলোকে পূজা পান। যিনি, কমলনয়ন কমলনয়ন শ্রীবিষ্ণুর পূজা, কমল দ্বারা করেন, তিনি নিসন্দেহে ভগবানের সমীপে গমন করেন। যে পূণ্য এই ব্রতে লাভ হয়, তাহা বাজপেয় যজ্ঞেও লাভ হয় না। এই একাদশীতে শায়িত ভগবান-অনন্ত শয্যায় পার্শ্ব পরিবর্তন করেন। বাম অঙ্গ থেকে দক্ষিণ অঙ্গে শয়ন করেন তাই এই একাদশীকে পরিবর্তিনী একদশীও বলা হয়। যুধিষ্ঠির মহারাজ বললেন, হে জনার্দন। এই সকল কথা শুনে আমার বড় সন্দেহ হয়, আপনি কিরূপে শয়ন করেন আবার কিরূপেই বা পার্শ্ব পরিবর্তন করেন। চাতুর্মাস্য ব্রত কারীর কি বিধান, আপনার শয়নকালে লোকে তখন কি করে? আপনি বলিমহারাজকে কিজন্য নাগপাশে বেধেছিলেন? হে প্রভো! এই সকল বিষয় কৃপা পূর্বক আমাকে বলুন।

“জম্ম-মৃত্যু-সৃষ্টি-প্রলয় তোমার মর্জিতে সব কিছু হয়
তুমি প্রভু, তুমি মহান, বৃ-পুষ্প তোমার অবদান”
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×