somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাত্রা

২৭ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাসান সাহেবের বাড়িতে আজ বড্ড শোরগোল। অনেক মানুষের আনাগোনা। একটু পরপরই শোনা যাচ্ছে দোয়া দরুদের গুঞ্জরণ। কারো মুখেই তেমন হাসি নেই। তেমনি নেই কথার বিরাম। শোনা যাচ্ছে বিচিত্র সব কথাবার্তা। ব্যবসার লাভ-লোকসান, বিয়ের পাত্র-পাত্রী নির্বাচন থেকে শুরু করে জমি-জিরাত নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা- কোন প্রসঙ্গই বাদ নেই।

হাসান সাহেবকে খাটিয়াতে শুইয়ে রাখা হয়েছে। মৃত্যুর আলিঙ্গনে তিনি আজ অন্তিম শয়ানে শায়িত। চোখে-মুখে তার ক্লান্তির ছাপ। যেনো এক পরাজিত খেলোয়ার শোক-তাপ হানা ক্লান্তির কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে পরাজয়ের বেদনা ভোলার চেষ্টা করছেন।

হাসান সাহেব আজ মৃত। আর একটু পরেই তাকে নিয়ে গিয়ে কবরে শুইয়ে দেয়া হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাটির ঘরে কোন শব্দের কশাঘাত তাকে আর বিচলিত করতে পারবে না। শব্দহীন ঘর, নিশ্ছিদ্র নীরবতা, থাকবে না কোন আলোর আধিপাত্য। ঝারবাতি দুলবে না মাথার ওপর। শুধু এক অন্ধকার ঘরে ঘটবে তার দেহ-বিভাজন। নির্জীব দেহ খানি ক্ষয় হতে থাকবে মাটির স্পর্শে। অতঃপর মাটির শরীর মাটিতেই বিলীন।

হাসান সাহেবের কাছে সময়ের কাঁটা আজ স্থির হয়ে আছে। দিন নেই, রাত নেই, সময়ের নিরন্তর তাড়া নেই। শুধু এক মহাকালের পানে চেয়ে থাকা। এক অজানা অথচ অনিবার্য সময়ের কাছে আত্মসমর্পিত হওয়া। তবুও পৃথিবী আগের মতোই চলছে, সব আগের মতোই স্বাভাবিক। কতো ‘হাসান’ এলো আর গেলো, তাতে পৃথিবীর গতিতে পড়েনি এতোটুকু ছেদ!

হাসান সাহেব অনুভব করতে পারছেন, সবাই যেনো তাড়াহুড়ো করছে তাকে মাটিচাপা দেয়ার জন্য। তার প্রাণহীন এ দেহ পৃথিবীর জন্য আজ বড্ড মূল্যহীন।

বাড়ির ভেতরে শোরগোল হচ্ছে। কেউ একজন এসে পাওনা টাকা দাবী করছে। এ নিয়েই হাসান সাহেবের বড় ছেলের সাথে লোকটির বসচা চলছে। তার ইচ্ছে হচ্ছে, খাটিয়া থেকে উঠে গিয়ে তাদের থামাতে। বড় ছেলেকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, “যা চায় দিয়ে দে; বাবা, তুচ্ছ এ অর্থ নিয়ে কেনো শুধু শুধু ঝামেলা করছিস?”

কিন্ত্তু তিনি আজ বন্দী। হিমশীতল মৃত্যুর শিকলে মহাকালের কারাগারে বন্দী। তার ভাবনা স্তব্ধতার পাষাণপুরীতে চাপা আর্তনাদে মিলিয়ে যায়। আজ তিনি এতোটাই অক্ষম!

অথচ কিছুক্ষণ আগে কি না ছিলো তার! সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজনে ভরপুর এ জগৎ সংসার। অর্থ, বিত্ত, প্রতিপত্তি সবই ছিলো তার হাতের মুঠোয়। ছিলেন নামকরা ব্যবসায়ী। শহরে তিন-তিনটি বহুতল ভবন, দু’টি সুপার মার্কেট, বেশ কয়েকটি শিল্প-কারখানা, বাড়ির সামনে সুইমিং পুল, পেছনে টেনিস কোর্ট, অতিথি অভ্যর্থনার জন্য বিদেশি কুকুর, সার্বক্ষণিক সিকিউরিটি গার্ড, কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স- সবই ছিলো। আজও অবশ্য সবকিছুই আছে। কিন্ত্তু কিছুই আজ তার নয়। এ সবের ওপর তার দাবী আজ উপেক্ষিত। তিনি আজ নির্বাসিত- কঠিন বাস্তব থেকে অমোঘ পরাবাস্তবতার তীরে।

এখন তার মৃতদেহ বাড়ির সামনে লনে রাখা হয়েছে। বাড়ির ভেতরে বেড়ে গেছে কান্নার রোল। পুরুষ আত্মীয়-স্বজন সবাই জড়ো হয়েছে তার মৃতদেহের সামনে। তার ছেলেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে। ছোট ছেলেটি খাটিয়ার পাশে আছড়ে পড়ে বিলাপ করতে থাকে। মুরব্বী গোছের কয়েকজন এসে তাকে সামলানোর চেষ্টা করছেন।

এসব চেঁচামেচিতে হাসান সাহেব প্রচন্ড বিরক্ত। কিন্ত্তু তার চেহারায় এর বিন্দুমাত্র প্রতিফলন ঘটছেনা। তিনি আগের মতোই পরিশ্রান্ত, স্থির, অবিচল। কপালে ফুটে উঠছেনা বিরক্তিরেখা। তার দেহ আজ প্রাণহীন। উল্টো করে বলতে গেলে, তিনি আজ দেহহীন প্র্রাণ!

তাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য মাথার দিকে কাফনের কাপড় খুলে দেয়া হয়েছে। ভরদুপুরে সূর্যের তীব্র আলো এসে পড়েছে তার মুখে। তার আত্মা বিচলিত, অথচ মুখে কোন ভাবান্তর নেই।

এসময় সবাই মিলে তাকে কাঁধে তুলে ঈদগাহের দিকে রওয়ানা হলো্। তার পিছু পিছু অগ্রসরমান সাদা কাপড়ের মিছিল! বাতাসে নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসা আতর ও গোলাপজলের গন্ধ।

এ মূহুর্তে হাসান সাহেব সমস্ত আকাঙ্খা, প্রত্যাশা, লোভ, হিংসা, বিরক্তির উর্ধ্বে। তাই তিনি নিজের ঘর-বাড়ি, অঢেল সম্পত্তি, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন কোনো কিছুর জন্যই কোনো ধরণের টান অনুভব করছেন না। সমস্ত পিছুটান থেকে তিনি মুক্ত। তবুও একটা অনুশোচনা তাকে ক্রমাগত পিছু ধাওয়া করছে- কেনো যে তিনি এতোটা কাল অর্থ-বিত্ত, সম্মান-প্রতিপত্তির পেছনে ছুটেছেন; যার চুল পরিমানও আজ সাথে নিয়ে যেতে পারছেন না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×