somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুকুরে কামড়ালে নাভির গোড়ায় আর ১৪ ইনজেকশন দিতে হবে না

২৬ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোববার দুপুরে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিল ছয় বছরের ছোট্ট শিশু মারুফ। দুই গালে দগদগে ক্ষতচিহ্ন, মুখটা ফুলে গেছে। ডাক্তার কাছে ডাকতেই ছেলেটি কান্না জুড়ে দিল। ভয়ে বাবার পেছনে গিয়ে মুখ লাকায় সে। নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজারের কৃষ্ণপুর গ্রামের দরিদ্র মুদি দোকানী আশরাফ আলীর ছেলে মারুফ। বাড়ির সামনের রাস্তায় সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলা করছিল সে। এ সময় একটি পাগলা কুকুরের গায়ে বল লাগলে ক্ষিপ্ত কুকুরটি মারুফের ওপর হামলে পড়ে। বুকের ওপর চড়ে গালে ও নাকে কামড়ে আহত করে তাকে। গ্রামের সবাই মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দেয় এবং জানায়, নাভির চারপাশে ১৪টি এন্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) দিতে হবে। বাসে নিয়ে আসার সময় ছোট্ট এ ছেলের কষ্টের কথা ভেবে নীরবে চোখের পানি ফেলেন বাবা। কিন্তু সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আসার পর তার চোখে আনন্দাশ্র“ ঝরে। চিকিৎসক তাকে জানান, মারুফের নাভির গোড়ায় এআরভি দিতে হবে না। দুই বাহুতে আধুনিক ও উন্নত মানের চার সপ্তাহে চারবার ভ্যাকসিন দেয়া হবে এবং তা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে।
শুনতে অবিশ্বাস্য শুনালেও জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদফতর সম্প্রতি টিস্যু কালচার ভ্যাকসিন বিনামূল্যে রোগীদের সরবরাহ শুরু করেছে। হেলথ নিউট্রেশন অ্যান্ড পপুলেশন সেক্টরাল প্রোগ্রাম (এইচএনপিএসপি) প্রকল্পের আওতায় জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যের এ ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে। মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার সার্ভিস চালু হয়েছে। আপাতত সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে বিনামূল্যে এ সার্ভিস চালু হলেও স্বল্পতম সময়ে দেশের সাত বিভাগ ও পরবর্তীকালে জেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু হবে। ভবিষ্যতে দেশ থেকে নার্ভ টিস্যু কালচার ভ্যাকসিন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হবে। এ দেশে টিস্যু কালচার ভ্যাকসিন আধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপিত হবে।
জানা গেছে, ১১ জুলাই সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের মাধ্যমে বিনামূল্যের এ ভ্যাকসিন সার্ভিস চালু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) প্রফেসর ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, প্রতি বছর হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশুকে কুকুরে কামড়াচ্ছে। তাদের অনেকে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেও জাতীয়ভাবে এ নীরব ঘাতক ব্যাধিকে নিয়ন্ত্রণে কোন কর্মসূচি ছিল না। গত মে মাসে জাতীয়ভাবে এ কর্মসূচি পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। স্বাস্থ্য, পশুসম্পদ ও এলজিইআরডিÑ এ তিন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, পরিচালকসহ ৩০ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠিত হয়। এ তিন মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে কুকুরে কামড়ানো রোগীকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান, বেওয়ারিশ কুকুরের বংশবৃদ্ধিরোধে লাইগেশন, ভ্যাসেকটমি, লাইসেন্স প্রদান, কুকুরকে ভ্যাকসিন প্রদানসহ রোগটি সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে নানা কর্মসূচি গ্রহন করা হবে।
সরেজমিন সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১১ জুলাই থেকে চালু হওয়া বিনামূল্যে টিস্যু কালচার ভ্যাকসিনের (রাবিপুর) জন্য এ পর্যন্ত ৮৮৭ জন রোগী রেজিস্ট্রেশন করেছে। জানা গেছে, রাবিপুরের এক অ্যাম্পুলের ভ্যাকসিনে প্রতিদিন ৪ জন রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে। একেকজন রোগীকে ১ম, ৩য়, ৭ম ও ২৮তম দিনে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, সরকারিভাবে এ ভ্যাকসিন বিনামূল্যে সরবরাহের আগে জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের এআরভি শাখার নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিনই ছিল প্রধান ভরসা। ভেড়ার মগজ দিয়ে তৈরি হতো ওই ভ্যাকসিন। কুকুরে কামড়ানো রোগীর নাভির গোড়ার চারপাশে ১৪টি ভ্যাকসিন দিতে হতো। ১৪টি ইনজেকশনের দাম ৩৫ টাকা। এআরভি শাখায় গরিব রোগীরা সস্তাদামের ওই ভ্যাকসিন পেতে সকাল থেকে রাত অবধি লাইন ধরে থাকত। ভুক্তভোগী রোগীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, নাভির গোড়ায় ১৪টি ভ্যাকসিন দিতে যে কি কষ্ট তা একমাত্র ভুক্তভোগীই জানে। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে যারা বাজারে চালু ভারতীয় রাবিপুর বা ভেরোর‌্যাব দিতেন তারা একেকটি ভ্যাকসিন কিনতেন ৫ থেকে ৭শ’ টাকায়। ৫টির কোর্স ভ্যাকসিন কিনতে হতো ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার ৫শ’ টাকায়। বর্তমানে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে এক-চতুর্থাংশ টাকা খরচ হচ্ছে। কারণ একটি ভায়ালের মাত্র ১০ ভাগের ২ ভাগ একেকজন রোগীর লাগে। তাই এক ভ্যাকসিনে এখানে চারজনকে দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ২শ’ রোগীর ভ্যাকসিন মজুদ রয়েছে। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জগদীশ চন্দ বসু জানান, তাদের হাসপাতালে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৩ হাজার কুকুর, বেজি, বিড়ালে কামড়ানো রোগী আসে। তাই এ রোগটি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিই জাতীয় কর্মসূচির প্রধান কাজ হবে। জানা গেছে, জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় প্রথম দফায় সংক্রামক ব্যাধির বিশেষায়িত চিকিৎসা সম্পর্কে ২০ জন ডাক্তার ও ৬৪ জন নার্সকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। শনিবার এক বৈঠকে বিভাগীয় পর্যায়ে ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টায় সরেজমিন সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, জাতীয় এ কর্মসূচির কল্যাণে আগের তুলনায় জরুরি বিভাগসহ নিচতলার বিভিন্ন কক্ষের চিত্র পাল্টে গেছে। জরুরি বিভাগে রোগী দেখে নতুন রোগী লিখে একটি কক্ষে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে রোগীকে স্বাস্থ্য অধিদফতর সরবরাহকৃত একটি গোলাপী রংয়ের কার্ড পূরণ করা হচ্ছে। নাম, ঠিকানা, ঘটনাস্থল লিখে কার্ড পূরণ করার পর এ কক্ষে নতুন রোগীকে ও পুরনো রোগীকে ভিন্ন কক্ষে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স জানান, রোগীদের শূন্য, তৃতীয়, সপ্তম ও আটাশতম দিনে মোট চারবার ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে।
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

টুইস্টেড মাইন্ড অফ আ সিরিয়াল কিলারঃ কবি কালিদাস স্পেশাল

লিখেছেন এইচ তালুকদার, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আমার আগ্রহ শুরু হয় এই ব্লগেরই একজন অসাধারন ব্লগার ''ডক্টর এক্স'' এর লেখা পড়তে যেয়ে। বাংলা ভাষায় সাইকোলজির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেলফ হেল্প ধরনের অসাধারন কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনে কী শান্তি সম্ভব!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:২১

এক.
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আলজাজিরা দেখি৷ গাজার যুদ্ধ দেখি৷ রক্ত দেখি৷ লাল লাল৷ ছোপ ছোপ৷ সদ্য জন্মানো শিশুর৷ নারীর৷ কিশোর কিশোরীর৷ বৃদ্ধের৷ সারি সারি লাশ৷ সাদা কাফনে মোড়ানো৷ ভবনে চাপা পড়া৷... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রাকৃতিক দূর্যোগে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫

আমার জীবনে আমি সরাসরি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ভেতরে পড়েছি বলে আমার মনে পড়ে না । ২০১৯ সালের ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়ের নাম সেবার ছিল সম্ভবত বুলবুল ! সেটা যখন আসছিল তখন আমি ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্কাই ডাইভিংয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টায় সফল বাংলাদেশের আশিক চৌধুরী

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৬




দেশে এখন চলছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর তান্ডব। তার মধ্যেই সুখবর এলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে-

বিশ্ব রেকর্ড গড়তে ৪১ হাজার ফুট উঁচুতে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে শূন্যে লাফ দিলেন বাংলাদেশের আশিক চৌধুরী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×