somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~~~প্রেম কখনও মধুর কখনও ~~~

২৬ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জয়পুরহাট এর সোমনাথ বৌদ্ধবিহার এর রেস্ট হাউজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। কারন আমার ছোট ছেলে মেয়ে দুটি প্রচন্ড রোদ ও গরম উপেক্ষা করে কাঠবেড়ালির পিছনেই ছুটতে ব্যাস্ত। ওদের কিছুতেই এই ভরদুপুরে ঘরে রাখতে পারলাম না। অগ্যতা কি আর করি আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের পাহারা দিচ্ছি। যদিও একদমই ভিড় নেই তবুও ওরা যেন চোখের আড়ালে চলে না যায়।

মাঝে মাঝে দুই একটা গ্রুপ আসছে ঘুরতে। তারা চলে যাচ্ছে মন্দিরের দিকে । যাবার পথে উৎসুক বা নির্লিপ্ত চোখে আমাদের দেখছে।

আট/দশ জনের একটি গ্রুপ আমাদের রেস্টরুমের পাশ দিয়ে চলে গেল। একটু পরেই ঐ গ্রুপ থেকে একজন ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন আমার সামনে। আমাকে অত্যান্ত বিনিত ভাবে জিজ্ঞাসা করলেন -আমি রুনা কিনা?! বিস্ময়ের দোলায় দুলে বললাম -----জি, কিন্তু আপনি???
ভদ্রলোক ফেললেন হেসে। ----------আপনারা কি ঢাকার মীরপুরে থাকতেন। অমুক স্কুলে পড়তেন। এবারে আমার হাসবার পালা । আমিও হেসে বললাম--- জী। কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না।
--না চেনবারই কথা । আমি তো দেশের বাইরেই আছি আজ ছাব্বিশ বছর। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর পরই আমি ইংল্যান্ড এ চলে যাই।
আমি বললাম ----ও আচ্ছা আপনি কি ঐ এলাকায় থাকতেন?
----------------হ্যাঁ থাকতাম।
----আমাকে আপনি চেনেন কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনতে পারছিনা। আপনি কে বলুনতো ?
-----------আপনাদের বাড়ি ছিল সি ব্লকে আমাদের বাড়ি ছিল ট ব্লকে। আমরা একই স্কুল থেকে পাশ করেছি। আমি যখন ইংল্যান্ডে যাই তখন তুমি স্কুল ফাইনাল দিয়েছ।

একেবারে এক কথায় তুমিতে নেমে এলেন ভদ্রলোক। খারাপ লাগলেও কিছু বললাম না। একই স্কুলের সিনিয়র ভাই, তুমি বলতেই পারে।
------আমার নাম জামান। স্কুলের এক পিকনিকে তোমার লাল রঙের স্যান্ডেল ছিঁড়ে গিয়েছিল। আমরা তখন ফাইনাল পরিক্ষার্থী । তুমি তখন ক্লাশ এইটে পড়তে। আমি তোমাকে বলেছিলাম স্যান্ডেল বাসে রেখে খালি পায়ে ঘুরতে। তুমি ফিরেও দেখনি কে বলল। স্যান্ডেল সহ চঞ্চল কে সাথে নিয়ে বাসে রাখতে চলে গেল।
(:-*খাইছে আমারে কবেকার কথা আমার ঠিকমত মনেই নাই।)

আমি হাসতে হাসতে বললাম --আসলে আমি স্কুল জীবনে বাবা মা ছাড়া ঐ একটা পিকনিকেই গিয়েছিলাম। ভেতরে এসে বসুন। আমার বাচ্চাদুটি বাইরে তো তাই ওদের পাহারা দিচ্ছি। ভিতরে বসুন আমার হাসবেন্ড আছেন গল্প করুন। চা দিতে বলি।
-----না না এখানে বেশ আছি। পুরানো কথা মনে করতে ভাল লাগছে।
আমি কেয়ারটেকারকে চা দিতে বললাম। এর পরের আলাপ কেমন আছেন? কেমন চলছে সংসার? বাচ্চা কার কয়টা কে কি করে? আমরা কে কি করি এই সব।
আমার জানুও এতে এসে যোগ দিল। জামান সাহেব ও তার মিসেস কে ডেকে আনলেন। বাচ্চাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

জামান একচোট নিল আমার জানুর উপর। এই ভর দুপুরে আপনি আরামে ঘুম দিচ্ছেন আর বাচ্চাদের পাহারা দিচ্ছে বেচারা মা। শিফটিং ডিউটি করা উচিত। আমার জানুও কম যায় না। চট করে বলে দিল এরপরের ডিউটি তো আমার। ছবি তোলা ও মন্দির ঘুরে ঘুরে দেখা।

চোখে মুখে মিটিমিটি দুষ্টামীর হাসি নিয়ে একসময় জানুকে জামানসাহেব বললেন --আপনি কি জানেন আপনার স্ত্রী আমার প্রথম প্রেমিকা।
জানু চোখ গোল গোল করে বললো ---কই জানি না তো। ও যে দীর্ঘ তালিকা আমাকে দিয়েছে তাতে তো আপনার নাম নেই।
জামান সাহেব হা হা করে হাসতে হাসতে বললেন --আমি সেই প্রেমিক যার কথা প্রেমিকা জানে না।
জামানের স্ত্রী বললেন --চরম ব্যার্থ প্রেমিক। কিন্তু জেনুইন প্রেমিক। আপনার ছবি তার কাছে ছিল এখন আমার কাছে আছে ।
জামান সাহেব বললেন--রুনার সাথে চঞ্চলের ভাল বন্ধুত্ত ছিল। তাই সাহসে ভর করে চঞ্চলকে একটা চিঠি দিলাম খাতার ভিতরে করে রুনাকে দেবার জন্য। ঐ বেঈমান কে দশটা টাকাও দিয়েছি পেপসি খাবার জন্য। আর ও কিনা সেই খাতা নিয়ে দিল আমার বাবার হাতে। সেই রাতে বাবার হাতে এমন পিটুনি খেলাম যা আর বলার মত নয়। বাবা বললেন --যে দিন রুনাকে পাবার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারবি সেইদিন আমি নিজে রুনার বাবার কাছে তোর জন্য প্রস্তাব নিয়ে যাব।

আর সবচেয়ে দুঃখের কথা কি জানেন ভাই যখন পূর্ন যগ্যতা নিয়ে এলাম। বাবাকে বললাম বাবা এবার আমি রুনাকে বিয়ে করবো সেদিন বাবা আকাশ থেকে পরলেন ---রুনাটা কে ? আমার ছোট বোন বলল -ভাইয়া রুনা আপুর না মাস দুয়েক হল বিয়ে হয়ে গেছে!!!!!

আমি তখন হায় হায় করে উঠে বললাম --আপনি কি স্মৃতির ভাই। স্মৃতি এসে একদিন খুব মজা করে এই গল্প বলে গেছে। আমার জানুও বললো --এই গল্পতো আমি জানি কিন্তু নায়ক যে আপনি তাই তো যানি না। আমি বললাম --কিন্তু তিনি তো ছিলেন স্মৃতির টিটু ভাই--আপনি ই ই টিটু ভাই আল্লা!!!! :Pআপনার অনেক পরিবর্তন হয়েছে আমি চিনতেই পারিনি।
--জী এই অধমই টিটু ভাই।:((


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:৩৯
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×