somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"খোলা চিঠি বন্ধুর কাছে"

২৬ শে জুলাই, ২০১০ দুপুর ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দোস্ত!
এনামুল কেমন আছিস? আশা করি ভালো আছিস। আল্লাহ এর রহমতে আমি ভালো আছি এই সাত সাগর পাড়ি দেওয়ার দেশে! তোকে একটা চিটি লিখলাম জানি না তুই পাবি কি না। কিন্তু অনেকেই পাবে। তাদের মাধ্যমে যদি তুই পাস তাহলে তো ভালোই। দোস্ত ক্ষমা করে দিস, জানি না ক্ষমা করবি কি না। কিন্তু আমি আমার অপরাধের শাস্তি ভোগ করছি প্রতিক্ষনে ক্ষনে। এখন বুঝতে পারছি তোর কষ্ট টা, যদিও খুব বেশি দেরী করে হলেও বুঝেছি। তুই আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। খুব ভালোই কেটে যাচ্ছিল আমাদের সময়। স্কুল, কলেজ, ইউভার্সিটির প্রথম বর্ষ। কিন্তু এই বন্ধুত্ত্বে মাঝে এক সময় কেউ একজন এসে বাধা সৃষ্টি করে দূরত্ত্ব সৃষ্টি করে। আমাদের দু জনের মাঝে ভুল বুঝা বুঝি হয় আর সেই থেকে তোর জীবনের কোন এক সম্পদ কে আমি কেড়ে নেই! যদি বলি কেড়ে নেই তাহলে ভুল হবে, সে আমার কাছে চলে আসে। তুই নিশ্চই ধরতে পেরেছিস এই 'সে' টা কে? আমি কার কথা বলছি? 'সে' টা আর কেউ নয় আয়েশা! আজ কেন জানি আমাদের ফেলে আসা প্রতিটি মুহূর্ত আর ক্ষন কে মিলাচ্ছি। তোকে কিছু কথা বলি, কিছু সময় নষ্ট করবো তোর। কিন্তু দোস্ত দয়া করে একটু কষ্ট করে পড়িস। তা না হলে অপরাধী হয়ে থাকবো সারাজীবন।
এনামুল তুই তোর জীবনের প্রথম কি ভুল করেছিস যেটা, তাহল ইউনিভার্সিটি জীবনে আয়েশাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া আর আমার ভুল হয়েছিল আসলে ভুল বললেই ভুল হবে।আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল আয়েশার সাথে মাঝে মাঝে কথা বলা। সেই মাঝে মাঝে থেকে অনেক কিছু সৃষ্টি হওয়া। এখন খুব টের পাচ্ছি তোর আর আমার মাঝে সব গেঞ্জাম পাকিয়ে ছিল আয়েশা। আমার আর তোর বন্ধুত্ত্ব কে নষ্ট করেছিল সে। তার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে সে আমার সাথে কথা বলতো, আমি না করতাম না। কথা বলতেও ভালো লাগত। একটা সময় সে তোর নামে আমাকে অনেক কিছু বলতো। তুই তাকে সময় দিস না আমার নামে এটা ওটা বলতি ইত্যাদি। আর আমি সেই কথা গুলো কে বিশ্বাস করতাম। তার কথা শুনতে শুনতে কেন জানি একদিন ফীল করলাম আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি, একদিন সেও আমাকে তার ভাল লাগার কথা জানায়। কিন্তু আমি খুব ভালো করে জানতাম তুই তাকে প্রচন্ড ভালোবাসতি। কিন্তু কি থেকে যে কি হয়ে গেলো বুঝতে পারি নাই। মনে হচ্ছিল ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আয়েশা নিজেই তোর সাথে ব্রেক আপ করে আমার কাছে চলে আসে। আর সেই দিন থেকে তোর সাথে চির জীবনের জন্য বন্ধুত্ত্ব শেষ হয়ে যায়। এখন অনেক কিছু ভাবতেই অবাক লাগে। সেই স্কুল জীবন থেকে বন্ধুত্ত্ব ছিল। এক বন্ধু আরেক বন্ধুর সাথে একদিন কথা না হলে দেখা না হলে পেটের ভাত হজম হতো না অথচ একটা মেয়ের কারনে আমাদের বন্ধুত্ত্ব নষ্ট হয়ে গেলো। এখন বুঝতে পারছি কেন সে আমাকে ভালোবেসে ছিল!

আয়েশার সাথে সম্পর্ক টা হওয়ার পর ভালোই চলছিল দিন। মাঝে মাঝে টুক টাক ঝগড়া হতো আর সে আমাকে একটা নিয়মের মধ্যে এনে দিয়েছিল। সব কাজ করতাম টাইম মতো। তার পিছনে খরচ করতে হতো, সে যখন যা চাইত তা দিতে চেস্টা করতাম। অনার্স থার্ড ইয়ারে তখন আমি। আমাকে সে খুব করে বলতে লাগল আমি যাতে বাহিরে গিয়ে পড়াশুনা করি। আমি যদি বাহিরে না যাই তাহলে সে আমাকে বিয়ে করবে না। আমাকে বাহিরে যাওয়ার জন্য বলতে লাগল। আমি ও তার কথা মতো কাউকে না বলে আমেরিকায় যাওয়ার জন্য কাগজ পত্র ঠিক করতে লাগলাম এবং বছরের মধ্যে আমার কাগজ পত্র রেডি হয়ে যায়। যে দিন প্লেনে উঠবো তার কয়েক দিন আগে সবাই কে জানাই আমি চলে যাচ্ছি। বুঝতেই পারছিস তাকে পেতে আমি কি না করেছি। বাবা-মা-বোন টা কে রেখে চলে আসলাম আমেরিকা। প্রথম কয়েক দিন ভালো যাচ্ছিল, আয়েশার সাথে টুক-টাক কথা হতো। কিন্তু কয়েক মাস পাড় না হতেই জীবনে এক ঝড় বয়ে গেলো!
আয়েশা আমার জীবন থেকে চিরজীবনের জন্য বিদায় নিল। সে আমাকে বিয়ে করবে বলে অন্য একজন কে বিয়ে করেছে, তাও ভেগে। হা হা হা হা....... কি সুন্দর দেখা গেলো!
হা হা হা........ মনে আছে তোর, এই টা আমাদের সবচেয়ে প্রিয় ডায়লগ ছিল? কি সুন্দর দেখা গেলো!
জানিস এনামুল আমার মনে হয় না বাংলা সিনেমাতেও এমন ঘটনা ঘটে। মেয়ে তার প্রথম প্রেমিক কে ছেড়ে দিয়ে প্রেমিকের বন্ধুর কাছে সম্পর্ক করতে আসে আর কয়েক বছর সম্পর্ক করার পর সেই প্রেমিক কে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে অন্য ছেলের সাথে ভেগে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে। হা হা হা........
খুব হাসি পাচ্ছে.....প্রচুর হাসি পাচ্ছে। অনেক দিন পর হাসতেছি জানিস। তোকে চিটি টা লিখতে লিখতে হাসি এসে মুখে উকি দিলো।আমি পাগল হয়ে গেছিরে বড্ড পাগল হয়ে গেছি। বাংলাদেশে চলে আসতে চাইছি, কিন্তু জুনিয়র বন্ধুরা নিষেধ করছে। তুই তো জানিস আমার কাজিন আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে অথচ সেই মেয়ের দিকে তাকানো দূরে থাক পাত্তাই দিতাম না। বরং অপমান করেছি, মেয়েটা কষ্ট পেতো মনে হয়। সেই মেয়ে আমাকে এখন ভালোবাসে, আমাকে জামাই হিসেবে জানে! কি আজব জিনিষ বুঝছিস? বন্ধুদের কাছ থেকে আমার সব কথা শুনেও সেই মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে। কিন্তু ঐ মেয়ের সামনে যাওয়ার মতো মুখ আমার নাইরে! ঐ মেয়ে কে কষ্ট দিছি। মনে হয় তোর ভালোবাসা আর জেসিকা এর ভালোবাসার কষ্ট গুলো এবার আমাকে এসে ধরেছে!
মরে গেলে শান্তি পেতাম। আমার আশে-পাশে কেউ নাই। এত কষ্টের মধ্যে সকালে ক্লাস, কাজ শেষ করে রাতে বাসায় আসতে হয়। কয় দিন যে ঘুমাই নি জানি না। মাঝে মাঝে খেতে ভুলে যাই, আম্মু যদি আমার চেহারা টা দেখে জানি মরে যাবে। আমি দেখতে এমন হইছে যে আয়নার সামনে যাই না, নিজের দিকে তাকাতেই ভয় লাগে কান্না পায়। আশে-পাশের সান্তনা দেওয়ার মত কেউ নাই। একা একা রুমে বসে কান্না করি, করতে না চাইলেও চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। আগে শুনতাম ছেলেরা না কি পাশান হয়, তাদের চোখ দিয়ে পানি পড়ে না কিন্তু আমার মনে হয় মেয়েরা বড় পাশান। তাদের সব কিছু অভিনয় অভিনয়। মাঝে মাঝে মনে হয় কবরে গিয়ে শুয়ে থাকলে শান্তি পেতাম।
রাতে কয়েক টা ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলি, যাদের কারনে আজও আমি এই দেশে আছি,আর মা-বাবা- বোনের কারনে বেচে আছি বলতে পারিস।
জীবনে অনেক বড় শিক্ষা হয়েগেছে। কষ্ট কি জিনিষ বুঝতে পারলাম। তোর আর জেসিকা এর ভালোবাসার কষ্ট গুলোতে পুড়তেছি! আমি বেচে থেকেও বেচে নেই! আসলে আমারই ভুল ছিল। যে মেয়ে তোর মত এত ভালো একজন মানুষ কে ছেড়ে আমার কাছে চলে আসে,তার কি গ্যারান্টি আছে যে সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না? আরো একটা জিনিষ বুঝলাম, জানি না বুঝা টা সঠিক কি না। কিন্তু আমার কাছে সঠিক! যে কাছে আসতে চায় তাকে কাছে আসতে দিতে হয়। যেমন জেসিকা, জেসিকা কে ভালোবাসলে এই কষ্ট টা পেতাম না। আর আরেক টা কথা হলো যে একবার কারো কাছ থেকে যে নিজে চলে যায়, সে পরর্বতীতে বার বার চলে যায় বার বার, ঠিক আয়েশার মতো!

সব দোষ আমারি ছিল। সব কিছুকে মাথা পেতে নিলাম। পারলে ক্ষমা করিস আমাকে! যদি বিরক্ত করি মাপ করিস। তোকে চিঠি টা লিখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। নিজের ভিতর টা কে হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে একটা পাথর সরে গেলো, এত দিন একটা পাথরের নিচে চাপা পড়ে ছিলাম। কোন দিন দেখা হবে কি না জানি না, আর তোকে আমার এই মুখ দেখানোর কোন ইচ্ছা নাই। জেসিকা,থাক তার কথা! দোয়া করি এনামুল, তুই যেখানে থাকিস যেই অবস্থাতে থাকিস সুখী হ।তোর ভবিষ্যত সুন্দর হোক সেই শুভ কামনা রইল।
আল্লাহ হাফেজ!
সর্বশেষ
তোর বন্ধু 'পলাশ'


১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×