somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুবাইফেরত আজিজভাইয়ের বিয়েতে

১৮ ই মে, ২০১৩ সকাল ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারে দুবাই ফেরত আজিজ ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে আর আমি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে পালিয়ে থাকার জন্য আমি মোবাইল ফোন সাইলেন্ট মোডে নিয়ে অফিস থেকে মতিঝিলে মনির ভাইয়ের অফিসে গিয়ে বসে থাকলাম।

আজিজ ভাই হল আমার বন্ধু মাহাবুবের ইমিডিয়েট বড় ভাই, মাঝে মাঝেই মাহাবুবের বাসায় গিয়ে রাত থাকার সুবাদে তার সাথে খাতির হয়ে গিয়েছিল। উনার সাথে পরিচয়ের বছর দেড়েক পরে তিনি দুবাই চলে যান, সেখানে বছর দুয়েক চাকরী করে কিছুদিন আগে দেশে ফিরে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুবাই ফিরে যাবেন না। বিলেত থেকে ফিরলে যদি বিলেতফেরত হতে পারেন, দুবাই থেকে ফিরলে তবে কেন দুবাইফেরত হবেন না - আমাদের এই কারণ দর্শানো নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দেয়ার আগেই আজিজ ভাইয়ের নাম হয়ে গেল 'দুবাইফেরত আজিজভাই', আজ উনার বিয়ে।

দুবাইফেরত আজিজভাই যে আমার গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করছেন তা না, বিয়ের অনুষ্ঠান আমার কাছে কেমন গ্যাঞ্জাম গ্যাঞ্জাম লাগে।বহুদিন দেখা সাক্ষাত হয় না এমন মানুষজনের সাথে দেখা হয়ে যায় - আমার কেমন অস্বস্তি লাগে। প্রায় সব বিয়ের অনুষ্ঠানের দিনই আমার হয় শরীর খারাপ করে, নাহয় পরেরদিন পরীক্ষা বা অ্যাসাইনমেন্ট সাবমিশন টাইপের জরুরী কাজ পড়ে যেত স্টুডেন্ট লাইফে, এখন অফিসে কাজের চাপ বেড়ে যায়, নয়তো বসের সাথে মিটিং করা লাগে। আজকে বসের সাথে মিটিং।

মনির ভাই আমাকে তাদের ক্যান্টিনে চা খাওয়াতে নিয়ে গেল। ক্যান্টিনটা তাদের পাচঁতলা বিল্ডিং এর টপ ফ্লোরে। সম্ভবত ক্যান্টিনের ইজারাদারের আজকেই প্রথমদিন, ব্যারাছ্যাড়া অবস্থা। বারো তেরো বছরের কিশোর ছেলেটা চা দিয়ে গেল। চা বলতে গরম পানিতে একটা টিব্যাগ ডুবানো, নিজে নেড়ে চেড়ে লিকার ঠিক করে নিতে হবে। টিব্যাগের মাথা ধরে বেশী নাড়াচাড়া করছিলাম সম্ভবত, হঠাৎ ব্যাগটা খুলে চায়ের কাপে পড়ে গেল। কি মুশকিল। ছেলেটাকে ডেকে বললাম, 'ব্যাগটা ভেতরে পরে গেছে, একটা চামচ দাও' - সে হাতে করে চামচের বদলে আরেকটা টি-ব্যাগ নিয়ে এল। নতুন টিব্যাগটা রেখে তাকে বুঝিয়ে বলতে হল - তারপর সে চামচ নিয়ে এল। আমি চায়ে ডুবিয়ে পরোটা খেতে শুরু করলাম।

মনিরভাই এতক্ষন চায়ে চুমুক দেয় নি, আমি চায়ে পরোটা ডুবাতে তিনিও মুখে দিলেন। 'অ্যাক! একফোটা চিনিও দেয় নাই' - ছেলেটাকে আবার ডাকা হল - 'চায়ে চিনি কই?'

ছেলেটা সরল হেসে চায়ের কাপ নিয়ে গেল। চিনি দিয়ে ফেরত দিয়ে দাড়িয়ে থাকল। মনির ভাই চুমুক দিয়েই কাপ নামিয়ে রাখল - 'এইবার শরবত বানায়া ফেলছস' - ছেলেটা এইবারও দাঁত দেখিয়ে হাসল। 'আজকে পরথম বানাইলাম' - প্রথমদিনের তুলনায় তার স্ট্যাটাস ভালো, চায়ে টি-ব্যাগ দিতে ভুলে নাই!

চা খেতে খেতে মনিরভাই আমার মোবাইল নিয়ে দেখছিল। হঠাৎ 'ইরে, রিসিভ করে ফেলছি' বলে ফোনটা বাড়িয়ে দিল। আমি হাতে নিয়ে দেখি দুবাইফেরত আজিজভাইয়ের কল, উনি হ্যালো হ্যালো করছেন।

আমি মোবাইল কানে নিয়ে ফিসফিস করে বললাম, 'আজিজভাই, আমি মিটিং এ, বসের সাথে! আপনারে পরে ফোন দিতেছি।'

'দাঁড়া খারাশিকো' - মোবাইলে আজিজভাইয়ের চিৎকার শুনলাম। 'তোর বস ডঃ আইয়ূব না? সে আমার শ্বশুরের সাথে কথা বলতেছে, তোরে দেখি না ক্যান? তোর বসরে জিগামু?'

আমি কেশে গলা পরিস্কার করে নিলাম - 'আরে কি যে বলেন, আমি আইসা পড়লাম প্রায়, একটু মজা নিতেছিলাম আরকি!'

সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারে পৌছাতে মিনিট বিশেক লাগল, by বাইসাইকেল। পাগড়ি পড়া দুবাইফেরত আজিজ ভাইয়ের সাথে কোলাকুলি করার সময় তিনি আমার ডান কান টেনে ধরে বাম কানে বললেন - 'তোর গায়ে চাপাতির গন্ধ ক্যান? মনে হচ্ছে কফিন থেকে উঠে আসছস।' সর্বনাশ! মনিরভাইয়ের ক্যান্টিনে ছেলেটা যে টি-ব্যাগটা দিয়েছিল সেটা কখন যেন শার্টের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছিলাম - এখন ভুর ভুর করে গন্ধ বের হচ্ছে!

'চাপাতি না, সেন্ট। দার্জিলিং থেকে আনছে, আজকে প্রথম ইউজ করলাম। আপনার পাগড়িটা দেন তো, একটা ছবি তুলি' - দুবাইফেরত আজিজভাইয়ের পাগড়িটা মাথায় দিয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম, সিঙ্গল একটা, আর মাহাবুব সহ অন্যান্য বন্ধুবান্ধব সহ কয়েকটা।

রাত দেড়টার দিকে দুবাইফেরত আজিজভাই'র ফোনে আমার ঘুম ভাংল - "হারামজাদা তুই আমার পাগড়ির মধ্যে টি ব্যাগ রাখছস ক্যান!" আমি তাড়াতাড়ি মোবাইলটা বালিশের নিচে ঢুকিয়ে ফেললাম!
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×