(এক)
অনির্বানের দু'চোখ ভরা বিস্ময় । ভোরে সূর্যের আলোটা মুখে পরতেই তাকায়ে দেখল তার মা জানালা খোলে দিয়ে চলে গেল ।জানালার ফাঁক দিয়ে মিষ্টি সূর্যের আলো দেখে সে নিশ্চিত হল সকাল হয়েছে । সে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করল বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য । কিছুক্ষণ আগে এক পশলা বৃষ্টি এসে ফুলগুলোকে ভিজিয়ে দিয়ে গেছে ।কদম ফুলের মতো স্রষ্টার সকল সৃষ্টিই সুন্দর । প্রতিটি সৃষ্টি অনেক নিখুঁত । নেই অসঙ্গতি । গাছের পাতার উপর জমে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা গুলো চিক চিক করছে । বাইরের আঙ্গিনাটা বৃষ্টির বিন্দুগুলো যেন ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেছে ।একটি পাখি ডানা মেলে উড়ে গেল । দৃষ্টিসীমানা বাইরে হারিয়ে গেল । ওর ইচ্ছে করল ,পাখির মত উড়ে যাবার এমনভাবে যেখানে তার অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো পূর্ণতা পাবে ।
(দুই)
অর্নিবাণ ও বান্নাহ দু'বন্ধু। একদিন ওরা বসে গল্প করছে । আশেপাশে রং বেরঙের অনেক ফুল ।ফুলের উপর উরে বেরাচ্ছে নানা রকমের প্রজাপতি । গাছের উপর থেকে ভেসে আসছে পাখির গান । বান্নাহ খেলার ছলে সুন্দর একটি প্রজাপতিকে মেরে ফেলল । এতে লোনা জলে অর্নিবানের চোখ ভরে গেল । তার প্রজাপতিটির প্রতি খুব মায়া হল । ভাবল- যার রঙিন ডানা ,ক্ষুদ্র জীবন খেলার ছলে নিথর হয়ে যায় , কোথায় যাবে সে ? কোন আকাশে কোন ঘাসের দেশে ডানা মেলবে ?
অনির্বাণ-'বন্ধু ! আমি চাই প্রজাপতি স্বাধীনভাবে ডানা মেলে উড়ুক । কেউ যেন তাদের খুন না করে ।সব সুন্দর ,সকল জীবন আপনাতে উদ্ভাসিত হোক প্রকৃতির নিয়মে।সুন্দর প্রজাপতি সুন্দরের উপমা হয়ে ভাসুক ঘাসে ঘাসে ,ফুলে-ফলে ,মানুষের মনে দক্ষিণা বাতাসের মৃদুমন্দ সমীরণে ।'
বান্নাহ-'আমি দু:খিত!এই ধরণের ঘটনায় তুমি এতটা কষ্ট পাবে বুঝতে পারিনি ।'
(তিন)
বন্ধু মনিরকে পেয়ে অর্নিবানের আনন্দের সীমা নেই । ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে বেশ ক'দিন হয়েছে । এর আগেতো অর্নিবাণ ওকে ভয় পেত । দেখলেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেত এবং ওর দম বন্ধ হয়ে আসত। আসলে দূর থেকে কাউকে সঠিকভাবে বুঝা দু:সাধ্য ।
মনির অর্নিবাণকে 'পাখি প্রেমিক 'বলে ডাকে । অনির্বাণের একটি টিয়া পাখি ছিল ।খাঁচায় পাখিটি ছটফট করত ।একদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে সে দেখে পাখিটির হ্নদস্পন্দন থেমে গেছে ।গভীর অভিমান নিয়ে চলে গেছে ।তার অভিমান যেন পৃথিবীর উপর ,প্রকৃতির উপর ,প্রকৃতির নিয়মের উপর ।সবচেয়ে বড় অভিমান জগতের শ্রেষ্ট সৃষ্টি (স্বার্থপর !) মানুষের উপর । এই ঘটনার পর থেকে নিজেকে তার অপরাধী মনে হয় ।অনুশোচনা জাগে ।সবাইকে বলে বেড়ায় ু'তোমরা কেউ পাখি ধরবেনা ।এগুলো মারা গেলে সুন্দর সুন্দর পাখি দেখতে পাবেনা । প্রতিদিন ভোরে পাখিদের মধুর গান শুনতে পাবেনা ।পাখিদেও ডাকে ঘুম ভাঙবেনা ।পাখি আমাদের প্রকৃতির সৌন্র্দয ,আমাদের সম্পদ । পাখি ছাড়া প্রকৃতি এত বৈচিত্র্যময় মনে হবেনা।'
হঠাৎ মনির বলে উঠল ু'এই পাখি প্রেমিক ! তুমি যেভাবে পাখিকে ভালবাস,মানুষ যদি মানুষকে এতটুকুও ভালবাসত তবে আফগানিস্তান ,কাশ্মিও ,ইরাক , ফিলিস্তিনের অমানবিক দৃশ্য দেখতে হতোনা ।'
অর্নিবাণ র্নিবাক ! কীযেন ভাবল ! ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল কয় ফোঁটা অশ্রু ।
(চার)
অনির্বাণ তার মায়ের সাথে টাংগাইলে তার নানুর বাড়ী বেড়াতে যাচ্ছে । বাসে বসে তার শান্ত , গভীর কালো দু'টি চোখ চলে গেছে সবুজ ঘাসে ছাওয়া মাঠের পানে । যেখানে সাদা বক গুলো ওরে যাচ্ছে ।নানুর বাড়ী পেঁৗছতেই যে কী আনন্দ ! তখন বিকেল । বসন্তের পড়ন্ত বিকেল । দু'তালা বাড়ীর সামনের বাগানে অসংখ্য ফুলের সমারোহ ।জুঁই, চামেলী ,বেলী আর রং বেরঙের গোলাপ । বাগানের সেই অনিন্দ্য সুন্দর রুপ আকন্ঠ পান করছে অনির্বাণ ।আচমকা তার পাশ থেকে কে যেন ডেকে উঠল -অর্নিবাণ ।ফিরে তাকাতেই দেখে মামাত ভাই ইকবাল ।
ইকবাল ওর চেয়ে এক বছরের বড় । সে এক বুদ্ধিসম্পন্ন পাজি ।খালি সবসময় নিজের জ্ঞান ঝাড়ে । অনির্বাণের কথার্বাতাকে ছোট মানুষের খেয়াল ভাবে ।ইকবাল প্রচুর বই পড়ে । লেখালেখিও করে ।ওর কাছ থেকে অনেক অজানা বিষয় জানা যায় ।তাই ইকবালের কিছু কিছ আচরণ অপছন্দনীয় হলেও পছন্দনীয় অনেক কিছু থাকায় অনির্বাণের সে ভীষণ পছন্দ ।
ইকবাল বলে-' অনির্বাণ ! তোমার ভীতরে আছে সৃজনশীলতা । সৃজনশীল মানুষ কখনো হেরে যায়না ।কখনো কিছু সময়ের জন্য হয়তো থমকে দাঁড়ায় তবে সব বাধাঁ অতিক্রম করে আবার ঠিকই এগিয়ে চলে ।সত্যি তোমাকে পেয়ে আমি দারুণ আনন্দিত ।'
অনির্বাণ-'তোমার আমার দু'জনেরই ক্লাশ ছুটি চলছে । ক'দিন বেশ আনন্দেই কাটবে ।'
(প্াঁচ)
পরদিন ভোর ছুঁই ছুঁই ভাব । পর্ূবাকাশে সাদা আলোর রেখাপাত ।কালো অন্ধকার আকাশটায় একগুচ্ছ জোসনা যেমন করে ফোটে তেমনি মনে হচ্ছে এ সময় । কিন্তু অনির্বাণ হ্নদয়টাতে কেমন যেন এক কষ্ট অনুভব করছে । মনে পড়ছে ছোট মামার কথা । গতবছর রোড এ্যাকসিডেন্টে যার মৃতু্য হয়েছে । অনির্বাণকে তিনি খুবই আদর করতেন । ভাবতেই চোক বেযে টপটপ কওে পানি পড়তে লাগল । আবেগে সে কেপেঁ উঠল ।
ইকবাল ঘুম ভাঙতেই আকসমিক এই ঘটনায় কিংর্কতব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ল । অনির্বাণের চোখ দুটি ছল ছল করছে । মনে হচ্ছে যেন টপটপ করে পানি পড়বে ।দেখতে দেখতে নীরবে দু'নয়ন বেয়ে অশ্রুকণা নীরবে গড়িয়ে পড়তে লাগলো ।প্রতিটি অশ্রুকনার সাথে যেন হ্নদয়ের অব্যক্ত বেদনাগুলো ঝওে পড়ছে । ইকবাল জানে অর্নিবানের জ্ঞান বুদ্ধির ব্যাপকতা । কিন্তু তার আবেগটা একটু বেশি । খুব সর্তকভাবে পথ চলতে হয় । একটু কষ্ট পেলেই বা চেহারার মেঘে সামান্য আঘাত লাগলেই নীরবে বর্ষণ শুরু হয়ে যায় । তার দু:খ হঠাৎ বাঁধ ভেঙ্গে হু হু কওে উঠে । অন্তরের গহীন থেকে অশ্রুকণার সাথে সাথে অব্যক্ত বেদনাগুলো গড়িয়ে পড়তে থাকে ।
ইকবাল বলল ুঅর্নিবাণ তুমি কাঁদছ। সবাই মিলে কাদলেও তিনি ফিরে আসবেননা । কেঁদে লাভ নেই । লাভ হবে যদি নামাজ পড়ে তার আত্নার মাগফেরাতের জন্য দুআ করি । দু"জন ওযু কওে জায়নামাজে দাড়াল ।
(ছয় )
অর্নিবাণের ছোট ভাই সৌমিক।্নানুর বাড়ী এসে ওর দুষ্টুমি বেড়ে গেছে ।জোনাকি পোকা তার খুবই পছন্দ। ইকবাল কোত্থেকে যেন তাকে অনেকগুলি জোনাকি পোকা ধরে এনে দিয়েছে ।সে রাতে শুয়ে বাল্ব নিভিয়ে মশারির নিচে জোনাকি ছেড়ে দেয় । এগুরো চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী হঠাৎ জ্বলে হঠাৎ নেভে ।তার কাছে এ দৃশ্যটি দারুন লাগে ।
সৌমিক সারাদিন দুষ্টুমিতে মেতে থাকে ।সে গল্প শুনতেও প্রচন্ড ভালবাসে।্তালগাছের মধ্যে থাকা
বাবুই পাখির বাসা ,পাখির কিচির মিচির আওযাজে ও খুবই মুগ্ধ হয ।পুকুরে ফুটে থাকা লাল শাপলা তুরতে যেযে একবারতো পুকুরে প্রায়ই পড়েই গিযেছিল ।্সে কী ভয়ানক অবস্থা ।একদিকে অর্নিবাণের হাতের থাপ্পর খেয়ে চোখের জল আর নাকের জল এক হয়ে গার বেয়ে দুই ঠোঁটের ফাঁক গলে ভেতরে ডুকতে ছিল । অন্যদিকে ইকবাল যেয়ে তাকে কোলে তুলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাচ্ছিল । সৌমিকের উক্তি-' অর্নিবাণ ভাইয়া খুব পাজি ,ইকবাল ভাইয়া ভাল। "
অর্নিবাণ ভাবল ঠিকই ভালবেসে শিশুর মন শুধু নয় ; সকল মানুষ , পশু পাখির এমনকি স্রষ্টার মনও জয় করা যায় ্। ভালবাসা অত্যন্ত শক্তিশালী ।
(সাত)
এক সন্ধ্যায় সংবাদ এলো অর্নিবাণের খালু খালাসহ জার্মানী থেকে দেশে ফিরেছেন । সংবাদ পেয়েই নানুসহ অর্নিবাণ ,তার আম্মু ,সৌমিক ও ইকবাল নৌকা যোগে তার খালাবাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করল । বংশাই নদী । টলমলে জোছনায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক । মস্ত চাদঁ ঝুলে আছে মাথার উপর । চিকমিকে আলোর ফুটকি খেলা করছে পানির উপর । চিকমিকে আলোর ফুটকি খেলা করছে পানির ওপর । দু-একটা রাতজাগা পাখি উড়ে যাচ্ছে ক্লান্ত ডানায় । সমস্ত চরাচর ডুবে আছে গভীর নিথর নিদ্রায় । অর্নিবাণের চোখ জুড়ে খেলা করছে অনবরত আলোর জগৎ । সে কখনো এভাবে রাতকে দেখেনি । নদীকে পায়নি কাছে । উদারমুক্ত বাতাসে নি:শ্বাসের সুযোগও ঘটেনি এমন । শহরের কলোনির খাঁচার জানালা থেকে যতদিন আকাশ দেখেছে ,তার সঙ্গে কোন মিল নেই এর । এ এক অন্য ভূবন । নদী যে এত প্রানময় হতে পারে , চঞ্চল আলোর ছলকে মেতে উঠতে পারে ঢেউয়ের শোভা , বাতাস যে হতে পাওে এত বাঁধ ভাঙ্গা উত্তাল,এই প্রথম সেটা হ্নদয দিয়ে অনুভব করল অর্নিবাণ ।
সামেেনর খোলা প্রান্তও কেবলই হাতছানি দিযে ডাকছে - আয় ,আয় ,আয়......। সামনে যে বিশাল চরাচর ,হাওয়ার ঘর্ূিণ ,নানা র্বেণর মায়াবি ঝিলিক ,তাকে কী আর উপেক্ষা করা যায় । খালু ওদের একসঙ্গে পেয়ে আনন্দে কেদেঁ উঠল । পারমানবিক এই মায়ার বন্ধনই প্রমাণ করে মানবিকতা ,মনুষ্যত্বের জয়গান , মানুষের শ্রেষ্টত্ব ।
(আট)
অর্নিবাণ চায় সবাই তাকে ভা অর্নিবাণের ভালবাসুক ।চমৎকার আচার ব্যবহারের মাধ্যমে সবার হ্নদয়ই জয় করতে চায় সে ।তার স্বপ্ন এক সুন্দর ভবিষ্যতের , এক সুন্দর আগামীর । স্বপ্ন দেখতে সে বড্ড ভালবাসে । তাইতো আগামী দিনের স্বপ্ন গুলো তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে ।