somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুনামগঞ্জের হাওরে ৫৪ প্রজাতির মাছ বিপন্ন

২৩ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘...হাওরের পানি নাইরে যেথায়, নাইরে তাজা মাছ/ বিলের বুকে ডানা মেলা নাইরে হিজল গাছ....’ উপ মহাদেশের বিখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস বৃহত্তর সিলেটের হাওর-বাওরের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির পরিচয়বাহী স্মৃতিকাতর এই গানটির মতই এখন হাওরের সুস্বাদু মাছ নিয়ে আফসোস করছেন হাওরবাসী। কারণ নানা কারণে হাওরের মাছ ও জীব বৈচিত্র বিলুপ্ত হচ্ছে। স্থানীয় বাজার গুলোতেও হাওরের মাছ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। বরং দেশি প্রজাতির মাছকে হটিয়ে হাওরের বাজারেও দখল নিয়েছে বিদেশি ও হাইব্রীড মাছ। মিঠাপানির হাওরে যে মাছ উৎপাদন হয় তাও চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরে। ফলে হাওরের মাছ থেকেই অধিকারহারা হাওরবাসী। এই সমস্যার পাশাপাশি নানা কারণে হাওরের প্রায় ১২২ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৫৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে একটি বেসরকারি সংস্থা গবেষণা রিপোর্টে জানিয়েছে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ কমিউনিটি ভিত্তিক সম্পদ ব্যাবস্থাপনা প্রকল্পের ‘ফিশারিজ রিসার্স সাপোর্ট প্রজেক্ট’ মাধ্যমে বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ডফিস সেন্টারের সাম্প্রতিক গবেষণায় সুনামগঞ্জের হাওরে ১২২ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেছে। দুই বছর জেলার ৭টি হাওর উপজেলার ৩০ বিলে গবেষণা চালিয়ে তাদের রিপোর্টে বিপন্ন ও বিলুপ্ত মাছকে ‘বিপন্ন, মহা বিপন্ন ও সংকটাপন্ন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আই ইউ সিএন সূত্রের বরাত দিয়ে রিপোর্টে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত স্বাদু পানির মৎস্য প্রজাতিগুলোর মধ্যে হাওর-বাওরে ৫৪ প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব হুমকিতে। ১২ প্রজাতির মাছকে মহাবিপন্ন, ২৮ প্রজাতির মাছকে বিপন্ন এবং ১৪ প্রজাতির মাছের প্রজাতি সংকটাপন্ন। বিলুপ্তির কারণ হিসেবে বাণিজিক্যকভাবে দেশিমাছ নিধন করে বিদেশী মাছ চাষ, হাওরের বোরো ফসলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এবং ভারতের মেঘালয়ের কলকারখানার বর্জ্যদুষণসহ বিভিন্ন কারণকে চিহ্নিত করে বাণিজ্যিকভাবে দেশি প্রজাতির মাছ চাষে লোকজনকে উদ্বুদ্ধকরণ, কৃত্রিম প্রজনে মাধ্যমে বিপন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন, বিদেশী মাছ আমদানীর পূর্বে দেশীয় মৎস্য প্রজাতি ও জলজ পরিবেশের এর প্রভাব সম্পর্কিত সমীক্ষা করে মাছ চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়। ফিশারিজ রিসার্স সাপোর্ট প্রজেক্ট ২০০৭ থেকে ২০০৯ সন পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওর-বাওর বিলে গবেষণা চালিয়ে হাওরে এখনো কিছু বিরল মাছের উপস্থিতির কথাও জানিয়েছে।
গবেষণা রিপোর্টে ঘোড়ামুখ, দেশী সরপুঁটি, মহাশোল, রিটা, ঘাউরা, শিলন দেশী পাঙ্গাস, বাচা, বাঘা আইড়কে মহা বিপন্ন বলেছে। প্রাপ্ত বিরল প্রজাতির মাছের মধ্যে আগুন চোখা, বেতাঙ্গী, পাঙ্গা, গুতুম, কানোচ, দল মাগুর, হাঁড় কাটা, কোটা কুমিরের খিল নামক বিরল মাছের উপস্থিতির কথা বলা হয়। বিপন্ন মাছ ও সংকটাপন্ন মাছের দেশী-বিদেশীনামসহ এর স্থানীয় নামও উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে।
বিপন্ন ও বিলুিপ্তর আরো কিছু কারণ উল্লেখ করে বলা হয়, পাহাড়ি ঢলে হাওরের তলদেশ পলি জমে ভরাট হওয়া, মাছ চলাচলের সংযোগখাল ভরাট, উন্মুক্ত জলাশয় সংকোচন, ইজারাদার কর্তৃক অবৈধভাবে মাছ আহরণ, নদীর নাব্যতা হ্রাস, প্লাবনভূমিতে মাছের অবাধ যাতায়াতের সমস্যাকে প্রাকৃতিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মাছ বিলুপ্তির মানবসৃষ্ট কারণ হিসেবে বসতভিটার মাধ্যমে জলাভূমি কমে যাওয়া, হাওর এলাকায় অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট ও বাধ নির্মাণ, প্রজনন মওসুমে ডিওমালা মাছধরা, হাওরে বিভিন্ন সময়ে বিদেশী মাছ অবমুক্তকরণসহ বিলুপ্তির বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে সংরক্ষণের জন্য বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়। সুপারিশের মধ্যে হাওরাঞ্চলে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন, প্রচলিত মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ, কৃষি ক্ষেত্রে পরিমিত সার ব্যবহার ও ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার না করা এবং প্রচলিত স্বল্পমেয়াদী ইজারা প্রথার পরিবর্তে বিজ্ঞানসম্মত উৎপাদনভিত্তিক জৈবব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রচলন কথা বলা হয়। অভয়াশ্রম স্থাপন ও তার সঠিক রক্ষাবেক্ষণ, মাছের আবাসস্থল পুনঃরুদ্ধার ও বিল পুনঃসংস্কার, জলজ বনায়ন সৃজন ও মৎস্যজীবিদের সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়নের কথাও রয়েছে। ৩০টি বিলের গবেষণা এলাকা দুইটিতে ২৫-৩৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যাওয়ায় ওই বিলে ইরড়-ফরাবৎংরঃু ঝুঁকিতে বলে উল্লেখ করা হয়।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের ফিসারি সাপোর্ট কোঅর্ডিনেটর আব্দুল হাই চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ওয়ার্ল্ড ফিশকে গবেষণায় সহযোগিতা করেছি। তারা ৭টি উপজেলার ৩০টি বলে গবেষণা রিপোর্টে বিপন্ন মাছ ও প্রাপ্ত মাছের কথা উল্লেখ করেছে। আগামীতেও হাওরের মাছের উপর কাজ অব্যাহত থাকবে’।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, ‘ ওয়ার্ল্ডফিসের রিপোর্টে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তবে নানা কারণে মাছ লিুপ্ত হচ্ছে।
##


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×