somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবুতরের উড়াল প্রতিযোগীতা।

২২ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গিরিবাজ কবুতর আকাশ পথে উড়তে পারে প্রায় ৫০ কি. মি.। কিন্তু হোমা কবুতর উড়তে পারে কতোদূর? হাজার কি মি. না কি তারো বেশি! বিলি নামের এক হোমা কবুতর পাড়ি দিয়েছিল আটলান্টিক। ফ্রান্স থেকে ছাড়া হয়েছিল এই কবুতরটি, যাওয়ার কথা ছিল ইংল্যান্ডের লিভারপুল। কিন্তু সেই বিলি প্রায় ৩৩২১ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে হাজির হয়েছিল নিউইয়র্কে। কেন সেই রহস্য আজো অজানা। এই বিলিকে ছাড়া হয়েছিল আরো প্রায় ১০০ কবুতরের সঙ্গে। কবুতরের উড়াল প্রতিযোগীতায়। সারা বিশ্বেই কবুতরের রেস জনপ্রিয় একটি খেলা হিসেবে চালু হয়ে আসছে ২০০ বছর আগে থেকেই। ধারণা করা হয় ২২০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম কোন কবুতরের রেসের আয়োজন করা হয়। উনবিংশ শতকের শুরুতে প্রথম বেলজিয়ামে কবুতর রেসের আনুষ্ঠানিক আয়োজন করা হয়। বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ড কবুতর এবং কবুতর রেসের জন্য বিশ্বময় সুপ্রসিদ্ধ। সাধারণত ১০০০ কি.মি আকাশ পথের এই রেসের আয়োজন করা হয়। সর্বশেষ বার্সেলোনা থেকে বেলজিয়াম পর্যন্ত ১০০০ এর বেশি কি. মি. দূরত্বের রেসের আয়োজন করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ১৮০০ কি. মি. রেসের আয়োজন করা হয় আমাদের দেশেও এই কবুতরের রেস চালু আছে। প্রতি বছর শীত পূর্ব এবং গ্রীষ্মকালীন সময়ে এই রেসের আয়োজন করা হয়। নিয়মিত প্রশিণ ও দেখভালের পরে কোন কবুতর এই রেসের জন্য উপযুক্ত হয়। পর্যাপ্ত প্রশিণ প্রাপ্ত একটি কবুতর উড়তে পারে ঘন্টায় প্রায় সর্বনিু ১৩০ কি.মি. থেকে সর্বোচ্চ ২৬০ কি. মি. পর্যন্ত। দিনে একটি কবুতর প্রায় ৬০০ মাইল পথ পাড়ি দিতে পারে। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়ো রেসটি হয়েছে তেতুলিয়ার বাংলাবন্ধ থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রায় ৩৭০ কি.মি। আকাশ পথের এই রেসে অংশগ্রহণকারী কবুতরের সংখ্যা ছিল শতাধিক।


কবুতর পাঁচালি
সাধারণত ৬মাস বয়স থেকে কোন কবুতর ওড়ার জন্য উপযুক্ত হয়। এই ৬মাস বয়স থেকে শুরু হয় তার প্রশিণ। তার আগে দুই থেকে তিন মাস বয়স হলেই কবুতরটিকে তার পরিবার থেকে আলাদা করে অন্য কোন খাঁচায় রাখা হয়। চার মাস বয়স হলে আবারো তার খাঁচা পরিবর্তিত হয়। এবারের খাঁচা থাকে ঘরের বাইরে। এই সময়ে কবুতরটি তার বাসস্থান এবং প্রতিবেশ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। ছয় মাস পরে তাকে তার বাসস্থানের আশপাশে সর্বোচ্চ একশ কিলোমিটার পর্যন্ত ওড়ার প্রশিণ দেয়া হয়। এই সময়ে কবুতর উড়তে শিখে। এবং ধীরে ধীরে তার ওড়ার বেগ ও দূরত্ব বাড়তে থাকে। কবুতরের ব্রিডিং এর ক্ষেত্রও বেশ যত্ন নিতে হয়। এ জন্য কবুতরের জীবনবৃত্তান্ত অনুসরণ করা হয়। সাধারণত তার পূর্ববতী কোন রেসে ভালো ফলাফল করা পুরুষ কবুতর এবং নারী কবুতরের ব্রিডিং করা হয়। একটি কবুতরের ডিম থেকে ১৮-২০ দিস পর বাচ্চা ফুটে বের হয়। অন্তত দুই মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চা কবুতর তার মায়ের যত্নে থাকে। জন্মের এক সপ্তাহ পরেই যে কোন কবুতরের পায়ে একটি রিং পড়িয়ে দেয়া হয়। সেই রিং এ দেশের কোড নাম, একটি কোড নাম্বার এবং জন্ম সাল অঙ্কিত থাকে। এই রিঙের তথ্যাদি প্রামাণ্য হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়াও প্রত্যেক কবুতরের জন্য আলাদা জীবন বৃত্তান্ত তৈরি করা হয়। সেই জীবন বৃত্তান্তে কোন কবুতরের বাবা-মায়ের পরিচয় উল্লেখ থাকে। এভাবে পাঁচ থেকে সাতটি পরম্পরায় কবুতরের জন্মবৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ থাকে। জন্ম বৃত্তান্তে কবুতরের যে দেশে জন্ম নিয়েছে তার নাম, কোড নাম্বার, গায়ের রং, সাল এবং যে পুরুষ ও নারী কবুতরের ব্রিডিং এর মাধ্যমে তার জন্ম তাদেরও জীবনবৃত্তান্ত সংযুক্ত থাকে। প্রশিণবিহীন কোন কবুতর খুব বেশিদূর উড়তে পারে না বা তার গতিবেগও রেসের জন্য সন্তোষজনক হয় না। যে সকল কবতুর চিঠি বা বার্তা আদান প্রদানের কাজ করতো তারা ১০০ কি. মি. এর বেশি উড়তে পারতো না। এসকল কবুতরের গতিবেগ ঘন্টায় ৮০-১০০ কি. মি.। রেসের কবুতর হোমার রেসার হিসেবে পরিচিত। দুই ধরণের হোমার রেসার আছে- কম বয়েসি হোমার রেসার এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হোমার রেসার। ৬ মাস থেকে এক বা দেড় বছর পর্যন্ত কবুতরকে কম বয়েসি রেসারদের দলে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। একটি কবুতর ৬-৮ বছর পর্যন্ত সনেআষজনকভাবে উড়তে পারে। গিরিবাজ কবুতর পরিচিত রোলার রেসার হিসেবে। রোলার কবুতর সর্বোচ্চ ৬ কি. মি পর্যন্ত উচ্চতায় ইঠতে পারে। হোমার রেসার উঠতে পারে তারো বেশি, বিমান চলাচলের বায়ুস্তর পর্যন্ত। নিজের ঘরে ফিরে আসার এক সহজাত কৌশল কবুতরের আছে। এই কৌশল আÍস্থ করে হাজার মাইল পাড়ি দিয়েও কবুতর তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়। রেসে অংশগ্রহণকারী কবুতরের ৯০ ভাগেরও বেশি ফিরে আসে। সাধারণত বজ্রপাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বাজ পাখির আক্রমণে না পড়লে যে কোন কবুতরই ঘরে ফিরে আসে। তবে কেউ কেউ পথ ভুল করে ফিরে আসতে দেরি করে। এই দেরি মাস পেরিয়ে বছরও হতে পারে। বিলি নিউইয়র্ক থেকে ৩১ দিন পরে ফিরে এসেছিল ইংল্যান্ডে।


বাংলাদেশের কবুতর রেস-
আমাদের দেশে বাংলাদেশ রেসিং পিজিওন ওনার্স এসোসিয়েশন এর উদ্যোগে প্রতি বছর কবুতরের রেসের আয়োজন করা হয়। ২০০৩ সালের মার্চ মাস থেকে এই সংগঠনটি কাজ শুরু করে। সিকান্দার আলি, মাকসুদ আহমেদ সনেট, রেজা-উর-রাহমান সিনহা, আলা উদ্দিন স্বপন এই কয়েকজনের উদ্যোগে কবুতর নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম কোন সংগঠনের আÍপ্রকাশ করে। বর্তমানে সংগঠনটির ১৮০ জন সদস্য রয়েছেন। সর্ব প্রথম তারা ২০০৪ সালের মে মাসে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ৮০ কি. মি. দূরত্বের রেসের আয়োজন করেন। এই প্রতিযোগীতায় প্রায় ৩৫টি কবুতর অংশগ্রহণ করে। এরপর থেকে প্রতিবছরই তারা কবুতরের রেসের আয়োজন করেন। এই সংগঠনের সদস্যরা নিজেরাই কবুতর উৎপাদন এবং সংগ্রহ করে থাকেন। এছাড়াও নেদারল্যান্ড এবং বেলজিয়াম থেকেও তারা কবতুর সংগ্রহ করেন। গত ফেব্র“য়ারিতে অনুষ্ঠিত রেস দেখতে নেদারল্যান্ড থেকে এসেছিলেন মার্সেল স্যাঞ্জার্স। এছাড়াও কবুতরের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ ও চিকিৎসা পরামর্শও তারা সংগ্রহ করেন এই দুটি দেশ থেকে। এবছরের পরবর্তী রেসের আয়োজনও শুরু হয়ে গেছে এর মধ্যে। আগামী আক্টোবর নভেম্বরে আয়োজিত হবে পরবর্তী রেস। মিরপুরে অবস্থিত এই কাবের সদস্যরা মনে করেন- ‘বর্তমান সময়ের বিশ্বের অন্যান্য দেশে পিজিওন স্পোর্টস বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আমরা গত ছয় বছরে বেশ উৎসাহ পেয়েছি। আমরা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাড়ে ছয়শো কিলোমিটার পর্যন্ত রেসের আয়োজন করেছি। যদি সীমান্তের বাধা না থাকতো তাহলে আমরাও হাজারেরও বেশি কিলোমিটারে রেসের আয়োজন করতে পারতাম।’

রেসের ফলাফল
প্রথমেই কোন স্থান নির্বাচন করা হয় রেসের জন্য। সেই স্থানে কবতুর নিয়ে যাওয়ার জন্য ভ্যান থাকে। তার আগে অংশগ্রহণকারী কবুতরের পরিচয় লিপিবদ্ধ করা হয়। এবং আরেকটি রিং কবুতরের পায়ে পড়ানো হয় যেখানে একটি গোপন নাম্বার এবং ফোন নাম্বার থাকে। রেসের দিন একই সময়ে কবুতরগুলো ছেড়ে দেয়া হয়। যে কোন ব্যক্তি যে কোন সংখ্যার কবুতর রেসের জন্য নির্বাচন করতে পারেন। প্রতিযোগীতার সময় হচ্ছে কবুতর ছাড়ার সময় থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। কোন কবুতর তার নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছালে পায়ে যুক্ত রিংটি খোলা হয় এবং সেখানে লুক্কায়িত নাম্বারটি সংগ্রহ করা হয়। দূরত্ব আর সময়ের প্রেক্ষিতে রেসে অংশগ্রহণকারী কবুতরের গতিবেগ নির্ধারণ করা হয় এবং গতিবেগের বিবেচনায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়। সাধারণত এই কাজে একটি বিশেষভাবে তৈরি ঘড়ি বিজয়ী নির্বাচনের কাজ করে। ঘড়িটি রেস শুরুর সময়ে চালু করা হয়। যে নাম্বারটি কবুতরের পায়ে লুকানো থাকে, রেস শেষে সেই নাম্বারটি ঘড়ির বিশেষ স্বয়ংক্রিয় স্থানে রাখা হয়। তখনকার সময়কে রেস শেষ হবার সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নতুন প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ইলেকট্রনিক টাইমিং মেশিন। এ ক্ষেত্রে কবুতরের পায়ে একটি ছোট চিপ সংযুক্ত করা হয়। এই মেশিন কোন কবুতরের গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সংগৃহীত হয়। পূর্বের তলনায় ইলেকট্রনিক টাইমিয় মেশিন অনেক নিখুত ফলাফল প্রকাশ করতে পারে।

শান্তির বিজয় লাভ-
বাংলাদেশে কবুতর বিষয়ক যে কোন সমস্যার জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় বেলজিয়াম বা নেদারল্যান্ডের দিকে। বাংলাদেশ রেসিং পিজিওন ওনার্স এসোসিয়েশন তাদের এই আক্ষেপর কথা জানান। তারা মনে করেন পিজিওন স্পোর্টস এর জন্য আমাদের দেশ খুব উপযুক্ত একটি জায়গা হতে পারে। কবুতর তবে কেবল আর শান্তির প্রতিক নয় বিজয়েরও প্রতিক।


পূর্বে প্রথম আলোতে প্রকাশিত
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×